somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফারিয়ার গল্প: একদিন ঠিকই বলবে ভালবাসি

১৯ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফারিয়ার কথা
আকাশের কথা

আকাশ বরাবরই একটু ঘুমাতে পছন্দ করে । বিয়ের পর যেন অভ্যাসটা যেন আরো একটু বৃদ্ধি পেয়েছে । আগে তো অফিস যাবার সময় সকাল সকাল উঠতে হত । বসের ভয় ছিল । কিন্তু এখন সেই ভয় টা একটু কম । কারন অফিসের বসের ভাতিজির সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে । বসর ভয় একটু কম ।
অফিসে আকাশের সুনাম ছিল ছিল বরাবরই । একে বারে ভাল ছেলে বলতে যা বোঝায় আকাশ সে রকমই একজন ছেলে । সবার সাথেই আন্তরিক সে কিন্তু ফালতু প্যাচাল কারো সাথেই না । আর কাজ কর্মে ছিল খুব সিনসিয়র । অফিসের সবাই আকাশকে পছন্দ কর । মহিলা কলিগদের মধ্যে আকাশকে নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয় । বিশেষ করে অবিবাহিত কলিগরা আকাশকে নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাতো ।
ঠিক এমন সময় বসের ভাতিজি অফিসে জয়েন করল । ফারিয়া । দেখতে শুনতে দারুন । অবিবাহিত । একে তো বসের ভাতিজি তার উপর সুন্দরী । অফিসের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ফারিয়ার দিকে ঘুরে গেল । এভাবেই দিন চলছিল । ফারিয়ার সাথেও ওর আন্তরিক সম্পর্ক ছিল । কিন্তু এর বেশি কিছু না । আকাশ কোন দিন মেয়েদের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখায় না । এর অবশ্য কারন ছিল ।
তারপর একদিন হঠাত্ অফিসের বস আকাশ কে ডেকে ফারিয়ার সাথে বিয়ে প্রস্তাব দেয় । ও খানিকটা অবাক হল । এতো ছেলে থাকতে ও কেন ? খুব আন্তরিক ভাবেই সে প্রস্তাফটা না করে দিল । খবরটা শুনে অফিসের সবাই খুব অবাকই হয়েছিল । বলছিল এরকম সোনার হরিণ কেউ মিস করে ? কিন্তু তারা যদি জানত !
আকাশ তার সারা টা জীবন দিয়ে কেবল একটা মেয়েকেই ভালবেসেছে । অন্য কোন মেয়ের প্রতি তাই ও কথনও আগ্রহ দেখাই নি । একজনকে মনের ভিতর রেখে অন্যজনকে কাছে টানা কিছুতেই সম্ভব না । মাঝে আকাশের মা খুব জোড়াজুড়ি করত বিয়ের জন্য । বলত বিয়ের পর বউয়ের উপর মায়া এমনিতেই জন্ম নেই । তুই এমনিতেই তাকে ভালবাসতে শুরু করবি । উত্তরে আকাশ বলত আমি সে চান্স কেন নেব । যদি ভালবাসা জন্ম না নেয় ! তাহলে আর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে কি লাভ । ঠিক একই কথা গুলো সে ফারিয়াকেও বলছিল । কিন্তু তারপরও যখন ফারিয়া ওকে বিয়ে করতে চাইল বেশ জোর দিয়েই চাইল তখন আকাশ কেন জানি রাজি হয়ে গেল ।
তাছাড়া বিয়ে না করার ব্যাপারে মানুষ জন অন্য ইঙ্গিত দেওয়া শুরু করেছিল । তাই বিয়েতে আর অমত করেনি । আর ফারিয়ার চোখে কি যেন একটা ছিল , আকাশ সেটা উপেক্ষা করতে পারে নি । তারপর ওদের বিয়েটা হয়ে যায় । তারপর থেকে সবকিছু ভালই চলছে বলতে হবে ।
“ঘুম ভাল হয়েছে” ? ফারিয়া ধুমায়িত চা নিয়ে হাজির ।
আকাশ আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলল “হুম” । এই মেয়েটা কি যেন বুঝে যায় ওর কখন কি দরকার । ঘুম ভেঙ্গেই প্রতিদিন গরম চা নিয়ে হাজির হয় । একটু অপেক্ষা করতে হয় না । মনে হয় যেন ও ঠিক জানতো এখনই আকাশের ঘুম ভাঙ্গবে আর এখনই ওর চা দরকার ।
আর কেবল চা ই না ওর প্রত্যেকটা জিনিস যখন যেটা দরকার ঠিক তখনই ফারিয়া ওটা নিয়ে হাজির হয় ।
সপ্তাহ খানেক আগে আকাশ লক্ষ্য করল ফারিয়া অফিস যাচ্ছে না । খাওয়ার টেবিলে কথাটা জিঞ্জেস করল ।
“অফিস যাচ্ছ না কেন তুমি” ?
“ভাল লাগে না” ।
“কেন” ? আকাশ বেশ অবাক হল । “সারা দিন বাসায় কি কর” ?
“রান্না শিখি । মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে আরো আগে রান্নাটা শিখি নি” ?
“রান্না করার কি দরকার ? বুয়া আছে না” ?
“তুমি খেতে অনেক পছন্দ কর না তাই রান্না শিখি । তোমাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে পারলে আমার খুব ভাল লাগবে” ।
আকাশ অবাক হয়ে ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল । এমবিয়ে করা এই মেয়ে কি বলছে ?
কিন্তু অফিস যাবার সময় আকাশের কেন জানি অদ্ভুদ ভাল লাগার অনুভুতিতে ছেয়ে রইল ওর মনটা । ফারিয়ার মত একটা মেয়ে ওর জন্য এমনটা করছে । ভাবতেই ভাল লাগছে ।
নাস্তার টেবিলে আকাশের কেন জানি মনে হল ফারিয়া কিছু বলতে চায় ।
“পরোটা তুমি বানিয়েছে” ?
ফারিয়া মাথা ঝাকাল ।
“ভাল হয়েছে । বুয়া পরোটা বানালে তো মনে হয় তেলের পুকুর থেকে ডুবিয়ে এনেছে । খেতে ভাল লাগছে” ।
আকাশ লক্ষ্য করল এই টুকু কথায় ফারিয়ার চোখের পানি চলে এসেছে । আশ্চর্য ।
“কিছু বলতে চাও” ।
ফারিয়া আবার মাথা ঝাকাল ।
“বল” ।
“তোমার আজ বিকেলে কোন কাজ নেই তো” ?
“না কাজ আর কি ? ছুটির দিনে তো টিভি দেখা ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না” ।
ফারিয়া খানিকটা সময় নিল । তারপর বলল “বসুন্ধারা সিটিতে একটা সুন্দর ছবি চলছে । তোমাকে না বলেই আমি টিকিট কেটে ফেলেছি । যাবে আমার সাথে” ?
“আরে এতো সংকোচ করে কেন বলছ” ? আকাশ হাসল । “যাওয়া যাবে । সমস্যা কি” !
“সত্যি” ?
“ হুম” ।
“আর একটা কথা” !
“বল” ।
“ গাড়ি নিয়ে যাবো না রিক্সা করে যাবো” ।
“রিক্সা নিয়ে কেন” ?
“এমনি । বল যাবে” ?
“আচ্ছা বাবা রিক্সা নিয়েই যাবো । কিন্তু আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এসি কার থাকতে তুমি রিক্সা করে কেন যাবা” ?
“এখন বলব না । এখন বললে তুমি হাসবা । যখন যাবো এখন বলব” !
আকাশ হাসল । ও খুব ভাল করেই বুঝতে পারছে ফারিয়া কেন রিক্সা করে যেতে চাচ্ছে । এই মেয়েটা এতো ছেলে মানুষ ! আবেগ প্রকাশের কি ছেলেমানুষী না চেষ্টা ! আরো কত কিছুই না ও করে । তার মধ্যে সব থেকে যেটা না বললেই নয় সেটা হল ফারিয়া কথনও অন্য গ্লাসে পানি খায় না । আকাশ যে গ্লাসটাতে পানি খাবে ফারিয়া বেছে বেছে ও গ্লাসটাতেই পানি খাবে । প্রথম প্রথম খ্যাল করলেও সিওর হবার জন্য আকাশ সেদিন একটা পরীক্ষা করল ।
দুজন রাতের খাবার খেতে বসেছে । দুজনের সামনেই দুটো পানির গ্লাস । আকাশ গ্লাসে একটু চুমুক দিয়ে গ্লাসটা এমন একটা দুরুত্বে রাখল যেন গ্লাসটা নিতে হলে ফারিয়াকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে হবে । ওর যখন পানি খাবার দরকার হল ও চট করে উঠে গেল । এমন একটা ভাব যে কোন আইটেম হয়তো আনতে ভুলে গেছে । তারপর পানির গ্লাসটা নিল খুব স্বাভাবিক ভাবেই । যেন এটাই ওর গ্লাস । কিন্তু ওর হাতের কাছের আর একটা গ্লাস ছিল । ইচ্ছা করলেই ও নিতে পারতো ।
আকাশের কেন জানি একটা আনন্দ আনন্দ অনুভব হয় । তাহলে কি মার কথাটাই ঠিক । স্ত্রীর প্রতি আপনাআপনি ভালবাসা সৃষ্টি হয় ! ফারিয়ার প্রতিকি ও দুর্বল হতে শুরু করেছে ?

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১২ দুপুর ২:৪০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×