somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফাজিল মেয়ে !! বিয়া করবি না মানে ?? ( the end)

০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

the beginning

পুরোটা বিকেল নিশি আমার সাথেই ছিল । ও যতক্ষন আমার সাথে থাকে ওর চোখে মুখে কেমন আনন্দের আভা থাকে । আমি খুব ভাল করে জানি ও যখন আমার সাথে থাকে আমার যেমন ভাল লাগে তেমনি ওর ও খুব ভাল লাগে ।
তাহলে ও কেন রাজি হচ্ছে না ! আমি এখনও ঠিক বুঝতে পারছি না ।
বিকেল বেলা ও বলেছিল যে ও চায় না ওর কারনে আমার কোন ক্ষতি হোক !
এই কথাটার মানে কি ? আমি যাই করি না কেন ও কখনও আমার কোন ক্ষতি করবে না ।
বলতে গেলে ওর দ্বারা আমার কোন ক্ষতি হওয়া সম্ভব না ।
তাহলে ? ওর কি কিছু হয়েছে ? কোন রোগ ? বা অন্য কিছু ?
ঘড়ির দিকে তাকালাম । প্রায় দুইটা বাজে । নিশিকে ফোন দিল ।
-হাই !
-ঘুমাও নি এখনও ?
নিশি একটু হাসল । বলল
-আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল তুমি ফোন দিবা !
-আচ্ছা !
-এতো দুর থেকে বুঝে গেলে আমি তোমাকে ফোন করতে যাবো ?
ওর হাসির আওয়াজ পেলাম আবারও ।
-বারান্দায় বসে আকাশ দেখছিলাম । কোটি কোটি তারার মেলা । দেখতে খুব ভাল লাগছি । মনে হচ্ছিল তুমি এখানে থাকলে দুজন মিলে দেখতে পারতাম ! ঠিক তখনই মনে হল তুমি যেন ফোন দিবা !
-নিশি তুমি চাইলেই কিন্তু কালকের পর থেকে জীবনের বাকি দিন গুলো আমরা একসাথে আকাশ দেখতে পারি ! আর শুধু কি আকাশ আরো কত কিছু করতে পারি এক সাথে ! জীবনটা এক সাথে আরো কত সুন্দর হবে ভেবে দেখেছ ?
নিশি কোন কথা বলল না ।
আমি আবার বললাম
-একটা কথার জবাব দেবে নিশি ?
-বল
-তুমি ঠিক আছো তো ?
-মানে ?
-মানে তোমার শরীর ঠিক আছে তো ? কিছু হয় নি তো তোমার ?
প্রশ্নের জবাবটা নিশি চট করে দিলো না । খানিক ক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর বলল
-আমি ঠিক আছি ।
একবার মনে আবার কথাটা জিজ্ঞেস করি । কিন্তু করলাম না ।
-আচ্ছা ঘুমাও কাল অফিস আছে ।
-আচ্ছা গুড নাইট ।

ফোন রাখার পরও ঘুম আসল না । নিশিকে খুব বেশি করে মিস করছি । মনে হচ্ছে ও পাশে থাকলে কত ভালই না হত ! আর একটা ব্যাপার, ও যে দিন আমার বিয়ের প্রস্তাব রিফিউজ করল সেদিন থেকে ওর উপর আকর্ষনটা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেছে । বারবার মনে হচ্ছে নিশিকে ছাড়া জীবন চলবে না । চলবে না কিছুতেই । অনেক হয়েছে আর না ! আর এক দিনও না !
ঘুমানোর আগে সিদ্ধান্ত নিলাম যে কালকেই ওকে বিয়ে করবো । যেমন করেই হোক । দরকার হলে জোর করে ।
সকাল বেলা উঠে দুজন ফ্রেন্ডকে ফোন করলাম । কি করতে হবে, কি কি দরকার সব কিছু বুঝিয়ে দিলাম । আর স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম । যদিও মনে মনে বেশ উত্তেজিত ছিলাম ।
অফিসে গিয়েও সবার সাথে স্বাভাবিক আচরন করার চেষ্টা করলাম । কিন্তু কেন জানি হচ্ছিল না । ভেবেছিলাম লাঞ্চ আওয়ারে নিজেই যাবো কিন্তু দেখি লাঞ্চ আওয়ার শুরুর একটু আগে ও নিজেই এল । বলল
-আজকে আর অফিস করতে ভাল লাগছে না । চল না কোথাও ঘুড়ে আসি ।
এতো দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি । আমি বললাম
-আমিও এই কথাই ভাবছিলাম । কোথায় যাবা বল ?
-তুমি বল ?
-প্রথমে মগবাজারে যাই !
-ওখানে কি ?
ওখানেই তো মজা । মগ বাজার কাজী অফিসেই তো তোমাকে আজ বিয়ে করবো । এই কথাটা বলা হল না, বললাম
-ওখানে আজ তোমাকে ফকরুদ্দীনের বিরানী খাওয়াবো । তারপর ওখান থেকে মাওয়া ।
নিশির চোখ দুটো আনন্দে চকচক করে উঠল ।
-নদীর পাড়ে নিয়ে যাবে ? ওয়াও !!
ও খুশি হল । আমিও খুশি হলাম । ওর মন খুশি থাকবে । কোথায় যাচ্ছি কেন যাচ্ছি এতো প্রশ্ন করবে না ।
রিক্সায় ওঠার পর ওকে বললাম
-সুমি মগ বাজারের দিকে থাকা না ?
সুমি হচ্ছে নিশির খুব ভাল একটা বন্ধু ।
-হুম । মগবাজার কাজী অফিসটার একটু পাশে ।
-ওকে একটু ফোন করে কাজী অফিসটার সামনে থাকতে বল তো ।
-কেন ?
-আরে আজ ওকেও একটা ট্রিট দেই । আর আজ আমার মন ভালতো অনেক । আমার দুজন বন্ধুও আসছে ।
ওর মুখটা একটু মলিন হল ।
-আমি ভেবেছিলাম আমরা কেবল দুজন হব ।
-আরে ওরা কেবল বিরানী খাবে । বাকি সময়টাতো আমরা কেবল । কই তোমার বান্ধবীর নাম্বরটা দাওতো ।

খুব সংক্ষেপে আমার প্লানটা আমি সুমিকে এসএমএস করে পাঠালাম ।
নিশি বলল
-আজ কিন্তু আমরা অনেক্ষন থাকবো । একেবারে শেষ গাড়িতে ঢাকা আসবো । ঠিক আছে ?
- ইয়েস মাই প্রিন্সেস । অনেক ক্ষন থাকবো । দরকার হলে আসবোই না ।
বলে হাসলাম আমি ।
কাজী অফিসের সামনে নামতেই বন্ধু তুহিন আর সজিব কে দেখতে পেলাম । আমাদের দেখেই ওরা এগিয়ে এল । একটু পর সুমিও এসে হাজির হল । ও যখন সুমির সাথে কথা বলায় ব্যস্ত আমির ওদের কথা বলে নিলাম ।
সজিব বলল
- যে সব ঠিক আছে । এখন কেবল ভিতরে গেলেই হল ।
নিশি আমাদের দিকে এগিয়ে এল । বলল
-কই চল । ক্ষুদা লেগেছে ? ফকরুদ্দীনের বিরানী কোথায় ?
আমি বললাম
-সজিব যাচ্ছে বিরানী আনতে । ওখানে এখন খুব ভিড় । আমরা ভিতরে বসি ।
-কোথায় ?
কাজী অফিসটা দেখিয়ে বললাম
-এই তো এইটার ভিতরে ।
-কাজী অফিসের ভিতরে ? ও ইতস্তত করে বলল ।
আমি একটু হাসলাম । ওর কাছে গিয়ে ওর হাতটা ধরলাম ।
ও এতোক্ষন ইতস্তত করছিল কিন্তু আমার হাত ধরা দেখে যা বোঝার বুঝে গেল । ওর পুরো চেহারা জুড়ে এক অবাক বিশ্ময় দেখা দিল । বলল
-অপু ..... তুমি ..... ? না প্লিজ অপু .... । সাহায্যের আশায় ও সুমির দিকে তাকাল কিন্তু সুমির মুখ দেখে ও ঠিকই বুঝে গেল যে সুমিও আমাদের সাথে ।
-সুমি তুই ও ..!!
সুমি হাসল ।
নিশি আবার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ অপু বুঝতে পারছো না ! আমি বিয়ে করতে পারবো না । বিয়ে করতে পারবে না ।
আমি খুব জোড়ে একটা ধমক দিলাম
-ফাজিল মেয়ে ! বিয়ে করতে পারবে না মানে ?
খুব শক্ত করে ওর হাত ধরলাম । কিছুতেই এই হাত ছেড়ে দিবো না ।
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে এবং এখনই করতে হবে । তোমার কি প্রবলেম, কেন বিয়ে করতে চাও না, এসব আমি কিছু শুনতে চাই না । এখন আমাকে বিয়ে করবে, মানে এখনই ।
আমি জানি না জোড় আমি কোথায় পেলাম ! কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি জোড় খাটালে ও নিষেধ করতে পারবে না কিছুতেই । আর যদি একান্তই রাজি না হয় তাহলে রাজি না হওয়ার পেছনে কারনটা বলতে নিশ্চই । যেকোন একটা ওকে করতেই হবে ।
এই বলে ওকে এক প্রকার জোড় করেই কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে গেলাম । কাজীর সামনে ও আর কিছু বলল না । নিজেই মাথায় কাপড় দিল । চুপচাপ সাইন করল ।
যখন কাজী অফিস থেকে বাইরে বের হলাম যেন আরো বেশি উত্তেজিত বোধ করছিলাম । এতো দিনের স্বপ্ন সত্যি হল ।
সেই তুলনায় নিশিকে বেশ স্বাভাবিক মনে হল । সবাইকে বিদায় দিয়ে আমরা বাসে উঠলাম । পিছনের দিকে বসলাম । বাস চলতে আরাম্ভ করলেও দেখলাম ও চুপচাপই আছে । বোধহয় বিশ্ময় কাটাতে সময় লাগছে ।
আমার মনে অবশ্য প্রশ্ন একটা ঘুর পাক খেতে লাগল । খুব ইচ্ছা করছির কারনটা জানতে । ও কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিল না ? একবার মনে হল ওকে জিজ্ঞেস করি কারন টা । তারপর মনে হল থাক । জিজ্ঞেস করার জন্য সারা জীবন পড়ে রয়েছে । পরে কোন এক সময় জেনে নিবো নে । এখনতো এই সময়টা উপভোগ করি ।বললাম
-চুপ করে আছো কেন ?
-কি বলব ?
-কিছু বলার নাই ? কি প্লানিং করে তোমাকে বিয়ে করলাম দেখলে না ?
-আহ ! কি আমার প্লানার রে । বিয়ে করা বউকে পাবলিক বাসে করে নিয়ে যাচ্ছ । আমার মনে হয় পুরো পৃথিবীতে একমাত্র তুমিই একমাত্র মানুষ যে বিয়ের পর বৌকে এরকম ভাঙ্গা চোড়া পাবলিক বাসে উঠিয়েছ । মাইক্রো না হোক এটলিষ্ট একটা সিএনজি ভাড়া করতে পারতে !
আমি অবাক হলাম খানিকটা । এই মেয়ে বলে কি ? একটু আগে ও বিয়ে করতে চাইছিল না । আর এখন বিয়ের খুদ ধরছে । যেন এটা তার মন মত হয় নি । আশ্চর্য ! এই মেয়ে গুলার মন এতো বিচিত্র হয় ক্যান ?

(সমাপ্ত)

বিঃদঃ শেষটা হয়তো অনেকের কাছে ভাল লাগবে না । কিন্তু আমার কিছু করার নাই । আমি নিজেই কনফিউজড । শেষটা আরো দুবার লিখছিলাম ।তার মধ্যে আমার কাছে এইটাই ভাল লেগেছে । যদি আপনাদের ভাল না লাগে তাহলে ....../:)/:)/:)/:)/:)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:২৭
৪২টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×