somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিথিমনি (মাহী ফ্লোরা আপুর অসমাপ্ত গল্প)

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোনটা বেজে ওঠে বিপ বিপ আর অদ্ভুত একরকম শব্দ করে। ফোন বাজলেই তিথির অস্থির লাগে। মনে হয়ে কেউ বলছে এক্ষুনি ধর। এক্ষুনি ধর আমাকে। রান্নাঘর থেকে দৌড়ে গিয়ে সে ফোন ধরে। বাসায় তিথি একা। নিশ্চয় রায়হানের ফোন।
-উম বলো।
-কি করো বাবু?
-কি আর!
-তিথি?
-উ?
-মিস ইউ।
-এই! ফাজলামী হচ্ছে না? সারাদিন তো আমার সাথেই থাকো। মিস করার সময় পাও কেমনে?
-কি বলো? বিগত ৭ ঘন্টা আমি তোমারে দেখি নাই। খাড়ুস বস আমারে দিয়া দুনিয়ার কাম করাইতেছে। আধা ঘন্টার মধ্যে ফিরছি। তিথি আমার! কি লাগবে বলো। যা চাও তাই দেব।
-কিচ্ছু না। তুমি আসো। একটা কথা বলি?
-কি হয়েছে বাবু?
-দুটো লোক পূর্ব দিকের রাস্তাটায় গত চার ঘন্টা ধরে একটা মটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
-মানে কি? তুমি কখন দেখেছো?
-আরো আগে থেকে আছে কি না জানিনা। আমি চার ঘন্টা ধরে দেখছি। পর্দা সরিয়ে যতবার দেখছি ততবার ই তারা এই জানালার দিকেই তাকিয়ে আছে।
-ওরা কি বুঝছে যে তুমি খেয়াল করেছো?
-জানিনা আমি। তবে আমি আড়াল থেকেই দেখছি আমাকে দেখার কথা না। মাঝখানে একবার রোদের তাপ থেকে বাঁচতে একটু পাশে সরে গেল। ঐ যে সবুজ রঙের বাড়িটা আছেনা? ও পাশটায়।
-তোমাকে তো ঘন্টাখানেক আগেই ফোন দিলাম। তখন তো কিছু বললেনা? ঠিক আছে তিথিমনি চিন্তা কোরোনা। আমি ফিরছি এক্ষুনি।

তিথি একটু সরে এসে দেয়ালে লাগানো ডিমের মত আয়নাটার সামনে এসে দাঁড়ায়। রট আয়রনের ফ্রেমের ভেতর ঝকঝকে কাঁচ। লতানো কাজ করা আয়নাটার চারপাশে। একটু পাওডার বুলিয়ে নিতে ইচ্ছে করলো তিথির। কি যে হয়! মনটা অস্থির লাগে। ডান গালের পিম্পল টা একবার নখ দিয়ে খুঁটে দিতে গিয়েও অনেক কষ্টে হাত সরিয়ে নিল। দাগ হয়ে যাবে। শাড়ীর আঁচল টা কোনোমতে ঠিক ঠাক করে নেয়। কুঁচি গুলো উবু হয়ে টেনে দেয়।
ডোরবেলটা বেজ উঠলো পাখির মত টুই টুই করে। হালকা শরীর টা নিয়ে উড়ে যায় তিথি। সারাদিন পর! ইশ কি করে যে এত সময় যায়!

তিথির মনে একবার এই কথাটা আসলো না যে রায়হান মাত্রই পনের মিনিট আগেই ফোন দিয়েছে । এতো তাড়াতাড়া ওর আশা সম্ভব না কিছুতেই ।
তিথি মনে মনে খুব হাসল । এই রায়হানটা ওকে নিয়ে এতো ভয় পায় , ওকে নিয়ে এতো চিন্তা করে !
সকালে অফিসে যাবার পর প্রত্যেক বিশপঁচিশ মিনিট পর পর ফোন । লাটুপুটু প্রেমের কথা বলা । তিথির খুব ভাল লাগে । কিন্তু শুধু কি ফোনে কথা বলে মন ভরে ! তাই রায়হান তাড়াতাড়ি বাসায় আনার জন্য তিথি মাঝে মাঝে মিথ্যা কথা বলে । ঠিক মিথ্যা বলা যায় না এটা কে ! ভালবাসার মানুষকে কাছে পাবার জন্য অনেক কিছু করা যায় ! এতে দোষের কিছু হয় না ।
এই তো মাস দুয়েক আগের কথা । রায়হান সবে মাত্র অফিস গেছে । কিন্তু তিথির ওকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল । মনে হচ্ছিল ওকে যদি তিথি কাছে না পায় ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।
তখনই রায়হানকে ফোন দিল ও । ফোন দিয়েই কোন কথা বলল না । চুপ করে থাকল ।
-বাবু কথা বলছো না কেন ?
-আমার খুব খারাপ লাগছে ।
তিথি এমন ভাবে কথাটা বলল যেন ওর কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে ।
-বাবু কি হয়েছে ? এমন কেন করছ ? কি হয়েছে বল ?
তিথি খুব ভাল করে বুঝতে পারছে রায়হান খুব অস্থির হয়ে গেছে । ফোনে ওর কণ্ঠস্বর শুনে বোঝা যাচ্ছে । তিথি বলল
-সোনাপাখি তুমি একটু আসবে ? আমার খুব খারাপ লাগছে । তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে ।
সেদিন রায়হান যেন একেবারে উড়েই বাসায় চলে এসেছিল । এরকম মাঝে মাঝেই ও করে ।
আজ ঐ লোকদুটোর কথা বানিয়ে বলল রায়হানকে । অবশ্য আর একটু হলেই ধরা পরে যেত । রায়হান যে একটু আগে ফোন দিয়েছিল সেটা ওর মাথায়ই ছিল না । তা না হলে চার ঘন্টার কথা ও বলতই না । মিথ্যা বলার এই একটা ঝামেলা ! কত দিক থেকে যে লক্ষ্য রাখতে হয় ।
ডোর বেলটা বেজেই চলেছে । তিথি আবারও হাসল । রায়হানটা এতো অস্থির । শোবার ঘর থেকে দরজার কাজে আসতে বড় জোর বিশ সেকেন্ড লাগে । এর মধ্যে চার বার বাজানো হয়ে গেছ ।
-আসছি বাবা .....
তিথি দরজা খুলতে খুলতে বলল
-এতো অস্থির .....
তিথির কথা শেষ হল না । কারন দরজার ওপালে যে লোকটা দাড়িয়ে আছে সে রায়হান নয় ।
দরজার ওপাশে দাড়ানো লোকটা বলল
-কেমন আছে তিথিমনি ?
তিথিমনি ?? কতদিন পর এই ডাকটা শুনলো !!
তিথিমনি !!
আবীর হাসল । সেই পরিচিত হাসি ।
-আমাকে ভেতরে আসতে বলবে না তিথিমনি ?
তিথি দরজা থেকে সরে দাড়াল । আবীর ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকাতে লাগল ।
-রায়হান সাহেব তো অফিসে তাই না ?
তিথি কোন জবাব দিল না । এতো দিন পর আবীর কে দেখতে পাবে ও ভাবতেই পারে নি । আবীর আবার ওর জীবনে আসবে এই কথাটা ওর মনে হয় নি একবারও । তিথির মাথার ভেতরটা কেমন জানি করতে লাগল । আবীর ততক্ষনে ওর পছন্দর সোফাটার উপর বসে পরেছে ।
-কই বস ! কতদিন পর আমাদের দেখা হল ! বসে একটু কথা বার্তা বলি ।
তিথি বসল না । দরজার কাছেই দাড়িয়ে থাকল । হঠাত্‍ বলল
-তুমি কেন এসেছ আবীর ?
-তোমাকে দেখতে এসেছি ।
-কেন দেখতে এসেছ ? সেই অধিকার কি তোমার আছে ? সেই অধিকার তুমি হারিয়ে ফেলছো ।
-এভাবে বল না প্লিজ । আমি অনেক দুর থেকে এসেছি তোমার সাথে একটু দেখা করার জন্য । কতদিন পর তোমার দেখলাম !
-আবীর তুমি এখন যাও । আমার হাজবেন্ড এখনই চলে আসবে ।
-তাড়িয়ে দিচ্ছ ?
-হু । তাড়িয়ে দিচ্ছি ।
-তোমার কথা অনেক মনে পড়ছিল । তাই একটু দেখা করতে এসেছি ।
-আমাকে মনে পড়ছিল ? তোমার মনে পড়ছিল ?
তিথি তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল ।
-হু ।
-তুমি যখন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে তখন আমার কথা মনে পরেনি ?
আবীর কোন কথার জবাব দিলো না । কেবল চুপ করে দাড়িয়ে থাকলো । তিথি আবার বলল
-তোমার কথা আমার আর একটুও মনে নেই । আমি রায়হানকে নিয়ে অনেক সুখে আছি । আমার এ জীবনে তোমার আর কোন স্থান নেই । কোন স্থান নেই ।
শেষের কথাটা তিথির নিজের কাছেই খুব কঠিন শোনালো । আবীর আর কিছু বলল না । দরজার দিকে পা বাড়াল । যাওয়ার আগে কেবল বলল
-তিথিমনি খুব কঠিন হয়ে গেছ । এতোটা কঠিন তো তুমি ছিলে না ।

আবীর চলে যাবার পরর তিথির কেন জানি খুব কান্না পেতে লাগল । দরজা বন্ধ না করেই তিথি মেধে বসে বসে কাঁদতে লাগল । কেন কাঁদতে লাগল কে জানে ?
রায়হানকে বিয়ে করার পর ও আবীর সব কিছু একদম ভুলিয়ে দিয়েছিল । আর রায়হান ওকে এতো ভালবাসা দিয়েছে যে আবীর কোন কিছু এই কয়দিনে ওর একটুও মনে পড়ে নি ।
আর আবীর ওকে যেদিন একা রেখে চলে গিয়েছিল সেদিন থেকে ও সব কিছু ভুলে গিয়েছে । নিজের জীবন থেকে আবীরের নাম মুছে ফেলেছে । তাহলে আজ কেন এই কান্না ? কিসের জন্য এই কান্না ? তিথি এই কান্নার কোন ব্যাখ্যা দিতে পারে না ।
রায়হান বাসায় এসে দেখে দরজা হাট করে খোলা । আর তিথি মেঝের উপর চুপচাপ বসে আসে । ব্যাগটা ফেলে তিথিকে জড়িয়ে ধরল ।
-কি হয়ে বাবু ? এমন করে বসে আছো কেন ? বল আমাকে কি হয়েছে ?
তিথি কোন কথা বলে না ।
কেবল রায়হানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে ।



কিছু কথা বলি : আজ সকাল বেলা সামু তে এসেই দেখি মাহী ফ্লোরা আপু নতুন লেখা দিয়েছে । পড়তে শুরু করি । কিন্তু পড়তে না পড়তেই গল্প শেষ হয়ে গেল । প্রথমে ভাবলাম হয়তো পরের পর্বে শেষ হবে কিন্তু মন্তব্য পড়ে বুঝলাম গল্প এখানে শেষ । এটা কি হইল ? গল্পতো শেষ হল না । থলে কি ভাবে হবে ? ইচ্ছা হল আপুর নামে মামলা করি;);););););) । গল্পের শুরুটা এতো সুন্দর এতো রোমান্টিক আর অল্প একটু গিয়েই বলে গল্প শেষ X((:PX((:P। ত হবে না না ।
তারপর আপু যখন নিজেই বলল যে গল্পটা শেষ করতে নিজের মত করে তখন শুরু করে দিলাম ।আবার শেষও করে ফেললাম । হয়তো আপুর মত হয় নি । হয়তো বলছি কেন ওনার মত হবই না । তবুও চেষ্টা করলাম । জানি না কেমন হইছে । ভাল থাকবেন ।

আপুর গল্পটা এখানে আছে ।
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×