somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি আর তোমাকে ভালবাসার গল্প !!

২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক্ টা সময় ছিল ওর কথা খুব বেশি করে মনে পড়ত । ওর কথা মনে হলে বুকের এক পাশটা কেমন জানি করে উঠত । মনেহত ওকে ছাড়া হয়তো বেঁচে থাকাই সম্ভব নয় । কিন্তু এই আমি দিব্যি বেঁচে আছি ।
আমাদের ইংরেজি স্যার বলতেন সময় সব বেদনার সফল ঔষধ । আসলেই তাই । কিন্তু এখন ও আকাশে মেঘ ডাকলে ওর কথা মনে পড়েই যায় ।
ও বারান্দার গ্রিল ধরে বৃষ্টি দেখতে খুব পছন্দ করত । প্রায় ই দেখতাম গ্রিলের মধ্যে হাত দিয়ে ও বৃষ্টির পানি নিয়ে খেলা করছে । আমি সুযোগ পেলেই দেখতাম ওকে । মুখোমুখী বাসা হওয়ার ওর বাবান্দা টা খুব ভাল করেই দেখা যেত আমার জানালা থেকে । প্রথম প্রথম আমাকে দেখলেই ও ঘরের ভিতর চলে যেত । কিন্তু একদিন দেখলাম আমাকে দেখেও ও বারান্দা থেকে চলে গেল না । আপন মনে বৃষ্টির জল নিয়ে খেলতে থাকলো । সে দিন আল্লাহর কাছে বারবার দোয়া করছিলাম যেন বৃষ্টি না থামে । তারপর থেকে প্রায়ই চলতে থাকলো আমাদের চোখাচোখির খেলা । মাঝে মাঝে এক চিলতে হাসিও দিত আমাকে দেখে ।
এক দিনের কথা । রাত তখন একটা দেড়টা হবে । আমি পড়ছিলাম । হঠাৎ দেখি আমার ঘরের মাঝে লাল লাল কিছু আলো বিন্দু খেলা খেলছে । প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝলাম আলো টা আসছে সামনের বারান্দা থেকে । দৌড়ে গিয়ে দাড়ালাম জানালার কাছে । গিয়ে দেখি প্রিন্সেস দাড়িয়ে আছে বাড়ান্দায় ।
আজ আর কোন লুকচুরি নয় । সরাসরি তাকিয়ে ছিলাম ওর চোখের দিকে । ও ঠিক একই ভাবে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে । কোন কথা নাই কেবল দুই জোড়া চোখ একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছে অপলক । কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম জানি না । এক সময় ও কথা বলে উঠল
-ঘুমিয়ে পড় , বেশি রাত জাগতে নেই ।
ব্যস এইটুকুই । তারপর ও ঘরের ভিতর চলে যায় । একটু পর লাইট বন্ধ হয়ে যায় ওর ঘরে । এভাবেই চলতে থাকে দিনের পর দিন । কোন কথা নাই কেবল নির্বাক চেয়ে থাকা একে ওপরের দিকে ।
তারপর একদিন ঘটল সেই অবিশ্বাস্য ঘটনা । যার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না মোটেই ।
সেদিন সকালবেলা স্কুলে যাচ্ছিলাম । সকাল বেলা । স্কুলের সামনে নেমে রিক্সা ভাড়া দেওয়ার জন্য টাকা বের করছি এমন সময় আমার চোখ গেল স্কুলগেটের পাশের কড়ই গাছটার নিচে । একটা স্কুল ড্রেসপরা একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে জড়সড় হয়ে । মেয়েটার দিকে ভাল করে তাকাতেই .....
OMG!!!
এতো..... ও ।
ও মানে আমার সামনের বাড়ির মেয়েটা ।
ও এখানে ??
মনের মধ্যে হাজার টা প্রশ্ন এক সাথে উকি দিলো ।
ও এখানে কি করছে ?
কি চায় ?
এখানে কি কারো সাথে দেখা করতে এসেছে ?
আমার সাথে নাকি ?
এরকম হাজার টা প্রশ্ন । যার কোন টারই উত্তর আমার জানা নাই । খানিকটা দুরুদুরু হৃদয় আর কাঁপা কাঁপা হাতপা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম । মেয়ে সেই একই ভাবে নির্বাক চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিল আমার দিকে ।
কাঁপা গলায় বল্লাম "এখানে ?"
ও কিছু বল্লো না । বইয়ের ভিতর থেকে একটা খাম বের করে আমার দিকে এগিয়ট দিল । আমার কি মনে হচ্ছিল বলতে পারব না । কিন্তু যা হচ্ছিল তা আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না কিছুতেই ।
তাই খানিক টা বেকার মতই প্রশ্ন করলাম
"কি এটা ? আমার জন্য ?"
প্রশ্ন করার পর মনে হল কি গাধা আমি ! কি বলব আর কি বললাম । ও খানিকটা গম্ভীর মুখ নিয়ে বল্লো
-এপ্লিকেশন লেটার । তোমার হেড স্যারের জন্য ।। গাধা কোথাকার ! বোঝ না কি ?
তারপর ও পেছন ঘুরে হাটা ধরল । একবার মনে হল ডাক দেই । দিলাম না ।
কিন্তু দেখলাম ও নিজেই ঘুরে তাকাল । এক বার । পরে আরো একবার ।
ওর যাওয়া দেখতে দেখতেই খাম টা খুল্লাম । A4 সাইজের অপসেট পেপার । পুরো পৃষ্টায় কেবল একটা বাক্যই লেখা ।
"আমি তোমাকে ভালবাসি"
ব্যস আর কিছু না । অবশ্য আর কিছুর দরকার ও নাই । চিঠি থেকে মুখ তুলে ওর দিকে তাকালাম । ততক্ষনে ও অনেক দুর চলে গেছে । খুব ইচ্ছা করছিল দৌড়ে গিয়ে ও কে বলি "আমিও তোমাকে ভালবাসি" । কিন্তু স্কুলের ঘন্টা পড়ে যাওয়ায় আর যাওয়া হল না । অন্য রকম এক ভাল লাগা নিয়ে স্কুলে ঢুকলাম । মন তখন অসম্ভব ভাল ।
কিন্তু মন বেশিক্ষন ভাল থাকে নি সেদিন । প্রথম পিরিয়ড যাওয়ার আগের বাসা থেকে খবর আসে যে আব্বা গাড়িতে করে অফিস যাওয়ার সময় এক্সসিডিং করেছে । স্কুল থেকে হাসপাতালে চলে যেতে হয়েছিল । তারপর কিভাবে দিন চলে গেল টের ই পেলাম না । আব্বা একটু সুস্থ হলে তারপর আসি বাসায় । তাও প্রায় ৭/৮ কেটে গেছে । বাসায় এসে প্রথমেই ওর কথা মনে পড়ল ।
অনেক্ষন জানালার কাছ দাড়িয়ে থাকলাম । বিভিন্ন ভাবে জানান দেওয়ার চেষ্টা করলাম যে আমি এসেছি । কিন্তু তার কোন খবর নাই । ভাবলাম হয়তো রাতের বেলায় আসবে । কিন্তু রাতের বেলাও সে এল না । তারপর দিনও না । এমন কি তারপর দিনও না ।
তারপর ই সেই খবর পেলাম তার । ৫ দিন আগেই নাকি তারা বাসা ছেড়ে চলে গেছে । ওর বাবার হঠাৎ করে বদলির নির্দেশ আসায় নাকি এমন টা করতে হয়েছে ।
হায়রে কপাল আমার ! আমার প্রেম কাহিনী শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল । ও চলে যাওয়ার পর আমার দিন গুলো কষ্টে কাটতো । কিচ্ছু ভাল লাগতো না । বেঁচে থাকাটা বড় অর্থহীন মনে হত । মনে হত মরে যাই ।
তারপর আর আমার জীবনে প্রেম আসে নি । সময় গড়িয়েছে । স্কুল পেরিয়ে কলেজ তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি তবুও তার কথা ভূলতে পারি নি কিছুতেই । তাকে হারানোর ক্ষত হয়তো শুকিয়েছে কিন্তু সেই দাগ মুছে যায় নি । এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।
তারপর……… তারপর ঘটলো আবার এক অবিশ্বাস্য ঘটনা । ও আবার এল আমার জীবণে । এমন ভাবে যা আমি কল্পনাই করি নি ...
সেদিন আমাদের ডিপার্টমেন্টে নবীণ বরণ অনুষ্ঠান ছিল । স্যারদের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকার কারনে মোটামুটি সব দায়িত্বই ঘারে এসে পড়ল । অনুষ্ঠান শুরু হবার পর থেকেই আমার কেন কেন জানি মনে হতে থাকে কেউ যেন আমাকে দেখছে । আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । এই ফিলিংসটা আমার খুব স্ট্রং । কেউ আমার দিকে কিছুক্ষন তাকালেই আমি বুঝে ফেলি ।
খুব বেশি আমলে নিলাম না । কারন এতো ছেলে মেয়ে যে কেউ তাকাতেই পারে ! অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে সব নতুন ছেলে মেয়ে দের দাড়িয়ে নাম ঠিকানা বলতে বলা হল । সবাই একে একে বলতে থাকে । কে কোথা থেকে এসেছে ইতাদি । আমরা বন্ধুরা যারা অনুষ্ঠানে ছিলাম সবাই ই ব্যস্ত ছিলাম ।
তবুও একটা নাম শুনে আমার বুকটা ধক করে উঠল । আমি ফুল ঠিকঠাক করছিলাম নতুন শিক্ষার্থীদের দেবো বলে ।
এমন সময় একজন তার নাম ঠিকানা বলছিল । "আমি রেহনুমা নাহিদ । এসছি যশোর থেকে ...."
আমি চড়কির মত ঘুরে দাড়ালাম । কন্ঠ টা আমার খুব চেনা । এতো বছর পরও একটুও ভূলি নাই সে স্বর । আর রেহনুমা নাহিদ ওর নাম ।
আমার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছিলো না যা ও হতে পারে । তাকালাম ওর দিকে । আমি কত দিন পর আবার ঐ মুখ খানি দেখলাম ।
সেই নির্বাক চোখ জোড়া একই ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এরপর যতক্ষন অনুষ্ঠান চলল আমাদের সেই চোখাচোখির খেলা চলল । এমনকি নবীন বরণের ফূলটাও আমি নিজে হাতে ওকে দিলাম ।

অনুষ্ঠান শেষ হতেই আমি তাড়াতাড়ি বের হতে চাইলাম । কিন্তু স্যার আটকে দিলেন । সব কাজ শেষ করে বের হতে হতে আরো ঘন্টা খানেক পাড় হয়ে গেল । ততক্ষণে পুরো ভার্সিটি ফাঁকা হয়ে গেছে । ও এতোক্ষন নিশ্চই অপেক্ষা করবে না । মনটা খানিক খারাপ হল । তবুও ওকে তো আবার ফিরে পেলাম ।
মাই গড ! আমার এখনও বিশ্বাসই হচ্ছে না । ও কে আবার দেখতে পাবো ভাবিনি । ভাল লাগছে মনের ভিতর ।
কিন্তু আজ আর একবার দেখা হলে ভাল লাগতো !
গেট দিয়ে বের হবার সময় ....
আবার একই দৃশ্যের পুনরাবূত্তি হল । দেখলাম সেই সেদিন কার মত ও গেটের কাছে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আমার জন্য !
আবারও সেই দুরুদুরু বুক নিয়ে ওর সামনে দাড়ালাম । কত কিছু বলার ছিল ওকে ! কত কিছু জানার ছিল ওর কাছ থেকে । কি বলব ভেবে পাচ্ছিলাম না । কিন্তু আমার স্বভাব যা । আবারও বোকার মত জানতে চাইলাম
-তোমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই তো ?
প্রশ্নটা করেই মনে হল এটা কি বললাম !!
ও গম্ভীর হতে গিয়ে হেসে ফেলল । বলল
-বয়স বেড়েছে বুদ্ধি বাড়েনি । অন্য কোন বয়ফ্রেন্ড থাকলে আমি দুঘন্টা ধরে তোমার জন্য এখানে দাড়িয়ে থাকতাম না । গাধা কোথাকার ।

(সমাপ্ত)


বিঃদ্রঃ এটা আমার ব্লগ জীবনে লেখা প্রথম গল্প । অপরিপক্ক হাতের লেখা । অবশ্য এখনও অপরিপক্কই আছি । সবার প্রথমে পোষ্ট করেছিলাম এই গল্পটা । আজ কেন জানি আবার দিতে ইচ্ছে হল । অনেকে হয়তো পড়েছেন । আবারও পড়েন । টাটা

গল্পটা এখানে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৩২
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×