somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূতের তাড়া খেয়ে এলাম বাড়ি থেকে ! সরি ভূতের না , পেত্নীর...।

১৭ ই জুন, ২০১২ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধুপ করে কারেন্ট চলে গেল । সময় দেখলাম রাত প্রায় ১২টা ।
গরমের ছুটিতে বাড়িতে এসে এই এক বিপদে পরেছি । যখন তখন কারেন্ট চলে যায় ।
ঢাকায় তো একটা নিয়ম মাফিক কারেন্ট যায় আর আসে কিন্তু এখানে গেলে আর আসার নাম থাকে না । তার উপর আমাদের এই এলাকাটায় ছন্নছাড়া গরম পরছে ।
কাল দেশের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি উঠেছিল । আজও কম কিছু না । জানলা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি মাঝে মাঝে বিদুৎ‍ চমকাচ্ছে । তারমানে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা আছে ।
কিন্তু পরিবেশ কেমন একটা ভ্যাবশা গরম । এই অবস্থায় ঘরে বসে থাকার উপায় নেই ।
আমি দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম । আমাদের বাড়ির ঠিক ডান পাশে বিশাল বাশের ঝার । ঠিক আমার বাধরুমটার পাশে ।
রাতের বেলা বাথরুমে গেলে মনে হয় কেউ যেন বাধরুমের ছাদের উপর হাটছে । আসলে যখন বাতাস হয় বাশের কোঞ্চি গুলো ছাদের সাথে আঘাত করে তাই মনে হয় কেউ যেন ছাদের উপর হাটছে ।
প্রথম বার শুনলে যে কারো ভয় লেগে যেতে পারে ।
কিন্তু আমার কিছু মনে হয় না ।
বাড়ির সীমানা পেরিয়ে বড় একটা কানা পুকুর আছে । বর্ষা কালে খুব পানি জমে কিন্তু এখন একদম শুকনো ।
প্রতিদিন বিকালে এখন ঐ পুকুরে ক্রিকেট খেলা হয় । দুর থেকে দেখতে ভালই লাগে । কেমন একটা স্টেডিয়াম স্টেডিয়াম ভাব ।
কানা পুকুরটার পাশে মকছেদ হাজির আম বাগান ।
অবশ্য আম বাগান না বলে আম বাগানের ছেলে বললেই ভাল । আগে অনেক বড় বড় গাছ ছিল ।
কিছুদিন আগে সবগুলো কাছ কেটে ফেলা হয়েছে ।
ওখানে আবার লাগানো হয়েছে আমের চারা । সেই হিসাবে শিশু আমের বাগান ।
আমি কানা পুকুরের পাড়ে একবার আম বাগানটার দিকে তাকালাম । যাবো কি ঠিক বুঝতে পারছি না ।
আমি খুব যে সাহসী তা বলবো না তবে একেবারে ভীতু না । তার উপর এতো রাতে একা একা ঐ আম বাগানের মধ্যে যাওয়া ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না ।
ভুতপেত্নী না হোক সাপটাপের ভয় তো আছে ।
আর চারিদিকে ঘুরঘুটে অন্ধকার । ঢাকার মত না । রাত ১২ মানে এখানে নিশুতি রাত ।
তাছাড়া মা আমার এরকম রাত জাগার অভ্যাসটা খুব ভাল করে জানেন । খুব ভাল করে বলে দিয়েছেন আম বাগানের দিকে যেন না যাই ।
ভয়টয় পেতে পারি । তার অবশ্য কারনও আছে । মাস ছয়েক আগের কথা ।
তখন আম বাগানে সব গাছ গুলোই ছিল । একদিন সকাল বেলা শোনা যায় একটা আম গাছের ডালে ওড়না পেচিয়ে একটা মেয়ে আত্মহত্যা করেছে । আমি নিজে দেখতে গেছিলাম সেই লাশ ।
কি এক বিভত্ৎশ দৃশ্য !
আমি এখনও ..!
থাক এখন মনে করতে চাই না !
আমি আর একটু কাছে গেলাম আম বাগান ঠিক তখনই বিদ্যুৎ‍ চমকালো ।
আমিও চমকালাম !
একবার মনে হল আমি ভুল দেখলাম । কিন্তু আমি ঐদিকটাতেই তাকিয়ে ছিলাম । ভুল হবার কথা নয় । যে কয়েক মুহুর্তের জন্য বিদ্যুৎ‍ চমকালো ঐ সময় দেখলাম পুরো আম বাগান টা যেন পুরোনো সেই রুপে ফেরৎ এসেছে ।
মানে পুরো বাগান জুরে কেবল বড় বড় আম গাছ !
কিন্তু তা কি করে হয় ? আমি তো বিকেল বেলাতেও এখানে ছিলাম । তখনও তো এমন কিছুই ছিল না । গাছ গুলো ছিল সব ছোট ছোট । আমার সমান হবে ।
এখনই আমার ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত্‍ । কিন্তু এক অদম্য কৌতুহল আমাকে আম বাগানটার দিকে নিয়ে গেল ।
আমার যেন মনে হচ্ছে আমাকে ঐ খানে যেতেই হবে । যখন আম বাগানে প্রবেশ করতে যাবো ঠিক তখনই আবারও বিদ্যুৎ‍ চমকালো । এবং আমি আবারও একই দৃশ্য দেখলাম ।
পুরো বাগানটা বড় বড় গাছে ভর্তি । আমি মন্ত্রমগ্ধের মত বাগানে প্রবেশ করলাম ।
আর একটা অদ্ভুদ ব্যাপার আমি লক্ষ্য করলাম যে চারিপাশে কেমন জানি একটা আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে গেল । আগে যেমন কিছুই দেখা যাচ্ছিল না , এখন সব কিছু দেখা যাচ্ছে ।
আমি অবাক হয়ে সব গাছগুলোকে দেখছি । আমি জানতাম যে মানুষ কেবল মরা মানুষ দেখে অথবা বলা চলে কেবল মানুষের ভুতই মানুষ দেখতে পায় । আমি তো মরা গাছের ভুতও দেখতে পাচ্ছি ।
জগদিস চন্দ্র বসু যে আবিষ্কার করেছিলেন গাছের প্রান আছে আর আজ আমি আবিষ্কার করলাম সেই প্রান মরে ভুতও তৈরি হতে পারে !
কিন্তু তাই বলে কেবল গাছের ভুতই দেখবো মানুষের ভুত দেখবো না এটা কেমন হয় ?
কেন জানি শুধু গাছের ভুত দেখে ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না । যদি দু একটা ...
আমার মনের কথা মনেই রয়ে গেল । একটা গাছের সামনে আসতেই আমি দ্বিতীয়বারের মত সেই বিভৎ‍শ দৃশ্যটা দেখতে পেলাম ।
দেখলাম আমগাছের নিচু একটা ডাল থেকে গলায় ওড়না পেচানো অবস্থায় সেই মেয়েটা ঝুলে আছে । মেয়েটার হাত দুটো সামনে নিশ্চল হয়ে আছে । গলাটা অস্বাভাবিক ভাবে একদিকে কাত হয়ে আছে । সব থেকে ভয়ংকর লাগছে মেয়েটার জ্বিব্বাহ টা । অর্ধেকটার বেশি বের হয়ে আছে ।
কেমন একটা গা ঘিনঘিন করা অবস্থা । আর চোখ গুলো যেন এখন জ্বীবন্ত । জ্বলজ্বল করছে !
আমার সাহস হল না ঐ খানটাতে দাড়িয়ে থাকার । ঘুরে এক দৌড় মারলাম ।
বাগান থেকে বাড়ির পায়ে হাটা দুমিনিটের পথ । দৌড়ে গেলে তিরিশ সেকেন্ডও লাগার কথা না ।
কিন্তু আমার কাছে মনে হল যেন তিরিশ বছর ধরে আমি দৌড়াচ্ছি । চারিপাশে কোন কোন আওয়াজ নেই কেবল আমার দৌড়ানো আর বুকের স্পন্দনের আওয়াজ ছাড়া । আমার আসলে মনে হচ্ছে যে আমি দৌড়াচ্ছি কিন্তু আসলেই কি আমি দৌড়াচ্ছি ?
তাহলে এতো সময় লাগবে কেন ?
হঠাৎ‍ আমার পিছনে কিছের যেন আওয়াজ পেলাম ।
কেউ কি আসছে ?
ধুপধুপ আওয়াজ পাচ্ছি পিছনে । আমার আর পিছনে তাকানোর সাহস হল না । আমি আমার দৌড়ানোর গতি আরো একটু বাড়িয়ে দিলাম । যে করেই হোক আমাকে বাড়ির গেট টা পর্যন্ত পৌছাতেই হবে ।
ঐ তো দেখা যাচ্ছে গেট ।
কারেন্ট চলে এসেছে বোধহয় ! চল্লিশ পাওয়ারের বাল্বটাও জ্বলছে । ঐ আলো যেন আমার দৌড়ানোর গতি আরো একটু বাড়িতে দিল । পেছনের ধুপধাপ করে এগিয়ে আশাটাও যেন একটু বেড়ে গেল ...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১২ রাত ২:৩৭
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×