somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম করবো না বলে কত কিছু করলাম ! কিন্তু কি আশ্চার্য ভাবেই না নিশির প্রেমে পড়ে গেলাম ।

২২ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পল্টুর বুদ্ধিটা আমার মোটেই পছন্দ হল না ।
-কি মামা পছন্দ হইল না বুদ্ধিটা ?
পল্টু জানতে চাইল । আমি বললাম
-তুই যেমন তোর বুদ্ধিও তেমন ।
-আরে মামা শোন না ! এখন মেয়েরা একটা ছেলেকে কি দেখে বেশি পছন্দ করে বলতে পারিস ?
-কি দেখে ?
-দেখে ছেলেটা ভার্জিন কিনা ?
-তোকে বলেছে ?
-একটা ছেলেকে দেখে কিভাবে বুঝবে যে ছেলেটা ভার্জিন কিনা ?
-আছে মামা আছে ? মেয়েরা এটা বুঝতে পারে ! আর সব থেকে কমন যে জিনিস মেরেরা দেখে সেটা হল ছেলেটার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল কিংবা এখনও আছে কি না !
-শোন পল্টু তোর এই ফালতু প্যাচাল শুনতে ভাল লাগছে না । সোজাসুজি বল নিমকির হাত থেকে কিভাবে রেহাই পাবো ?
-আরে সেইটাই তো বলছি মামা ! নিমকি তোকে কেন পছন্দ করেছে বল ?
-কেন ?
-কারন তোর কোন গার্ল ফ্রেন্ড নাই কিংবা তুই কাউকে ভালবাসিস না এই জন্য । কোন ভাবে যদি তুই নিমকির মনে এইটা ঢুকাতে পারিস যে তুই অন্য কাউকে ভালবাসিস তাহলে নিমকি তোর পিছু ছেড়ে দিবে !
আমার তবুও কথাটা বিশ্বাস হয় না । আসলে এই মেয়ে গুলা বড় জটিল কিসিমের হয় । তাই এদের থেকে সব সময় দশ হাত দুরে থাকি আমি ।
কিন্তু আর বুঝি থাকা গেল না ।
এই নিমকি মেয়েটা মোটামুটি গায়ে পরেই আমার দিকে এগিয়ে আসছে । আর মেয়েটায় ভাব চক্করও খুব বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না । একবার ভাবলাম সরাসরিই মেয়েটাকে বলি যে এসব আমার পছন্দ না একদম ।
কিন্তু সেই দিকেও আবার প্রবলেম আছে । নিমকির বড় ভাই ছাত্র লীগের বড় নেতা ।
যদি সরাসরি কিছু বলি আর নিমকি যদি সরাসরি কথা ওর ভাইয়ের কাছে সরাসরি বলে দেয় তাহলে ওর ভাই আমাকে সরাসরি কি করবে আমি নিজেই জানি না ।
তাই বুদ্ধি নিতে আসলাম পল্টুর কাছে । কিন্তু শালা এমন সব অদ্ভুদ বুদ্ধি দিতেছে যে ভরসা করতে পারছি না । আমি বললাম
-আচ্ছা তুই তাহলে বলতে চাস যে আমি এখন একটা মেয়েকে প্রপোজ করবো এবং এই কথা যখন নিমকির কানে যাবে তখন ও আমার পথ থেকে সরা যাবে ।
-হুম ।
-যদি না যায় ?
-যাবে মামা যাবেই । থিওরি তাই বলে ।
-আচ্ছা ।
-কিন্তু আরো একটা সমস্যা আছে ।
-কি সমস্যা ?
-সে মেয়েটাকে আমি প্রপোজ করবো সে যদি রাজি হয়ে যায় ! তখন ?
-ভয় নেই হবে না । তোর মত ভ্যাগাবন্ড টাইপের ছেলের প্রপোজ মেয়েরা এক্সেপ্ট করবে না ।
নাহ পল্টুর কাছে আসাটাই আমার ভুল হয়েছে । ওর ঘিলু দিয়ে কোন সহজ বুদ্ধি বের হবে এটা আমার ভাবাই ভুল হয়েছে । বললাম
-পল্টু তুই কিন্তু আমার কাছে মার খানি একটু আগে বললি নিমকির মত মেয়ে আমার ছেলেই পছন্দ করে আবার এখন বলছিস আমার মত ছেলেদের প্রপোজ মেয়েরা গ্রহন করবে না । তুই কি আমাকে ভূগোল বুঝাচ্ছিস নাকি ?
পল্টু একটুও বিচলিত না হয়ে বলল
-আরে মামা এখানেও ব্যাপার আছে । সব মেয়েকে তো আর এক ক্যাটাকরিতে ফেললে হবে না । নিমকির মত মেয়ে আছে যারা মনে কর এ ক্যাটাকরির মেয়ে । ঐ মেয়ে গুলার কাছে তোর মত ছেলেদের খুব চাহিদা । আর মনে কর বি ক্যাটাকরির মেয়ে , একটু সিরিয়াস টাইপের মেয়ে , ঐ মেয়েগুলার কাছে তোর ভ্যালু জিরো ।
-তা আমি কিভাবে বুঝবো কোনটা এ আর কোনটা বি ক্যাটাকরির মেয়ে ।
-একটু চোখ কান খোলা রাখ । তুই নিজেই বুঝতে পারবি ।
যদিও বুদ্ধিটা আমার ঠিকমত পছন্দ হয় নি কিন্তু এর থেকে আর কোন ভাল বুদ্ধি আমি বের করতে পারলাম না ।
তাই বি ক্যাটাকরির মেয়ের খোজ শুরু করে দিলাম ।
আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম যে আমি তাড়াতাড়ি খুজে বের করতে পারবো তো ? যদি খুজে পাবার আগেই নিমকি আমাকে প্রপোজ করে ফেলে তাহলে তো আমার খবর আছে !
কিন্তু আমি বি ক্যাটাকরির মেয়ে পেয়ে গেলাম । আমাদের ক্লাসেরই ।

নিশি খুব সিরিয়াস টাইপের মেয়ে । খুব ভাল ছাত্রী । সারাটা দিন পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু বোঝে না । আমি নিশ্চিত এই মেয়ের জীবনে পড়ালেখা ছাড়া আর কোন কিছুর স্থান নেই । প্রেম ভালবাসার তো নাই ই !
আর আমার মত ছেলের জন্য নিশির সময় থাকবে এই কথা তো কল্পনাই করা যায় না ।
আমি নিশিকেই প্রপোজ করবো বলে মনস্থির করলাম । পল্টু বলেছিল এমন জায়গায় প্রপোজ করতে হবে যেন আর দুচার জন শুনতে পারে । তাহলে ব্যাপারটা নিমকির কানে পৌছাবে ।
আর তাহলেই আর কাজ তামাম !
পরদিনই প্রপোজ করার সুযোগ চলে এল । নিশি কমন রুমে বসে কি একটা নোট করছিল । ক্লাসের আরো কিছু ছেলে মেয়েও ছিল । তবে নিশি যে বেঞ্চে বসে সেই বেঞ্চটা ফাকাই ছিল । আমি নিশির সামনে গিয়ে বসলাম ।
ও খানিকটা যেন অবাক হল । কিন্তু কিছু বলল না ।
-হাই !
নিশি এইবার আমার দিকে মুখতুলে তাকাল । আরো একটু যেন অবাক হল ।
-কেমন আছো ?
-ভাল ।
-তোমার সাথে কয়েকটা কথা বলার ছিল ।
-বল ।
নিশি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । বোঝার চেষ্টা করছে আমি ফান করছি কি না । আমি গুছিয়ে নিলাম কি কি বলব ।
-দেখো আমরাতো অনেক দিন থেকেই একসাথে পড়ছি । তোমার সাথে ঠিক কথা বলা হয়ে ওঠে না । কিন্তু ....
নিশি খুব শান্ত গলায় বলল
-কিন্তু কি ?
-আমি ....
যতই মিথ্যা মিথ্যা বলি , একটা মেয়েকে প্রপোজ করা কিন্তু এতো সহজ না । আমি আবার বললাম
-আমি আসলে তোমাকে অনেক পছন্দ করি ।
-আই ... আই লাভ ইউ ।
বলেই আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম । রুমে আরো অনেকেই ছিল এবং সবাই কথাটা শুনেছে । হঠাৎ‍ আমার কাছে মনে হল রুমের একটা মানুষও কোন কথা বলছে না ।
সবাই অপেক্ষা করছে কিছু একটা ঘটার ! কিন্তু কিছুই ঘটল না । নিশি খাতা পত্র নিয়ে উঠে চলে গেল ।
আমার কথা মনে হয় ওর ঠিক পছন্দ হয় নি । না হবারই কথা । আমার ভয় ছিল বুদ্ধিটা কাজ করবে কি না ।
কিন্তু কাজ করলো পরদিন সকালে যখন নিমকির সাথে দেখা হল দেখলাম নিমকি কেমন আমাকে এড়িয়ে গেল । কিন্তু ওর চোখমুখের ভাব দেখে মনে হল কাজ হয়েছে !
কাজ হয়েছে !
নিমকির কাছ থেকে আমি বেঁচে গেছি ।
কিন্তু ....

ঐ দিন সন্ধ্যা দিকে জারুলগাছ টার নিচে বসে আছি আর চা খাচ্ছি । এদিকটাতে সাধারনত কেউ আসেটাসে না । আমি আর পল্টুই আসি । জায়গাটা নির্জন । আমার সময় ভাল কাটে । আমি চোখ বন্ধ করে চায়ে চুমুক দিচ্ছি ঠিক এমন সময় মনে হল কেউ এসে আমার পাশে বসল ।
পল্টুই হবে হয়তো ।
কিন্তু চোখ মেলেই আমি বিষম খাওয়ার মত অবস্থা হল ।
নিশি !!
নিশি এখানে কি করছে ?
আর সব থেকে বড় অবাক লাগার বিষয় হল ওর গেট আপ ।
দিনের আলো এখনও মিলিয়ে যায় নি । ঐ আবছা আলোতেই দেখলাম নিশি খুব সুন্দর করে সেজেছে ।
স্বীকার করতেই হবে যে ওকে আসলেই অনেক সুন্দর লাগছে ।
ও যে এতো সুন্দর আমি আগে লক্ষ্যই করি নি । লজ্জা মিশ্রিত একটা হাসি দিয়ে নিশি বলল
-হাই ।
আমি কোন মতে একটু হাসলাম । নিশি অনেকক্ষন নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি কাল যে কথাটা বললে সেটা সিরিয়াসলি বলেছ নাকি .....
নিশি কথাটা শেষ করলো না । কেবল আমার চোখের দিকে তাকাল । নিশি চোখে আজ সুন্দর করে কাজল দিয়েছে ।
আমার দিকে কি গভীর ভাবেই না তাকিয়ে আছে ঐ চোখ জোড়া !
আমি কেন জানি চোখ সরাতে পারলাম না । নিশির চোখের দিকেই তাকিয়ে রইলাম । ও আবার বলল
-আমি যে তোমাকে কি পরিমান পছন্দ করি অপু, তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না । তুমি কাল যখন ...
নিশি আবারও কথাটা অসমাপ্তই রেখা দিল ।
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর চোখে পানি জমতে শুরু করেছে করেছে ।
কি আশ্চার্য এই দৃশ্য ! আমার পুরো শরীরের মধ্যে কেমন একটা শিহরোন বয়ে গেল ।
আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম কখনই চোখের জল গড়িয়ে পরবে । কিন্তু সেটা আর দেখা হল না । চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই নিশি আমাকে জড়িয়ে ধরল ।
খানিক বাদে কেমন একটা ফোঁপানোর আওয়াজ পেলাম ।
কি আশ্চার্য এই মেয়েটা কাঁদছে কেন ?
-কাঁদছো কেন ?
নিশি আমার কথার জবাব দিল না ।
আর একটু যেন জড়িয়ে ধরল জোরে । ফোঁপাতে ফোঁপাতেই বলল
-আমাকে কোন দিন ছেড়ে যাবে না তো ? প্লিজ কোন দিন ছেড়ে যেও না ।
আমি জানি না নিশির ঐ চোখের জলে কি ছিল আমি জানি না ওর কান্নাজড়িত কণ্ঠে কি ছিল আমার কেবল মনে হল আমাকে জড়িয়ে যে মেয়েটা কাঁদছে এই মেয়েটাকে ছাড়া এক মুহুর্তও বাঁচবো না ।
কি অদ্ভুদ এই অনুভূতি ! কি আশ্চার্য ভাবেই না আমি নিশির প্রেমের পড়ে গেলাম ।
কি আশ্চার্য !


ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুন, ২০১২ রাত ১২:১০
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×