somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোদসীর বিশেষ দিন !!

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রোদসীর আজ খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙ্গেছে ! এতো সকালবেলা সাধারনত ওর ঘুম ভাঙ্গে না । প্রতিদিনই রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে বেশ দেরি হয় । দেরীটা হয় ফাজিল তানভীরটার জন্য !
ফাজিল তানভীর !
আপন মনেই হাসল রোদসী । এমন হয়ে গেছ যে রাতের বেলা তানভীরের সাথে কথা না বলতে পারলে রোদসীর ভাল লাগে না । আর একবার কথা শুরু করলে তো আর শেষ হবার নাই । কত কথা যে বলার আছে ছেলেটাকে ! কেবলই যেন বলতে ইচ্তছা করে !!
তবে কাল রাতে তানভীরের সাথে ওর কথা হয় নি । কথাটা ভাবতেই রোদসীর মনটা খারাপ হয়ে গেল । আজ এমন একটা বিশেষ দিন তানভীর ওকে ফোন দিল না এটা ভাবতেই রোদসীর কান্না পেতে লাগল ।
আচ্ছা কোন রিলেশনে প্রবলেম হয় না ?
একটু আধটু মান অভিমান তো হয় । আর মান অভিমান না থাকলে তো রিলেশন কেমন একরকম বিবর্ণ হয়ে যায় । কিন্তু এমন একটা দিনেও কি অভিমান করে থাকতে হবে !
একটু কি আগে ফোন দেওয়া যেত না ?
সরি না হয় বলত একটু কথা বললেই রোদসীর সব রাগ ভেঙ্গে যেত । কিন্তু না সাহেবের কোন খোজ নেই !
ঠিক আছে দেখি
রোদসী ভাবে
কে রাগ করে থাকতে পারে.....?
কিন্তু পরক্ষনে মনে হয় না থাক !! এভাবে রাগ করে থাকতে গেলে আবার জানি কি না কি হয় ?

দুইদিন আগের কথা । রোদসীর ঐ দিন কেন জানি তানভীরের সাথে খুব দেখা করতে মন চাইছিল । রোদসীর এমনটা মাঝে মাঝেই মনে হয় । তখন কেবলই তানভীরের সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করে ।
ওর দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে ওর হাত ধরে থাকতে ইচ্ছা করে !
কিন্তু ভানভীর কে পাওয়া গেল না । রোদসী যখন তানভীরকে ফোন দিল তানভীর তখন খুব ব্যস্ত । কথা বলার সময় নাই । তুও ওর ফোন তো রিসিভ করতেই হবে তানভীরের ।
-কি ব্যাপার পাখি ? আমি তো ব্যস্ত পরে কথা বলি ?
রোদসী বাচ্চা মেয়ের মত চিৎকার করে বলল
-নাআআআআ । আমি এখন কথা বলবো ।
-একটু বোঝার চেষ্টা কর ।
-আচ্ছা ঠিক আছে বিকেল বেলা আমার সাথে দেখা কর ।
-না পাখি । বিকেল বেলাও পারবো না । সন্ধ্যার পর একটু দেখা হতে পারে । তবুও খুব বেশি সময় না ।
-কিন্তু আমার যে তোমার সাথে খুব দেখা করতে ইচ্ছা করছে । কত দিন তোমাকে দেখি না ! কত দিন তোমার হাত ধরি না !
তানভীর একটু হাসল ।
-কি বললে ? কতদিন!!! গতকালই না দেখা হল ।
-একদিন কি কম সময় ?
-আচ্ছা ঠিক আছে । সন্ধ্যার পর । কেমন ?
রোদসী বিকেল থাকতে থাকতেই টিএসসিতে হাজির হয়ে গেল । ফ্রেন্ডেদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেওয়া যাবে তারপর না হয় তানভীরের সাথে দেখা করা যাবে । বন্ধুদের সাথে গল্পই করছিল ঠিক তখনই ও তানভীরকে দেখতে পায় । রিক্সা করে যাচ্ছে । পাশে অন্য একটা মেয়ে ।
রোদসীর মাথায় যেন আগুন ধরে গেল ।
এই তাহলে ব্যস্ত তা !
ইচ্ছা হল তখনই ফোন দিয়ে তানভীরকে এখানে ডেকে আনতে কিন্তু রোদসী চুপ করে বসে থাকলো আর রাগে ফুলতে লাগল ।
সন্ধ্যার পর যখন তানভীর এল তখন রোদসীর রাগ দেখে কে ! তানভীর বলল
-জানো আজকে এতো ব্যস্ত ছিলাম সারাদিন ! একটুও দম ফেলার সময় ছিল না । একবার এখান থেকে ওখানে যাও আবার ওখান থেকে ...
-কাজ করছিলে নাকি রিক্সায় করে মেয়েদের সাথে ফুর্তি করে বেরাচ্ছিলে ?
রোদসীর কন্ঠের গাম্বীর্য দেখে তানভীর একটু যেন বিশ্মিত হল ।
-মানে ?
-মানে বোঝনা, না ? আমার সাথে দেখা করার সময় নাই তোমার । ঐ মেয়েটার সাথে রিক্সায় চড়ার খুব সময় আছে ।
-রোদসী যেটা তুমি জানবে না সেটা নিয়ে কথা বলবে না । তুমি জানো ঐ মেয়েটা কে ?
-আমার তো কোন দরকার নাই জানার ।
-আরে ও আমার ক্লাসমেট । আমার প্রোজেক্ট পার্টনার । আজকে সব কাজ তো ওর সাথেই ছিল ।
এই কথাটা শুনে রোদসী যেন আরো রেগে গেল । ওর কেবল বারবার মনে হতে লাগল তানভীর ওকে বাদ দিয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে ছিল । তানভীর ওর থেকে ঐ মেয়েটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । এই ভাবনাটা রোদসীর সহ্যই হল না ।
-ও আচ্ছা ! ভাল । যাও তাহলে ঐ মেয়ে সাথেই সময় কাটাও গে । আমার সাথে থাকার দরকার নাই ।
এই বলে রোদসী উঠে দাড়াল । তানভীর ওর হাত ধরে থামাতে চাইল কিন্তু রোদসী এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিল । বলল
-খবরদার হাত ধরবা না । আর ফার্দার আমাকে ফোন দিবা না ।
তানভীর বলল
-তুমি কিন্তু অযথা রাগ করছো ! তুমি যদি এখন চলে যাও আমি কিন্তু সত্যিই তোমাকে ফোন দিব না !
-আমাকে তোমা রফোন দেওয়া লাগবে না । তোমার ঐ প্রোজেক্ট পার্টনার কেই ফোন দিও !!
তারপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ ! মাঝখানে একটা মত্রদিন গেছে কিন্তু রোদসীর মনে হচ্ছে যেন কত কাল তানভীরের সাথে কথা বলে না !
আচ্ছা ও কি সে দিন বেশি রিএক্ট করে ফেলেছিল !
আসলে তানভীরের পাশে অন্য কোন মেয়ে ও একদম শ্যই করতে পারে না ! এটা কি ওর দোষ ?
ওকে বেশি ভালবাসে বলেই তো এমনটা মনে হয় !! তানভীরের একটা বিন্দও ও কারো সাথে শেয়ার করতে রাজী নয় ।
রোদসীর কেবল মনে হয় তানভীর কেবল তার !!
কিন্তু এমনটা তো আর না । সমাজে থাকতে হলে অনেক কিছু কম্পমাইজ করে চলতে হয় । অনেক নিয়ম মেনে নিতে হয় ।
রোদসী ঘর ছেড়ে বারান্ডায় আসলো । বাইরে এখনও খুব বেশি আলো ফোটে নি ! একবার মনে আছে তানভীরের সাথে কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে গেল ! সেই দিন ঠিক এমন সময়েই ও বাইরে এসেছিল । তানভিরের সাথে কথা বলছিল আর বাইরের সকাল হওয়া দেখছিল ।
আচ্ছা এখন কি তানভীর কে একটা ফোন দেওয়া যায় ?
ও আপন মনে ভাবলো ?
ও নিশ্চই ঘুমাচ্ছে এখন ?
ফোন করে যদি বলা হয় হ্যাপি এনিভার্সারী ! ও নিশ্চই খুশি হবে !!
দেখতে দেখতে কেমন করে দুই বছর পার হয়ে গেল । ভাবতেই অবাক লাগে ওর । কেমন মনে হয় যেন এইতো সেদিন তানভীরে ওকে প্রোপজ করলো !
ঐদিন আসলেই খুব মজা হয়েছিল । রোদসী খুব ভাল করেই জানতো যে তানভীর ওকে প্রোপজ করবে কিন্তু এমন একটা ভাব যেন কিছুই জানে না ।
বেচারা কি নার্ভাসই না হয়ে গিয়েছিল । বারবার ঢোক গিলছিল ! আর কথা আটকে যাচ্ছিল !
ঐদিনে তানভীরের চেহারাটা কল্পনা করতেই এক চিলতে হাসি দেখা দিল রোদসীর মুখে ।
নাহ !
ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে । আর বসে থেকে লাভ নাই । তানভীর কে ফোন করার সিদ্ধান্ত নিল ও ! বারান্দায় বসেই ফোন দিল !
তানভীর ফোন রিসিভ করার পরও কোন কথা বলল না ।
রাগ কি করে আছে এখনও ?
ওর কি মনে নাই আজকের কথা ?
-তানভীর !!
-বল !
-আজ আজকের দিনের জন্য আমরা রাগটাকে অন্য জাগায় রাখি !
-কেন ? আজ কি কোন বিশেষ দিন ?
যতটা আগ্রহ নিয়ে তানভীর কে ফোন দিয়েছিল মনটা ততটাই খারাপ হয়ে গেল । তানভীরের মনে নাই !!
রোদসী আর কোন কথা খুজে পেল না । কি বলবে ? আর কেনই বা বলবে ??
-আচ্ছা আমি রাখি !!
-আরে দাড়াও ! এখনই রেখে দিবে । এতো দিন পরে ফোন দিলা একটু কথা বলি !
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তানভীর বলল
-তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো ?
-কি ?
-বারান্দা দিয়ে সোজা তাকাও !
-মানে?
-মানে মুখটা তুলে তাকাও !
রোদসী তাকালো ।
ওর ঠিক মনে পরলো না এর থেকে আর আনন্দের মুহূর্ত ওর জীবনে এসেছে কিনা ?
তানভীর ঠি ওর বারান্দা সোজাসুজি দাড়িয়ে আছে । হাতে এক গুচ্ছ লাল টকটকে গোলাপ ফুল ।
তানভীর বলল
-তুমি কিভাবে ভাবলে আমি এভাবে এই দিন আমি ভুলে যাবো ?
রোদসী আর কিছি ভাবতে পারছে না । এই ছেলেটা কখন থেকে একখানে দাড়িয়ে আছে কে জানে !! দাড়িয়ে আছে কেবল ওর জন্য ! আর ও ছেলেতার সাথে কি ব্যব হারটাই না করেছে !
আর না অনেক হয়েছে । রোদসীর কেল মনে হল আর যদি একটা মুহুর্তও ও তানভীরের কাছ থেকে দুরে থাকে তাহলে ও দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।
বারান্দা থেকে সোজা ও দরজার দিকে দৌড় দিল । যে করেই হোক ওকে তানভীরের কাছে পৌছাতেই হবে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৭
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×