দরজাটা একটু খোলাই ছিল । ভেতরে উকি দিয়ে দেখি প্রিয় বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে ।
এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারা গেল না । বেড়াতে এসে এভাবে কেউ রুমের ভিতর শুয়ে থাকে । তাও আবার এই বিকেল বেলা । এই মেয়েটাকে একটা কঠিন ধমক দেওয়া গেলে ভাল লাগত ।
কিন্তু সেইটা এখন সম্ভব না ।
আমি দরজায় টোকা দিলাম । প্রিয়া কেমন একটু অপ্রস্তুত আমার দিকে ফিরে তাকাল ।
এই ফাজিল মেয়েটা আবার কাঁদছিল !
একে আসলেই একটা ধমক দেওয়া উচিত্। কিন্তু চাইলেই তো সব কিছু করা যায় না ।
আমি ওর পাশে বসলাম । প্রিয়া ওর ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে ব্যস্ত । আমি ওর হাত ধরে বললাম
-এতো গুলো মানুষ আমরা তোমার জন্য আছি , তবুও তুমি ঐ মানুষটার কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছ । চোখের পানি ফেলছ ?
প্রিয়া চুপ করেই রইল । আমি বললাম
-এটা কি আমাদের ভালবাসাকে ইগনোর করা না ?
প্রিয়ার চোখ দিয়ে আবারও পানি গড়িয়ে পড়ল ।
-না, আরিফ বিশ্বাস কর আমি তোমাদের ভালবাসা ... তোমার ভালবাসাকে ইগনোর করছি না । ঐ মানুষটার কথাও আমি মনে করছি না । কিন্তু আমার ...
প্রিয়া হু হু করে কেঁদে উঠল ।
আমি জানি প্রিয়া কিসের কথা বলছে । যতবার আমি চাই এসব ব্যাপার থেকে দুরে রাখতে কিন্তু ঘুরে ফিরে সেই একই কথা চলে আসে !
অবশ্য ওকে দোষ দিবো কিভাবে ? প্রিয়াকে বুকের ভিতর জড়িয়ে নিয়ে বললাম সব ঠিক হয়ে যাবে ।
আমি সব ঠিক করে দিবো ।
যদিও জানি প্রিয়া যা হারিয়েছে তা আমার পক্ষে ঠিক করা সম্ভব না । কারো পক্ষেই সম্ভব না ।
আমি যখন প্রথম প্রিয়ার গর্ভপাতের কথা শুনলাম খানিকটা অবাকই হয়েছিলাম । বাবুর সাথে ওর সম্পর্ক ভাল যাচ্ছে না জানতাম তাই বলে এতোটা খারাপ জানতাম না । বাবু নাকি ওকে মেরে এই অনস্থা করেছে ।
ওর উপর প্রচন্ড অভিমান থাকা সত্তেও প্রিয়ার এই অবস্থায় ওর উপর রাগ করে থাকতে পারি নি ।
সোজা ওর কাছে গিয়ে হাজির হয়েছে । প্রথমে তো প্রিয়া আমার সাথে দেখা করতেই চায় নি । হাসপাতালের বেডে মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে ছিল । আমি পাশে গিয়ে বসতেই প্রিয়া বলল
-তুমি কেন এসেছ আরিফ ?
-এই কথা কেন আসছে ?
-আমার এই অবস্থা দেখে মজা নিতে আসছো ?
-তোমার তাই মনে হচ্ছে ?
-তাই তো উচিত্ । আমার অবস্থা দেখে তোমার তো খুশি হওয়া উচিত্ । কেন খুশি হচ্ছ না ?
আমি প্রিয়ার মুখটা ঘুরিয়ে আমার দিকে ফেরালাম । দেখি ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে । নিজ হাতে ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম
-তুমি আমার কাছে সব সময় একই আছে । তুমি যাই কর না কেন অথবা অথবা আমাদের মাঝে যাই হোক না তুমি আমার কাছে একই ।
-না তুমি চলে যাও ! তুমি চলে যাও ।
আমি প্রিয়ার পাশে বসেই রইলাম ।
নাস্তার টেবিলে প্রিয়ার মুখটা বিষন্নই দেখলাম । চুপচাপ পাউরুটিতে জেলি মাখাতে লাগল । আমি বললাম
-প্রিয়া তোমার একটা কথা মনে আছে ?
প্রিয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কোনটা !
-যখন আমরা ভার্সিটিতে পড়তাম , আমরা সিলেটে বেড়াতে এসেছিলাম পুরো ডিপার্টমেন্ট থেকে ।
-হ্যা মনে আছে ।
-তখন আমরা ছেলেরা কেবল পাহাড়ে উঠেছিলাম । মেয়েদের নেওয়া হয় নি । তুমি খুব করে যেতে চেয়েছিলে ।
-হ্যা । মনে আছে ।
-আজ আমরা পাহাড়ে উঠবো ।
-দেখো আরিফ আমার আসলে ...
-শোন বেশি কথা বলবা না । থাপ্পর খাবা । যা বলছি শোন ।
প্রিয়া একটু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল । আসলে আমি কখনই প্রিয়ার সাথে এমন করে কোন দিন কথা বলি নি ।
এমন কি যখন ওকে প্রথম বাবুর সাথে কেএফসিতে দেখেছিলাম তখনও না ।
আমি যখন বাবুর সাথে প্রিয়াকে দেখলাম আমার যেন ঠিক বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে ওটা প্রিয়াই ছিল কিনা । পরদিন যখন ওকে জিজ্ঞেস করলাম কেবল মনে মনে দোয়া করছিলাম যেন ব্যাপারটা মিথ্যা হয় । আমি যা দেখেছি হয়তো ভুল দেখেছি । আমি আশা করেছিলাম প্রিয়া হেসে উঠবে আর বলবে তুমি ভুল দেখেছ ।
কিন্তু এমন কিছুই হল না ! প্রিয়া খুব স্বাভাবিক ভাবেই সন স্বীকার করলো !
আমার দিকে তাকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-তুমি যা দেখেছ ঠিক দেখেছ !
-কে ছেলেটা ?
-ওর নাম বাবু !
আমি কিছু না বলে প্রিয়ার দিকে কেবল তাকিয়ে রইলাম অবাক হয়ে ! এইটাই সেই মেয়ে যাকে আমি একসময় ভালবাসতাম ! যে আমাকে ভালবাসতো !!
প্রিয়া বলল
-দেখো, আরিফ তুমি ভাল ছেলে কিন্তু আমাদের অনেক কিছু ভাবতে হয় । অনেক কিছু দেখে জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে হয় !
আমি চুপ করেই রইলাম । কোন কথা আমার মুখ দিয়ে বের হচ্ছিল না ! এই মেয়েটা কি বলছে ??
কি বলছে ?
ঐদিনও আমি প্রিয়াকে কিছু বলতে পারি নি । কিছু বলতে যাবো তখনই দেখলাম একটা লাল রংয়ের এলিয়েন এসে দাড়ালো ওদের পাশে । প্রিয়া এলিয়েনের দরজা খুলে উঠে পরলো ভিতরে ।
আমা রকেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া যেন আর কিছুই করার ছিল না ।
ভার্সিটির ছাড়ার পর জবে ঢুকে গেলাম । কিছুদিন পরই শুনলাম প্রিয়ার বিয়ে হয়ে গেছে । আমি আর ঐদিকটাতে যাই নি । সত্যি বলতে কি যেতে পারি নি । নিজেকে কেন জানি খুব ক্ষুদ্র মনে হয়ে হত । আর প্রিয়ার উপর একটা চাপা অভিমান ছিল সব সময়ের জন্যই ।
দুরে থাকলেও ওদের খবর আমার কাছে চলে আসতোই । তেমনি করে একদিন খবর আসলো যে প্রিয়া ভাল নেই । বাবুর সাথে ওর সম্পর্ক নাকি ভাল যাচ্ছে না ।
তখন মাঝে, মাঝে ইচ্ছা করতো প্রিয়া কে গিয়ে বলি এই হল তোমার অনেক ভেবে চিন্তে নেওয়া সিদ্ধান্ত !! কিন্তু বলা হয় নি !
প্রিয়ার অবস্থা দেখলাম বেশ খারাপ । দরদর করে ঘামছে । ছোট্ট খালটার উপর বাশের মাচার সাকো । প্রিয়া ঐ সাকোর উপর বসে পড়লো ।
বলল
-আমি আর যেতে পারবো না । কিছুতেই পারবো না ।
-আরে এই কথা বললে হবে নাকি ? মাত্র তো একটা পাহাড় পার হলাম । আরো তিনটা পার হতে হবে ।
-আমি পারবো না ।
সকাল বেলা প্রিয়া কে নিয়ে পাহাড়ের দিকে রওনা দিয়েছিলাম । একটা পাহাড় কোন মতে পার হতেই প্রিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে ।
প্রিয়া সাকোর খুব ধরে বসলো । তারপর পা ঝুলিয়ে দিয়ে পানি স্পর্শ করতে লাগলো পা দিয়ে ।
আমি বললাম
-তুমি যে পা পানিতে ঝুলিয়েছো, ওখানে যে জোঁক আছে তা জানো তো ?
-কি?
প্রিয়া চমকে উঠল । তাড়াহুড়া করে পা তুলতে গিয়েই বাধলো বিপত্তি । হুড়মুড় করে খালের পানিতে পড়ে গেল ।
দেখছো কামডা !!
কি আর করা, আমাকেও নামতে হল ।
নেমে দেখি কোমড় পর্যন্ত পানি । কিন্তু প্রিয়া হুড়মুড় করছে পান থেকে ওঠার জন্য !!
-আরিফ জলদি ওঠ ! জলদি ।
আমি ওর হাত দুত চেপে ধরে বললাম
-কোন জোঁকা নাই !
প্রিয়া একটু শান্ত হল ।
-সত্যি বলছো ?
-হুম ! তবে সাপ আর কুমির আছে শুনেছি !
-আরিফ !!
আমি হেসে বললাম
-তোমার ভয় নাই । আমি আছি না ।
এই কোমর পানিতে দুজন একসাথে দাড়িয়ে । ওকে আর একটু কাছে টেনে জড়িয়ে ধরলাম । বড় আফসোস হল কেউ নেই দেখে !
এই অবস্থার একটা ছবি যদি কেউ তুলে দিত !!
গল্পটা আরমানের জন্য । মূলত এটা ওরই গল্প । কদিন আগে ও গল্পটা লিখেছিল । আমাকে উৎসর্গ করে লেখা গল্প । আমি আবার রিমেক বানালাম, আমার মত করে ।
আরমান গল্পটা অন্য দিকে নিয়ে গিয়েছিল আর আমি নিয়ে আসালাম আর একদিকে । আসলে আমার মনে অবাস্তব চিন্তা বেশি খেলা করে তো তাই এমন টা করলাম ।
জানি না আরমানের কেমন লাগবে !
আলোচিত ব্লগ
এই জঞ্জাল স্বাধীনতার পর থেকেই, শুধু এক যুগের নয়....
এক, মানুষের মেন্টালিটি পরিবর্তন না হলে কোনও সরকার কিছু করে দিতে পারবে না।
দুই, কোন কারনে উপরের এক নাম্বার মন্তব্যটি করলাম?
স্বৈরাচার পতনের পর কি কি পরিবর্তন হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ্ সাহেবের ডায়রি ।। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতকর্মীরা সমাজকর্মী হয়ে থাকবে : আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নিজেদের জনগণের শাসক নয়, সেবক ও খাদেম পরিচয় দেবে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত কর্মীরা আজীবন সমাজকর্মী হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়
মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ্ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম
নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়
এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন