somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে শুটকির হাত থেকে বাচাও !!!

১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিহিন আবার কথাটা জিজ্ঞেস করলো ।
-কেমন হয়েছে ?
এই বিদঘুতে জিনিস আবার কেমন হবে ? এই জিনিস কেউ খায় দুনিয়ায় !
তুই জানিস না ফাজিল মেয়ে !

আমি কোন মতে আর এক লোকমা গিলে বললাম
-দারুন হয়েছে । আমার তো মনেই হচ্ছে না যে আমি শুটকি খাচ্ছি !

মনে মনে বললাম মনে হচ্ছে না আবার ! এই বিদঘুটে শুটকির গন্ধে আমার নাড়িভূড়ি উল্টপাল্ট আসছে ।
নিহিনর মুখের হাসি আর একটু প্রসারিত হল ।
-দেখেছ ? আমি বলেছিলাম না ? আমি এতো চমৎকার করে রাঁধবো তুমি টেরই পাবা না !

হুম টের তো পাই ই নি । তুমি যখন সায়েন্সল্যাব মোড়ে ছিলা আমি শাহবাগ থেকেই এই জিনিসের গন্ধ পেয়েছি । এই চিজের গন্ধ আবার না পাই ।
আমি হেসে বললাম
-আসলেই ভাল হয়েছে ।
নিহিন বলল
-ভাল হয়েছে ! সত্যি ?

আমি নিহিনর চোখের দিকে তাকালাম । ইস ! কি আগ্রহ নিয়েই না ও আমার মুখের কথা শোনার জন্য । আমার একটু এপ্রিশিয়েশন শোনার জন্য । আমার মনটাই ভাল হয়ে গেল । আমি নিহিনকে বললাম
-সত্যি ভাল হয়েছে ।
-তুমি মিথ্যা বলছো না তো আমাকে খুশি করার জন্য ? তুমি তো শুটকিমাছ খাও ই না ।
-এতো দিন খাই নি কারন তোমার মত এতো আদর দিয়ে কেউ রান্না করে খাওয়াই । এই রকম আদর দিয়ে রান্না করলে আমি ধুতুরার ফলও হাসি মুখে খেয়ে ফেলব ।
-ধুতুরার ফল ? এটা কি ?
-চিনো না ?
-না ।
নিহিন হাসল ।
-এটা হল এক প্রকার ফল । আমাদের এলাকায় খুব হয় । কারো মনে যখন খুব দুঃখ হয় তখন এই ফল খেয়ে আত্ম হত্যা করে ।
-মানে ?
-মানে কিছু না ।
নিহিনর মুখটা একটু মলিন হয়ে গেল ।
-এমন কথা কেন বল ? আমি কি ...!
-আরে এমন কিছুই । কেবল কথার কথা বললাম ।
-এরকম কথা বলবা না আর ! খবরদার !
-আচ্ছা বাবা বলব না ।

নিহিন সব সময় খুব ইচ্ছা আমাকে রান্না করে খাওয়াবে । প্রতি ছুটির দিন গুলোতে কিছু না কিছু নিয়ে আসবে । প্রতি অফিস ছুটির দিন আমাকে একটু কিছু না খাওয়ালে নাকি ওর ভালই লাগে না ।
একটু ঝামেলা হলেও আমি আসি । বারবার মনে হয় মেয়েটা আমার জন্য এতো কষ্ট করছে, না আসলে ও নিশ্চই খুব কষ্ট পাবে । আর নিহিনকে কষ্ট দেই কিভাবে ? প্রতিদিনই কিছু না কিছু খাচ্ছিলাম ।

কিন্তু আজকে যখন নিহিন টিফিন বাটি নিয়ে আমার সামনে এল আমার নাকটা কুচকে উঠল । বাটি না খুলেই বোঝা যাচ্ছিল যে আজ নিহিন শুটকি রান্না করে এনেছে ।
শুটকি ! আমার সব থেকে অপছন্দের খাবার ।
আই জাষ্ট হেইট শুটকি !
আমার বিরক্তির সীমা রইল না । কিন্তু নিহিনর দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলাম না ।
বেচারি কষ্ট পাবে । নিহিন বলল
-আমি খাইয়ে দেই ?
-আরে কত মানুষ রয়েছে । মানুষজন কি ভাববে ?

আসলে আমি বেশি খেতে চাচ্ছিলাম না । জিনিসটা যতই ভাল হোক শুটকি বেশিক্ষন সহ্য করা মুশকিল । আমার কথা শুনে নিহিন বলল
-আচ্ছা মানুষজন কি বলবে ? ঐ দিন রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে চুম খেলে তখন তোমার মনে হয় নি মানুষ কি ভাববে । আর এখন আমি খাইয়ে দিবো এতে তোমার সমস্যা । আসলে তোমার খেতেই ইচ্ছা করছে না । যাও খেতে হবে না । এই বলে নিহিন টান মেয়ে টিফিন বাটিটা দুরে ছুড়ে মারল ।
-আরে আরে কর কি ।
কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে । রাস্তার মাঝ খানে সব তরকারী ছড়িয়ে পড়েছে । নিহিন অন্য দিকে মুখ করে বসে রইল । যাক শুটকি খেতে হচ্ছে না এটা একটা ভাল দিক ।
কিন্তু এই মেয়ে যে এখন রাগ কে আছে এটার কি হবে ??
-আরে বাবা আমি তো খাচ্ছি লাম । তাই না ?
-না তুমি খা্ছিলা না । ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিলছি লা ।
-না বিশ্বাস কর ! তা না । আমার আসেই ভাল লাগছিল । তুমি কেন এই রকম করে ফেলে দিলে !
আমি মনে মনে বললাম ভাল হয়েছে ফেলে দিয়েছ ! আর একটু খেলে তো আমার খবরই ছিল ।
নিহিন এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-সত্যি ভাল লাগছিল ?
-সত্যি বলছি ।
নিহিনর মনটা একটু প্রসন্ন হল ।
-ঠিক কাল আবার নিয়ে আসবো । বাসায় লইট্যা মাছের শুটকি আছে । খুব চমৎাকর লাগবে খেতে ।

তাহলেই হয়েছে ! আল্লাহ আমাকে এই শুটকির হাত থেকে বাচাও !!
বাঁচাও !! আমাকে বাঁচাও !

কিন্তু আমার চিৎকার কারো কান পর্যন্ত পৌছালো না !!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৫০
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×