somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আর মেয়েটি একসাথে সাইকেল চড়ার গল্প

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই শামস ! আব্বু ঐ দিকে যেও না ।
আম্মুর কথা শুনে সাইকেলের ব্রেক চাপতেই হল । বিকেল বেলা একটু শান্তি মত সাইকেল চালাবো তারও উপায় নাই ।
এই আম্মু গুলো এমন কেন হয় ? সব কাজেই কেবল বাঁধা আর বাঁধা ? কি হবে ঐ দিকে গেলে ? পরিস্কার রাস্তা ।
আম্মু তো নিজেই ঐ দিক থেকে হেটে এল ঐদিক থেকে ।
তাহলে ?
আমার আবার একটা অভ্যাস খুব আছে । কেউ কোন একটা কাজ করতে মানা করলে আমার কেন জানি সেই কাজটাই আরো বেশি বেশি করতে ইচ্ছা করে । আমি আম্মুর চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করি ।
-শামস আসো বাসায়, আসো । এখনই তোমার স্যার আসবে ।
-এই তো আম্মু আসছি । আর একটু চালাই ।
আম্মু আর দাড়াল না । আম্মু চলে যেতেই আমি সাইকেলের প্যাডেল চালালাম ঐ দিকে । মনের ভিতর খানিকটা কৌতূহল তো রয়েছে ।
গতকাল এদিকে আসলাম তখন তো আম্মু কিছু বলল না । তাহলে আজ আবার কেন মানা করল ?
কিছুদুর যেতেই বুঝলাম কারনটা । গলির একদম শেষ মাথায় মেয়েদুটি কে দেখলাম সাইকের চালাচ্ছে ।
আমি মেয়েদুটিকে খুব ভাল করে চিনি । বড় লোক বাপের মেয়ে । টুইনস । বর্ণা আর স্বর্ণা । চরম ফাজিল কিসিমের । আমরা তো মাঝে সাজে ইভটিজিং করি আর এই মেয়েদুটো করে এডাম টিজিং ।
আর ওদের বাপও মাশাল্লাহ । বিখ্যাত ক্রিমিনাল । এমন কোন আকামের ব্যবসা নাই যে সে করে না ।
গলির শেষ মাথায় এদের বিশাল বাড়ি রয়েছে । আম্মু এদের ভাল করেই চিনে । এদের বাপকেও ভাল করে চিনে । তাই এদিকে আসতে মানা করেছে ।
আমি আর একটু এগিয়ে গেলাম । ফাজিল কিসিমের মেয়ে হলে কি হবে বর্ণা আর স্বর্ণার চেহারা আসলেই খুব সুন্দর । সুন্দর মেয়ে কার না ভাল লাগে ?
আমি ঠিক করলাম ওদের ঠিক সামনে থেকে একটা চক্কর মেরে আসবো । মেয়েদুটো কখন কি করে বসে কে জানে ।
আমি একটু দুরে গিয়ে আবার ঘুরতে যাবো ঠিক তখন দুইবোন আমার দিকে দ্রুত এগিয়ে এল আমি ঠিক মত সাইকেল ঘুরাতেও পারলাম না সরাসরি আমার সাইকেলের সামনের চাকার সাথে ধাক্কা মেরে দিল ।
-সরি শামস ভাই !
দুই বোন একসাথে বলে উঠল । তারপর কি হাসি । আমি কোন মতে পড়তে পড়তে নিজেকে বাঁচালাম । এই শক্ত পিচের উপর যদি পড়তাম তাহলে আমার খবরই ছিল ।
আচ্ছা ফাছিল মেয়ে তো !
আম্মু ঠিকই বলেছিল । এখানে আসাটাই উচিত্‍ হয় নি । আমি কিছু না বলেই সাইকেল ঘুরাতে লাগলাম । পিছনে তখন দুইবোন হেসেই চলেছে । একটু মেজাজ খারাপ হল । এই রকম ভাবে মেয়েদুটোর কাছে অপদস্ত হলাম ।
আবার কিছু বলতেও পারলাম না ।

পরদিন যখন সাইকেল চালাচ্ছিলাম ঠিক করলাম যে আবার ঐ দিকটাতে যাবো । কাল যেমন দুই টুইনস বোন আমার সাইকেলে ধাক্কা মেরেছে আজ আমি ধাক্কা মারবো । কাল আমি প্রস্তুত ছিলাম না কিন্তু আজ আমি প্রস্তুত আছি ।
একবার কেবল আসুক ।
কিন্তু আজকে গিয়ে কেবল একজন কে দেখতে পেলাম ।
স্বর্ণা ।
ওরা দুজন টুইনস হলেও ওদের চেহারার মধ্যে বেশ অমিল আছে । আর সবচেয়ে বড় অমিল হল ওদের চুলে । বর্ণার চুল ছোট করে কাটা আর স্বর্ণার চুল বেশ লম্বা । আমাকে দেখেই দেখলাম স্বর্ণা এদিকে এগিয়ে আসছে ।
আজও কি ধাক্কা মারবে নাকি ?
আসুক আজ ! মজা বুঝাবো !
আমার সামনে এসে স্বর্ণা বলল
-শামস ভাইয়া ভাল আছেন তো ?
-হুম আছি ।
স্বর্ণার মুখের দিকে তাকিয়ে এমন মনে হল যেন মেয়েটার মনের ভিতর কিছু একটা দুষ্টুমির চিন্তা চলছে । আমি বেশিক্ষন থাকাটা সুবিধার মনে করলাম না । আমি সাইকেল ঘুরাবো ঠিক করছি এমন সময় স্বর্ণা বলল
-ভাইয়া রেস দিবেন ?
-মানে ?
-আমার সাথে সাইকেল রেস দিবেন ?
আবার কোন শয়তানী বুদ্ধি । আমি বললাম
-নাহ । আমি মেয়েদের সাথে রেস লাগি না ।
-ভয় পাচ্ছেন ? যদি হেরে যান ?
এই কথার পর আর কথা থাকতে পারে না । একটা মেয়ে বলছে যে হেরা যাবার ভয়তে আমি তার সাথে রেস লাগছি না , এটা মেনে নেওয়া খানিকটা কষ্টকর । ঠিক হল গলির ও মাথা থেকে ঘুরে আবার এ মাথায় আসবো ।
রেস শুরু হল ।
এমনিতেও স্বর্ণার আমার সাথে পারার কথা না । দুজনেই বেশ জোরেই চালাচ্ছিলাম । আমি আগেই ছিলাম । ফিনিসিং পয়েন্টের কাছাকাছি চলে এসেছি ঠিক তখনই ঝামেলাটা বাধল ।
একটা ইটকে পাশ কাটানোর জন্য আমি একটু ডান দিকে সাইলকেটা কাত করলাম । আর স্বর্ণা ঠিক আমার ডান দিকেই ছিল একটু পিছনে । আমার সাইকেলের পিছনের চাকা স্বর্ণার সাইকেলের সামনের চাকায় গিয়ে স্পর্শ করল ।
স্বর্ণা আর তাল সামলাতে না পেরে রাস্তার উপর পরে গেল সাইকেল নিয়ে । আমি তাড়াতাড়ি সাইকেল ফেলে ওর কাছে এসে দেখলাম স্বর্ণা সাইকেলের নিচে পরে আছে ।
সাইকেলটা সরিয়ে স্বর্ণাকে টেনে তুললাম । ওর হাটুর কাছের সাদা জিন্সটা ছিড়ে গেছে । ওখান থেকে রক্ত পরছে । তারপর হাতও ছিলে গেছে ।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সুন্দর মুখটা এটু টুকু হয়ে গেছে । চোখের মধ্যে পানি টলমল করছে । আমি বললাম
-হাটতে পারবে ?
স্বর্ণার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল ।
-খুব ব্যাথা করছে ।
আমার কেমন একটা অস্বস্তি লাগল মনের ভিতর । মনে হল যেন এটার জন্য আমি নিজেই দায়ী । ওভাবে ডানদিকে না ঘুরলে তো স্বর্ণার এই অবস্থা হত না । আমি ওকে প্রায় কোলে করেই ওদের বাসায় নিয়ে গেলাম ।

ওর মা তো দেখে আটকে উঠল । সাইকেল থেকে পরে গিয়ে এই অবস্থা হয়েছে শুনে ওকে কিছুক্ষন বকাবকি করল । তারপর আমাকে ধন্যবাদ দিতে লাগল । আমি ওনার মেয়েকে যেন বাঁচিয়েছি এমন একটা ভাব । আসলে আমার জন্যই যে এমন টা হয়েছে এটা যদি উনি জানতেন ।

যাহোক চলে আসার পরেও মেয়েটার কথা খুব মনে পরতে লাগল । স্বর্ণাকে যখন কোলে তুলে নিয়েছিলাম স্বর্ণ তখন আমার আমাকে জোড়ে জড়িয়ে ধরেছিল । ওর খুব ব্যাথা করছিল আমি বুঝতেই পারছিলাম । মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতেই লাগলাম ।

পরদিন ঠিক করলাম যে স্বর্ণা কে দেখতে যাবো । ওদের বাড়িতে গিয়ে ও রখোজ করতেই বর্ণা বেড়িয়ে এল ।
-আপনি ?
-স্বর্ণা কোথায় ?
-কেন ? কি করবেন আপনি ওকে দিয়ে ?
আমি খানিকটা দিধার পড়লাম । বর্ণার কন্ঠ বেশ কঠিন মনে হল ।
-আজ আপনার আপনার জন্য আমার বোনটা এতো কষ্ট পাচ্ছে !!
আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না । কথাটা মনে হল কিছুটা সত্যি !!

-বর্ণা ! চুপ থাকে !
পেছন থেকে স্বর্ণা খানিকটা খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে হাজির হল ।
-ওনার কোন দোষ নাই !
-তোকে বলেছে !!
স্বর্ণা একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসে সামনে এসে দাড়াল ।
-আপনি কিছু মনে করেন না । আসলে আমি একটু ব্যাথা পেয়েছি তো , তাই ।
-না ঠিক আছে ।
ইচ্ছা ছিল আরো আরো কিছুক্ষন থাকি বসে । মেয়েটার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা বলি কিন্তু বেশিক্ষন বলতে পারলাম না । কেমন একটা অস্বস্তি লাগছিল । তাড়াতাড়ি চলে এলাম ।
গেট দিয়ে বের হয়ে কেন জানি মনে হল স্বর্ণা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে ।
আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি একটু হাসলাম একটু । বুকের ভিতর কেমন একটা অনুভূতি বয়েই চলল ।
ভাল লাগার অনুভূতি ।

বিকেল বেলা সাইকেল নিয়ে বেরিয়েছি । গলির শুরুর মাথায় স্বর্ণা দেখলাম ।
মেয়েটা এখানে কি করছে ?
ওদের বাড়িতো শেষ মাথায় তাহলে এখানে কি ?
আর ওর শরীরও তো এখনও ভাল হয় নি । আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম
-কি ব্যাপার তুমি ? এখানে ?
-বাসায় বসে থাকতে ভাল লাগছিল না ।
-আরে তোমার তো এখন বিশ্রাম নেওয়া উচিত্‍ । খুব সাইকেলে চড়তে ইচ্ছা করছে ।
-আরে এই অবস্থায় সাইকেল চালাবা কিভাবে ? ঠিক হয়ে নাও তারপর সাইকেল চালাবা ।
স্বর্ণার মুখে কেমন একটা দুষ্টমীর হাসি দেখতে পেলাম । স্বর্ণা বলল
আমি সাইকেল চালানোর কথা বলি নি সাইকেলে চড়তে ইচ্ছা করছে বলেছি ।
আমার বুকটা বেশ জোড়ে কেঁপে উঠল ।
কি বলছে এই মেয়ে ?
কি বলতে চায় এই মেয়ে ?
আমি বললাম
-আমার সাইকেলের ক্যারিয়ার পিছনে ক্যারিয়ার নাই ।
স্বর্ণা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল
-সামনের রড তো আছে ।
আমি একটু পিছনে তাকিয়ে দেখে নিলাম আম্মু আছে কি না । আম্মু যদি দেখে আমি ওকে নিয়ে সাইকেলে চড়েছি তাহলে আমা রখবরই আছে ।
স্বর্ণা বলল
-আম্মুকে ভয় পান ?
আমি একটু হাসলাম ।
-আচ্ছা আমি আর একটু সামনে যাচ্ছি । আপনার আম্মু দেখবে না ।

আমার মনটা সত্যি আনন্দে ভরে গেল ।
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×