somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুম এবং গার্লফ্রেন্ড !!

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশির মুখ বেশ গম্ভীর মনে হল । কথাটা বলার সময় ওর চেহারায় একবারও হাসির রেখা দেখতে পাই নি । তাহলে কি ও যা বলল তাই করতে যাচ্ছে ?
না আআআআ !
এটা হতে পারে না !
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম । এমন একটা ক্ষীণ ইচ্ছা মনের ভিতর আছে যে আমার হাসি দেখে নিশি নিজেও হেসে উঠবে । কিন্তু নিশি হাসল না । বরং আরো একটু গম্ভীর মুখে বলল
-তুমি দাঁত বের করে হাসছো কেন ? আমি কি কোন কৌতুক বলেছি ?
আমি আবার একটু হেসে বললাম
-আরে আমি তো জানি তুমি ফান করছো ! তুমি ব্রেকআপের কথা চিন্তাও করতে পারো না । তাই না ?
নিশি একটু তাচ্ছিল্যের কন্ঠে বলল
-তাই ? আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমি ফান করছি ?
-না ।
-তাহলে ?
-কিন্তু ..
নিশি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-কোন কিন্তু না । তোমাকে আগেও বললাম এখন আবার বলছি । তোমার সাথে আমি রিলেশন রাখবো না । ঠিক আছে ? কথা পরিস্কার হয়েছে ?
আমি খানিক করুন কন্ঠে বললাম
-পাখি তুমি এসব কি বল ? আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবা বল ?
এই বলে আমি নিশির দিকে একটু এগিয়ে যাই । ওর হাতটা ধরে বললে নিশ্চই বুঝবে এমন একটা ইচ্ছা । কিন্তু আমার সে আশায় গুরেবালি । নিশি খুব কঠিন কন্ঠে বলল
-এই খবরদার কাছে আসবা না । এই হাত ধরার আর কোন অধিকার নেই তোমার ।
আমি থেকে গেলাম । আরও একটু করুন কন্ঠে বললাম
-কিন্তু আমি কি এমন করলাম বল ?
নিশি আমার দিকে কিছুক্ষন শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল । তারপর বলল
-তোমার সমস্যা এটাই যে তুমি কিছুই কর না । প্রপোজ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত কিছু করেছ তুমি ? তুমি কেবল নামেই আমার বয়ফ্রেন্ড । কামে না !
-এসব কি বল তুমি ?
-কি বল মানে ?
এবার যেন বোমা ফুটলো ! নিশি এতো জোরে চিৎকার করে উঠল যে আমি নিজেই চমকে উঠলাম । আসলে আমার কোন ধারনাই ছিল না যে নিশি এতো জোরে কথা বলতে পারে ! কেবল আমি না আশে পাশের কয়েক জন পথচারিও আমাদের দিকে ফিরে চাইল ।
আমি নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখটা কেমন লাল হয়ে গেছে । রাগে ও রীতিমত কাঁপতেছে ।
আরে আশ্চর্য ! এতো রাগের কি হল !
নিশি নিজেকে সামলাতে কিছুটা সময় নিল । একটু শান্ত হলে নিশি বলল
-তুমি আমাকে একটা কারন বল যে আমি তোমার সাথে রিলেশন রাখবো ! প্লিজ এটা বলবা না যে তুমি আমাকে ভালবাসো !
-আরে আর কি বলবো ? আমি তোমাকে ভালবাসি না বল ? তুমি নিজেও জানো যে আমি তোমাকে ভালবাসি !
-ভালবাসো ? আচ্ছা কোন জিনিসটা দেখে আমি বুঝবো যে তুমি আমাকে ভালবাসো ? বলতে পারো ? আমাকে কখনও সময় দিয়েছ তুমি ? আমার সাথে সময় করে কথা বলেছ ?
আমি একটু বলতে গেলাম
-আরে বলি নি মানে ....।
-কোথায় বলেছে ? মাসের ভিতর একবার আমাকে সময় দেওয়া কে সময় দেওয়া বলে না !
-আরে আমি কাজে ব্যস্ত থাকি তো !
-তোমার ব্যস্ততা আমার জানা আছে । দুনিয়ার আর মানুষ টিউশনী করে না ! ............
আমি চুপ করে থাকি ! নিশির মাথা এখন খুব গরম বোঝা যাচ্ছে ! উল্টা পাল্টা কিছু বললে তখন হিতে বিপরীত হতে পারে । নিশি আবার বলল
-আর ঘুম ! আমার তো মনে ঘুম তোমার কাছে সব থেকে ইম্পর্টেন্ট ! রাতে কথা বলতে যাই তুম বল ঘুম আসছে ! সকাল বেলা একটু আগে আগে ভার্সিটিতে আসতে বলি তুমি বল ঘুম আসছে ! ঘুমিয়ে থাকো ! সপ্তাহে একটা মাত্র দিন আমি একটু আগে আগে আসতে বলি তোমাকে ! ঐদিন তো সকালে ক্লাস থাকে তোমার । সাড়ে আট টায় ক্লাস, আধা ঘন্টা আগে আসা কি খুব কষ্টের ? কিন্তু না ! তুমি ঘুমাও !! এবার থেকে শান্তিমত ঘুমাও কেউ তোমাকে আর বাধা দিবে না !
-নিশি, প্লিজ ! একটু বোঝার চেষ্টা কর ! একটু তো আমি ঘুমাই এটা তো তুমি জানোই ! এতটুকুর জন্য ......।
-শোন অপু, তুমি ঘুমাও আমার তাতে আমি তো কিছু বলি নি ! কিন্তু তুমি আমাকে ইগনোর কর ! আমার থেকে তোমার কাছে ঘুমটা বেশি জরুরী !
-বাবু.শুনো......।
নিশি বলল
-ঢং করবা না ! গত পরশু দিন তোমাকে কতবার ফোন দিলাম একবার আসার জন্য ! আসো নি কেন ?
-আমি...আমি তো ঘু...
-ঘুমাচ্ছিলে ? কেন আসতে বলেছিলাম জানো ? মনে আছে তোমার ?
-কেন ?
-কারন গত পরশু দিন আমার জন্মদিন ছিল ! মনে আছে তোমার ? মনে থাকবে কেন ? তুমি তো ঘুমাতেই বিজি !
এই রে !! এই জন্য এতো রাগ !
আসলেই ছেলেদের জন্য তার গার্লফ্রেন্ডের জন্মদিনের কথা ভুলে যাওয়া অন্যায়ের ভিতর পরে ! আসলে আমার নিশির জন্মদিনের কথা ঠিক মনেই নেই ! গত পরশু দিন কি ওর জন্মদিন ছিল ?
কি জানি মনেও নেই !
এই ঘুমটা নিয়ে কি যে করি ! কিছুই মনে থাকে না !
আমি আরো কিছুক্ষন ওর জন্মদিনের তারিখটা মনে করার চেষ্টা করলাম ।
নাহ ! মনে পরছে না !
ও কি আমাকে বলেছিল ?
তাও তো মেন নেই !
এখন যদি আমি বলি যে তোমার জন্মদিনের কথা আমার মেনই নেই তাহলে তো আমার খবরই আছে ।
নিশি বলল
-যাক অনেক কথা বলেছি ! আর মনে হয় কথা বলার দরকার নাই । আর এটা ভেব না যে এখান থেকে গেলে আমার রাগ পড়ে যাবে । আমার সাথে যোগাযোগ করার আর চেষ্টা করবা না । যদি একটা ফোন আসে তাহলে সোজা মামা কাছে রিপোর্ট করবো !
এই বলে নিশি হাটতে লাগলো !
আমি পেছন পেছন হাটতে যাবো তখনই নিশি আবারও ঘুরে দাড়ালো , বলল
-আর পেছন পেছন আসবা না ! আমি কিন্তু মামা কাছে এখনই ফোন দেব !
আমি দাড়িয়ে গেলাম । নিশির মামা পুলিশে চাকরী করে । এই জন্য বলতে গেলে পুরো ডিপার্টমেন্টের কেউই ওকে ঠিক মত ঘাটাতে সাহস পায় না !
আমি দাড়িয়ে গেলাম !
এই সকাল বেলা করে এই সব কি হয়ে গেল ।
কি চমৎকার দিন কাটছিল ! আর এখন ?
আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে নিশি সত্যি সত্যি আমার সাথে ব্রেক আপ করেছে । এই মেয়েটা কি সত্যি আমার সাথে কথা না বলে থাকতে পরবে ?
আমি পেছন ফিরে তাকালাম । নিশি ততক্ষনে অনেক দুর চলে গেছে । আচ্ছা একবারও ও পেছন ফিরে তাকাবে না ?
আমি ক্ষীণ আশা নিয়ে তাকিয়ে রইলাম । কিন্তু সেই আশা পুরন হল না ! নিশি চোখের আড়ালে চলে গেল ! বলতে গেলে আমার জীবনের আড়ালে চলে গেল ।
আমি হলের দিকে হাটা দিলাম । একটু ঘুমালে হয়তো ভাল লাগবে !

নিশিকে প্রথম দেখেই আমি ওর প্রেমে পরেছিলাম । আমার থেকে দুই বছরের জুনিয়র ছিল ও ! আমার ডিপার্টমেন্টেই পরতো ! যখন আমার সামনে দিয়ে হেটে যেত মনে ভিতর কেমন একটা কাঁপুনি উঠত । মনে হত এই মেয়ের সাথে কথা না বলতে পারলে জীবন বৃথা ! টুকটাক কথা বলা শুরু করলাম ।
নিশি মামা পুলিশে আছে । খুব বেশি কেউই নিশির সাথে টাংকি মারার চেষ্ট করতো না । আমার জন্য ভালই হল । এক সময় কেন জানি আর কথাতে মন ভরতো না !
একদিন রাতের বেলা ফোন দিলাম ওকে । বেশ রাতে হয়ে গেছিল । কয়েকবার রিং হওয়ার পর যখন ফোন ধরলো না । লাইন কেটে দিলাম । নিশ্চই ঘুমাচ্ছে । কিন্তু একটু পরেই নিশির ফোন এসে হাজির ।
আমি ফোন রিসিভ করলাম । ভাবছিলাম না আবার কিছু বলে । কিন্তু নিশি স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-এতো রাতে ভাইয়া ?
-না মানে ....! সরি আসলে ..... তুমি মনে হয় ঘুমিয়ে পরেছিলে । সরি ঘুম ভাঙ্গালাম ।
-নাহ ! সমস্যা নাই ! বলেন !
আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । কি বলবো কিভাবে বলবো ? কিছুই বুঝতে পরছিলাম না । শেষে না পেরে বললাম
-তুমি কালকে সকাল সকাল একটু ভার্র্সিটিতে আসতে পারবে ? একটু কথা ছিল ।
নিশি একটু ভাবল কি যেন । তারপর বলল
-আচ্ছা ! সমস্যা নাই ! আসা যাবে !
-কাঁঠাল তলায় দাড়িও কেমন !
-আচ্ছা !
ফোন রাখার পর মনে হল কি করলাম । ওকে ডাক তো দিলাম কিন্তু বলবো কিভাবে ?
আর যদি রাজি না হয় ?
কিন্তু কিছু করার নাই । বুলেট বের হয়ে গেছে !
রাতে শুয়ে শুয়ে প্লান করতে লাগলাম কি করবো ।

সকাল বেলা একটু আগে আগেই ভার্সিটি পৌছালাম । নিশি এসে পৌছালো একটু পরেই । আমি কাঁঠাল তলা থেকে একটু দুরে দাড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম । খানিকটা আড়াল থেকেই । নিশি আসলো । এদিক ওদিক দেখতে লাগলো ! আমাকেই খুজতেছে !
আমি ওকে ফোন দিলাম ।
-কোথায় আপনি ? আমাকে সকাল সকাল আসতে বলে এখন আপনার কোন দেখা নাই !
-আমি এসেছি ! তোমাকে দেখতে পাচ্ছি !
-তাহলে সামনে আসছেন না কেন ?
-একটু বামে তাকাও !
নিশি নামে তাকালো ।আমাকে দেখে হাত নাড়লো । বলল
-দুরে দাড়িয়ে কেন ?
-নিশি আমি এখন তোমাকে কিছু বলবো ! তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করবা ! কেমন ?
নিশি চুপ করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল !
কাল রাতেই আমি বুঝেছিলাম আমার দ্বারা সরাসরি আই লাভ ইউ বলা সম্ভব না । তাই রাতে কিভাবে হাতের ইশারায় আই লাভ ইউ বলা যায় তাই ভাবছিলাম । নেটে গিয়ে কিছু সাইনও খুজে পেলাম ।
কিভাবে আঙুলের সাহায্যে আই লাভ ইউ বলা যায় । দুর থেকে দাড়িয়েই ওকে সেই ইশারা করলাম ।
মনে ভিতর খানিকটা সন্দেহ দেখা দিল যে ও ঠিক মত বুঝবে তো আবার ?
কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল ও ঠিকই বুঝলো ! বুঝেই ওর মুখ কেমন গম্ভীর হয়ে গেল ।
আমার সাথে কোন কথা না বলে সোজা চলে গেল ।

মন টা খারাপই হল । কিন্তু কিছু করার নাই ! আমিও মন খারাপ করে হলে ফিরে এলাম । এই মেয়েটার কারনে আমার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছিল । বিছনায় শুয়ে শুয়েই দুদিন কাটিয়ে দিলাম । ঠিক তিন দিনের মাথায় নিশির ফোন এসে হাজির
-আপনি কোথায় ?
-আমি তো রুমে ! একটু বাইরে আসেন ! আমি কাঁঠাল তলায় আছি !
আমি কাঁঠাল তলায় গিয়ে দেখি নিশি দাড়িয়ে ! আমি একটু জাবুজুবু হয়ে ওর সামনে দাড়িয়ে রইলাম ।
নিশি বলল
-আপনি সেদিন হাতের ইশারায় আমাকে যেন কি বোঝাতে চাইলেন ?
আমার বুকের ভিড়টে ঢিপঢিপ করছিল । বারবার মনে হচ্ছিল নিশি এই কথাটা ছাড়া আর অন্য সব নিয়ে কথা বলুক । কিন্তু কপাল নিশি সবার প্রথমে ঐটা নিয়েই কথা শুরু করলো !
আমি বললাম
-কি........ মানে ....... বুঝো নি ?
-না বলেন কি বলেছেন বা বলতে চেয়েছেন ?
আমি কি বলবো ? মনে মনে বললাম সেই কথা যদি আমি মুখেই বলতে পারতাম, তাহলে কি আর তোমাকে ইশারায় বুঝাতাম !
হঠাৎ করেই নিশি জোরে হেসে উঠল ।
কি ব্যাপার ? এই মেয়ে হাসে কেন ?
আমি বললাম
-কি ব্যাপার হাসো কেন ?
নিশি হাসি থামাতে থামাতে বলল
-আপনাকে এই বুদ্ধি কে দিয়েছে ?
-কোন বুদ্ধি?
-এই যে প্রপোজ করার এই বুদ্ধিটা ? কথা বলতে পারেন না ? মুখ নেই ? নাকি ভোকাল কর্ডে জং পরেছিল । আই লাভ ইউ বা তোমাকে ভালবাসি এই লাইনটা বলা কি খুব বেশি সমস্যা ?
আমার লজ্জার সীমা রইলো না । নিশি আবার বলল
-এট লিষ্ট লিখে দিতে পারতেন ? অথবা মেসেজ পাঠাতেন !ঐ দিন একটু মেজাজ খারাপ হয়েছিল কিন্তু .....
-কিন্তু ?
নিশি একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল
-এখন ঠিক আছে !! আর এখন থেকে প্লিজ সরাসরি বলবেন । কেমন ?

কত দিনের আগের কথা এগুলো ! প্রথম প্রথম কি চমৎকারই না দিন কেটেছে ! তারপর আমি নিজেই কেমন জানি ঘুমের প্রতি একটু বেশি আগ্রহী হয়ে উঠলাম । আসলে ঘুমাতে আমার বরাবরই খুব ভাল লাগে । তার উপর আবার শীত কাল চলে এসেছে এখনতো ঘুমাতে আরো মজা ! কথা সত্যি যে নিশিকে একটু সময় কম দেওয়া হয়েছে । তাই বলে একেবারে ব্রেক আপ !
অবশ্য জন্মদিনের কথা আমার ভুলে যাওয়া একদম ঠিক দম ঠিক হয় নি !
কিন্তু ও আমার কথা একটুও ভাববে না ??
আমি কিভাবে থাকবো ?

একবার মনে হল যাক ! যা গেছে যাক !!
আমি লেপ মুড়ি দিয়ে গুমিয়ে পড়ি । ঘুমালে সব কিছু ভুলে যাবো ! কিন্তু বিছানা কেবল এপাশ ওপাশ করলাম কিন্তু ঘুম আসলোই না কিছুতেই !
পরপর তিনটা দিন পার হয়ে গেল আমার এফোটা ঘুম আসলো না !
এই তিন দিনে নিশি আমাকে একটা বারও ফোন দেই নি !
ফোন না দিয়ে মেয়েটা আছে কিভাবে ?
আগে ঘন্টায় ঘন্টায় আমাকে ফোন দিত । আর আমি যখন ঘুমাতে যাবো ঠিক তখনই যেন বেছে বেছে ও ফোন দিন !
মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিতাম !
এই বুঝতে পারছি বেচারি তখন কি যে কষ্টই না পেত ! এখন আমি বুঝতে পারছি !
ইস আর একটা সুযোগ যদি পাওয়া যেত !

নিশির কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোর হয়ে গেছে আমি টেরই পাইনি ! সুমনের কথায় বাস্তবে ফিরে এলাম । সুমন খানিকটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই এতো সকালে ? তোর ঘুম ভাঙ্গলো কিভাবে ?
-ঘুমাই নি ! ভাঙ্গবে কিভাবে ?
সুমন সত্যি আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রইলো ! তাকিয়ে থাকারই কথা । আমি কি পরিমান ঘুমাই সেটা সুমনের থেকে আর ভাল কেউ জানে না ! আমাকে এভাবে না ঘুমাতে দেখে ওর অবাক হওয়ারই কথা !

এই তিনদিন বাসা থেকে বের হই একদমই ! কিন্তু আজকে বের হতে হল ! যোবায়ের স্যারের একটা জরুরী ক্লাস ছিল । না করলেই নয় !
ক্লাস থেকে বের হতেই দেখি নিশি ! ওর বান্ধবীর সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করছে ।
আহ ! কি স্বাভাবিক দেখাচ্ছে !
তাহলে কি ওর কোন ফিলিংস ই নাই ! ওর জন্য যে তিন দিন আমি এক ফোটা ঘুমাতেও পারি নাই আর এই মাইয়া দেখি একদম ঠিক আছে ।
আসলেই মেয়েরা এমনই হয় !

আমি কিছুক্ষন দাড়িয়েই রইলাম ! নিশিতো আর আসবে না ! আমি না হয় একটু দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখি ওকে !
এই তো আমার দিকে একটু তাকালো !
কিন্তু এমন একটা ভাব যেন আমাকে চেনেই না !
হায়রে কপাল ! বুঝতে পারছি আজকে রাতেও আমার ঘুম আসবে না !
আজকে রাতে কেন আর হয়তো ঘুমই আসবে না !
আর এই মাইয়া নিশ্চই বাসায় গিয়ে শান্তি মত ঘুমাবে ??
নিশি আমার সামনে দিয়েই চলে গেল আমর দিকে একটু চাইলো ও না ! একবার ভাবলাম ডাক দেই । কিন্তু পরে মনে হল কি লাভ !!

কাঁঠাল তলায় বসে রইলাম একা একা !! কিছুক্ষন পর কেউ এসে আমার সামনে দাড়াল । মুখ তুলে তাকিয়ে প্রথমে বিশ্বাস হল না । মনে হল হয়তো স্বপ্ন দেখছি !
নিশি !!
আমি কেবল চুপ করে তাকিয়ে রইলাম । কোন আওয়াজ হলে হয়তো আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে ! নিশি আমার সামনে থেকে চলে যাবো !
কিছুটা সময় নিশি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-শুনলাম তোমি নাকি ঘুমাও তিন ধরে ?
আমি কিছু বললাম না । চুপ করে রইলাম ।
নিশি আবার বলল
-যাক ! আমার কারনে তোমার ঘুম নষ্ট হয়েছে এটা জেনে ভাল লাগছে !
দেকছো এই মেয়ে কয় কি ?
আমি তার জন্য শান্তি মত রাতে ঘুমাতে পারছি না আর এই মেয়ে কয় যে তার ভাল লেগেছে !!!!
নিশি আবার বলল
-তাহলে দেখা যাচ্ছে ঘুমের ঠেকেও আমি জরুরী তোমার কাছে, তাই না ?
আমি মৃদু কন্ঠে বললাম
-হুম !
-জোরে বল !
-হ্যা !
নিশি এবার আমার পাশে এসে বসল । তারপর বলল
-আমি কেবল এইটাই তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি ! তুমি চট করে বুঝতে পেরেছ দেখে ভাল লাগছে !
-মানে ?
-মানে কিছু না ! তোমাকে একটু টাইট দিলাম !
-টাইট ?
নিশি একটু হাসলো !
আমি বললাম
-সত্যি তাহলে তুমি আমা রসাথে ব্রেক আপ কর নি !
-নাহ ! কি বল !
-সত্যি তো ?
-হুম !
-আর জন্মদিনের ব্যাপার টা ? বিশ্বাস কর আমার মনেই ছিল না !
এবার দেখি নিশি আরো জোরে হেসে উঠল !
-আমার জম্মদিন সেদিন ছিল না । আসলে তুমি এতো কনফিউজ ছিলে যে ধরতে পারো নি । আমার জন্মদিন আগামী মাসে !
আমি কেবল অবাক হয়ে এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
নিশি বলল
-তাই বলে এই ভেব না যে আমি ফান করেছি । আমি কিন্তু ঐ সব ব্যাপার নিয়ে সিরিয়াস ! এবার যদি যাই তাহলে কিন্তু আর আসব না !

আর একটা সুযোগ চেয়েছিলাম আমি ! সেই সুযোগ এসে হাজির ! আমি আর কিছুতেই এটা হারাতে চাই না !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৯:০১
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×