somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের পল্টু ভাই এবং তার হরতাল ভাবনা !!

০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টানা তিনদিনের হরতাল শুরু হচ্ছে ! মনটা বিশেষ ভাল নেই ! তিন দিনের হরতাল মানেই তিনদিন লিয়ানা ভার্সিটিতে আসে না ! ওর সাথে তিন দিন দেখা হবে না এই দুঃখে আমার ঘুমই আসে নাই আজকা ! এর ভিতর পল্টু ভাই যখন পিছন থেকে আমার পিঠে একটা গুতা দিয়ে বলল
-কি রে বাঁদরের মত মুখ করে আসিছ ক্যান ?
-পিছন থেকে আমার মুখ কেমনে দেখলেন পল্টুভাই ?
-আরে এই খানেই তো তোর আর আমার পার্থক্য ! তুই বা তোরা যা দেখতে পাস না আমি সেই জিনিস দেখতে পাই ! এখন বল মুখ বাদরের মত করে রেখেছিস ক্যান !
যদিও খুব বলতে ইচ্ছা করছিল যে আমার মুখ মোটেও বাদরের মত নয় তবুও কিছু বললাম না । কারন বলে কোন লাভ নাই ! পল্টু ভাই কিছু একটা বললে সেটা আর ঘুরানোর উপায় নাই ! আমি কিছু বলতে গেলে তিনি ঠিকই কোন না কোন ভাবে প্রমান করেই দিবেন যে আমার মুখ আসলেই বাদরের মত ! আমি মেনে নিয়ে বললাম
-খুব সমস্যা ! আজ থেকে হরতাল । টানা তিন দিন !
-তো সমস্যা কি ?
পল্টু ভাইয়ের চেহারা দেখে মনে হল তিনি আমার কথা শুনে খুব অবাক হয়েছেন ।
আমি বললাম
-টানা তিন দিন হরতাল এটা কোন সমস্যার কথা না !
পল্টু ভাই যেন আকাশে থেকে পড়লো !
-কেন রে সমস্যা হবে কেন ?
আমার মুখ হা হয়ে গেল । আমার মুখ হা দেখে পল্টু ভাই বলল
-শোন !
এই কথাটা বলে তিনি আমার দিকে একটু ভাল করে নড়ে চড়ে বসলো !
আমি প্রমাদ গুনলাম ! লক্ষন খুব বেশি ভাল না । পল্টু ভাই যেমন করে নড়ে চড়ে বসলো তার মানে উনি লম্বা বক্তিতা দেবার পরিকল্পনা করতেছেন ! আমি সটকে পড়ার চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু পল্টু ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে পারলাম না ।
পল্টু ভাই বলল
-আচ্ছা বল গনতন্ত্রের প্রধান অধিকারটা কি ? ভাল করে বললে বাংলাদেশের গনতন্ত্রের প্রধান অধিকার টা কি বল ?
-কি ?
-আরে পারলি না ? একটা জিনিস তুই লক্ষ্য করে দেখ এই সরকার বিগত সরকার এমন কি তার আগের সরকারের আমলে কোন আর কিছু না হলেও কোন কাজটা ঠিক হয়েছে ?
আমি ঠিক মত বুঝতে পারলাম না পল্টু ভাই ঠিক কি বলতে চাইছে ! তবুও ক্ষীন কন্ঠে বললাম
-হরতাল ?
পল্টু ভাই আবার আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলল
-আরে আমি তো তোকে গাধা মনে করেছিলাম তুই তো বেশ ভালই বুঝিস ! হুম ! ঠিক বলেছিস ! বাংলাদেশে সব সরকারের আমলে আর যাই হোন না কেন হরতাল ঠিক হয়েছে ! এবং এটা হতেই থাকবে ! এখন যে জিনিসটা বন্ধ করার উপায় নাই মানে অসম্ভাবী সেই জিনিসটার প্রতি অভিযোগ বন্ধ করে ভাল ভাল দিক গুলোম চিন্তা করা উচিৎ !
-ভাল দিক ? হরতালের ভাল দিক ? আপনার কি মাথা ঠিক আছে ? হরতালের আবার ভাল দিক আছে নাকি ?
-আমি জানতাম ! তুই এ কথাই বলবি ! আমি আগেই বলেছি আমি যেটা চিন্তা করি তোরা সেইটা ভাবতেই পারবি না ।
-আচ্ছা আমি হার মানলাম ! আপনি বলেন হরতালের ভালদিক গুলো বলেন আমাকে ?
পল্টু ভাই আর একটু নড়েচড়ে বসলেন
-আচ্ছা শোন । কোন কথা বলবি না বুঝলি ?
আমি বসলাম চুপ করে ! পল্টু ভাই বলতে শুরু করলো
প্রথমত, হরতাল হলে কি হয় ? হরতাল হলে গাড়ি চলাচল বন্ধ ! কলকারখানা বন্ধ ! এর মানে কি ?
আমি বোকার মত বললাম
-মানে কি ?
-আরে গাধা ! এর মানে কার্বন ডাই আক্সসাইড উৎপাদন বন্ধ ! সোজা কথায় যত হরতাল তত পরিবেশের জন্য ভাল ! গ্লোবাল ওয়ার্মিং কম !
আমি বললাম
- আমার তো মনে হয় প্রত্যেক সপ্তাহে দুতিন করে হরতাল দেওয়া উচিৎ ! তাহলে পৃথিবীতে থেকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং চার্মটাই চলে যাবে !
-ঠিক বলেছিস ! এখন তুই ই ভেবে দেখ !
আমি ভাবতে লাগলাম ! পল্টু ভাই আবার বলা শুরু করলো !
-তারপর মনে কর, গাড়ি না চললে তেল খরচ হবে না । সরকারী এবং বেসরকারী এনার্জি সেভিং হবে ! আর এই এনার্জি মানে তেল এবং সিএনজি আমরা অন্য খানে ব্যবহার করতে পারবো !
অতি সত্য কথা ! এমনিতে সরকারী অফিস গুলোতে কাজ কা হয় না ! এটা একটা ভাল দিক !
পল্টুভাই বলল
-তৃতীয়ত, হারতাল মানে স্কুল কলেজ ভার্সিটি বন্ধ ! তার মনে কি ছাত্র আর ছাত্রীদের উপর থেকে পড়াশুনার চাপ কমবে ! এদিক ওদিক ঘুরতে পারবে ! মনে শান্তি পাবে ! মন ভাল থাকলে কি জানিস ?
-কি হবে ?
-আরে পরের দিন পূর্ণ উদ্দমে কাজে নেমে পড়তে পারবে !
-বুঝলাম ! কিন্তু ভাই পরীক্ষার সময় হরতাল দেয় এটা কি ঠিক ?
-আরে গাধা এইটা তো আরে ভাল ! দেখ আমাদের দেশ অল্প কিছু পোলাপাইন ছাড়া কেউই পরীক্ষার আগে ছাড়া পড়াশুনা করে না ! তুই করিস ? বল ?
আমি মাথা নাড়াই ! আমি আমি আসলেই পরীক্ষার আগে ছাড়া একদমই পড়া শুনা করি না !
-তাহলে ব্যপার টা কি দাড়ালো ? যত হরতাল হবে ছেলে মেয়েগুলা তত পড়া লেখা করবে মানে পড়া লেখার সুযোগ পাবে ! পরীক্ষায় রেজাল্টও ভাল হবে !
আমি আবারও মাথা ঝাকাই ! আসলেই তো পল্টু ভাইয়ের কথা গুলো মনে ধরার মনে ধরার মত !
পল্টু ভাই এবার পকেট থেকে একটা গোল্ডলিফ লাইট বের করলেন ! আগুন ধরিয়ে জোরে একটা টান দিল !
আমি বললাম
-কিন্তু ভাই এই হরতাল হলে হারতাল কারীরা পিকেটিং করে ! গাড়ি ভাংচুর করে ! এতে কত ক্ষতি হয় !
-আরে তুই এক দিক ভাবছিস কেন ? সব দিক ভাব ?
-কি রকম ?
-আরে গত পরশুদিনের হরতালে আমারদের বাড়িয়ালার গাড়িটার সামনে গ্লাস টা ভেঙ্গে দিছে ! এখন তার ক্ষতি ! ঠিক আছে ! কিন্তু এর পজেটিভ দিকটা দেখ ! বাড়িয়ালা আঙ্কেল এখন গাড়ির গ্লাসটা ঠিক করাবেন ! যেখান থেকে করাবেন তার লাভ হবে না ? তারমানে কি দাড়ালো ? অর্থনীতির চাকা সচল হল !
আমি আবার মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বললাম
-তা তো অবশ্যই !
পল্টুভাই বলল
-আসলে পৃথিবীতে সব কাজেরই দুইটা দিক আছে ! পজেটিভ যেমন আছে । নেগেটিভ দিকও আছে !
-হুম ! এখন আমি আপনার কথা একটু একটু বুঝতে পারতেছি ! তারমানে হরতালে গাড়ি ভাঙ্গার জন্য যে লাঠি আর বাঁশ আনা হয় সেগুলো তো কারো না কারো কাছে থেকে কিনতে হয়েছে !
-ঠিক !
-তারমানে এখানেও একটা পজেটিভ দিক আছে !
-এই তো মমিন ! তুই বুঝেছিস !
-তারপর আমাদের এলাকায় কোন খেলার মাঠ নাই ! আমরা বিকেল বেলা এদিক ওদিক এতিমের মত ঘোরাফেরা করি । হরতালের দিন আমরা রাস্তার ইট দিয়ে স্টাম্প বানিয়ে ক্রিকেট খেলতে পারি !
-আরে মার হাবা ! এই বুঝসিস !
আমি উৎসাহ পেয়ে বললাম
-তারপর মনে করেন স্বামী তার স্ত্রীকে সময় দিতে পারে ! এতে করে পারিবারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে !
-ঠিক ! ঠিক !
আমি আরো কিছু বলতে গেলাম ঠিক এই সময় দেখলাম আমাদের এলাকার এক ছোটা ভাই এদিকে দৌড়ে আসতেছে ! আমাদের কাছে এসে বলল
-পল্টু ভাই ! খবর শুনেন নাই ?
পল্টু ভাই বলল
-কি হইছে ?
-আপনার আব্বা গাড়িতে করে আসতে ছিল মগবাজার থ্যাইকা ! হরতাল সমর্তনকারীদের কবলে পড়ছিল ! একদম গুড়া কিইড়া দিছে গাড়ি !
-কি কস ??
পল্টু ভাই এক টানে উঠে দাড়ালো !
-কি কস ?
এই বলে সিগারেটে জোরে একটা টান দিল !
আমি বললাম
-আরে ভাই এতো উত্তেজিত হবার কিছু নাই ! পজেটিভ দিকটা চিন্তা করেন ! আপনাদের বাড়িয়ালার গাড়ি আর আপনাদের গাড়ি এক গ্যারেজে ঠিক করাবেন । তাহলে ঐ লোকটা বেশি লাভ হবে !
-আবে রাখ তোর লাভ ! হরতালের &*%$^&# !

এই বলে আর দাড়ালো না ! দৌড় দিল বাড়ির দিকে ! আমি আবার বসে পরলাম ! আর মনে মনে হাসতে লাগলাম !!


অফটপিক: আমার মনে হয় আমাদের দেশে হরতাল নেতারা সবাই এই পল্টুর মত আচরন করে ! নিজে যখন হরতাল করে তখন সেইটা তাদের গনতান্ত্রিক অধিকার ! আর যখন নিজে আক্রান হয় তখন হরতালে &#$%@ !!



ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×