somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আর তার বৃষ্টিতে ভেজার গল্প !

১১ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেখতে দেখতে দিনটা চলেই এল ! কি আজিব একটা ব্যাপার ! এতো দিন আমার ঘরে আমি একা ছিলাম । আর কয়েকটা দিন পরেই সেখানে অন্য একজন মানুষ এসে হাজির হবে ! আমারও খাট যেটা কদিন আগেই আমি শখ করে বানিয়েছি, বলতে গেলে নিজের উপার্জিত অর্থ দিয়ে বানিয়েছি সেখানে অন্য কারও দখলে চলে যাবে ! এখন যেমন হাত পা ছড়িয়ে শুতে পারছি তখন হয়তো আমি এতোটা আরাম করে শুতে পারবো না ! সে আসবে, আমাকে হয়তো কড়া করে বলবে কি ব্যাপার ? এই ভাবে শুয়ে আছো কেন ? ঠিক মত শোও !
আমি কিছু বলতে পারবো না ! নিজের খাটে নিজেই কাচু মুচু হবে শুয়ে থাকবো !
আমি ....
আচ্ছা !
এই কথা ভাবতেছি কেন আমি ?
আর এমন করেই বা ভাবতেছি কেন ?
একটা মেয়ে তার সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে আমার কাছে চলে আসবে, আর আমি তাকে এই টুকু অধিকার দিতে পারবো না ?

শোন হে মেয়ে,
তুমি যখন আসবে আমার কাছে,
আমার সব টুকু দিয়ে দিবো তোমায় !
খাটের এই জায়গা টুকু সহ
পূর্ন অধিকার !
আমার যা আছে এখন সবই তো তোমার !

জানি সে আমার এই কথা শুনতে পাবে না ! তাকে নিয়ে কবিতা লিখে ফেললাম সেইটাও সে শুনতে পাবে না !
আচ্ছা এই কবিতা শুনলে সে কি বলতো ? খুশি হত ?
নাকি একটু হেসে বলতো
-তাই সব কিছুতে আমার অধিকার ?
-আলবৎ !
-আচ্ছা যখন অধিকার দিয়েই দিয়েছ তখন আজ থেকে এই বাড়িতে .....
হয়তো সে এমন কোন আবদার করে বসতো যা আমি মানতে পারতাম না ! তবুও তাকেই দিলাম অধিকার !

মাঝে মাঝে মনে হয় আসলেই কি সে আমাকে পছন্দ করেছে ?
জানি না ঠিক ! মাঝে মাঝে মনে হয় হয় তো করে নি ! পারিবারিক ভাবে আগেই কথা চলতেছিল ! আমি আহেই তার ছবি দেখেছিলাম ! বলতে কি ওর ছবি দেখেই ভাল লেগেছিল ! চোখগুলো একটু বড় সাথে পাতলা ঠোট ! মুখটা একেবারে গোল নয় আবার লম্বাটেও নয় ! চেহারা ভিতর কেমন যেন একটা মায়া ভাব আছে ! দেখলেই যেন ভাল লাগে !
যেদিন ওদের বাসায় দেখতে গেলাম ওকে একটু অস্বস্থি লাগতেছিল কেমন ! একটু পরেই যখন ও ঢুকলো আমি উঠে দাড়ালাম বোকার মত !
পুরা ঘর ভর্তি মানুষ সবাই বসে আছে আমি উঠে দাড়ালাম !
মেন হচ্ছিল আগে যেমন ক্লাসে ম্যাডাম ঢুকলে আমরা সবাই উঠে দাড়াতাম সেই রকম !
আমি আবার বসে পড়লাম চট করেই ! মাথাটা খানিকটা নিচ করেই বসে রইলাম ! মেয়েটা না জানি আমাকে কি ভাবছে !
খ্যাত !
ভাবতেও পারে !
কে জানে !!

আমাদের পরিবারের সবাই তার সাথে কথা বলছিল ! সেও বলছিল স্বাভাবিক ভাবেই !
আমার একটু রাগ হচ্ছিল সবার উপর !
আরে আমি বিয়ে করবো ! আমার বউ হবে সে তোমরা এতো কথা বলার কে ?
এতো কথা জানার দরকার কি তোমাদের ?
জানার থাকলে আমি জানবো !
কিন্তু আমি কিছু বলতে পারতেছিলাম না ! কেবল মাথা নিচ করে বসেই রইলাম !
এই সময় ওদের পক্ষ্যেরই কেউ যেন আমার মনের কথাটা বলে উঠলো !
-আরে আমরা এতো কথা কেন বলছি ! ওদের কথা বলতে দাও !
আমি তখনই তার দিকে তাকালাম ! একদম তার চোখ বরাবর !
ইস ! কি গভীর চোখেই না আমার দিকে তাকিয়ে আছে ?
আমার দিকে ?
আমার ভিতর কার অস্বস্থি যেন আর একটু বেড়ে গেল !
কোন মতে বললাম
-আপনি ভাল আছেন ?
সে একটু যেন ঘাবড়ে গেল আমার কথা শুনে ! আসলেই কি ? নাকি আমি বেশি বুঝতেছি !
সে বলল
-হ্যাঁ !
এই পর্যন্তই। আর কোন কথা হয় নি !

আমি আরো কত কথা বলার ছিল ! কত কথা জানার ছিল ! কিন্তু বলতে পারলাম না ! এতো মানুষের সামনে কি মনে কথা বলা যায় ! কেউ একজন বললও না যে ওদের একটু একা কথা বলতে দাও !
একা হলে হলে জানতে চাইতে পারতাম সে কি পছন্দ করে ! কোন রং তার ভাল লাগে ?
অথবা বৃষ্টিদিনে বাড়ির উঠানে সে কখনও ভিজেছে কিনা ?
আরো কত কথা !! কিন্তু কিছুই জানা হল না ! কিছুই জানা হল না !

তারপর একটু যেন কেমন হয়ে গেলাম ! সারা দিনই তার কথা মনে পড়ে ! যদিও জানি সব কিছু পাকাপাকি হয়ে গেছে তবুও মনের ভিতর একটা ভয় কাজ করে যদি শেষ পর্যন্ত না হয় বিয়েটা !
প্রতিদিনই ভাবি তাকে একটু ফোন দিবো ! কয়টা কথা জানতে চাইবো !
কিন্তু হয় না !
বলতে গেলে আমি ফোন দিতে পারি না !
একদিন দিয়েই ফেললাম! কিন্তু সে যেন আমাকে চিনতেই পারল না ! নাকি চিনেও না চেনার ভান করল !
-কে বলছেন ?
-আমাকে চিনতে পারেন নাই ?
কিছুক্ষন নিরবতা ! চুপ দেখে আমি বললাম
-আমার তো মনে হচ্ছে আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন ! আম কি তবুও আমার পরিচয় দিবো ?
-না বলুন ! কেন ফোন দিয়েছেন ?
কেন জানি একটু খারাপ লাগলো কথাটা শুনে !
কেন কারন ছাড়া কি আমি ফোন দিতে পরবো না ! সেই অধিকার কি আমার নাই !
এই কথা গুলো বলতে চাইলাম ! কিন্তু বলা হল না ! আসলেই তো সেই অধিকার কি আমার হয়েছে এখনও ?
আমি বললাম
-একটা কথা জানার ছিল !
-বলুন !
-আমাকে কি আপনার পছন্দ হয় নাই ?
-কেন ? এই কথা কেন বলছেন ?
-নাহ ! মনে হল তাই !
-না ! এমন কোন কানর নাই !
আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না ! ফোন রেখে দিলাম !

গায়ে হলুদের দিন সন্ধ্যা বেলা তুমুল বৃষ্টি শুরু হল ! আমাকে বাড়ির বাইরে যেতে দেখে মা বলল
-কোথায় যাচ্ছিস ?
-তোমার বেটার বউয়ের সাথে ভিজতে যাচ্ছি !
মা ভেবেছে আমি ইয়ার্কী মারছি কিন্তু আসলেই আমি তাই করতে যাচ্ছি ! আজকে ওর সাথে গায়ে হলুদ হয়েছে ! এখন নিশ্চই আমার একটু অধিকার চলে এসেছে ! এখন নিশ্চই ওকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা যাবে !

আমি ঠিক ওদের বাড়ির সামনে গিয়ে ওকে ফোন দিলাম !
-হ্যালো ! কে বলছেন ?
-আজকেও পরিচয় দিতে হবে !!
-না বলুন ! কেন ফোন দিয়েছেন ?
-কারন ছাড়া কি ফোন দেওয়া যাবে না ?
-নাহ ! যাবে না কেন ? বলুন !
-বাইরে বৃষ্টি দেখছো !
-হুম !
-বৃষ্টি ভাল লাগে ?
-হুম !
-একটু বারান্দায় আসবে ?
-কেন ?
-আসো না ! তারপর বলছি !
কিছুক্ষন চুপ ! তারপর সে বলল
-এই তো এসেছি ! বলুন !
-তোমার চোখের চোখের দৃষ্টি শক্তি কেমন ?
-মানে ?
-না মানে যদি ভাল হয় তাহলে একটু নিচে তাকাও ! ঠিক ল্যামপোষ্টার দিকে ! দেখো একজন দাড়িয়ে আছে ছাতা মাথায় দিয়ে ! দেখতে পাচ্ছ?
-এটা কি......
আর কোন কথা নাই ! আমি বললাম
-তুমি কি একটু বারান্দা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি স্পর্শ করবে ? খুব ইচ্ছে করছিল তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজি !
ওপাশ থেকে কোন কথা নাই ! আমি আবার বললাম
যে বৃষ্টি জল আমাকে স্পর্শ করবে আজকে সে বৃষ্টি তোমাকেও নাহয় একটু ভিজিয়ে যাক !
তা কোন কথা নাই ! দেখলাম সে বারান্দা থেকে সরে গেল চট করে ! একটু পরে লাইনও কেটে গেল !
আমি ঠিক কি করবো বুঝতে বুঝতে পারছিলাম না ! চলে যাব ?
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দেখলাম সে বাড়ির গেট দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল ! আমার কাছে এসে বলল
-এমন পাগলামো কেউ করে ? এই বৃষ্টির ভিতর ! মানুষ দেখলে কি ভাববে ?
-তুমি কি ভাবছো ?
সে কোন উত্তর দেয় না !
আমি আবার বললাম
-একটু ভিজবা আমার সাথে ! অল্প একটু !
-জি না !
মুখে জি না বললেও কেন জানি মনে হচ্ছিল তার ভিজতে ইচ্ছা করছে !
আমি ছাতিটা ফেলে দিলাম ! তারপর ওর ছাতিটাও নিয়ে নিলাম ! কয়েক মুহুর্তের ভিতরেও আমরা ভিজে একাকার !
আর কোন কিছু না ! কেবল দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছি ! মনে হচ্ছিল যেন এই তাকিয়ে থাকা আর শেষ হবে না !
আমি চাচ্ছিলামও না এই ভাল লাগার মুহুর্তটা এতো জলদি শেষ হোক !


(Shila Shipa এই গল্পটা লিখেছিল ! কিন্তু সে লিখেছি একজন মেয়ের দিক দিয়ে ! আর আমি লিখলাম একটা ছেলের দিক দিয়ে)
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×