somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাক ব্যাংকের মহিলা ব্যাংকার ফারজানা এবং আমার সম্ভাব্য প্রেম কাহিনী

০১ লা মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এখনই জমা দিবেন ?
ফারজানার আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল । যদিও কন্ঠস্বর শুনেই মনে হচ্ছিল যে ওর ঠিক ইচ্ছা নাই । আমি একটু হেসে বললাম
-না ঠিক আছে । এখন না হলে সমস্যা নাই । আগামিকাল কেও দেওয়া যাবে ।
আমার কথা শুনে ফারজানার মুখটাতে একটু হাসি ফুটে উঠল । বলল
-থ্যাঙ্কস ! আজকে আমি খুব ট্যায়ার্ড ! এখন বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম ।
এই কথাটা শুনে আমার মনটা একটু খারাপ হল । যাহ এখনই চলে যাবে ? আর একটু বসলে কি এমন ক্ষতি হত !
আজকে সারা দিন আমি নিজেও ব্যস্ত ছিলাম । ভাবলাম একটু গল্প করে যাই টাকা জমা দেওয়া ছলে কিন্তু এই মেয়েযে চলে যাচ্ছে । আমি বললাম
চলে যাচ্ছেন ?
হুম ।
ফারজানা একটু হাসলো । ব্যাগটা আগে থেকেই গোছানো ছিল । ব্যাগ নিয়ে আমার সামনে দিয়েই বের হয়ে গেল ফারজানা । আমি বসে রইলাম ব্রাক ব্যাংকের এই আপন সময়ের ভিতর ।
জায়গাটা এই কয় দিনেই খুব বেশি পরিচিত হয়ে গেস । আসলে কারনে অকারনে দিনের ভিতর যখনই সুযোগ পাই এখানে আসি । টাকা তুলি । কয় টাকা আছে দেখি । আবার টাকা জমাও দেই । এই কাজ করেই দিনে কয়েকবার আসি সুযোগ পেলেই ।
আসলে আসি কেবল ফারজানাকে একটু দেখার জন্য । ওর সাথে একটু কথা বলার জন্য ।
আচ্ছা । ফারজানা কি একটু বুঝতে পারে না ?
বেকুব মেয়ে !
ব্রাক ব্যাংকের এই আপন সময়টা আমার বাড়ির খুব কাছেই । ফ্ল্যাট থেকে নেমে কয়েক পা আসলেই আপন সময় । নতুন হয়েছে এটা । আগে কেবল একটা এটিএম ছিল । তখন খুব একটা আসতাম না ।
আসার দরকার ই বা ছিল কি ! তখন তো আমার ব্রাক ব্যাংকে কোন একাউন্টই ছিল না । আর আমি কেমন যেন এটিএম থেকে টাকা তুলতে কেমন ভয় লাগতো । মনে হয় আমি টাকা তুলতে যাবো আর হয়তো আমার কার্ড আটকে যাবে অথবা টাকা আসবে না । কদিন শুনলাম নাকি এটিএম থেকে নকল টাকা বের হয় । তাই এটিএম কার্ডের উপর খুব একটা আগ্রহ ছিল না । একাউন্ট ছিল কিন্তু খুব একটা ব্যবহৃত হত না । আমার আবার টাকা ব্যাংকে রাখার চেয়ে নিজের পকেটে রাখতে বেশি ভাল লাগে ।
কিন্তু সেদিন এক বন্ধু সুমনের সাথে এই ব্রাক ব্যাংকের আপন সময়ে ঢুকেই সব কিছু কেমন যেন ওলট পালট হয়ে গেল । আমি প্রথমে মেয়েটাকে লক্ষ্য করি নি । আবিরের সাথেই কথা বলছিলাম । যখন টাকা তুলে ফেরত্‍ যাবো তখন মেয়েটার দিকে চোখ পড়লো । কেমন চোখে একটা কালো ফ্রেমের চশমা লাগিয়ে একটু গম্ভীর মুখে একটা ফাইল দেখছে । চুল গুলো খোলা আর সামনে রেখেছে । মাঝে মাঝে চুলে হাত দিচ্ছে । আমি কিছুক্ষন কেবল তাকিয়ে রইলাম ।
সুমন যখন হাত দিয়ে ধাক্কা দিল তখন বাস্তবে ফিরে এলাল ।
-চল । দাড়িয়ে পড়লি কেন ?
তখনই মেয়েটা আমাদের দিকে তাকাল ।
হায় !
আমি যেন শেষ হয়ে গেলাম ।
এই না হলে চোখ !
এভাবে একটা মেয়ের সামনে বেশিক্ষন দাড়িয়ে থাকাটা কেমন অশোভন দেখায় । মেয়েটার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বের হয়ে এলাম । যদিও খুব ইচ্ছা করছিল মেয়েটার দিকে তাকাতে কিন্তু যখন দরজা দিয়ে বাইরে বের হয়ে এলাম কেন জানি মনে হল মেয়েটাকে আর একবার দেখতেই হবে । না দেখলে হবে না ।
সুমনকে ফেলেই আবার আপন সময়ের ভিতরে ঢুকে পড়লাম । গিয়ে দাড়ালাম মেয়েটার সামনে । কয়েক মুহুর্ত মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে রইর । আমিও তাকিয়ে রইলাম ।
কি বলব ?
মেয়েটি বলল
কিছু বলবেন ?
-না ... হ্যা মানে ।
-বলুন ।
-মানে আপনাদের এখান থেকে কি ডেভিট কার্ড ইস্যু করেন ।
মেয়েটি একটু হেসে বলল
-জি না । কার্ড ইস্যু করি না । টাকা জমা দিতে পারবেন তুলতে পারবেন । একাউন্টের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন ।
-আর ?
-আর ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন ।
-ও আচ্ছা ।
আর কোন প্রশ্ন খুজে পেলাম না । বিদায় নিয়ে চলে আসতে হল ।পরদিন হাজির হলাম আবার ।
-জি বলুন ।
-আমার একটু চট্টগ্রাম যাওয়া লাগবে । এখান থেকে কি টিকিট কাটা যাবে ?
-হ্যা হ্যা । যাবে ।
আমি একটু হাসলাম ।
-যাক বাঁচালেন । আমি তো স্টেশনে গিয়েও টিকিট পাই নি । এতো লম্বা লাইন ধরে দাড়িয়ে শেষ গিয়ে শুনি টিকিট নাই । বলুন তো কেমন লাগে ।
-তাই নাকি ? এতো চাহিদা নাকি টিকিটের ?
-তাইতো মনে হচ্ছে ।
এবার মেয়েটি কম্পিউটায় স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে যাবেন ?
-জি আজকে ।
-রাতের ট্রেনে ?
-জি ।
মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো পিসি মনিটরের দিকে ।
-কই ? টিকিট তো সবই ফাঁকা রয়েছে ।
-তাই নাকি ? কিন্তু আমাকে যে বলল । যাই হোক । আপনার এখানে পাওয়া গেল । দিন একটা ।
মেয়েটা টিকিট প্রিন্ট করে দিল । আমি বললাম
আপনার নামটা জানতে পারি ? মেয়েটা বলল
-আমার নাম ?
-জি । যদি সমস্যা না হয় ?
-না না সমস্যা কেন হবে । আমার নাম ফারজানা । ফারজানা করিম ।
-আচ্ছা । আচ্ছা । আপনার বিয়ে হয়ে গেছে ?
-জি ??
ফারজানার মুখ দেখেই মনে হল ও এই প্রশ্নটা আশা করে নাই আমার কাছ থেকে ।
-কি বললেন ?
-না এমনি আর কি । আচ্ছা আমি আসি কেমন ?
আমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলাম ।

আসলে ফারজানার উপর এমন ভাবেই মন এসেছিল যে স্বাভাবিক বুদ্ধিও হারিয়ে গিয়েছিল । পরের দিন আবার গিয়ে হাজির হলাম । এটাও মনে ছিল না যে গতকাল রাতেই আমার চট্টগ্রাম পাওয়ার কথা ছিল । অন্তত ফারজানার কাছে তো তাই বলেছিলাম ।
আমি যখন আপন সময়ে ঢুকি দেখি আরও কয়েক জন রয়েছে । কোন কাজে এসেছে মনে হয় । আমার দিকে চোখ পড়তেই ফারজানার চোখটা যেন একটু অবাক হল । আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম ।
সবাই যখন বিদায় হল আমার দিকে ফারজানা খানিকটা হেসে বলল
-আপনার না এখন চট্টগ্রামে থাকার কথা ?
-তাই নাকি ? কে বলল ?
-আরে কালকে না টিকিট কাটলেন ।
-ও আচ্ছা । না ওটা আমার জন্য না । আমার এক বন্ধুর যাওয়ার কথা ছিল ।
-তাই , না ?
ফারজানা কেবল একটু হালস ।

তারপর থেকেই আসতাম প্রায় । টাকা তুলতাম আবায় জমা দিতাম । ফারজার সাথে টুকটাক কথা বলতাম । সময় খারাপ যাচ্ছিল না । কৌশলে ওর বাসা বাড়ির কথাও জানতে চাইতাম । প্রথম প্রথম না বললেও আস্তে আস্তে ও বলতো লাগলো । আলাপ চারিতা বাড়তে লাগলো ।

কিন্তু আজকে এ কি হল ? ফারজানার সাথে তো কথাই হল না ।
এই ব্যস্ততা !! আমি চুপচাপ আরো কিছুক্ষন বসে রইলাম ।
-তানভীর সাহেব ?
তাকিয়ে দেখি ফারজানা ।
-জি বলুন ।
-একটু আসবেন ? আসলে কয়েকটা বখাটে ছেলে দাড়িয়ে আছে । এর আগেও ওরা বেশ ব্যাড কমান্ট করেছে । আপনি আমাকে একটু এগিয়ে দেবেন ?
-কি ? আমার এলাকায় আমার নায়িকাকে টিজ করা ! খানিকযা হুংকার ছেড়ে বললাম
-কোথায় ? চলেন তো দেখি ।
আমি বেরিয়ে এলাম । কিন্তু চারিপাশে তো কাউকে দেখলাম না ।
-কোথায় ?
-মনে হয় হাটতে হাটতে সামনে গেছে । আপনি আমাকে একটু এগিয়ে দিবেন ।
-হুম দিবো না কেন ?
আমার কাছে এই টা যেন মেঘ না চাইতেই বজ্র সহ বৃষ্টি পাত ।
ফারজানার সাথে রিক্সায় উঠলাম । যতদুর জানি ফারজানা নুরজাহান রোডে থাকে । খুব বেশি দুরে না । যাক তবুও তো ।

-কি ভাবছেন ?
না তেমন কিছু না । আপনাকে কে ডিস্টার্ব করে বলুন তো ? আগে তো বলেন নি ।
দেখলাম ফারজানা হেসে উঠল ।
-হাসছেন কেন ?
-এমনি । আসলে আমাকে কেউ টিজ করে নি ।
-তাহলে ?
-না মানে আজকে সারা দিন আপনার সাথে কথা হয় নি । আর শরীরটাও ভাল লাগছে না । তাই ভাবলাম এই যাওয়া টুকু আপনার সাথে যাই । আপনার ভাল লাগবে ।
কিছুক্ষন চুপ থেকে ফারজানা বলল
-আমারও ভাল লাগবে ।
আমি সত্যি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম । কি বলছে এই মেয়ে ? আমি ঠিক শুনছি তো । দেখলাম ফারজানা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে ।
আমি বুকে অনেক সাহস নিয়ে ফারজানার হাত ধরলাম । আহা কি চমত্‍কার নরম ওর হাতটা !
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৩ রাত ১০:০৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×