লুল পাবলিকেরা সব সময় লুলামীর জায়গা খোজে ! খুব সহজেই ধারনা করে নিতে পারে যে কোথায় কোন সময়ে যেতে হবে ! এবং খুব সহজেই তারা তা পেয়েও যায় !
তেমনি একটা জায়গা হল ফেরীর ভিআইপি কেবিন ! নামে ভিআইপি হলেও কামে মোটেও ভিআইপি না ! লম্বা মতন একটা ঘর ! ফেরীর তিন তলায় থাকে । কিছু লোহার চেয়ার আর কয়েকটা টেবিল থাকে । যারা ফেরীতে একটু নিরিবিলি খাওয়া দাওয়া করতে চায় কিন্তু ক্যান্টিনের ঐ পরিবেশে খেতে পারে না তাদের জন্য এই ভিআইপি ব্যবস্থা ! সব চেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে একটা এটাচ্ বাধরুম আছে । ফেরীর বাথরুম গুলো তো ভয়াবহ অবস্থা থাকে । আমি এখানে আসি এই টার জন্যই ।
তাছাড়া অবশ্য আরও একটা কারন আছে । কারনটা উপরেই বলেছি ।
গাড়ি ফেরীতে উঠলেই আমি গাড়ী থেকে নেমে সোজা রওনা দিলাম তিন তলার ভিআইপি কেবিনের দিকে !
মনটা একটু খুশি খুাশি লাগছে কারন ফেরীতে আমি দুইটা স্ক্যানিয়া দেখে এসেছি । আজ কপাল ভাল হলেও হতে পারে !
কিন্তু কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকতেই যে এতো ভাল হয়ে যাবে ভাবতে পারি নাই ।
বাংলা সিনেমায় যেমন নায়ক আর নায়িকা একটা ধক্কা খায় ঐ রকম ভাবে মেয়েটার সাথে ধাক্কা লাগলো । না মানে একদম ঐরকম না ! খানিকটা ঐরকম আর কি !
-চোখে দেখেন না ?
এরে বাবা ! ডায়লগও দেখি সিনেমার মত !
আমি হিমুর মত একটু হাসি দেওয়ার চেষ্টা করলাম । হিমুর হাসি মাঝে মাঝে কাজ করে কিন্তু আমার হাসি কাজ করলো না ! মেয়েটি আরো কঠিন গলায় বলল
-ডোন্ট ইউ সি ?
-জি দেখেছি তো । না দেখলে তো ধাক্কাটা লাগতোই না !
-হোয়াট ডু ইউ মিন ?
-প্লিজ স্পিক ইন বাংলা ! আই ডোন্ট নো ইংলিশ !
মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! খানিকটা অগ্নি দৃষ্টিতে !
আমি মেয়েটার দিকে স্বাভাবিক ভাবেই তাকিয়ে রইলাম । এই সব মেয়ের সাথে তো আরো কয়েকজন থাকে ! একা একা তো আসার কথা না এই খানে ! তারা এসে পড়লেই ঝামেলা !
বাবা মা কিংবা ভাই কোয়ালিটির !
মেয়েটা আমাকে আর কিছু না বলে কেবিনের বাধরুমের দিকে চলে গেল । চলে যেতেই আমি সারা কেবিনে একবার চোখ বুলালাম । তখনই মেয়েটার ব্যাগটা চোখে পড়লো !
কেবিনে আর কেউ ছিল না মেয়েটা তাই ব্যাগটা রেখেই বাধরুমে ঢুকেছে ।
দেখো বেকুব আর কাকে বলে ?
এখন কেউ যদি ব্যাগটা নিয়ে যায় তাহলে ?
এই সহজ কথাটা কি মেয়ের মাথায় আসে নাই ?
আশ্চার্য ?
আমার মাথায় তখনই একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো ! যদিও ব্যাপার টা একটু রিস্কি হয়ে যায় ?
কিন্তু মেয়েটা যেহেতু এখই বাধরুমে ঢুকেছে সুতরাং চট জলদি বের হবার কোন সম্ভবনা নাই !
আমি দ্রুত মেয়েটার ব্যাগের কাছে চলে এলাম ! ব্যাগের চেইনটা একটু খোলাই ছিল । আর একটু খুললাম ! একটু নাড়া চাড়া করতেই পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত জিনিস টা ।
মোবাইল !
সনির এন্ড্রয়েড ফোন !
লক খুলে আমার নাম্বারে ডায়েল করলাম ! রিং আসতেই ফোনটা আবার রেখে দিলাম আগের জায়গায় ! আর ডায়েল লিষ্ট থেকে আমার নাম্বারটা মুছে দিতে ভুল করলাম না !
তারপর পরের টেবিলে গিয়ে বসলাম ভদ্র ছেলের মত । আমার মত ভালা পুলাই নাই ।
বেল টিপে বয় কে দুইটা কোল্ড ডিংস আনতে দিলাম !
মেয়েটা বের হল কিছুক্ষন পরেই ! মুখটা পানি দিয়ে ভেজা !! আর একটু যেন ফর্সা ফর্সা লাগছে !
ফেসওয়াস করে এল নাকি ?
আসতেই পারে ? কত কিছু এখন বের হয়েছে ! দুই মিনিটেই কত কিছু করা যায় !
মেয়েটা ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করতে লাগলো ! আমি মেয়েটিকে বললাম
-আপনাকে দেখে তো বুদ্ধিমানই ভেবেছিলাম ! এমন বোকামীটা কেন করলেন ?
-মানে ? কি বলতে চান ?
-এই ভাবে কেউ ব্যাগ রেখে যায় খোলা জায়গায় ? আমি যদি নিয়ে যেতাম ! আর কিছু না হোক মোবাইল টা যদি নিয়ে যেতাম !
মোবাইলের কথা বলেই মনে হল ভুল করলাম !
কি দরকার ছিল !
মেয়েটা চট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি মোবাইলের কথা কেন বললেন ? কিভাবে জানেন ?
-না । মানে আপনার হাতে তো মোবাইলে দেখি নাই ! আর বাধরুমেও তো কেউ মোবাইল নিয়ে যায় না ! ব্যাগেই তো থাকার কথা !
-তো কোথায় রাখবো মোবাইল ? কোথায় রেখে যাবো ব্যাগটা ?
-কেন আপনার সাথে আর কেউ আসে নাই ?
-জি না ! আমি একা !
-ও আচ্ছা !!
আমি মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম ! যাক আর কেউ আমাকে ডিস্টার্ব করতে আসবে না ! ফেরীর পুরোটা সময় মেয়েটা সাথে থাকা যাবে ! একটু টাংকি মারা যাবে !!
-দেখেন আমি কিন্তু ভালা পুলা তাই আপনার মোবাইল ব্যাগ নিয়ে দৌড় দেই নি, তার উপর এখানে বসে বসে পাহারা দিয়েছি !
-সো কাইন্ড অব ইউ !
মেয়েটা একটু ভেংচির মত কাটলো !
এই লাইনে আসতেছে !
-আচ্ছা আপনার নাম কি ?
-নাম দিয়ে কি হবে ?
-না মানে এই যে আমরা একখানে কথা বলছি আবার যদি সামনে আমাদের দেখা হয়ে যায় তখন ? মানে করেন আপনি সামনে দিয়ে যাচ্ছেন তখন আপনাকে কোন নাম দিয়ে ডাকবো ?
-আমাকে ডাকার কোন দরকার নাই ! ঠিক আছে ?
-আরে বলা যায় ! কখন কাকে দরকার পড়ে যায় !
মেয়েটা আর আমার দিকে তাকালো না । ব্যস্ত হয়ে গেল ফোন নিয়ে । কাকে যেন দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু লাইন যাচ্ছে না । মেয়েটির মেজাজ গরম হচ্ছে !
কেবিনের বয়টা কোল্ড ড্রিংড নিয়ে এল । আমি ইশারায় একটা মেয়েকে দিতে বললাম !
-এই এটা কার ! আমি কি আনতে বলেছি ?
-আফা ঐ ভাইজান দিতে বলছে !
মেয়েটা আবার আমার দিকে তাকালো ! আমি ভেবেছিলাম কঠিন কিছু বলবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল
-থ্যাংস !
-ওয়েলকাম ! আপনার ফোনে কি নেটওয়ার্ক নাই ?
-নাহ ! আছে । কিন্তু যাকে দিচ্ছি তার ফোন বন্ধ !
-কাকে দিচ্ছেন ?
-আমার বয়ফ্রেন্ড কে ?
-বয়ফ্রেন্ড ???
মেয়েটা একটু হাসলো !
আজকার মেয়েরা বেশ স্মার্ট হয়েছে । কেমন গর্ব করে বলে বরফ্রেন্ড !
ভাল !
মেয়েটা হঠাৎ করেই বলল
-জানেন ? আমি না বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি নিলয়ের কাছে ?
-নিলয় ?
-যাকে আমি ভালবাসি !
-বাড়ি থেকে রাজি না ?
-এখনও বলি নাই । তবে রাজি হবে না ! তাই আগেই কেটে পরি !
-কিন্তু আপনার বাবা মা ! তাদের মনে কষ্ট দেওয়া কি ঠিক হচ্ছে ?
-আরে বেশি দিন থাকবো না তো ! জলদিই ফিরে আসবো ! কষ্ট পাওয়ার কিছু নাই !
আমি আর কিছু বললাম না !
নাহ ! ঠিক মত জমলো না ! এই মেয়ের একটা বয়ফ্রেন্ড আছে ! তার উপর এই মেয়ে আবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে !
নাহ ! কোন চান্স নাই !
দুর !
কোল্ড ড্রিংসের টাকা টাই নষ্ট গেল !!
কেবিন থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল থেকে মেয়েটির নাম্বারটা মুছে দিলাম !
লাভ নাই !
কোন লাভ নাই !!
লস প্রজেষ্ট !!!
Click This Link
ফেরীর ভিআইপি কেবিন এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মা
মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।
অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন
কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।
একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প
তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে
ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন
জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।
সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন