somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশি আর অপুর খুনসুঁটি ছোট্ট গল্প !

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিশির মেজাজ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে ! মেজাজ খারাপের প্রধান কারন হচ্ছে ওর পেটের ভিতর ইদুর দৌড়াদৌড়ি করছে সেই কখন থেকে ! সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে নি । একটা মিডটার্মের পরেই প্রায় দুই ঘন্টা ধরে প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে হয়েছে ! কিছু মুখে নেওয়ার সুযোগ হয় নাই !
এখন বসে আসা কিছু খাবে বলে !
ঝামেলা টা সেখানেই ! নিশির ইচ্ছা ছিল ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন থেকেই খেয়ে বের হবে ! কিন্তু অপু কারনে সেটা হয় নাই । ক্লাস থেকে বের হয়ে যখন ক্যন্টিনের দিকে যাবে তখনই অপু ওর সামনে এসে দাড়ালো !
-কোথায় যাচ্ছিস ?
-খুদা লেগেছে ।
-আমারও লেগেছে ।
-তাহলে চল ! এক সাথে খাই !
-উহু ! এখানে না । চল তোকে শমসের মামার তেহরী খাইয়ে নিয়ে আসি !
নিশি একটু ভাবলো ! তারপর বলল
-না থাক ! এখন ভাল লাগছে না ! প্রচন্ড খুদা লেগেছে । এখন আর কোথাও যেতে ভাল লাগছে না !
-আহা ! চল না ! পাঁচ মিনিটের পথ ! প্লিজ ! জারুল তলায় বসবো ! তুই বসে থাকিস ! আমি গিয়ে নিয়ে আসবো ! চল না ! প্লিজ !
নিশির যদিও ইচ্ছা ছিল না ! তবুও অপুর কথা ফেলতে পারলো না !

নিশি আবার ঘড়ি দেখলো ! ঠিক একুশ মিনিট আগে অপু ওকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে ! এখনও ফেরার নাম নাই ! যতই সময় যাচ্ছে নিশির মেজাজ ততই খারাপ হচ্ছে ! নিশির যখন বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছে তখন অপুর দেখা পাওয়া গেল !

-এতো সময় লাগলো ?
অপু একটা হাসার চেষ্টা করলো ! নিশির তবুও মেজাজটা ঠান্ডা হল না !
-আসলে তোর সাথে আমার আসাটাই ভুল হয়েছে ! এতোক্ষনে খেয়ে-দেয়ে একটা ঘুম দিতে পারতাম হলে গিয়ে ! তা না !
-আর এতো রাগছিস কেন ? তোকে নিয়ে কি যে করবো না ! জানি না বিয়ের পরে আমার কপালে কি আছে !
-কি বললি ? বিয়ে ?
-কেন ? আমাকে বিয়ে করবি না ?
-মরে গেলেও না !
-আচ্ছা দেখা যাবে ।
-হুম । দেখা যাবে ।
নিশির গলার আওয়াজ একটু নমনীয় হয়ে এল !
যদিও মুখে কিছু বলল না তবুও একটু রাগ পরে এল অপুর উপর থেকে !
-কোথায় তোর তেহরী !
অপু প্যাকেট থেকে একটা তেহরী বক্স বের করে দিল !
নিশি অবাক হয়ে বলল
-সেকিরে ! একটা কেন ? তোর টা কই ?
-তুই খা ! তোর খিদে লেগেছে না ! আমি পরে খাচ্ছি !
-পরে খাচ্ছি মানে কি ? এখনই বের কর !
-আহা ! আমি খাবো তো ! তুই শুরু কর !
-দেখ ঢং করবি না ! আমার সাথে লাঞ্চ করবি বলে আমাকে নিয়ে এলি আর এখন বলতেছিস পরে খাবি !
অপু চুপ করে রইলো !
-কথা বলছিস না কেন ?
-আসলে ?
-কি আসলে ?
অপু বলল
-আরে এভাবে কেন কথা বলছিস ! মানে আমার কাছে টাকা ছিল না ! দোকানে কিনতে গিয়ে দেখি টাকা নাই দুইটা কেনার !
নিশি কিছুক্ষন অপু দিকে তাকিয়ে রইলো ! অপু যেন কিছু লুকাতে চাইছে !
আর অপু পকেটে টাকা নাই এটা কেমন যেন শোনালো ! অন্তত নিশি অপুকে যতদিন ধরে চেনে অপু রুম থেকে বের হওয়ার আগে আর কিছু চেক করুন না করুন নিজের মানি ব্যাগ টা ঠিকই চেক করে ! সুতরাং টাকা না নিয়ে বের হবে এটা ঠিক বিশ্বাস যোগ্য না । তার উপর ওর কাছে যদি টাকা না থাকতো তাহলে অপু কোন দিনই নিশিকে তেহরী খাওয়ানোর জন্য এখানে নিয়ে আসতো না !
-অপু !
-হুম !
-আমার দিকে তাকা !
-বল !
-সত্যি করে বল ! কি হয়েছে !
অপু একটু ইত্স্তত করলো ! কিছু একটা বলবে কিন্তু বলতে পারছে না !
-বল বলতেছি !
-আসলে ! আমি তেহরী নিয়েই আসছিলাম ! আসার সময় রাস্তার পাশে একটা মাঝ বয়সী লোক আমাকে ডাক দিলো !
-তারপর !
-লোকটার সাথে আর একটা বুড়ি মত মহিলা ছিল ! মনে হয় লোকটার মা ! তারপর লোকটা স্ত্রীও ছিল ! সাথে দুটো বাচ্চা !
-তো ?
-লোকটা বলল ওরা নাকি সাকলে ঢাকায় এসেছে । গাবতলী থেকে বাসে উঠেছিল ! তারপর ওদের পকেট নাকি মার হয়ে গেছে ! এখন আর কারো কাছে কোন টাকা নাই ! সকাল থেকে ওরা না খেয়ে আছে !
-ও বুঝেছি । আর আপনি ওমনি সব টাকা ওদের কে দিয়ে দিয়েছেন ?
-সব দেই নি তো ! মানে আর কি ?
নিশি খুব বিরক্ত হল !
-তোর কি বুদ্ধি শুদ্ধি হবে না কোন দিন ?
-না দেখ । সত্যি মনে হচ্ছিল ওরা বিপদে পরেছে ।
-হয়েছে । বুঝলাম ! আমি বুঝতেছি না তোকে নিয়ে আমি কি করবো ! দেখা যাবে তুই চাকরীর বেতন নিয়ে আসছিস ! কেউ তোর কাছে হাত পাতলো ! তখন পুরো টাকাটা তুই দিয়ে দিবি !
অপু একটু হাসার চেষ্টা করলো !
-দাঁত বের করবি না খবরদার ! তখন আমি কি করবো ! পুরো মাস আমি চালাবো কিভাবে ?
-চালাবি ! তুই চাকরী করবি না ?
-তাই না ? আমি চাকরী-বাকরী করতে পারবো না ! আমাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব তোর ! আহা ! বিয়েও করবে আবার বউকে দিয়ে চাকরীও করাবে !
-আচ্ছা ঠিক আছে । এখন আর রাগ করিস না ! আমি এবার থেকে সাবধান থাকবো ! কোন চিন্তা করিস না । এখন একটু খেয়ে নে ! তোর না খিদে লেগেছে !

নিশি কিছু বলতে গিয়েও আর বলল না ! প্যাকেট খুলল ! ওর আসলেই বেশ খিদে লেগেছে !
অপু মোবাইল বের করে কি যেন টেপাটেপি শুরু করলো !
-নে !
-আরে তুই খা !
-ঢং করতে হবে না !
-আরে বাবা ! আমার ওটো খিদে লাগে নি তো ! তুই খা !
-বলেছি না ঢং করতে হবে না ! নে !
অপু নিশির হাতে নলাটা মুখে নিল ! একটু চিবুতে চিবুতে বলল
-বিয়ের পরেও এভাবে খাইয়ে দিবিতো ?
-আগে বিয়ে করে নে, তারপর !
-চল ! এখনই তোকে বিয়ে করবো !
-হয়েছে ! নে !

এভাবেই দুজনের খুনসুঁটি গল্প এগিয়ে চলতে থাকে ! হয় তো সামনে এমন দিন আসেবে তখন নিশি প্রতিদিন এই ভাবেই অপু নিজের খাওয়া থেকে খাইয়ে দিবে ! অথবা অপুকে সামনের দিন গুলোতে একা একাই খেতে হবে !
কে জানে ভাগ্যে কি লেখা আছে !


সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৫৯
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘটে যা’ তা’ সব সত্য নহে

লিখেছেন বিষাদ সময়, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৪৫

সত্য কী?
যাহা আমি বিশ্বাস করি তাহাই সত্য।
সত্য অন্মেষণ কী?
আমি যাহা বিশ্বাস করি তাহার পক্ষে যুক্তি খুঁজিয়া বেড়ানো।
ভাল কে?
যে আমার পক্ষে কাজ করে সে।
মন্দ কে?
যে আমার সমালোচনা করে সে।

গড় পড়তা বাঙালীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×