somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি !!

০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসটা ঠিক ভার্সিটির গেটের কাছে থামতেই সুমন নেমে পড়লো । বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নাস্তা করা হয় নি । ক্যাম্পাসের ক্যান্টিন থেকে নাস্তা করে নিতে হবে । এক টানা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ক্লাস । এখন নাস্তা না করলে আর নাস্তা করার সুযোগ পাবে না ।
সুমন তাড়াতাড়ি ক্যান্টিনের দিকে পা বাড়ায় । ক্যান্টিনটা ওর ডিপার্টামেন্টের যাওয়ার পথেই পড়ে । ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে ঢুকতে গিয়ে সুমনের চোখ হঠাৎ করেই বা পাশের গেটটার দিকে চলে গেল । ঠিক ক্যান্টিনের পাশেই একটা পুরানো গেট আছে । বন্ধ থাকে সব সময় । আসলে গেটটার ও পাশে একটা সরকারি স্কুল আছে । আগে গেটটা খোলাই থাকতো কিন্তু ভার্সটি কর্তৃপক্ষ গেট টা বন্ধ করে দিয়েছে । সুমনের দৃষ্টি গেটটার দিকে যায় নি গেছে গেট টার সামনে দাড়ানো একটা ছেলেটার দিকে ।
ছেলেটা ওদের ডিপার্টমেন্টের । আবীর নাম । একটু পাগলা কিসিমের । সারাক্ষন মাথায় সব অদ্ভুদ চিন্তা ভাবনা কাজ করে ! সুমন ক্যান্টিনের গেট থেকেই আবীর দিকে তাকালো । একটু অবাকও হল বটে । এই সকাল বেলা করে আবীর এই বন্ধ গেট টার সামনে কি করে ।
আবীর বন্ধ গেট টার থেকে একটু দুরে চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে ওর ডান হাতটা মুঠো করে বুকের বাঁ পাশটার সাথে স্পর্শ করে । একদম সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আশ্চার্য এমন স্ট্রাচুর মত দাড়িয়ে থাকার মানে কি ?
সুমন প্রথম কিছুক্ষন ঠিক মত বুঝতে পারলো না আসলে ঠিক কি কারনে আবীর ওখানে দাড়িয়ে আছে ।
কিন্তু কয়েক মুহুর্ত পার হতেই চট করেই ব্যাপারটা ধরে ফেলল । ধরে ফেলতেই সুমনের মনটা কেন জানি একটু সিক্ত হয়ে উঠল । আবীরের জন্য হঠাৎই একটা শ্রদ্ধাবোধ জেগে উঠল ।
ক্যাম্পাসের সাথেই লাগোয়া যে স্কুলটা আছে সেখানে প্রতিদিন সকালে পিটি করানো হয়। ছেলে মেয়েদের স্কুলের শপত বাক্য পাঠ করানো হয় । এবং সবার শেষে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় । আবীর ঐ জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকা কে সম্মান জানানোর জন্যই ওখানে দাড়িয়ে আছে ।
সুমন আপনা আপনি আবীরের পাশে গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল । ডান হাতটা চলে বুকের কাছে ।
স্কুলের কোন পিচ্চি ছেলে জাতীয় গাচ্ছে । কি মিষ্টি সেই পিচ্চির গলা ।

আমার সোনার বাংলা,
আমি তোমায় ভালবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ,
তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।


সুমনের কেন জানি হঠাৎ করেই চোখ ভিজে উঠল । এমন ঘটা করে কোন দিন জাতীয় সংগীত কে সম্মান জানানো হয় নাই । আজকে কেন এতো অদ্ভুদ লাগছে । অদ্ভুদ ভাল একটু অনুভুতি হচ্ছে ।
নিজের দেশ । নিজের একটা পতাকা । নিজের একটা গান । জাতীয় সংগীতের প্রত্যেকটা লাইন যেন বুক চামড়া ভেদ করে সরাসরি হৃদপিন্ড গিয়ে আঘাত করে । প্রতিটি লাইনের সাথে সাথেই সুমন নিজের মধ্যেই একটা কাঁপন অনুভব করছে !

ও মা,
ফাগুনে তোর আমের বনে
ঘ্রানে পাগল করে--
মরি হায়, হায় রে
ও মা,
অঘ্রানে তোর ভরা খেতে,
আমি কি দেখেছি মধুর হাসি।।



আবিদা কে আসতে দেখেই মামুন একটু রাগ করলো । কপট চোখ গরম করে বলল
-এই তোমার আসার সময় হল ? কতক্ষন ধরে বসে আছি ।
আবিদা একটু কানে ধরে বলল
-খুব সরি । আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে খেছে । প্লিজ রাগ কর না । প্লিজ ।
মামুন তবুও একটু গড়গড় করতে লাগলো । এই মেয়েটার কোন সময় জ্ঞান নাই । একদিনও যদি ঠিক সময় মত আছে ।
আবিদা আবারও একটু হেসে বলল
-আচ্ছা আর রাগ কর না । চল আজকে তোমাকে ভুনা খিচুরী খাওয়াবো । তোমার না ভুনা খিচুরী অনেক পছন্দ । চল ।
মামুনের মুখ তবুও বেজার হয়ে রইলো । হাটতে লাগলো আবিদার সাথে । ক্যান্টিনের দরজা দিয়ে যখন ঢুকবে তখনই আবিদা ওর হাত চেপে ধরে থামিয়ে দিল । খানিকটা বিরক্ত হয়েই মানুম বলল
-কি হল ?
-দেখো ।
-কি ?
আবিদার হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো । হাত বরারব মামুন তাকিয়ে দেখে সেখানে দুটো ছেলে দাড়িয়ে আছে চুপচাপ । মামুন আবারও বিরক্ত হল ।
-কি হয়েছে ?
-আরে বুঝতে পারছো না ?
-না ।
-আরে গাধা দেখছো পাশের স্কুলে জাতীয় সংগীত হচ্ছে । ছেলে দুটো দাড়িয়ে থেকে সম্মান জানাচ্ছে । আসো ।
-কোথায় ?
-আরে আসো না ।
আবিদা মানুনের হাত ধরে ছেলে দুটোর পিছনে গিয়ে দাড়াল ।

কি শোভা কি ছায়া গো,
কি স্নেহ কি মায়া গো--
কি আঁচল বিছায়েছ
বটের মূলে,
নদীর কূলে কূলে।


মাহমুদ হাসান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন সহকারী প্রোফেসর ! উনি ভার্সিটির পাশের । সকাল সকালই ভার্সিটিতে চলে আসেন । তার উপর আজকে সকাল সাড়ে আট টার সময় একটা ক্লাস আছে । একটু তাড়াহুড়া করতে লাগলাম ! এখনও ক্লাসের কোন প্রস্তুতী নেওয়া হয় নাই । অফিসে বসেই কিছু প্রস্তুতী নিতে হবে !
মাহমুদ হাসান নিজের ঘড়ি দেখলেন !
সকাল সাতটা ৪৫ বাজে । নাহ ১ একটু তাড়াতাড়ি করতে হবে ! তিনি দ্রুত পা বাড়ালন ! ক্যান্টিন পার হতেই মাহমুদ হাসান একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখতে পেলেন !
ক্যান্টিনের পাশের বন্ধ জং ধরা গেট টার সামনে বেশ কয়েকজন ছেলে মেয়ে দাড়িয়ে আছে । মাহমুদ হাসানের একটু সময় লাগলো ব্যাপার টা বুঝতে ! কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারলো !
মনটা হঠাৎ করেই ভাল হয়ে গেল তার !
আহা ! তার বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কিছু ছেলে মেয়ে পড়া শুনা করে এটা জেনেই তার মন ভাল হয়ে গেল !
তিনি নিজেও তাদের সাথে দাড়িয়ে গেলেন ! একটু দেরী হোক না !
মাইকে তখনই ভেসে আসছে

মা, তোর মুখের বাণী
আমার কানে লাগে
সুধার মতো--
মরি হায়, হায় রে
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে
আমি নয়ন জলে ভাসি।।



যখন জাতীয় সংগীত শেষ হল তখন সুমন লক্ষ্য করলো তার তার চোখ বেয়ে পান পরছে ! সাথে সাথে অদ্ভুদ একটা অনুভুত হচ্ছে ! অদ্ভুদ ভাল লাগার অনুভুতি !
তার থেকে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো ওর ঠিক পাশে প্রায় কয়েক জন ঠিক ওর মত দাড়িয়ে আছে । সবার চোখে মুখে কেমন একটা ভাল লাগার অনুভুতি ! ওদের ভিতর তাদের ডিপার্টমেন্টের স্যারও আছে !

কয়েক মিনিট কেউ কোন কথা বলল না ! তারপর যে যার মত চলে যেতে শুরু করলো ! যেন কিছু হয় নাই ! মাহমুদ হাসানও দ্রুত নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে হাটা দিল !
সুমন একটা ভাল লাগা চোখে সবার চলে যাওয়া দেখলো !
সুমন আবীরের দিকে তাকিয়ে দেখে আবীর তখনও দাড়িয়ে আছে ।
-এই ! চল !
আবীর ওর দিকে তাকালো !
-কোথায় যাবো?
-চল ! আজ তোমাকে আমাদের ক্যান্টিনের বিখ্যাত ভুনা খিচুরী খাওয়াবো ! চল !

জাতীয় সংগীত !


(অনেক দিন পরে একটা গল্প লিখে কেন জানি খুব শান্তি পেলাম)

Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:৩১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো বনাম তরুণশক্তিঃ লিমিট, ব্যালেন্স, সিস্টেম বোঝাটা খুব জরুরী

লিখেছেন শেহজাদ আমান, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৬



লিমিট, ব্যালেন্স ও সিস্টেমটা বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনের শক্তিধর সংগঠনগুলোকে বুঝতে হবে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যখন বলে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বতী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছে, তখন সেটা যৌক্তিক শোনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রিয় কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২





'যে জলে আগুন জ্বলে'র কবি হেলাল হাফিজ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

আজ শুক্রবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লাগবা বাজি?

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫০

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছলনার বালুচরে

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৩



কিছু প্রশ্নের উত্তর তুমি নিরবতায় খুঁজে নিও
ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে ভুলগুলো বুঝে নিও।।
ছলনার বালুচরে মোহ মায়া ছুঁড়ে দিয়ে
বিষাদের প্রবল স্রোতে তুমি নিজেকে খুঁজে নিও।।

বুঝে নিও।।
ছটফটানিতে গিলে খায়
জীবনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হায়রে সিইও, কী করলি জীবনে....

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ছবি রয়টার্স

দেশের বিখ্যাত কোম্পানীর সিইও হোটেল থেকে বের হয়েছেন, এমন সময় তাকে একজন ঠান্ডা মাথায় গুলি করে খুন করল। সিসিটিভিতে সেই গুলি করার দৃশ্য স্পষ্ট ধরা পড়ল। এখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×