somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহীন নামের মেয়েটি !!

৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ইতস্তর করে আবার মেয়েটির দিকে তাকালাম । মেয়েটা সাদা ল্যাগিংস পরে আছে । সাথে সাদা রংয়ের কুর্তা । আর সাদা ওড়না । সারা চেহারায় একটা সাদা শুভ্রতা লেগে আছে ! এতো নমনীয় চেহারা খুব একটা দেখেছি বলে আমার মনে পড়ে না ! বারবার যেন তাকাতে মন চায় !
সাদা ল্যাগিংসের উপর আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে । আমার চোখ বারবার মেয়েটার দিকে চলে যাচ্ছে । পাবলিক প্লেসে এই ভাবে মেয়েদের দিকে হা করে তাকানো ঠিক না । তার উপর যদি রোজা রমজান মাসে আরো ঠিক না । তবুও চোখ ফেরানো যাচ্ছে না !
বুঝলাম । আজকে রোজা গেছে !
অবশ্য মেয়েটা যে ধরনের পোষাক পরে আছে তাতে যে কারো চোখ মেয়েটার দিকে যাবে ।
আমি বুঝি না মেয়ে গুলা এমন পোষাক কেন পরে ?
পল্টু ভাইকে এই প্রশ্নটা করেছিলাম সেই দিন !
-আচ্ছা ভাই বলেন তো মেয়েদের কে এই রকম পোষাক পরা ঠিক ?
পল্টু ভাই আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলল
-তুই আসলে কিচ্ছু বুঝিস না ! আমার তো মনে হয় মেয়েদের সব সময় টাইট ফিটিং পোষাক পরাই উচিৎ ?
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-এটা কি বলেন ভাই ? এটা তো ঠিক না । তাহলে আামদের চোখে তাদের দিকে যাবে ! তখন ।
-আরে বেটা এই খানেই তো কথা ! হুজুর বলছে শুনোস নাই ! যেমন তেতুল দেখলে সবার মুখে জল আছে তেমনি মেয়েদের এই টাইপের পোষাক পরা দেখলে সবার মনেই কু মতলব আসবে !
আমি পল্টু ভাইয়ের কথা কিছু বঝলাম না ! বললাম
-এইটা কেমন হল !
-হুম ! এই টাই কথা । তখন কাঁঠাল পাতা দেখলেই যেমন ছাগলে মুখ দেয় তেমনি তেতুল দেখলেই জিহ্বায় পানি আসে । এখন বল যদি তুমি নিজের জিহ্বায় পানিটা নিয়ন্ত্রন নাই করতে পারলা তাহলে ঐ ছাগল আর তোমার ভিতর পার্থক্যটা রইলো কই ?
আমি তবুও বুঝলাম না পল্টু ভাইয়ের কথা !
-আরে বেটা শোন ! যত মেয়ে তোর সামনে আসবে ততবার তুই নিজেকে পরীক্ষা করার সুযোগ পাবি ! যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারিস তাহলেই তো হলে গেল । এবার থেকে যখন এমন টাইট ফিটিং পরা মেয়েকে দেখবি তখনই নিজের টেষ্ট নিবি ! বুঝলি !

পল্টু ভাইয়ের কথা মত নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার টেষ্ট নিতে শুরু করলাম । কিন্তু পাশ করতে পারবো বলে মনে হয় না ! যাক ফেল যখন হয়েই গেছে আর একটু ভাল করেই ফেল করি !

বাটা সিগনালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছি আর এই লুলামী করতেছি । সিগনালের ওপারে বেশ কয়েকটা বাস দেখা যাচ্ছে । এখই সিগনাল ছেড়ে দিবে মনে হচ্ছে । আচ্ছা মেয়েটি কোথায় যাবে ?
এখান থেকে সব গুলো বাসই তো আমার এলাকায় যায় ! দেখা যাক মেয়েটা কোন বাসে উঠে । আমিও সেই বাসে উঠব এমন একটা প্লান করলাম ! দেখা যাক কি হয় !

একটু পরেই বাস আসলো । সবাই বাসে উঠে পড়লো ! আমি উঠতে পারলাম না কারন মেয়েটি এখনও আগের জায়গায়ই দাড়িয়ে আছে ! কি ব্যাপার মেয়েটি যাবে না নাকি ?
দেখতে দেখতে সব বাস গুলো চলে গেল । আমি আর মেয়েটি দাড়িয়ে রইলাম ।

আমি ভাবছি এখন কি করা যায় ? এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা কেমন লাগে ? হাটা দেবো নাকি ? হাটতে হাটতে চলে যাই সায়েন্স ল্যাব ?
ওখান থেকে বাসে উঠলেই হবে !

-এই !
সর্বনাশ ! মেয়েটা আমাকে ডাকছে কেন ?
আমি কিছু জানি না এমন একটা ভাব করে বললাম
-আমি ?
-হুম !
-তুমি আমাকে দেখতে পাচ্ছ ?
আমি একটু ভ্যাবচেকা খেয়ে গেলাম ! এটা আবার কি রকম প্রশ্ন হল ! প্রশ্ন টা এমন হতে পারে যে তুমি আমাকে এভাবে দেখছ কেন ?
আমাকে দেখতে পাচ্ছ ? এটা আবার কেমন প্রশ্ন হল ?
আমি বললাম
-নাতো ! আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না ! এই তুমি সাদা সেলোয়ার কামিজ পরেছ আমি একদম দেখতে পাচ্ছি না !
-ফাজলামো কর আমার সাথে ?
-তুমি আমার সাথে ফাজলামো করতেছ ? দেখতে পাচ্ছো এটা আবার কি রকম প্রশ্ন হল ?

মেয়েটি আমার কাছে এগিয়ে এল ! তাকালো আমার চোখের দিকে !
ইস কি চমৎকার চোখ !! মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়েই রইলো কিছুক্ষন ! তারপর বলল
-আমার একটা উপকার করবে ?
-উপকার ?
একটু অবাক হতে হল !
এই মেয়ে আমার কাছে কি উপকার চায় ?

একবার মনে আছে এই রকম এক মেয়ে আমার কাছে উপকার চেয়েছিল । সেদিন শাহবাগে দাড়িয়ে ছিলাম । পরদিন হরতাল থাকায় বাসের সংখ্যা ছিল অনেক কম । ভিড় ছিল বেশি । আমি দাড়িয়ে ছিলাম । আমার মত অনেকেই দাড়িয়ে ছিল । কয়েকটা বাস চলে গেল আমরা কয়েক জন কেবল চেষ্টাই করলাম কিন্তু বাসে উঠতে আর পারলাম না । কি করবো বুঝতে পারছিলাম না এমন সময় পাশে দাড়িয়ে থাকা একটা মেয়ে আমাকে বলল
-ভাইয়া একটা উপকার করবেন ?
-আমি ?
-জি ?
-দেখুন আমার বায়ায় যাওয়াটা খুব দরকার । আপনি কি আমাকে বাসে উঠতে একটু সাহায্য করবেন ?
আমি বললাম
-কি সাহায্য বলুন ?
-আমাকে একটু বাসে উঠতে সাহায্য করবেন প্লিজ ! আপনি উঠলে আমাকে একটু সাহায্য করলেই হবে !
একটা মেয়ে আমার কাছে সাহায্য চেয়েছে বলে কথা ! সাহায্য না করে কি পারি !
একটু পরে যে বাস এল আমার শরীরে কি যেন একটা জোশ চলে এল । নিজে বাসে উঠার ক্ষেত্রে কোন দিন এমন জোশ দেখিয়েছি বলে মনে নেই । আমি না উঠে মেয়েটিকে আগে উঠিয়ে দিলাম । এবং অবাক হয়ে লক্ষ করলাম আমি নিজে উঠতে পারলাম না । বাস আমাকে রেখে চলে গেল !
মেয়েটা একবার পেছন ফিরে চাইলও না !
ফাজিল মেয়ে !

আর আজকে এই মেয়ে আবার আমার কাছে কি সাহায্য চাচ্ছে ?
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-আমি ?
-হুম ! কেবল আপনিই পারেন !
আমি আবার খানিকটা কনফিউজ হয়ে গেলাম । কেবল আমিই উপকার করতে পারি ! এটা আবার কেমন কথা ! কেমন যেন একটু সন্দেহ হল মনের ভিতর । তবুও কিছু বললাম না । হাজার হলেও একটা মেয়ে আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছে । তার উপর সুন্দর একটা মেয়ে । এবং সবার উপরের কথা হল মেয়েটা সাদা টাইটস পরে আছে ।
এই মেয়ে যদি আমাকে বলে শুনো অপু বাবু একটা কাজ করতো । সামনে যে মেগা সিটি বাসটা আসতেছে না ঐটার সামনে একটা লাফ দাও তো !
আমার মাথা ঠিক নাই আম লাফ দিলেও দিতে পারি ।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম
-বলুন কি উপরকার করতে পারি ?
-আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে ?
-মানে কি ? কোথায় যেতে হবে ?
ঘোরতর সন্দেহ ! কোথায় যেতে বলতেছে ।
না মামা !
এই ভুল কাজ কর না । এমনিতেও মেয়েরা আমাকে ঠিকমত পাত্তা দেয় না আর এই মেয়ে আমাকে ডেকে বলতেছে এক জায়গায় যাওয়া লাগবে ।
-কোথায় যাওয়া লাগবে ?
মেয়েটা একটু ইতস্তর করতে লাগলো ।
আমি আবার বললাম
-কোথায় যাওয়া লাগবে ?
-আমার এক্স বয়ফ্রেন্ডের কাছে !

ইয়া আল্লাহ ! আমার কপালই কেন খারাপ হয় ! সব সুন্দর মেয়ের কি বয়ফ্রেন্ড থাকাটা জরুরী । দুএজনকে আমার মত অভাগার জন্য কি রাখা যায় না !
এই মেয়ের কেবল বয়ফ্রেন্ডই নাই তাও আবার এক্স ! দেখা যাবে ইয়াই জেড সব পাওয়া যাবে !
-কেন ?
-ওর কাছে আমার কিছু জিনিস আছে ওগুলো নেওয়া দরকার !
-ও আচ্ছা !
-তুমি প্লিজ চল আমার সাথে ! তোমাকে ছাড়া ওগুলো আনা সম্ভব না !

মেয়েটা আমাকে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে । এটাও একটা ভাল দিক ! আমার যদিও যাওয়া ইচ্ছা ছিল না তবুও আমি রাজি হয়ে গেলাম । মেয়েটার সাথে আরো কিছুক্ষন থাকা যাবে এটা একটা ভাল দিক ! আমি বললাম
-চল যাই !
-রিক্সা নাও !
-রিক্সা ?
যাক এটা আরো একটা ভাল দিক ! অনেক দিন কোন মেয়ের সাথে রিক্সা উঠি নাই । আজকে উঠবো ! মজাই মজা !
-তার বাসা কোথায় ?
-আজিমপুর !


রিক্সার আমি আর মেয়েটি পাশাপাশি বসে আমি । কিন্তু আমি একটু অবাক হচ্ছি ! আজ পর্যন্ত আমি যে কয়টা মেয়ের আসে পাশে গিয়েছি একটা সুগন্ধ নাকে এসেছে । মানে সব মেয়েই কিছু না কিছু প্রশাধনী ব্যবহার করে। একটা আলাদা সুগন্ধ ভেসে আছে তার কাছে গেলে । আর এই মেয়েটা আমার পাশে বসে আছে কিন্তু আমি কোন সুগন্ধ পাচ্ছি না !
আশ্চার্য !
কেন ?
মনে হচ্ছে আমার পাশে কেউ বসে নাই ! আমি যদি চোখ বন্ধ করি তাহলে আমার পাশে যে একজন বসে আছে এটা আমি বুঝতেই পারবো না !
হঠাৎ সে বলল
-একটা কাজ করেন !
আবার আপনি ! একটু আগে না মেয়েটা আমাকে তুমি করে বলেছিল ?
নাকি ভুল শুনেছিলাম ? যাই হোক ! আমি বললাম
-কি ?
-আপনার কাছে হেড ফোন আছে ?
-হুম আছে ! কেন ?
-কানে দিন !
-কেন ?
-আহা ! দিন না ! বলছি দিন !
আমি কিছু না বুঝে আমার হেড ফোন কানে দিলাম ! তারপর বললাম
-আপনার নাম জানা হয় নাই !
-আমি অহীন ! আপনি ?
আমি আমার নাম বললাম !
মেয়েটি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে !
আবারও কিছুক্ষন নিরবতা ! কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না ! পাশ দিয়ে অনেকেই চলে যাচ্ছে । একটা ব্যাপার সবাই কেমন যেন অন্য চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে ।
তাকাবেই তো ! আমার পাশে কে বসে আছে দেখতে হবে না । হাহাহা !
-কি হল চুপ করে আছেন কেন ?
-না এমনি । কোন কিছু ভাবছি না ! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ।
-কেন ?
-এই যে আমার সাথে যাচ্ছেন ।
-আরে কি যে বলেন ? না ঠিক আছে । কোন সমস্যা নাই । আমার তো ভালই লাগছে আপনার সাথে রিক্সায় চড়তে ! আচ্ছা আপনার বয় ফ্রেন্ডের কাছে কি আছে এমন যে নিতেই হবে ?

মেয়েটি আমার কথা শুনে কিছু্ক্ষন চুপ করে রইলো । তারপর বলল
-আসলে আপনাকে একটা মিথ্যা কথা বলেছি !
-মিথ্যা কথা ? কি মিথ্যা কথা ?
নাহ ! এই মেয়ের কথা বার্তা আবার কেন জানি কেমন লাগছে । এটার কোন মানে আছে ? এখন নিশ্চই বলবে যে আসলে সে আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড না । আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ড ! আমার সাথে ঝগড়া হয়েছে । আপনার সাথে রিক্সায় চড়েছি তাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য !
কিন্তু মেয়েটা তেমন কিছু বলল না ! আমি জানতে চাইলাম
-কি মিথ্যা বলেছেন ?
-সেটা না হয় নাই জানলেন !

আমি অহীনের সাথে কথা বলতেছি এই ফাঁকে দেখলাম রিক্সাওয়ালা বেশ কয়েকবার আমার দিকে পিছন ফিরে তাকিয়েছে । চোখে খানিকটা অবিশ্বাসের ছায়া !
মানে কি ?

যখন রিক্সা থেকে নামলাম তখন আসছের বিকাল পাঁচটার কিছু বেশি বাজে ! আমি আর অহীন আজিমপুরের গলির ভিতর হাটতে শুরু করলাম । আমি তো আর পথ চিনি না । অহীন আস্তে আস্তে হাটছে আর আমি ওর সাথে সাথে যাচ্ছি !
কিন্তু একটা ব্যাপার আমার কাছে একটু অন্য রকম লাগছে । অহীন যে আমার সাথে সাথে হাটছে এটা যেন আশে পাশে আর কেউ দেখতেই পাচ্ছে না !
মানে সাধারনত যখনই মেয়েরা অহীনের মত পোষাক পরে বাইরে আসে মানুষ জন একটু অন্য চোখে তাদের দিকে তাকায় ! কেবল ফটকা পোলাপাইন না সকল বয়সের লোকদের চোখ যায় সে দিকে !
কিন্তু এতোক্ষন ধরে অহীনের পাশাপাশি হাটতেছি আশে পাশে আমি খুব ভাল করেই দেখছি কেউ ই ওর দিকে খুব একটা তাকাচ্ছে না !
কেন ?
রোজার মাস বলে ?
নাহ ! পাবলিক এতো ভাল হইলো কবে ?

হাটতে হাটতে অহীন একটা বাড়ির সামনে দাড়িয়ে গেল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই বাড়ি !
-আসো !
-আমি যাবো না !
-সে কি কেন ? আমি একলা একলা যাবো নাকি ?
-হুম !
-মানে কি ? চিনি না জানি না এমন একটা মানুষের কাছে গিয়ে কি বলবো ?
-আমাকে কি চিনো?
এই তো আবার তুমি তে নেমে এসেছে !
আমি বললাম
-না, কিন্তু চিনে নেবো ! আর তোমার ব্যাপারটা আলাদা ! তাই না ?
-দেখো আমার ওর সামনে যাওয়া সম্ভব না ! আর গিয়ে খুব একটা লাভও হবে না !
-লাভ হবে না মানে কি ? কি বলতে চাও !

অহীন কিছু বলতে গিয়েও বলল না । আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল
-প্লিজ একটু সাহায্য কর ! আই বেগ ইউ !
এর উপর আর কোন কথা থাকতে পারে না ! আমি বললাম
-কি বলতে হবে ?
-তুমি কেবল বেল বাজাবে ! একজন বৃদ্ধ বেরিয়ে আসবে । উনি বর্ষনের বাবা !
-বর্ষন কে ?
দেখলাম অহীন চুপ করে রইলো কিছুক্ষন ! বুঝলাম ওর বয়ফ্রেন্ডের নাম বর্ষন ! ভাল নাম !
-তারপর ?
অহীন বলল
-তারপর ওকে বলবে যে
এই পর্যন্ত বলেই অহীন কিছুক্ষন চুপ করে রইলো !
-তারপর ?
ওকে বলবে যে আমি ওকে অনেক ভালবাসি ! আর আমার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল ! খুব ভুল ছিল !
-কিছু নিতে হবে না ?
অহীন মাথা ঝাকালো !
ঠিক তখনই কেন জানি আমার মেজাটা একটু খারাপ হল ! এই একটা লাইন বলার জন্য আমাকে এতো দুর নিয়ে এল !
আমি খানিকটা গরম হয়ে বললাম
-কেবল এই লাইনটা বলার জন্য আমকে এতো দুরে নিয়ে এলে ? কেন ফোন করে বলা যেত না ?
অহীন চুপ করে রইলো ! আমার মনে হল এখান থেকে চলে যাই । এখানে থাকার আর কোন মানে নাই !
শালার আমি একটা পাগল আছি ! লুল পাবলিকের নিয়ে এ সমস্যা !

-অপু প্লিজ ! একটু বোঝার চেষ্টা কর । আমি ফোন করার পরিস্থিতি তে ছিলাম না ! এখনও নেই !
-মানে কি ? তোমার কাছে ফোন নাই ? নাকি ফোনে টাকা নাই ?
-ঐ টা না !
-তাহলে !
-তুমি বুঝবে না !
-বোঝাও !
-আসলে......
অহীন কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল ! ওর চোখ কে লক্ষ্য করে আমি সামনের দিকে তাকালাম ! দেখি দরজা খুলে একটা মাঝ বয়সী লোক বেরিয়ে এসেছে ! আমার দিকে খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে !
লোকটা বলল
-তুমি কার সাথে কথা বলছো ?
-জি !
আমি অহীনের দিকে তাকালাম ! ও নিজেও আমার দিকে তাকয়ে আছে !
আমি বললাম
-কেন আপনি দেখতে পাচ্ছেন না ?
-না ! ওখানে তো কেউ নেই !
বলে কি ?
জলজ্যান্ত একটা মেয়ে দাড়িয়ে রয়েছে আর বলে কি কেউ নাই ! মনে হল ভদ্রলোকের চোখে ব্যাপক সমস্যা আছে ! এই দিনের বেলাও কিছু চোখে দেখে না !
আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না !
ইনি মনে হয় বর্ষনের আব্বা ! আমি একটু বিনয় কন্ঠে বললাম
-বর্ষন কি বাসায় আছে ?
হঠাৎ দেখলাম
-ভদ্রলোকের চেহারা একটু মলিন হয়ে গেল ! মুখ গোমরা করেই বলল
-হুম ! আছে ! বাসায়ই থাকে সারা দিন । নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকে !

আমি বললাম
-বর্ষনকে একটু ডেকে দিবেন আঙ্কেল !
-তুমি ওর বন্ধু !
-হুম !

ভদ্রলোক কি যেন ভাবলেন একটু ! তারপর আমাকে বললেন
-ও এখন বাইরে আসবে না ! তুমিই বরং ঘরে এসো ।
আমি অহিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও নিজেও আমাকে যেতে ইশারা করছে !
একটু সংকোচ থাকলেও ঘরের ভিতর চলে গেলাম ! ভদ্লোকে আমাকে একদম কর্নার দিককার একটা ঘরের সামনে নিয়ে গেল ! বলল
-যাও ও ভিতরেই আছে !

আমি একটু সাহস নিয়ে ভিতরেই ঢুকে পড়লাম । এখন যদি বর্ষন আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কে তাহলে আমি কি জবাব দিবো !
কোন জাবাব নাই !
আবারও নিজেকে একটা চড় মাড়তে ইচ্ছা হল । কোন ঝামেলার ভিতর পরলাম আমি !
ঘরের লাইট বন্ধ ছিল ! জানলা গুলোও বন্ধ ছিল । তবুও বাইরেরে মৃদু আলো এসে পুর ঘরে একটা আবছা আলো ছড়িয়ে ছিল ! আমি সেই আবছা আলোতেই আমি দেখলাম ঘরের কোনার কেউ যেন চুপ করে বসে আছে !
আমি বললাম
-বর্ষন ?
কোন জবাব নাই ! ছায়া মুর্টিটা তেমন ভাবেই বসে রইলো ! আমি আবার বললাম
-বর্ষন ?
কোন জবাব নাই !
সামনে কি একটা ঝাকি মারবো নাকি ? না থাক ! আবার কখন কি করে বসে কে জানে !
আমি এবার মৃদু কন্ঠে বললাম
-আমাকে অহীন পাঠিয়েছে !
দেখলাম এবার কাজ হল ! ছায়া মুর্তিটা এক ঝাটকায় লাফ দিয়ে উঠলো ! আমার কাছে এসে বলল
-কি বললে তুমি ? কে পাঠিয়েছে ?
-অহীন !
ছায়া মুর্তি এবার আমাকে ছেড়ে দিয়ে দেওয়ার দিকে গেল ! সুইচ বোর্ডে সুইচ টিপে আলো জ্বাললো ! আমার সামনা সামনি এসে বলল
-কি বললে আবার বল ?
-আমাকে অহীন পাঠিয়েছে !
খানিকটা অবিশ্বাসের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে !
বর্ষনের বয়স খুব বেশি হবে না ! আমার সমানই হবে । কিন্তু মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি কেমন যেন একটু বয়স বাড়িয়ে দিয়েছে ছেলেটার ।

আমিও খানিকটা ইতস্তত করতে লাগলাম ! তারপর বললাম
-আসলে ও তোমাকে বলতে বলেছে যে.....।
-ও নিজে বলেছে !
-হুম !
-কবে বলেছে ?
-এই একটু আগে !
-ইউ আর জোকিং রাইট ?
-আরে জোকিং কেন করবো ?
-কি বলতে বলেছে ?
-বলতে বলেছে যে সে তোমাকে অনেক ভালবাসে ! আর তার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল ! সে এই জন্য সরি !

আমার এই কথা শুনে বর্ষন কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! তারপর একটু তড়িঘড়ি করে নিজের মোবাইল বের করে কি যেন টেপাটেপি করলো । এরপর আমাকে মোবাইলের স্ক্রিনটা দেখিয়ে বলল
-এই মেয়েটা ?
আমি তাকিয়ে দেখলাম ! বললাম
-হুম ! এই মেয়েটা ! এই অহীন !
-কোথায় আছে এখন ? কোথায় ?
বর্ষন কে বেশ উত্তেজিত মনে হল ! আমি বললাম
-এই তোমাদের বাড়ির সামনেই ! আমাকে তো ও এখানে নিয়ে এল !

আমাকে অবাক করে দিয়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেল । দু তিন মনিট পরে আবার ফিরে এসে আমার এক প্রকার জোর করেই বাড়ির বাইরে নিয় এল ! যেখানে আমি আর অহীন বসে কথা বলছিলাম সেখানে !
-কোথায় ?
আমি বললাম
-এখানেই ছিল !
একটু এদিন ওদিন দেখার চেষ্টা করলাম । কোথাও দেখতে পেলাম না !
আমি আবার বললাম
-সত্যি বলছি এখানেই ছিল !
-তুমি আমার সাথে ফাজলামি করছো না তো ?
-আরে না ভাই ! আমি আপনার সাথে কেন ফাজলামো করবো ? আমি কি আপনাকে চিনি ? না আপনার বাড়ি চিনি ? বলেন চিনি ?
বর্ষন অনেকক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! তারপর আবার আমাকে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেল !

-তুমি কি বলছো একবার ভেবে দেখেছো ?
-হু ! কেন সমস্যা কি ?
বর্ষন আমাকে ঘরের ভিতর নিয়ে গিয়ে অনেক্ষন চুপ করে থেকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো ! আমি ওর কথার জবাব দিতে গিয়ে নিজেই খানিকটা সংকোচে পড়লাম । মানে ঠিক মত বুঝতে পারছিলাম না !
এক সময়ে দেখলাম বর্ষন সাহেব কাঁদছে ! আমি বসেই আছি !
কিছু বুঝতে পারছি না !

অনেক্ষন পরে সে যা বলল তাতে আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল ! আমি আর কিছু না বলে কেবল বাইরে চলে এলাম । হেটে হেটে যখন মোড়ের মাথায় এলাম দেখি সেই রিক্সাওয়ালা দাড়িয়ে আছে ।
রিক্সাওয়ালা আমাকে দেখে চিনতে পারলো ! আমি কোন বাক্য ব্যয় না করে রিক্সায় উঠে পরলাম !

মাথার ভিতর কিছু কাজ করছে না ! এমনটা হতে পারে না । এমন টা কিছুতেই হতে পারে না ! এমন টা হওয়া অসম্ভব !

অহীন নাকি সপ্তাহ খানেক আগে এক গাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড করেছে । সে কোন ভাবেই এখানে আসতে পারে না । কিন্তু তাহলে আমার পাশে কে বসে ছিল ?
এই কথা ভাবতেই আমার সারা গায়ে একটা কাটা দিয়ে উঠলো !
ইফতারীর সময় হয়ে যাচ্ছে রিক্সাওালা মামাকে বললাম জলদি পা চালাতে !
হঠাৎ করেই আমি মামা কে জিজ্ঞেস করলাম
-মামা যখন আসলাম তখন আমার সাথে কেউ ছিল ?
রিক্সাওয়ালা মামা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো ! তারপর বলল
-কেউ আছিল না মামা ! আমনে একলা একলা কার লোগে কথা কইতেছিলেন ?

আমি আর কোন কথা বললাম না ! আমার পাশে একসপ্তাহ আগে মারা যাওয়া একটা পেত্নী বসে ছিল এটা ভাবতেই কেমন যেন লাগল !
পেত্নী ?
সিরিয়াসলী সাদা ল্যাগিং পরা পেত্নী ?
নাহ ! লুলামী বন্ধ করতে হবে ! কোন দিন সিরিয়াসলী সমস্যায় পড়বো !


(থিমঃ আই সি ইউ)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×