somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথার গল্পঃ টোনা টুনির গল্প (ফেসবুক ভার্শন)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক জঙ্গলে থাকতো টোনা আর তার গার্লফ্রেন্ড টুনি ! প্রতিদিন টুনি প্রেমময় স্টাটাস দিতো আর সবার আগে টোনা তাকে লাইক দিতো । কমান্ট দিতো !
বনের অনেকেই টুনির পোষ্টে কমান্ট দিতো ! এটা টোনার পছন্দ হত না ! সে ইনবক্সে টুনির সাথে রাগা রাগি করতো !
একদিন টোনা রাগের মাথায় স্টাটাস দিল !

"ও টুনির মা তোমার টুনি কথা শোনে না !
যায় তার সাথে চ্যাটিং করে আমায় চিনে না !"

এই স্টাটাসে একটা লাইকও পড়লো না ! কিন্তু টুনির খুব মন খারাপ হল ! সে স্টাটাস দিল
"মন খারাপ --ফিলিং ডাউন !"

লাইক কমান্টের বন্যা বয়ে গেল !
টোনা দেখলো এভাবে আর না ! সঙ্গে সঙ্গেই ম্যারেজ ইনভাইটেশন পাঠালো টুনিকে !
দেখতে দেখতে একদিন তাদের রিলেশনশীপ স্টাটাস চেইঞ্জ হয়ে ইন এ রিলেশনশীপ উইথ থেকে ম্যারেড হয়ে গেল ! তাদের অবস্থান হল টোনাস হাউজে ।
এই ভাবে সুখে দিন কাটতে লাগলো !

একদিন সকাল বেলা টোনা তার ফেসবুক ওপেন করে স্টাটাস দিল

"আজকে খুব পিঠা খেতে ইচ্ছা করছে"

টুনি রান্না ঘরেই ছিল !
সে সঙ্গে সঙ্গে কমান্ট দিল
"পিঠা যে খাবে ঘরে তো কিছু নাই ! আটা লাগবে ! গুড় লাগবে ! তেল লাগবে ! এসব কে আনবে শুনি ?"
টোনার স্টাটাসে লাইক পড়লো সাতটা আর টুনির কমান্টে লাইক পড়লো ২১ টা !
টোনা কমান্টের উত্তর না দিয়ে বাথরুমে ঢুকলো ! হাত মুখ ধুয়ে যখন বাইরে এসে আবার স্টাটাস দেখলো তখন তো সে একেবারে হা !
টুনি নতুন স্টাটাস দিয়েছে !

"টোনা কে বাজারে পাঠিয়েছি ! আজকে পিঠা বানানো হবে ! কেঊ কি ভাঁপা পিঠা বানানোর রেসিপিটা বলতে পারেন?"

সেই স্টাটাসে এক হাজার লাইক ! পাঁচশ কমান্ট ! তিনশ শেয়ার !
টোনা কমান্ট পড়তে লাগলো !
বনের রাজা বাঘ কমান্ট দিয়েছে
"কি ব্যাপার ! পিঠা কি একলা একলাই খাবা ? হালুম !"
হাতি কমান্ট দিছে "তোমার বাড়ির নিচ দিয়ে প্রতিদিন যাই । একবারও দাওয়াত দিলা না !"
শিয়াল কমান্ট দিছে
"এইটা তো ঠিক না ! আমারে দাওয়াত না দেও ঠিক আছে । তাই বলে বাঘ মামারে দিলা না ?"
ভাল্লুকের কমান্ট
"আমি কালো বলে আমাকে কি চোখে পড়ে না ? এক মধু আর কত খামু !"
বানর কামন্ট দিল
"আমরা ছোট বলে আমাদের অবহেলা করা ঠিক না"

টোনা টুনি তো বেশ চিন্তায় পরে গেল ! বনের গন্যমান্য ব্যক্তিত্বরা পিঠা খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে । তাদের কে দাওয়াত না দিলে কি বলে মান সম্মান নিয়ে থাকা যাবে ! শেষ পর্যন্ত পিঠা খাওয়া নিয়ে একটা ইভেন্ট খুলেই ফেলল ! তারপর সবাইকে ইনভাইট করলো !
ইভেন্টের প্লেস ঠিক হল টোনাস হাউজ ! সময় বিকাল তিনটা !

এবার টোনা বাজার করতে গেল ! যেতে যেতেই মোবাইল থেকে স্টাটাস দিল !

"বাজারে যাচ্ছি !"
সঙ্গে সঙ্গে ৫০০ লাইক এসে হাজির ! দুইশ বার শেয়ার হয়ে গেল স্টাটাস !
বাজার করে আসার সময় যার যার সাথে দেখা হল সবাই নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে লাইফ ইভেন্ট যোগ করলো !

বনমোরগ তার ওয়ালে লাইফ ইভেন্ট যোগ করলো !
"বনমোরগ মেট উইথ টোনা এট বাজার !"
খরগোসের সাথেও দেখা হল টোনার !
"খরগোস মেট উইথ টোনা এট র‌্যাবিট হাউজ !"

যখন টোনা বাজার নিয়ে হাজির তখন টুনি রান্না নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো !
এক ফাঁকে ফেসবুক খুলে স্টাটাস দিল

"টুনি ইজ ভেরি বিজি এট টুনিস রান্না ঘর !"

আবারও সেই হাজার খানেক লাইক । শ পাঁচেক কমান্ট ! তিনশর মত শেয়ার !
বাঘ মামা নিজে স্বয়ং সেই স্টাটাস শেয়ার দিল নিজের ওয়ালে ! আর লিখলো

"গোয়িং টু টুনিস হাউজ ! ফিলিং ভেরি হ্যাপি !"

এদিকে টুনি পিঠা বানায় আর টোনা একটা একটা করে পিঠা খেতে থাকে ! এদিকে টুনি রাগের ইমো দেয় আর টোনা হাসির ইমো দেয় !
মাঝ খানে টোনা নিজেই স্টাটাস দিল !

"টুনিস পিঠা ! অসাম !" --ইটিং পিঠা !

এবার টোনার স্টাটাসের লাইকের পর লাইক আসতে লাগলো ! আর টোনা পিঠার পর পিঠা খেয়ে চলল !
একটা করে কমান্ট আসে আর টোনা একটা করে পিঠা খায় ! এই ভাবে খেতে খেতে সব পিঠা শেষ হয়ে গেল !

এখন উপায় !

টোনা আর টুনি বেশ চিন্তায় পরে গেল ! এদিকে তিনটা বাজতে গেল ! সবাই আসছে ! কি করবে এখন !

আর কোন উপায় না দেখে দুজনেই নিজেদের একাউন্ট ডিএকটিভেট করে দিল ! তারপর দুজনেই টোনাস হাউজ থেকে গায়েব হয়ে গেল !

এদিকে সবায় যখন ইভেন্ট হাজির, দেখে কোথাও কেউ নাই ! সব খাঁ খাঁ করছে !
তাড়াতাড়ি সবাই ফেসবুক খুলল ! কিন্তু টোনা টুনির আইডি খুজে পেল না ! তাদের ইভেন্টেরও কোন নাম নিশানা পেল না !
বাঘমামা নিজ ওয়ালে লিখলো !

"ফিলিং হতাশ উইথ শিয়াল, বানর এবং ১৩৩ আদারস পিপল"

ওদিকে টোনা টুনি ফেসবুকে নতুন জয়েন্ট একাউন্ট খুলে মনের সুখে ইউটিউব থেকে সালমান শাহ এর গান শেয়ার দিতে লাগলো !!

"এখন তো সময়
ভালবাসার !
এ দুটি হৃদয় কাছে আসার !
তুমি ও একা ! আমিও একা লাগে ভাল !
ও প্রিয় !!"
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×