somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি খুনের স্বীকারোক্তি অথবা একটি ভালবাসার গল্প !

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-পানি খাবেন ?
আমি আজহার সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি লোকটা শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এমন একটা ভাব যেন এই রকম দুচারটা কথা সে প্রতি নিয়তই শুনে থাকে । অবশ্য পুলিশের চাকরীতে এই রকম হওয়াটা স্বাভাবিক । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে আজহার সাহেব আমার দিকে পানির গ্লাসটি এগিয়ে দিল । একটু ইতস্তঃ করে আমি পানি ভর্তি গ্লাসটি তুলে নিলাম বাঁ হাতে ।
হঠাৎই কেন জানি মনে হল আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে । এই পানি টুকু না খেলে হয়তো তৃষ্ণায় আমি মারা যাবো । এক চুমুকেই পুরো টুকু পানি খেয়ে নিলাম ।
-আর কিছু খাবেন ?
-জি ?
পুলিশ এতো ভাল ব্যবহার করছে !! বিশ্বাসই হচ্ছে না ঠিক । হয়তো একটু পরেই আমার কপালে খারাবী আছে ! ছাগল জবাই করার আগে যেমন তাকে আদর যত্ন করা হয় হয়তো আমার বেলাতেও সেই রকম কিছু হতে যাচ্ছে ।
-খাবেন আর কিছু ?
ইন্সেপেক্টর আজহার আবার বলল কথা টা । আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম
-জি না । কিছু খাবো না ।
আজহার সাহেবের মুখে একটু যেন হাসির রেখা দেখতে পেলাম । টেবিলের উপরে রাখা একটা বেল চাপ দিলেন । কয়েক সেকেন্ড পরেই একজন সেন্ট্রি টাইপের লোক রুমের ভিতর ঢুকলো ।
-দুইকাপ চা নিয়ে এসো ।
তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি দুধ চা খান নাকি র চা ?
-দুধ চা ।
আজহার সাহেব সেন্ট্রি টাইপের লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল
-একটা দুধ চা ।
লোকটা চলে গেল ।

--------
আমি জানতাম নীলা আমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাবে । কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলো আমার দিকে । চোখের সামনেই ওর মুখের ভঙ্গি বদলে যেতে দেখলাম । এতোক্ষন যেখানে নীলার চোখে অদ্ভুদ একটা বিষন্নতা ছিল সেখানে একটা ক্রোধের চিহ্ন উদয় হল ।
-আমি সত্যি বলছি বিয়ে করবি আমাকে ?
-দেখ সুমন আমার সাথে হয়তো অনেক খারাপ কিছু হয়ে গেছে কিন্তু আমাকে করুনা করার অধিকার আমি কাউকে দেই নি । তোকেও না ।
-তুই এভাবে কেন নিচ্ছিস ?
-তো কিভাবে নিবো ? আমার বিয়ে হচ্ছে না । বাবা মা চিন্তায় অস্থির । আমার হবু বর আমাকে ফেলে চলে গেছে । যাক মেয়েটাকে বিয়ে করে পরোপকার করা যাক । তাই না ?
-নীলু তুই ভুল বুঝছিস !
-দেখ ! আমার আর এখানে থাকতে ইচ্ছা করছে না । তুই রিকোয়েস্ট করেছিলি বলে এখানে এসেছিলাম । কিন্তু এই কথা বলবি জানলে কোন দিন আসতাম না ।
এই টুকু বলেই নীলা উঠে দাড়াল । তারপর হনহন করে হেটে চলে গেল । একটা বারের জন্যও পিছন ফিরে তাকালো না ।
নীলার সাথে ঐ দুর্ঘটনাটা ঘটার পর থেকেই নীলা কেমন যেন হয়ে গেছে । কারো সাথে ঠিক মত কথা বলে না কারো সাথে দেখাও করে না । আর অবাক করা বিষয় ওর পরিচিত মানুষ গুলোও যেন নীলা কে একটু এড়িয়ে চলতে শুরু করে ।
কি আজব মানুষ গুলোর আচরন ! নীলাকে সেই কাজটার জন্যই শাস্তি ভোগ করতে হচ্ছে যেটার জন্য ও কোন ভাবেই দায়ী না । এতো কিছুর পরেও হয়তো অবস্থা অতটা খারাপ হত না যদি না মিতুল ভাই এই কাজটা না করতো ।

আমি ঐ দিন ওদের কাছেই ছিলাম । নীলা তখন সবে মাত্র হাসপাতাল থেকে ফিরেছে । হাসপাতালের দিন গুলোতে অনেকেই নীলাকে দেখতে এসেছে । কিন্তু মিতুল ভাই একবারের জন্যও আসে নাই । একদিন নীলা নিজেই আমাকে ফোন করে বলল
-তুই কোথায় রে ?
-এই তো ! কেন ?
-মিতুলের খোজ নিয়ে দিতে পারবি ?
-পারবো । কেন ?
-না তুই শুধু খোজ নিবি ও কাল বিকেলে কোথায় থাকে । আর আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবি । পারবি না ?
-হুম ।
আমি অত কিছু বুঝতে পারি নি । পরদিন বিকেল বেলা নীলাকে মিতুল ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলাম । আমি ভেবেছিলাম ওরা হয়তো কথা বলবে । আমি নীলাকে মিতুল ভাইয়ের কাছে দিয়ে যখন চলে আসবে তখন নীলা বলল
-দাড়া । আমার কাজ এখনই শেষ হয়ে যাবে ।
মিতুল ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি ওনার মুখটা কেমন হয়ে গেছি । উনি কিছু একটা বলতে গেলেন । কিন্তু নীলা ওনাকে মাঝ পথেই থামিয়ে দিল । তারপর আমাকে অবাক করে মিতুল ভাইয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় মাড়লো ।
মানে কি ? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না । তারপর আমার দিকে হন হন করে হেটে চলে এল ! আমাকে বলল
-চল ! আমার কাজ শেষ !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-এসবের মানে কি ?
-কোন মানে নেই !
নীলা আর দাড়ালো না ! হাটতে লাগলো সামনের দিকে ! আমি একবার নীলার দিকে তাকাই আরেকবার মিতুল ভাইয়ের দিকে । মিতুল ভাই এখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে । নীলা যে ওনাকে চড় মাড়বে এটা উনি ভাবতেই পারে নি । আমি নিজেও ভাবতে পারি নি ।

-------
-নিন ! চা খান !
আজহার সাহেবের চায়ের কাপে গাঢ় খয়েরী রংয়ের পানীও দেখা যাচ্ছে । আমার কাছে কেন জানি চায়ে র রংটা একটু রক্তের মত ! শিবলুর শরীরের রক্তের রংটা কি এমন ছিল ? কে জানে ? আমার সামনেই যখন ওর শরীরের রক্তটা ছড়িয়ে পরে মেঝেতে তখন রংটা খানিকটা এমনই তো মনে হচ্ছিল । হয় তো তখন আলো টিমটিমে আলোর জন্যই এমন মনে হয়েছিল !
তাই নয় কি ?
ইন্সেপেক্টের কথায় আমি চায়ের কাপে চুমুক দিলাম ! দুধের পরিমান একটু বেশি হয়েছে । আর একটু কম হলে ভাল হত ! তবে খেতে মন্দ লাগছে না !
আজহার সাহেব বলল
-তারপর ? তারপর কি হল ?
-আমি শিবলুর ঠিকানা জানতাম ! বলতে গেলে নিজেই ওর খোজা বের করি ! একদিন ওর সাথে সামনা সামনি দেখা হয়ে গেল ! ওরা যেখানে বসে আড্ডা মারে সেখানে ।
-মানে উকু মিয়ার ক্যারাম ঘরের পেছনে ?
-জি ! ওখানেই ওদের আড্ডা খানা ! সন্ধ্যা হলেই ওখানে বসে বসে ওরা তাস খেলে, মদ গাজা খায় !
-হুম ! তারপর বলুন !
-আমি যেদিন শিবলুকে সরাসরি দেখি সেদিন আশ্চার্য ভাবে লক্ষ্য করতে থাকি যে আমার পুরো শরীর জুরে এক আশ্চার্য ক্রোধ অনুভব করছি ! আমি সারা জীবন নির্ভেজাল টাইপের মানুষ ! কখনও কারো গালে একটা চড় মেরেছি বলে মনে পড়ে না ! কিন্তু শিবলু কে দেখে মাথায় রক্ত চড়ে গেল ! কিভাবে যে নিজেকে সেদিন নিয়ন্ত্রন করেছিলাম আমি নিজেই জানি না ! বাসায় এসে কেবল একটা কথাই মনে হল যে আমি শিবলুকে খুন করবো ! যে কোন মূল্যেই ওকে খুন করবো !
আজহার সাহেব একটু অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো !
আমি বললাম
-কি অবাক হচ্ছেন ?
-একটু কি হওয়ার কথা না ?
-জি ! অবশ্যই অবাক হওয়ার কথা ! ছা পোষা টাইপের একজন মানুষ হঠাৎ করেই একজন কে কিভাবে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতে পারে ! আমি নিজেই খুব অবাক হয়ে গেছিলাম নিজের উপর !
-হুম ! বোঝা যাচ্ছে নীলাকে আপনি অনেক ভালবাসেন ! তাই না ?
-হয়তো !

-------
নীলা আমার সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বন্ধ করে দিল ! আমাকে ফোন করে না । আমি ফোন করলে ফোন ধরে না । মেসেজ পাঠালে উত্তর দেয় না । আমি কিছু দিন বেশ অস্থিরতায় কাটাতে থাকি । এমনি একদিন নীলার বাবা আমাকে ডেকে পাঠায় ! ওদের বাসায় গিয়ে হাজির হলে তিনি আমাকে ডেকে জানতে চান আমি নীলা যা বলেছি তা সত্য কি না ?
তার মানে আমি সত্যি সত্যি নীলাকে বিয়ে করতে চাই কি না ?
জানি না উনি কিভাবে জেনেছেন তবে মনে হচ্ছে নীলা নিজেই বলেছে । আর তো কোন ভাবে জানার কথা না !
আমি বললাম
-জি !
-তোমার ফ্যামিলি ?
-আমার বাসায় কোন সমস্যা নাই । মা আছে । উনি গ্রামে থাকেন । আমি বিয়ে করেছি জেনে উনি খুশিই হবেন ! আর নীলাকে তো অপছন্দ করার মত কোন কোন কারন নেই !
-কিন্তু ..।
নীলার বাবা কথাটা বলতে গিয়ে থেমে গেল ! আমি বললাম
-আঙ্কেল ! এটা কোন সমস্যা না ! আপনি এটা নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না !

দেখতে দেখতে নীলার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল ! আমার আসলে ঐ দিন মনেই হয় নি যে আমাদের বাসায় কোন বিয়ে হচ্ছে । এমন কি বাসর রাতেও নীলা ছিল একদম চুপ ! আমি ঘরে ঢুকে দেখি ও পাশে ফিরে শুয়ে আছে । একবার মনে হল ওকে ডাকি ! কিন্তু ওকে ডাকি নি ! আমি জানি ও জেগেই ছিল ! কেবল একটা চাদর টেনে দিলাম ওর গায়ের উপর !
ছোট বেলা থেকেই অনেক কিছুই ভেবে রেখেছিলাম এই রাত টার জন্য কিন্তু তার কিছু মিল খুজে পেলাম না !

সকাল বেলা উঠে সব আবার স্বভাবিক ! কেবল নীলা আমার বাসায় থাকছে এটাই নতুন ! আমাকে সেই আগের মত তুই বলেই ডাকছে । আমি ওর সাথে টুকটাক কথা বলার চেষ্টা করছি । কিন্তু আমরা যে স্বামী স্ত্রী এটা ঠিক মনে হচ্ছে না !


-------
উকু মিয়ার দোকানের সামনেই একটা বাসা ভাড়া করলাম ! পাঁচতলা যে সাদা বিল্ডিংটা ! ঐ টা ! একদম উপর তলায় ! চিলে কোঠাও বলতে পারেন ! কারনে একটা পাশ ফাকা ছিল ! অফিস থেকে ছুটি নিয়ে নিলাম মাস খানেকের জন্য ! বাসা থেকে ১০ টার দিকে বের হই ! সোজা চলে আসি এখানে ! সারা দিন লক্ষ্য রাখি ! শিবলুদের আড্ডা খানায় কে কে আসে ! কে যা য় ! আর ধীরে ধীরে নিজের কর্ম পন্থা ঠিক করি ! আস্তে আস্তে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র এনে জোগার করতে শুরু করি ! এক বারে আনলে মানুষ জন সন্দেহের চোখে দেখতে পারে তাই ! আস্তে আস্তে আনতে থাকি !
একবারে কথা গুলো বলেই আমি খানিকক্ষন চুপ করে থাকি !
-তারপর ?
-তারপর একদিন মানে মাস খানেক আগে সুযোগটা আসে !
-কি রকম !
-কিছুদিন এলাকায় কিছু হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছিল মনে আছে ?
-জি ! এই তো ত্রিশ পয়ত্রিশ দিন আগে !
-সেটার প্রধান আসামী ছিল শিবলুর ও তার দলের লোক গুলো ! ওরা সবাই তখন গা ঢাকা দেয় ! শিবলুও দেয় । কিন্তু দুতিনদিন পরেই ও চলে আছে ঐ আড্ডায় ! আমি ঐ দিন ছাদেই দাড়িয়ে ছিলাম ! দেখলাম টলতে টলতে শিবলু আড্ডা খানায় ঢুকছে ।
বাইরে প্রচুর ঠান্ডা ছিল । যত দুর মনে পড়ে সেদিন এলাকার তাপমাত্রা ছিল সব থেকে নিচে । আর রাত তখন প্রায় ১০ টা ! এতো রাতে পুরো রাস্তা এমনকি পুরা এলাকায় কেউ ছিল না ! আর আড্ডা খানায় শিপলু ছাড়া আর কাউকে ঢুকতেও দেখি নি ! আমার কাছে মনে হল এই সুযোগ ! তবুও আম খুব বেশি তাড়াহুড়া করলাম না ! নীলাকে ফোন করে বললাম আজকে বাসায় আসবো না ! তারপর আরো দুই ঘন্টা অপেক্ষা করলাম !
১২ বাজার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে নিচে নেমে এলাম । যখন আড্ডা খানার সমানে এবং পুরো এলাকা টা মনে হচ্ছিল যেন একটা মৃত্যুপুরি ! দুরে কেবল একটা কুকুর দেখলাম দাড়িয়ে আছে !
আমি দোকানের পিছনে ঢুকে পড়লাম ! সম্ভাবনা ছিল আরও একজন লোক থাকলেও থাকতেও থাকতে পারে কীন্তু ভিতরে ঢুকে দেখি শিবলু ছাড়া আর কেউ নেই ! শিবলু উপুর হয়ে পড়ে আছে । মদ খেয়ে এমন মাতাল হয়ে আছে যে শীত টাও ঠিক মত অনুভব করতে পারছে না !
আমি আবার থামলাম !
তাকিয়ে দেখি ইন্সেপেক্টর আজহার আমার দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে আছে !


------
আসলে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিতর মনে হয় আলাদা কিছু একটা আছে । যতই এক জন দুরে থাকার চেষ্টা করুক কিংবা নিজেকে গুটিয়ে রাখার চেষ্টা করুক না কেন আস্তে আস্তে প্রিয় মানুষটার উপর এক ধরের মায়া জন্মে যায় । ভালবাসা জন্মে ! বিয়ের মাস খানেক যেতে না যেতেই আমি বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছিলাম আস্তে আস্তে নীলার ভিতর স্ত্রী সুলোভ আচরন ধরা পরছিল ! দিন গুলো খারাপ যাচ্ছিল না ! বলতে গেলে আমরা সুখেই ছিলাম । অতীতের সব কিছু ভুলে নতুন কোন পথে আমরা হাটছিলাম !
কিন্তু একটু চলতে গিয়েই হোঁচট খেতে হল !
সেদিনের কথাটা স্পষ্ট মনে আছে !
আমি আর নীলা বিকেল বেলা নিউমার্কেটে যাবো বলে বের হয়েছি ! রেল গেইট ক্রসিং এ আটকা পরেছি তখন নীলা আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বলল
-চল এখান থেকে !
আমি খানকিটা অবাক হয়ে বললাম
-কেন যাবি না ?
-না বাসায় চল ।
-কি হল ?
-তুই যাবি ! তুই যা ! আমি যাবো না ! এই বলে নীলা রিক্সা থেকে নেমে পড়তে যাচ্ছিল ।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! কি হল হঠাৎ যে ওর মুড অফ হয়ে গেল !

------
-তারপর কি করলেন !
-খুব শিম্পল কাজ ! ব্যাগে দড়ি ছিল ! দড়ি দিয়ে ওর হাত পা বেঁধে ফেললাম শক্ত করে ! তারপর ও মুখে একটা মেডিক্যাল টেপ পেঁচিয়ে দিলাম যাতে করে চিৎকার করতে না পারে !
আজহার সাহেব আমার দিকে চুপ করে তাকিয়ে ছিল !
-যখন ভুজলাম ওর পক্ষে আর ন চিৎকার কিংবা পালানো সম্ভব না তখন ব্যাগ খেকে ভোজালীটা বের করে সোজা ওর পেটের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম ! তিব্র একটা চিৎকার শিবলুর মুখ থেকে বের হতে চাইলো কিন্তু সেদিক দিয়ে কিছুই বের হল না ! যতক্ষন না সে মরে ততক্ষন ভোজালীটা ওর পেটের ভিতর বাহির করতেই থাকলাম ! তাজা রক্তে মাখা মাখি অবস্থা আমার এর আগে কোন দিন আমি এতো রক্ত দেখি নি ! মানুষের রক্ত !
এই টুকু বলেই আমি থামলাম !
দেখলাম আজহার সাহেব আমার দিকে পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিল ! আমি একে বারে খেয়ে ফেললাম পানি টুকু !
-প্রচুর রক্ত ক্ষন হল ! শিপলু আধা ঘন্টার ভিতরেই নিস্তেজ হয়ে গেল ! এর পর আসলে খেলা ! হাতে করে একটা কেরোসিনের বড় বোতল নিয়ে গিয়েছিলাম ! সারা জায়গার ছড়িয়ে দিলাম সেগুলো ! শিপলুর দেহে তখনও প্রান টিকে আছে । মূহুর্তের ভিতরেই ও বুঝে গেল আমি কি করতে যাচ্ছি ! ওর চোখে বাঁচার আকুতি দেখতে পেলাম !
ও হয় তো বুঝতে পারছিল না আমি কে আর কেনই বা ওকে এমন নৃশংস ভাবে হত্যা করছি !
মুখের ভিতর এক দলা থুতু শিবলুর দিকে ছিটিয়ে ছিলাম । তারপর বললাম "সেদিন করুনা করেছিলি ? আমার নীলা যখন তোর কাছে তার সম্ভ্রমের জন্য হাত জোর করেছিল সেদিন ওকে ছেড়ে দিয়েছিলি ?"
আমি আর কোন কথা বলি নি ! দোকানের পেছন থেকে বের হয়ে এসেছি । আসার আগে দিয়াশলাইয়ের একটা কাঠি জ্বালিয়ে দিয়ে এসেছি !

আমি যখন আবার ছাদের ফিরে গেলাম তখন পুরো দোকান টা জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে ! আমি সেদিকে শান্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম !
এই টুকু বলে আমি চুপ করে রইলাম !

এবার ইনেস্পেক্টের কাজ !


-------
-তুই শিবলুকে মেরেছিস তাই না ?
নীলার কাছে লুকালাম না কথা টা ! শিবলুর পুড়ে মরার ঘটনাটা বেশ আলোড়ন তুলল ! তবে পুলিশ খুব বেশি কিনারা করতে পারলো না ! অনেকে ধারনা হল কদিন আগে শিবলু আর ওর গ্যাং যেমন হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল সেই প্রতিশোধই হয়তো কেউ নিয়েছ !
অবশ্য পুলিশই খুব বেশি গা করে নি ! সমাজ থেকে একটা সন্ত্রাসী বিদায় হয়েছে । ভালই হয়েছে !
নীলা বলল
-কেন ?
-কেন ? তুই বলছিস কেন ? যে মানুষটার জন্য তোর এমন সুন্দর জীবনটা এভাবে ধ্বংস করে দিল তাকে এবানে ছেড়ে দিব ! তোর মনে আছে সেদিন রেল গেটের কাছে তুমি কেমন করেছিলি ? আমি প্রথমে বুঝতে পারি নি কিন্তু একটু পরে ঠিক বুঝতে পারি তুই শিবলুকে দেখে ওমন করছিলি !
নীলা চুপ করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে ! আমি বললাম
-আমি জানতাম তুই যতবার শিবলুকে তোর চোখের সামনে দেখবে ততবার তোর ঐ ভয়াল স্মৃতির কথা মনে পরবে ! এটা আমি কিছুতেই মেনে নিত পারবো না ! কিছুতেই না ! যাকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালবাসি তার এমন জীবন আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি ! পারবো না !

নীলার চোখে পান দেখতে পেলাম ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে নীলা আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেল ! গাঢ় করে এই প্রথম নীলার চুম্বনের অনুভুতি পেলাম সেদিন !

-----
আজহার সাহেব আরও বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলো ! আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম আমার আসন্ন পরিনতির জন্য ! আসার সময় নীলাকে বলে আসি যে আমি পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছি ! জানলে ও কি বলত কে জানে ?
হঠাৎ করেই নীলাকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছা হল । আচ্ছা যদি ইনেস্পেক্টর কে বলি আমাকে কি আরেকবার নীলার সাথে দেখা করতে যেতে দিবে না ?
কেন দিবে না ? আমি তো আর পালিয়ে যাচ্ছি না ! দেখি বলে কি বলে !
আজহার সাহবে চুপ করে থেকে বলল
-বাসায় যান সুমন সাহেব ! আপনার জন্য নীলা নিশ্চই অপেক্ষা করছে !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-বাসায় যাবো ? আমাকে এরেস্ট করবেন না ?
-এরেস্ট ? কেন ?
-আমি....।
আজহার সাহেব হাসলো !
-মানুষ মারলে গ্রেফতার করতাম ! কুকুর মারলে জেল হয় না !
আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি করবো ?
আজহার সাহেবের কথা ঠিক মাথায় ঢুকছিল না !
সত্যি কি উনি আমাকে চলে যেতে বলছেন ?
-সত্যি চলে যাবো !
-জি ! যাবেন ! শিবলু হত্যা মামলার ফাইল বন্ধ হয়ে গেছে ! আমাদের এমনিতেও কাজের অভাব নেই । দেশের অবস্থা এমনিতেই ভাল না ! আমাদের কাজের অভাব নেই ! বন্ধ ফাইল কেন আবার খুলবো বলেন ! বাসায় যান ! আচ্ছা দাড়ান ! আপনাকে বাসায় পৌছে দেওয়া ব্যবস্থা করি !

আজহার সাহেব সামনের বেলটা আবার বাজালেন !
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৫৫
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোমলমতিদের থেকে মুক্ত না'হলে, ড: ইউনুসকে আমেরিকাও টিকায়ে রাখতে পারবে না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৩০



কোমলমতিদের সম্পর্কে আমি সামুতে লিখে আসছি আন্দোলনের শুরু থেকে, এরা "সাধারণ ছাত্র" নয়। এখন ২ মাস পর, দেশের বেশীরভাগ মানুষ এদের চিনে ফেলেছে। ড: ইউনুস যদি এদের থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মতামত জানতে চাই

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ০৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


ছবির এই উক্তিটি প্রসঙ্গে ব্লগে কিছু মানুষের মতামত জানতে চাই। এই কথাগুলিই যদি কেউ যুক্তি দিয়ে বলতে চায়, তাকে তারা ভারতের দালাল হিসেবে অবিহিত করে। এই পোস্টে এরকম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শারদীয় দূর্গা পূজার শুভেচ্ছা

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১২:২৩



মহাকাশ বিজ্ঞান নাসা’র মহাকাশযান ছুটে চলেছে মহাকাশের অনন্ত পথের দিকে। হয়তো, আজ কাল পরশু অথবা অযুত লক্ষ নিযুত কোটি বছর পর - হয়তো কোনো একদিন প্রমাণ হবে - আদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=গোলাপী পাপড়িতে লিখে রাখি আল্লাহর নাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:১১



আমি মুগ্ধতায় হই বিভোর,
তাঁর দয়াতেই দেখি নিত্য আলো ফুটা ভোর,
আমি স্নিগ্ধ আবেশ গায়ে মেখে মুখে নিই আল্লাহর নাম,
কী সুন্দর সৃষ্টি তাঁর, কত নিয়ামতে ভরা এই ধরাধাম।

ফুল ভালোবাসি, জলে ভাসা শাপলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম কি সামুর পোষ্ট পড়ে পালালো?

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৯ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪১



নারী ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম প্রাণ ভয়ে পালিয়ে গেছেন; সামুর কয়কজন ব্লগার উনাকে দোষী করে পোষ্ট দিয়েছিলেন, অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, ম্যাজিষ্ট্রেট তারাসসুম অপরাধ করেছে। আসলে, সরকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×