somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ফাজিল মেয়েটির সাথে বাস যাত্রা !

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-এই এসিতে টিকিট কাট !
-ক্যান ?
-কাটতে বলছি কাট ! এতো কথা বলিস ক্যান ?

আমি আর নিশি ফার্মগেটে দাড়িয়ে আছি । কলেজ যাবো ! নিশির পরনে কলেজ ড্রেস । প্রতিদিন আমরা একসাথেই এখান থেকে রওনা দেই ! যদিও আমার বাসা থেকে অন্য বাস যায় তবুও ওর সাথে একসাথে যাওয়ার জন্য আমি এখানে আসি ! একটু ঝামেলা হয় তবুও এই কষ্ট টুকু আমি করি আনন্দের সাথেই !
নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি নিশি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । কথাটা আমার দিকে তাকিয়ে বলার প্রয়োজন মনে করছে না । আর কথা বলার ভঙ্গিটাও এমন একটা ভাব যেন আমি ওর ক্লাস মেট না, সেই আমার প্রভু !
মহিলা প্রভু আর কি ! আমি আমি ওর প্রজা !
মহারানী যা বলবে আমাকে তাই করতে হবে !
আচ্ছা এই মেয়েটা আমাকে ভাবে কি শুনি ?
মাঝে মাঝে মনে হয় থাপড়ায়ে নিশির দাঁত ফেলে দেই !
ফাজিল মেয়ে !!

-এই শীতের ভিতর এসিতে টিকিট কেটে কি লাভ ?
-শুন, তোর যদি টাকার জন্য এতোই মায়া লাগে তাহলে তুই যা নরমালে । আমার এসিতে যেতে ইচ্ছা করছে । আমি যাবো ! বুঝলি !

মেয়েটা এমন ভাবে কথা কেন বলে ? একটু ভাল করে কথা বলা যায় না ! আমার মন একটু খারাপ হয় । মন খারাপ নিয়েই এসিতে টিকিট কাটি !
তাকিয়ে দেখি নিশি এখনও সেই সিনেমার হলটার দিকটাতেই তাকিয়ে আছে । কি দেখছে কে জানে ?
ওর কথায় যে আমার মন খারাপ হয়েছে এটা নিশির কাছে তো দামই নেই । কোন রকম অনুভুতিও নেই ! মাঝে মাঝে নিজের কাছে প্রশ্ন করি আচ্ছা নিশির কি আদেও আমার ব্যাপারে কোন দিন সিরিয়াস হবে ?
নাকি কোন দিন কিছু ভাবে আমাকে নিয়ে ?
আমি জানি না !
কি জানি হয় তো সারাটা জীবন এমন ভাবেই থাকতে হবে !

বিআরটিসির এসি গাড়ি আসতে আরও একটু সময় নিল ! যখন গাড়িতে উঠলাম দেখি বাসটা প্রায় ফাঁকাই ! প্রথম দিকে কয়েকজন বাসে আছে ! পেছনের দিক টা একেবারে ফাঁকা ! কেবল শেষের দুই সাড়ি আগে ডাবল সিটে একটা ইয়াং ছেলে বসে আছে ! একটু চিকন মত চুল গুলো লম্বা ! কানে হেড ফোন লাগানো !

আমার ইচ্ছা ছিল ওকে নিয়ে একদম শেষে বসি অথবা কোন ডাবল সিটে বসি ! কিন্তু নিশির সেদিকে না যেতে ইয়াং ছেলেটি যেখানে বসে আছে সেই সাড়ি বরাবর গিয়ে বসলো !
মেজাজ টা একটু খারাপ হল !
আরে বসবি ভাল কথা ! এই ছেলে সোজাসুজি কেন বসতে হবে ?
আগে অথবা পিছনে বস !
পাজি মেয়ে !

নিশিকে বললাম
-এখানে আয় !
-না ! আমি এখানে বসবো !
-এখানে আয় না !
-শোন আমি এখানে বসবো ! তোর ইচ্ছা হলে তুই এখানে আয় !

আমার রাগ হল ! যাহ, বসবো না !
আমি ছেলেটার সামনের একটা ডাবল সিটে বসে পড়লাম ! যা না বসলে কি হবে ? তোর দিকে তাকাবও না !
কিন্তু শত চেষ্টা সত্তেও তাকাবো না এই এই প্রতিজ্ঞতা ধরে রাখতে পারলাম না । পিছনের দিকে ঘুরে তাকালামই !

তাকিয়েই দেখি নিশির দিকে তাকিয়ে বদ পুলাটা হাসছে ! আর তার থেকে বড় কথা এই পাজি মেয়ে সেই হাসির প্রতি উত্তরে হাসি দিচ্ছে !
এমন মেজাজ খারাপ হল !
মনে হল উঠে গিয়ে একটা থাপ্পড় দেই !
আরে বাবা, অপরিচিত মানুষ কে দেখে এতো হাসির কি আছে !

যতবারই পিছনে তাকাই তটবারই দেখি নিশিও হাসছে আর ছেলেটাও ! হঠাৎ কেন জানি কষ্ট হতে লাগলো । মনে হল বাসের জানলা দিয়ে ঝাঁপ দিয়ে পড়ি ।
আগামীকাল সংবাদ পত্রের শিরোনাম হবে "বাস থেকে ঝাপিয়ে পড়ে মেধাবী কলেজ ছাত্রের আত্মাহুতি" অথবা "অন্য ছেলের দিকে তাকিয়ে প্রেমিকাকে হাসতে দেখে কলেজ ছাত্রের আত্মাহুতি" !
হুম ! এরকম হলে খারাপ হয় না !

একবার মনে হল সত্যি সত্যিই জানলা খুলে ঝাপ দেই । তখন বুঝবে নিশি !
কিন্তু জানলা খুলতে গিয়ে দেখি এসিবাস ! জানলা আটকানো ! খোলা যাবে না !
দুর শালা !
শান্তি মত মরতেও পারবো না !
সংবাদ শিরোনামও হল না !

কিছু দুর যেতেই ইয়াং ছেলেটা মেনে গেল ! আমি তাকিয়ে দেখলাম বদ নজরে !
বেটা ফাজিল ছোকড়া !
আমি মনে মনে বদ দুয়া দিলাম ! তোর গার্লফ্রেন্ডও এমন ভাবে অন্য ছেলে কে দিয়ে হাসি দিবে । তখন বুঝবে কষ্ট কারে কয় !

ছেলেটা শেষ হাসি দিয়ে নেমে গেল !
আমি নিশির দিকে তাকালাম না ! তাকাবো না ! থাক বসে ! তোর দিকে তাকাবো না !

বাস আবার চলতে শুরু করলো ! এখনও বাসটা প্রায়ই ফাঁকা ! আর একটু দুরে গেলেই আমাদের ক্যাম্পাস চলে আসবে ! নিশি কি এখনও আমার কাছে আসবে না !
দুরেই থাকবে ?
পাজি মেয়ে ! বদ মেয়ে !
না আসুক । আমিও যাবো না !

-এর সরে বয় !
-ক্যান ?
-সরতে বলছি সর ! এতো কথা ক্যান বলিস !
নিশি আমার গা ঘেসেই বসলো ! ওর শরীর থেকে সেই মিষ্টি গন্ধটা পেতে শুরু করলাম ! এই একটু মিষ্টি গন্ধের জন্যই প্রতিদিন আমার বাসা থেকে এতো দুরে আসি ওর সাথে যাওয়ার জন্য !
কিন্তু বোকা মেয়েটা যদি বুঝতো !
-তুই ওভাবে তাকাচ্ছিলি কেন ?
-কোন ভাবে ?
-ঐ যে আমি ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হাসছিলাম বলে !

না তাকাবো না ?
উনি অপরিচিত কোন ছেলের দিকে মুচকি হাসি দিবে আর আমি বসে তালি বাজাবো !
ক্ষমতা থাকলে ঐ ছোকড়া কে জানালা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম !
আর তোকে ...... মনের ভেতরের কথাটা শেষ করলাম না !
ফাজিল মেয়ে কোথাকার !

-খুব হিংসে হচ্ছিল ?
-হিংসা ? তুই কারো দিকে তাকিয়ে হাসলে আমি কেন হিংসা করবো ?
-করবি না ? না ?
এই বলেই নিশি জোরে হেসে উঠলো ! হাসতেই থাকলো !

আমি কাঁচুমুচু হয়ে ওর পাশে বসে রইলাম ! হঠাৎ করেই কেন জানি মনে হল আমার সব অনুভুতি গুলো নিশি খুব ভাল করেই বুঝতে পারে !
আমাকে ইচ্ছে করে এই ভাবে যন্ত্রনা দেয় ! আমাকে এভাবে রাগাতে ওর মজা লাগে !
এর আগেও ও এমন টা করেছে !
আর আজকেও নরলাম বসা রেখে এই এসি বাসে ও উঠলো যাতে বাসটা ফাঁকা পাওয়া যায় । নয়তো নরমাল বাস গুলোতে এই সময় খুব ভিড় থাকে !

হঠাৎই দেখলাম নিশি আমার দিকে আর একটু ঘেষে এসেছে । আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল
-তুই এতো বোকা কেন রে !

আমি কেবল নিশির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলাম ! আজকে সেই চোখে অন্য একটা দৃষ্টি !
বারবার মনে হল আমি আসলেই এতো বোকা কেন !


ফেবু
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×