somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপকথার গল্পঃ সিন্ড্রেলা (ফেসবুক ভার্শন)

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুর দেশে এক মেয়ে সুন্দরী কন্যা থাকতো ! তার নাম সিন্ড্রেলা ! তার ফেসবুক বন্ধুরা তাকে ডাকতো সিন্ড্র বলে !
তার মনে অনেক দুঃখ ছিল । তার মা মারা গিয়েছিল ছোট বেলাতেই !
তার ছিল সৎমা ! আর দুজন সৎবোন ! সবাই ফেসবুকে খুব একটিভ ছিল ।
তার বাবা দুর দেশে চলে গেল বানিজ্য করতে । একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরে ! এই সুযোগে নিজেদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড লিষ্ট থেকে সৎ মা আর বোনেরা সিন্ড্রেলাকে বের করে দিল ! তারা সিন্ড্রেলা কে ফেসবুক ব্যবহার করতে দিতে চাইতো না ! তবুও সিন্ড্রেলা লুকিয়ে লুকিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করতো !
সিন্ড্রেলা নিজের ফেসবুক নাম বদলে রাখলো লোনলি সিন্ড্রো ! এবং তার সৎমা আর দুই বোন কে ব্লক করে দিল !

সেই থেকে সিন্ড্রেলা একা একাই নিজের স্টাটাস লিখতো ! কেউ তাতে লাইক দিতো কি দিতো না সেটা সে দেখতোও না !

সিন্ড্রেলা অন্য কারো প্রোফাইলে খুব একটা যেতও না ! কারো ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট গ্রহন করতো না ! কাউকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠাতোও না ! কেবল একজন কে ফলো করতো নিরবে !
সে হল রাজকুমার চার্লস !
প্রিন্স চার্লস একটা স্টাটাস দিলেই মুহুর্তের ভিতরে সেখানে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট চলে আসতো !
কেউ লিখতো "চার্লস আই লাবুউ" !
কেউ লিখতো "ম্যারি মি" !
কেউ লিখতো "বিয়া কর আমাকে" !
কেউ লিখতো "এড মি এড মি ! আম বুলক"
কেউ লিখতো "শিবিরের সংগ্রামী ভাইয়ের আমাকে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করুন" !
কেউবা আবার লিখতো "নাস্তিক চার্লসের পাসি চাই" !

সিন্ড্রেলা এই সব কিছুই লিখতো না ! কেবল চার্লসের লেখা গুলো পড়তো ! আর রাজ্যের অন্য মেয়েদের মত নিজের স্বপ্ন দেখতো রাজকুমার কে নিয়ে !

একদিন চার্লস স্টাটাস দিল যে খুব শীঘ্রই সে বিয়ে করতে যাচ্ছে এবং এই রাজ্যেরই কোন একটা মেয়ে কে !

এরপর রাজকীয় ফেসবুক পেইজ থেকে ঘোষনা এল যে পরের দিন রাত নয়টার সময় এই রাজ্যের রাজকীয় ফেসবুক ক্লোজ গ্রুপে মেয়েদের সাথে প্রিন্স চার্লস কথা বলবেন ! সেখানেই হয়তো তিনি নিজের জীবন সঙ্গী বেছে নিবেন !

সিন্ড্রেলার মন টা একটু খারাপ হয়ে গেল ! সে রাজকীয় গ্রুপে এড নেই । রাজ্যের যে কেউ চাইলেই রাজকীয় ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে পারে না । এর জন্য পারিবারিক অনেক যাচাই বাছাই দরকার পরে । যদিও সিন্ড্রেলার বাবা একজন ডিউক কিন্তু সে এখন রাজ্যের বাইরে । অর্থাৎ নেটওয়ার্কের বাইরে । আর তার সৎমা কোন দিন তাকে সুপারিশ করবে না সেই গ্রুপে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ।

সিন্ড্রেনা মন খারাপ করে বসে থাকে ।
পরদিন রাত ১০ টা বাজে ! সবাই রাজকীয় গ্রুপে প্রিন্স চার্লসের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত ! সবাই একেবারে সেজে গুজে নিজেদের প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো চেঞ্জ করেছে গ্রুপে হাজির হয়েছে ।
এদিকে সিন্ড্রেলা চার্লসের পুরানো স্টাটাস গুলো দেখতে লাগলো ! আর অশ্রু বিষর্জন করতে লাগলো !

এই সময় সিন্ড্রেলার ইনবক্সে একটা নক আসলো ! সিন্ড্রেলা দেখলো তারই একজন বন্ধু নক করছে ।
-হ্যালো ?
- :(
-মন খারাপ ?
-একটু !
-তুমি কেন যাও নি কেন প্রিন্স চার্লসের আমন্ত্রনে !
সিন্ড্রেলা কোন কথা বললো না !
সেই বন্ধু বলল
-তোমার তো যাওয়ার কথা ! আমি যতদুর জানি তুমি তাকে অনেক পছন্দ কর !
এইবারও সিন্ড্রেলা কোন কথা বলল না !
-তুমি যেতে যাও ? মানে গ্রুপে এড হতে চাও ?
-এটা তো সম্ভব না !
-আরে আমি আছি কিসের জন্য !
-কিভাবে ?
-আমি তোমাকে ঐ গ্রপে এড করিয়ে দিতে পারবো ।
-কিভাবে ? ওই গ্রুপের এডমিন তো আমার রিকোয়েষ্ট গ্রহন করবে না গ্রুপে এডের জন্য !
-দরকার নাই ! শুনো আমি স্পাম করে তোমাকে ঐ গ্রুপে ঢুকিয়ে দিবো ! ঠিক আছে ? কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওদের আইটি এক্সপার্টরা একটু পরেই হয়তো তোমাকে ধরে ফেলবে ! তবুও আমি চেষ্টা করবো তোমার আইপি এড্রেস বাদলিয়ে বারবার তোমাকে লুকিয়ে রখতে । কিন্তু রাত ১২টার আগে তোমাকে গ্রুপ থেকে বের হতে আসতে হবে । কারন ঐ সময়ে রাজকীয় গ্রুপের সিকিউরিটি আরো শক্ত হয়ে যায় ! তোমার আইডি ওরা হয়তো ব্যান করে দিবে ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
-আর শুনো গ্রুপ লিভ করার পরে কিছু সময়ের জন্য নিজের আইডিটা কিছুক্ষনের জন্য ডিএকটিভ করে রাখবা ! ওরা যেন তোমার আইডি ট্রেস না করতে পারে ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !

সিন্ড্রেলা নিজের মায়ের একটা চমৎকার ড্রেস পরলো ! নিজে সাজলো মনের মত করে ! আর আর পড়লো একজোরা কাচের জুটা ! তারপর নিজের ডিজিটার ক্যামেরাটা অটো মোডে দিয়ে একটা ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দিল !
তারপর হাজির হল সেই গ্রুপে ।

সেখানে চার্লস একেকটা ওয়ালপোষ্ট দিচ্ছে আর সব গুলো মেয়ে সেখানে কমেন্টা করে ভাসিয়ে ফেলছে । কেউ কেউ নিজের ছবিও আপলোড করছে।
কেউ বা একে অন্যের সাথে স্টাটাস কমেন্টে কাঁদা ছুড়াছুড়ি করছে !

সিন্ড্রেলা কেবল কয়েকটা ইমো দিলো চার্লের স্টাটাসে !

হঠাৎ চার্লস সিন্ড্রেলার ইমো দেখলো ! কৌতুহল হয়ে ঢুলো সিন্ড্রেলার প্রোফাইল !
পা থেকে মাথা পর্যন্ত সিন্ড্রেলার ছবি দেখে চার্লসের মাথা ঘুরে গেল !
সঙ্গে সঙ্গেই সিন্ড্রেলা কে ইনবক্সে নক করলো সে !
-হাই !
সিন্ড্রেলা কোন কথা না বলে কেবল হাসির ইমো দিল !
-তোমাকে এর আগে কোন দিন দেখি নি তো !
-কিন্তু আমি তোমাক প্রতিদিনই দেখি !
আবারও হাসির ইমো !
-তাই ? কি দেখো ?
হাসির ইমো ।
-কথা কেন বল না ?
-চিন্তা করে দেখো..।
-তাই.....

এই ভাবে কথা এগিয়ে চলতে থাকে ! কখন যে ১২ টার কাছাকাছি বেজে গেল সিন্ড্রেলা টেরই পেল না !
হঠাৎই মনে হল সময় হয়ে যাচ্ছে !
এখনই যেতে হবে । সিন্ড্রেলা বলল
-আমাকে এখন যেতে হবে ?
চার্লস বলল
-এখনই ? সবে তো মাত্র ১২ টা বাজে ?
-১২ টা বেজে গেছে !
-আমাকে এখনই যেতে হবে !
-যেও না প্লিজ !
-না যেতে হবে !
এই বলে সিন্ড্রেলা আর দেরি করলো ! চট করে গ্রুপ লিভ করলো ! তারপর নিজর আইডি ডিএকটিভ করে দিল !

এদিকে চার্লস শেষ বারের মত সিন্ড্রেলার ছবিটা ডাউনলোড করতে চাইলো ! কিন্তু ততক্ষনে বেশ দেরি হয়ে গেছে । সিন্ড্রেলা ততক্ষনে আইডি ডিএকটিভ করে ফেলেছে ।
কেবল নিচের পায়ের ছবি টুকু হাতে এল !


ঐ গ্রুপ থেকে আর কোন মেয়েকেই রাজকুমার চার্লসের পছন্দ হল না । সে ঘোষনা দিল যে ঐ মেয়েকে ছাড়া আর কাউকে সে বিয়ে করবে না ! কিন্তু সেই মেয়ের কোন ছবি দিতে পারলো না ! রাজ্যের সব আইটি এক্সপার্টরাও কিছু করতে পারলো না ! ঐদিন গ্রুপে আসা প্রতিটা মেয়ের প্রোফাইল যাচাই বাছাই করা হল কিন্তু সেই মেয়েকে আর খুজে পাওয়া গেল না !
কোন ছবি নেই কেবল আছে সেই পায়ের ছবি টুকু যেখানে কেবল কাচের জুতা জোড়া !

সবার ওয়ালে ওয়ালে সেই ছবি শেয়ার হয়ে গেল ! যে এই জুতা পরে ছবি আপলোড দিবে সেই হবে প্রিন্স চার্লসের সম্ভাব্য বউ !

এদিকে সিন্ড্রেলা নিজের আইডি একটিভ করলেও নিজের সেই প্রোফাইল পিকচার টা লুকিয়ে রাখলো !
এদিকে প্রিন্স চার্সলের প্রোফাইলে গিয়ে দেখে চার্লস তার সেই জুতার ছবিটা তার কাভার ফটো দিয়ে দেখেছে ।
আর তার বিরহে সে একটার পর একটা স্টাটাস দিতে লাগলো !

সিন্ড্রেলার মনে একটু ছিল দ্বিধা ! যদি সব কিছু জানার পরে সে তাকে ঘৃণা করে ! সে যদি স্পার্মিং করে গ্রুপে প্রবেশ করেছিল সেটা জানার পরে যদি চার্লস তাকে পছন্দ না করে তখন ?
এই জন্য সে চুপ কে রইলো !
কিন্তু এদিকে প্রিন্স চার্লসের হাহাকার বাড়তেই লাগলো !

কিন্তু এক পর্যায়ে আর না থাকতে পেরে নিজের আইডি থেকে সিন্ড্রেলা নিজের প্রোফাইল পিকটার বদলে সেদিনের টাই দিয়ে দিল ! তারপর চার্লসের ইনবক্সে একটা একটা হাসির ইমো দিল !


তার দুদিন পরেই দেখা গেল প্রিন্স চার্লস তার রিলেশনশীপ স্টাটাস চেঞ্জ করে ইন এ রিলেশনশীপ উইথ লোনলী সেন্ড্র !

তারও কদিন করেই দেখা গেল প্রিন্স চার্লস ইজ মেরিড টু লোনলী সেন্ড্র !

অতঃপর তারা শুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগল !


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×