মেয়েটি আমার ফেসবুকে ছিল ! ফ্রেন্ড লিস্টে !
চুপচাপ কোন কথা বলতো না ! কেবল আমার স্টাটাস, ছোট ছোট ভাবনা গুলোতে ছোট করে লাইক দিয়ে চলে যেত ! অন্যদের মত কোন কথা বলতো না !
কোন কাজ কর্ম নেই, আমি সারাদিন ফেসবুকে পড়ে থাকি । মনে যা আসে তাই লিখতাম ! অল্প কয়েকজন পড়তো কেউ কেউ আমার সাথে নিজের মনের কথার সাথে সহমত প্রকাশ করতো ! এই যা !
তবে মেয়েটির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করার পরে একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম আমি কিছু লিখলেই সবার আগে মেয়েটি লাইক দিতো ! এমন আছে আমি ভোর চার টার সময় কোন কিছু লিখেছি মেয়েটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেটাতে লাইক দিয়েছে ।
কোন দিন আমাকে নক করে নি কিংবা আমার কোন স্টাটাসে কোন কমেন্টও কোন দিন করে নি !
একদিন কৌতুহল না রাখতে পেরে মেয়েটিকে নক করলাম ইনবক্সে !
সময় তখন রাত সাড়ে তিনটা ! আমিই প্রথমে ফেসবুকে নক করলাম !
-হ্যালো !
বেশ কিছুক্ষন কোন কথা নেই ! একবার মনে হল মেয়েটা নেই নাকি ?
না এমন তো হবার নয় ! কারন দুমিনিট আগেই মেয়েটা আমার একটা স্টাটাসে লাইক দিয়েছে ।
আরেকবার হ্যালো বলবো কি না ভাবছি তখনই মেয়েটা রিপ্লাই দিলো !
-হ্যালো !
-কি অবস্থা !
আবারও কিছুক্ষন নিরবতা !
আমি লিখলাম
-আমি আপনাকে বিরক্ত করছি ?
এই উত্তরটা সঙ্গে সঙ্গেই এল ! মেয়েটি লিখলো
-ছি ছি কি বলছেন ! বিরক্ত কেন করবেন ? আসলে আপনার সাথে কথা বলছি এটা ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না !
সেই দিয়ে শুরু !
তারপর থেকে মেয়েটির সাথে টুকটাক কথা শুরু করলাম ! জেরিন আফসান ! মেয়েটার নাম !
টুকটাক ফেসবুকে কথা হত ! তবে একটা পরিবর্তন জেরিনের ভেতর আসলো সেটা হল জেরিন লাইক দেওয়ার সাথে সাথে টুকটা কমেন্টও দিতে লাগলো !
একদিনের কথা । ততদিনে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছি !
-জানো অপু ?
-কি ?
-একটা সময় আমি অনেক স্টাটাস দিতাম ! কিন্ত এখন আর দেই না !
-কেন ?
-তোমার ওয়ালে যখন আসি তোমার লেখা গুলো যখন পড়ি মনে হয় আমার কথা গুলো তুমি লিখে দিয়েছ ! বারবার পড়ি ! মনে হয় যেন নিজের লেখা !
আমি কি বলবো খুজে পেলাম না ! এই অবস্থায় কোন কথা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারছি না !
জেরিন বলল
-অপু একটা রিকোয়েস্ট করবো ?
-কর !
-আমার সাথে এক প্লেট চটপটি খাবে ?
-চটপটি ?
-হুম ! তুমি তোমার গল্পে যেমন নায়িকার সাথে বসে বসে চটপটি খাও ! ঐ ভাবে খেতে হবে না ! আমি তোমাকে খাওয়াবো ? খাবে ?
-হ্যা ! খাবো না কেন ?
বেশ কয়েকদিন পার হয়ে গেল ! আমিও চটপটি খাওয়ার কথা ভুলে গেলাম ! জেরিন আরেকদিন বলল
-কি আমার কথাটা ভুলে গেছো ?
-কোন কথা ?
-চটপটি !
-ও ! সরি ভুলে গেছি ! বল কবে ? কোথায় ?
-আগামীকাল, নিউমার্কেট
নিজের কাছে একটু লজ্জা লাগলো ! পরে দিন ক্ষন ঠিক করে হাজির হয়ে গেলাম !
অনেক মেয়ের সাথেই দেখা করেছি, তাই কোন প্রকার টেনশন না নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম ! জেরিনকে যদিও এর আগে দেখি নি তবে জেরিন ফেসবুকে আমার ছবি দেখেছে ! ওকে আমাকে চিনতে পারবে !
আমি বসে আছি নির্ধারিত জায়গায় ! ঠিক এমন সময় মেয়েটা আমার সামনে এল ! বেগুনী রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ! মেয়েটির মুখে একটু হাসি লেগে আছে ।
বলবো না মেয়েটি অনেক সুন্দর ! তবে প্রথম দেখাতে যা কারো ভাল লাগবে ! মেয়েটি চুল বেশ লম্বা আর ঘন সাথে মেয়েটি চোখ জুড়ে এক আশ্চার্য গভীরতা ছিল ! বিষন্নতার গভীরতা !
মেয়েটি আমার সামনে এসে হাজির হল !
-জেরিন ?
-হুম ! বসবো ?
-আরে তুমি আমাকে দাওয়াত দিয়ে আনিয়েছ ? অনুমুতি তো আমার নেওয়া উচিৎ !
-হাহাহাহাহা !
এভাবে দিন এগুতে লাগলো ! আমরা অনেক কথা বলতে শুরু করলাম ! জেরিন ওর পুরানো দিনের কষ্টের কথা গুলো বলতো আমি শুনতাম ! আমি আমার কথা বলতাম ! ও শুনতো ! দিন ভাল যাচ্ছিল একদিন জেরিন হঠাৎ অদ্ভুদ একটা কথা বলল
-শুনো ?
-হুম !
-চল নিজেদের রিলেশনশীপ স্টাটাস বদলে ফেলি !
-কি দেবো তাহলে ?
-কদিন তোমার গার্লফ্রেন্ড হতে ইচ্ছে করছে ! মিথ্যে মিথ্যি বানাবা আমাকে তোমার গার্লফ্রেন্ড !
-হ্যা ! কেন নয় ?
আমার কাছে ফেসবুকটা কোন কালেই খুব বেশি সিরিয়াস কিছু ছিল না ! কি বা যায় আসে তাতে !! দিন ভালই কাটতে লাগলো ! এভাবেই দিন কাটছিল ! ভালই কাটছিল !
দুই
-হ্যালো !
-কে বলছেন ?
-অপু বলছো ?
গম্ভীর গলায় কোন লোকের কন্ঠ ! কে হতে পারে ?
আমি বললাম
-হ্যা ! কে ?
-আমি জেরিনের বাবা !
আমি বড় রকমের একটা ধাক্কা খেলাম ! জেরিনের বাবা ! আমার কাছে কি ?
খাইছে রে !
ওনার মেয়ের সাথে আমার রিলেশনশীপ দেখছে নিশ্চই কিছু মনে করছে ! এবার আমাকে ঝাড়ি দিবে !
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না !
-তোমার সাথে কি দেখা করা যাবে ?
খুব ইচ্ছা হল যে বলি যাবে না ! আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই না ! কেন দেখা করবো ? ঝাড়ি খাওয়ার জন্য ? মোটেই না !
বললাম
-জি ! কেন যাবে না ? বলেন কোথায় আসতে হবে ?
-তোমাকে কোথাও আসতে হবে না ! তুমি তোমার বাসার ঠিকানা বল আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি !
-জি !!
একটু ইতস্তর করতে করতে বাসার ঠিকানা দিলাম !
কালো রংয়ের পাজেরো গাড়িটা যখন আমার সামনে এসে দাড়ালো আমার বিশ্ময় খানা আরও একটু বাড়লো ! তারপর যখন জেরিনের বাবার অফিসে হাজির হলাম মনে মনে বললাম এ কোথায় এসে হাজির হলাম !
মাই গড !!
কোন দিন তো মনে হয় জেরিনদের অবস্থা এমন হাইফাই ! অবশ্য এটা নিয়ে কোন দিন কথাও হয় নি !
ভদ্রলোক আমাকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখলেন কিছুটা সময় ধরে ! মনে হল যেন আমাকে পেদানী দিতে কি পরিমান বেত লাগবে সেই হিসাব যেন করতে লাগলো ! খাইছে রে !
দৌড় মারবো ?
জেরিনের বাবা বলল
-তুমি আসাতে খুব খুশি হয়েছি !
আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম ! কি বলবো কিংবা কি বলা উচিৎ বুঝতে পারছি না !
জেরিনের বাবা বলল
-দেখো মেয়ের ফেসবুক প্রোফাইলে উকি মারা কোন বাবার পক্ষে ভাল কথা না ! কিন্তু তুমি নিশ্চই জানো আমার মেয়েটা এর আগে দু'দুবার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে !
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ! আমি জানি ব্যাপার টা ! জেরিন নিজেই আমাকে বলেছে ! ওর যখন প্রথমবার ব্রেকআপ হয় তখন জেরিন খুব বেশি আপসেট হয়ে পড়ে !
জেরিনের বাবা বলল
-জানো তো ! আমি খুবই সরি ! তুমি জেরিন কে আমাদের এই মিটিংয়ের কথা বলবে না প্লিজ !
-আচ্ছা ! সমস্যা নেই !
-প্লিজ বলবে না ! ও তাহলে খুব বেশি রাগ করবে !
কিছুক্ষন চুপ করে থেকে জেরিনের বাবা বলল
-তুমি ওকে ছেড়ে যাবে না তো বাবা ?
জেরিনের সাথে আমার সম্পর্কটা যে আসল নয় এই কথাটা আমি জেরিনের বাবাকে বলতে পারলাম না ! উনি যখন বললেন আমার মেয়েটা কে ছেড়ে যাবে না তো বাবা, ওনার কন্ঠে কিছু একটা ছিল ! আমি কিছুতেই বলতে পারলাম না যে আপনার মেয়ের সাথে আমার কিছুই নেই ! আমরা দুজনেই এমনি টাইমপাস করছি !
-দেখো, এর আগের বারের শক ও অনেক কষ্টে সহ্য করেছে ! এবার পারবে কি না আমি জানি না ! তুমি যা চাও আমি তোমাকে তাই দেবো, কেবল এবার আমার মেয়েটাকে ছেড়ে যেও না !
ভদ্রলোক আমার হাত ধরে এমন ভাবে অনুরোধ করতে লাগলো আমি সত্যি সত্যই লজ্জায় পড়ে গেলাম !
কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! কথা দিলাম যে জেরিন কে ছেড়ে যাবো না !
অদ্ভুদ এক অনুভুতু হতে লাগলো !
তিন
সব থেকে বড় ঘটনা টা ঘটলো আরও একমাস পরে ! বাড়ি থেকে বাবার জরুরী ফোন পেয়ে বাসায় হাজির হলাম ! বাসায় গেট দিয়ে ঢুকতে আরেকবার ধাক্কা গেলাম !
উঠানে বাবার সাথে জেরিনের বাবা বসে আছে পায়ের উপর পা তুলে ! দুজনের হাতে চায়ের কাপ !
আমার দিক তাকিয়ে দুজনেই খানিকটা হেসে উঠলো ! আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে !
এই লোক কেন এখানে ?
ঘরের ভিতর ঢুকে দেখি আমার ছোট বোন আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে ! আমার নিজের ঘরে গিয়ে দেখি আমার খাটের উপর জেরিন বসে আছে ! আমাকে দেখে বলল
-বাহ ! আমাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ না দিলেও পারতে !
-সার প্রাইজ !
-বারে ! আমাকে সত্যি সত্যি পছন্দ কর এটা আমাকে বললেই পারতে ! আমার বাবাকে বলতে হবে তাই বলে ? তার উপর আজকে বাবার সাথে পরামর্শ করে এখানে নিজেদের বাসায় আমাকে নিয়ে এসেছ ! আর এখন নিলুর কাছে শুনলাম আজ নাকি আমাকে বিয়ে হবে !
-বি....।
পুরো শব্দটা আমার মুখ দিয়ে বেরও হল না !
খাইছে ! কি হইতাছে !
সব জেরিনের বাবার কাজ ! আমার মুখের কথা ঠিক তার বিশ্বাস হয় নি ! একেবারে আমার বাবাকে পর্যন্ত পটিয়ে ফেলেছে । কোন প্রকার রিস্ক নেয় নি !
জেরিন কেও নিশ্চই ওভাবে বলা হয়েছে !
সত্যি সত্যি রাতের মধ্যে জেরিনের সাথে আমার বিয়ে হয়ে গেল ! আমি কিছু বলতে পারলাম না ! বলতে পারলাম ইহা ঐ ভদ্রলোকের ষড়যন্ত্র !!
আমি এখন বিয়ে করতে চাই না !
চাই না !
আমারে বাঁচাও !
তবে রাতের বেলা জেরিন যখন আমার বুকে মাথা আমাকে জড়িয়ে কাঁদছিল তখন কেন জানি সব কিছু ভুলে গেলাম ! বুকের ভিতর একটা অন্য রকম অনুভুতি হতে লাগলো ! মনে মনে বললাম
মেয়ে আজকেই শেষবারের মত কেঁদে নাও ! এর পরে তোমাকে আর কান্নার সুযোগ দিবো না !
আলোচিত ব্লগ
শাহ্ সাহেবের ডায়রি ।। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জামায়াতকর্মীরা সমাজকর্মী হয়ে থাকবে : আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে নিজেদের জনগণের শাসক নয়, সেবক ও খাদেম পরিচয় দেবে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত কর্মীরা আজীবন সমাজকর্মী হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়
মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ্ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম
নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন
যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়
এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!
১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন