somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার মিস নিশাত এবং আমার অসমাপ্ত প্রেমের গল্প !

১৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তোমাকে বলেছিলাম না কাকু, আমাদের মিস অনেক সুন্দর !!

নিলিমের কথা শুনে সুন্দরী মিস আরও একটু লজ্জা পেয়ে গেল !
সুন্দরী মিস আসলেই বেশ সুন্দরী ! এই রকম মেয়ে স্কুল টিচার ঠিক দেখে বিশ্বাস হয় না ! এই মেয়ে কাজ করবে কোন কর্পোরেট অফিসে ! এখানে কি করে ?
অবশ্য ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও খারাপ না !

এতো সুন্দরী মিস টিচার হলে আমি তো একদিনও স্কুল কামাই করতাম না ! প্রতিদিন স্কুলে আসতামই পারলে ছুটির দিনও হাজির হতাম !

আমি নিলিমের মিস কে বললাম
-আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ! আসলে রাস্তায় এভাবে আটকে যাবো বুঝতে পারি নি ! ওকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ !
মিষ্টি হেসে মিস বলল
-কোন সমস্যা নেই !
আমি নিলিম কে নিতে যাবো তখনই নিলিম বলল
-কাকু ! মিস তো আমাদের এলাকাতেই থাকে !
আমি কৌতুহলী চোখে মিস এর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তাই নাকি ?
-জি !
-আরে তাহলে চলুন ! আমাদের সাথে চলুন !
-না না ! ঠিক আছে ! আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাবো !
-আরে আমি আপনাকে গাড়িতে করে নিয়ে যেতে চাইছি আর আপনি রিক্সা করে যেতে চাইছেন !
-না আসলে.....
-দেখুন গাড়ি আমার না হতে পারে তবে আমি কিন্তু গাড়ি ভাল চালাই ! আর একজন সুন্দরী মিস গাড়িতে উঠবে এটা কে না চায় বলুন ! তবে আপনি আমার সাথে উঠতে না চাইলে কথা ভিন্ন !

একটু ইতস্তত করে মিস গাড়িতে উঠে বসল ! চললাম বাড়ির উদ্দেশ্যে ।



-আপনি কি করেন ?
-আমি ? আপাতত কিছু না ! হাওয়া খেয়ে বেড়াই বলতে পারেন ! আর নিলিম কে আনা নেওয়ার কাজ করি ! ভাই ভাবীর সংসারে আছি চিন্তাহীন !
আমার কথা শুনে মিস নিশাতের খুব বেশি পছন্দ হল বলে মনে হল না ! আসলে কোন মেয়েই এই টাইপের ভবঘুরে ছেলে কে পছন্দ করে না ! বিশেষ করে কোন কর্মজীবি মেয়ে তো নয়ই !
মিস নিশাত বলল
-এভাবে কি জীবন যাবে ?
-যাবে না কেন ? দেখুন আমার কোন পিছু টান নেই ! আর আমার বদ্ধজীবন ভাল লাগে না ! সময় করে অফিসে যাওয়া এটা আমার ঠিক পছন্দ না ! এতো নিয়ম নীতি আমার ভাল লাগে না !

কথা বলতে বলতে কখন যে বাসার কাছে চলে এসেছি বুঝতেই পারলাম না ! আমাদের বাসা থেকে কয়েক ব্লক পরেই মিস নিশাতের বাসা ! উনাকে নামিয়ে দিয়ে বাড়ির দিকে হাজির হলাম !



পরদিন আবারও হাজির হয়ে গেলাম নিলিম কে আনার জন্য ! নিলিম আসার পরেও যখন আরও একটু সময় অপেক্ষা করছি তখন নিলিম বলল
-কাকু ! কি হল যাবে না ?
-চুপ করে বসে থাক !
-চল না ! ক্ষুদা লেগেছে !
-কি খাবি বল !
-আইসক্রিম !
-আইসক্রিমে পেট ভরে ?
-হুম ভরে !
আইসক্রিম কিনে দিলাম ! নিলিম পুরো আইসক্রিম শেষ করে ফেলল কিন্তু মিস নিশাতের কোন খোজ নাই ।
শেষে না পেরেই বললাম
-তোর মিস কইরে ?
-কোন মিস কাকু ?
বদ টা সব বুঝে কিন্তু তবুও জিগায় !
-জানিস না কোন মিস ?
-ও সুন্দরী মিস !
-হুম !
-মিস এর তো আজকে অফ ডে ?
-কি ? এই কথা আগে বলবি না ?
নিলিম দুষ্টমির হাসি দিয়ে বলল
-তাহলে আইসক্রিম মিস হয়ে যেত !
ফাজিল কয় কি ? এই বয়সেই এতো কিছু বুঝে গেছে !


রাতের বেলা খাবার সময় ভাবি হঠাৎই জিজ্ঞেস করলো
-কি রে বিয়ে শাদী করবি না ?
-ভাবী, এখন না ! আগে কিছু করি ! তারপর ?
-বিকেল বেলা আম্মা ফোন করেছিল ! তোর জন্য নাকি মেয়ে দেখছে ! এবার গ্রামে গিয়ে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবে !
-ভাবী আমি গ্রামে বিয়ে করবো না !
-তো কোথায় করবেন জনাব ? ইংলিশ মিডিয়ামের টিচার চলবে ?

নিলিমের দিকে তাকিয়ে দেখি বদটা মিশমিশ করে হাসছে । নিশ্চই এসে সব কিছু বলে দিয়েছে !
আমি বললাম
-যদি ম্যানেজ করতে পারো তাহলে আমি রাজি !
ভাবী মনে হয় আমার এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না ! কারন এর আগে বেশ কয়েকবার সে আমার বিয়ের জন্য আমাকে অনেক বোঝাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে ! আজকে এভাবে এক কথায় রাজি হয়ে যাবো ভাবতে পারে নি !
খানিকটা অবাক হয়েই বলল
-সত্যি ?
-হুম ! সত্যি !
-এতো ভাল লেগে গেছে ?
-হুম ! বলতে পারো !
-পরে কিন্তু না করলে হবে না !
-আরে বাবা কে না করছে ! আগে কথা বার্তা বল তো !


আমি তো মনে সুখেই দিন কাটাতে লাগলাম ! প্রতিদিন নিলিম কে নিতে যাই ! এখন একটু আগে আগেই যাই ! মিস নিশাতের সাথে টুকটাক কথা বলি ! তাকে একদিন আইসক্রিম খাওয়ার দাওয়াত দিলাম ! সে খুশি মনেই রাজি হল ! আর এদিকে ভাবী খোজ খবর চালাতে লাগলো !
দিন তো ভাল কাটবেই !

একদিন আমি নিলিমের জন্য অপেক্ষা করছি, ওর স্কুল ছুটির পরে ! দেখলাম একটু পরেই নিলিম বের হয়ে এল ! সাথে মিস নিশাত ! আজকে বলতে হল না ! নিশাত নিজেই গাড়িতে এসে বসলো !
একটু অবাক হলাম ! তবে আমার জন্য আরও অপেক্ষা করছিল ! যখন বাসার কাছে পৌছালাম নিশাস নিজ থেকে নিলিম কে বলল
-আম্মু তুমি বাসায় যাও তো একটু ! তোমার কাকুর সাথে আমার একটু কথা আছে !
আমি একটু অবাক হলাম ! নিলিম চলে গেল ! আমরা দুজনে গাড়ির ভিতরে বসে আছি চুপচাপ !
কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না ! কিংবা কি বলা উচিৎ !
নিশাত হঠাৎ করেই বলল
-আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান ?
একেবারে সোজাসুজি কথা জানতে চাইলো ! এটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না ! ইতস্তত করে বলল
-হ্যা !
-আমি চাই না !
একটু ধাক্কার মত খেলাম ! মনটাও খারাপ হল ! বললাম
-কেন জানতে পারি ?
-আপনাকে বিয়ে করার মত কিছুই আপনার ভিতর নেই ! আপনি কিছু করেন না, হয়তো আপনারা অনেক বড় লোক কিন্তু তার কিছুই আপনার নয় ! আমি এরকম ছেলে পছন্দ করি না ! আমি চাই নিজের পায়ে দাড়ানো ছেলে ! সিরিয়াস একজন, যে নিজের জীবন নিয়ে ভাবে ! একটা সংসারের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত !
আমি চুপ করে রইলাম ! আগেই বলেছিলাম যে মেয়েটা চাকরি করে সে কিছুতেই আমার মত ভবঘুরে ছেলেকে পছন্দ করবে না !

-আপনি দয়া করে আপনার ভাবীকে মানা করবেন আমাদের বাসায় যেন আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে না যায় !
আর কিছু না বলে নিশাত গাড়ি থেকে নেমে গেল !

আমি কিছুক্ষন বসে রইলাম গাড়ির ভিতর ! কেন যেন বুকের ভেতর একটা অচেনা কষ্ট হতে লাগলো ! বুঝতে পারছিলাম না কিসের কষ্ট !


####

-আরে আপনি এখানে ?
-আরে আপনি ! এখানে ?
-আমারও তো একই প্রশ্ন !

নিশাতের সাথে প্রায় সাত বছর পরে দেখা হয়ে গেল ! হঠাৎ করেই ! ও দেখলাম একটু মোটা হয়েছে ! তা ছাড়া সব কিছু আগের মতই আছে ! বুকটার ভিতর একটা চিনচিনে ব্যাথা শুরু হল কেন জানি !

বললাম
-অফিস থেকে ট্যুরে এসেছি ! অফিস গেট টুগেদার বলতে পারেন !
-অফিস !
-কতদিন আর ভবঘুরে থাকবো বলেন ?
কিছু একটা বলতে গিয়েও নিশাত আটকে গেল যেন !
আবার বললাম
-আপনি এখানে কি করছেন ?
-আমার হাসব্যান্ড এখানে জব করে ! আমরা কাছেই থাকি !
-ও !
-আসুন ! একবার ঘুরে যাবেন !
-না আজকে না ! আজকে তাড়া আছে !
-ও ! আছেন তো কদিন ?
-না ! আজই ব্যক করবো !
-ও হো !! তো আপনার ওয়াইফকে দেখছি না !
-নেই !
-আসে নি ?
-হুম ! আমার জীবনেই আসেন নি ! একজন কে পছন্দ করেছিলাম ! কিন্তু সে পছন্দ করে নি আমাকে !
নিশাত চুপ করে গেল !
বললাম
-তারপর আর কাউকে পছন্দই হল না যে !
আরও কিছুক্ষন নিরবতা !
শেষে আমি বললাম
-আচ্ছা আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ! আসি !
-শুনুন !
-হুম ?
নিশাত কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না । বলল
-না থাক ! ভাল থাকবেন !
-আপনিও !


উল্টো দিকে ঘুরে হাটা দিলাম ! সাত বছর আগেই সেই কষ্ট টা কেন যেন আবার নড়ে চড়ে উঠলো ! অনেক বার নিজেকে প্রশ্ন করেছি নিজেকে ! এমন কেন হল ?
উত্তর পায় নি ! কেন একটা মেয়ের জন্য জীবনটা এমন হয়ে গেল ! যাকে কোনদিন বলি নি ভালবাসি, কোন দিন ডেট করি নি, কোনদিন হাত ধরি নি, কোন দিন যাকে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখি নি, কেন তার জন্য জীবন টা এমন হয়ে গেল ! কেন তার জন্য কষ্ট হতে লাগলো !
আশ্চার্য ! মানুষের মন আসলেই বড় আশ্চার্য !!

১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×