somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ মেয়েটি বলল "আমাদের পছন্দ-অপছন্দ থাকতে নেই"

১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসায় ঢুকতে গিয়েই থামতে হল ! পাশের বাসার সামনে তখন লাল রংয়ের গাড়িটা দাড়িয়ে !
গাড়ির বাঁ দিককার দরজার পাশে দাড়িয়ে ফয়সাল সাহেব মোবাইলে কার সাথে কথা বলছে, অন্য দিককার দরজা খুলে মেয়েটি বের হওয়ার চেষ্টা করছে ! এক হাতে স্টিক নিয়ে মেয়েটার দরজার দিয়ে বের হতে একটু বেগই পেতে হচ্ছে ! মেয়েটি একটু সাহায্য প্রয়োজন !
একবার ভাবলাম এগিয়ে যাই ! কিন্তু নিজেকে থামালাম ! সেটা আমার শোভা পায় না !
গাড়ির ইঞ্জিনের আওয়াজ এখনও পাওয়া যাচ্ছে তারমানে মাত্রই এল ওরা কোথা থেকে ! বেড়াতে গিয়েছিল মনে হয় !

মেয়েটা যখন গাড়ি থেকে অর্ধেক নিজেকে বের করে এনেছে তখনই আমার দিকে চোখ গেল মেয়েটার !
একটু হাসলো ! এমন একটা ভাব যেন সে ঠিক আছে ! কোন সমস্যা হচ্ছে না ! আমি আরও কিছুক্ষন দাড়িয়েই রইলাম !

মেয়েটা যখন গাড়ি থেকে বের হল ফায়সাল সাহেব তখন আবার গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে বসলেন ! তারপর গাড়ি ঘুড়িয়ে চলে গেলেন ! একটা বার ভাল ভাবে বিদায় নেওয়ার কথা ভাবলেনও না !
মেয়েটি গেট টার সামনে আরও কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইলো, যতক্ষন গাড়িটাকে দেখা যায় ততক্ষন সেদিকেই তাকিয়েই রইলো ! সেই চোখে অদ্ভুদ একটা বিষন্নতা !!



মেয়েটি কে আমি যে খুব ভাল করে চিনি বলতে পারবো না ! এমন কি মেয়েটার নামটাও আমি ভাল ভাবে জানি না ! কেবল ফেসবুকে মেয়েটার একটা একটা নাম আছে ! বিবর্ণ নীল !
আসলেই কেন জানি মাঝে মাঝে মেয়েটাকে ঐ নামটার সাথে বেশ মানানসই মনে হয় !

মেয়েটা আমার পাশের বাসায় থাকে । আরও ভাল করে বললে আমার ঘর থেকে মেয়েটার ফ্ল্যাট ভাল ভাবে দেখা যায় । বিশেষ করে ডাইনিং রুম আর মেয়েটার ঘরটা ! সাথে বারান্দা টা ! আমার বাসা তিন তলায় মেয়েটার বাসা দুতলায় !
মেয়েটা ওর মায়ের সাথে থাকে সম্ভবত ! কারনে কেবল আরেক মাঝ বয়সী মহিলাকেই দেখি ঐ ফ্ল্যাটে !
প্রথম মেয়েটাকে আমি লক্ষ্য করি কিছুদিন আগে । অবশ্য আমরা এখানে এসেছি খুব বেশিদিন হয় নি ! দিনটা ১৪ তারিখ ছিল ফেব্রুয়ারির ! বিশেষ একটা দিন ! সারাদিন নেট/পিসি নিয়ে ব্যস্ত থাকি রাতে ঘুমাতেও বেশ দেরি হয় ! যখন ঘুমাতে যাবো ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় তিনটা বেজে গেছে ! আমি হাত পা একটু এদিক ওদিক নড়াতে নাড়াতে জানালের কাছে আসলাম হাওয়া খাওয়ার জন্য ! এসে নিচের দিকে তাকাতেই মেয়েটির দিকে চোখ গেল !

আমার জানালা দিয়ে মেয়েটির ডাইনিং রুমের খাবার টেবিলটা দেখা যায় বেশ ভাল ভাবেই ! দেখলাম সামনে একটা কেক নিয়ে মেয়েটি বসে আছে চুপ করে ! কারও আসার অপেক্ষা !
রাত তিনটা বাজে ?
এখনও কেক না কেটে কার জন্য অপেক্ষা করছে ?
মেয়েটির বিষন্ন মুখ দেখে আসলেই কেন জানি মন খারাপ হয়ে গেল !
আহা ! বেচারি কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কে জানে ?
প্রিয় মানুষ টি নিশ্চই আজকে আসতে পারে নি ! এই জন্য মুখটি বিষন্ন !!

আমার আরও কিছু দেখার বাকি ছিল মনে হয় ! হঠাৎ টেলিফোন রিং হওয়ার আওয়াজ পেলাম । রাত বিধায় আওয়াজটা আমি পরিস্কার শুনতে পাচ্ছিলাম ! ল্যান্ড ফোনের আওয়াজ !

মেয়েটি উঠে গেল । তখনই লক্ষ্য করলাম আসলে মেয়েটি শারীরিক ভাবে একটু অপ্রতুল ! হাতের কাছে একটা স্টিলের স্টিক ছিল, মেয়েটা সেটা ধরে উঠে দাড়ালো ! তারপর আস্তে আস্তে খোড়াতে খোড়াতে হাটতে হাটতে অন্য ঘরে চলে গেল !

দৃশ্যটা দেখে আসলেই বুকের মাঝে হঠাৎই কেন জানি একটু কষ্ট হল ! বুঝতেই পারলাম না কেন ?
বারবার বিষন্ন মেয়েটার মুখ আর মেয়েটার খোড়া পায়ের দৃশ্যটা চোখে ভাসছিল ! একটা মেয়েকে চিনি না জানি না তার জন্য কষ্ট হতে লাগলো !

পরদিন ঘুম ভাঙ্গলো দুপুরের দিকে ! খাওয়া দাওয়া সেরেছি তখন প্রায় বিকেল ! বারান্দায় গিয়ে দেখি মেয়েটি ! আমার বারান্দা থেকে মেয়েটির বারান্দাটিও দেখা যায় পরিস্কার ! মেয়েটি বারান্দার মেঝেতে বসে আছে চুপ করে । সামনে একটা কলো রংয়ের ল্যাপ্টপ খোলা রয়েছে ! ল্যাপ্টপের পাশে একটা নীল রংয়ের কাপ রাখা ! তবে মেয়েটি তাকিয়ে আছে দুরে কোথাও ! কোথাও হারিয়ে গিয়ে ভাবছে কিছু একটা !
মুখে সেই বিষন্নতাটা লেগেই আছে !

আমি আবারও কিছুক্ষন তাকিয়েই রইলাম একভাবে ! দৃশ্যটা তে কি ছিল আমি ঠিক জানি না ! তবে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগছিল !

হঠাৎ কি হল বললাম
-তোমার মন ভাল ?
মেয়েটি যেন একটু চমকে উঠলো ! প্রথমে বুঝতেই পারলো না যে কথাটা কোথা আসছে !
আমি আবার বললাম
-এই যে উপরে তাকাও !
মেয়েটি আমার দিকে তাকালো ! বললাম
-মন খারাপ ?
-এই কথা কেন বলছো ?
-না তোমার চেহারা বলে দিচ্ছে ! মন খারাপ নাকি ?
-থাকতে পারে না ?
-পারে ! কেন পারবে না ? তবে মন খারাপ করে কি লাভ বল ? কোন লাভ নেই ! বিশেষ করে অন্যের জন্য নিজের দিন গুলো নষ্ট করার কোন মানে নেই !
-সব সমসয় কি নিজেকে নিয়ে থাকা যায় বল ?

এভাবেই আমাদের কথা শুরু ! আমরা টুকটাক কথা বলতে শুরু করি ! আমি উপরের বারান্দার মেয়েটি নিচের টাতে !

অবশ্য এখনও মেয়েটার নাম আমি জানতে চাই নি ! ফেসবুক আইডি দিয়েছিল সেখানে নাম ছিল "বিবর্ণ নীল" ! এই পর্যন্তই !
কথার ছলে অনেক কিছুই বলেছিল মেয়েটি ! আমি আগে যে মহিলাকে মেয়েটির মা মনে করতাম আসলে সে তার মা নয় ! আত্মীয় ! মা কোথায় জানতে চাইলে মেয়েটি বলে নি । কিংবা বলতে চায় নি ! আমিও শুনতে চাই নি !
মেয়েটির বাবা বাইরে থাকে । আর ফয়সাল সাহেব যে প্রায়ই আসে মেয়েটির চাচাতো ভাই ! খুব শীঘ্রই মেয়েটির সাথে তার বিয়ে হওয়ার কথা !

একদিন হঠাৎ মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম
-ফয়সাল কে তুমি ভালবাসো ?
-কেন ? হঠাৎ এই প্রশ্ন ?
-না এমনি ?
মেয়েটি কোন উত্তর দিল না !
আমি আবার বললাম
-ফয়সাল সাহেব তোমাকে ভালবাসে ?
-কি জানি ?
-তাহলে যে তোমাকে ভালবাসে না এমন একজন কে বিয়ে করবে কেন ?
আমার এই কথা টা শুনে মেয়েটি একটু মলিন হাসি হাসলো ! বলল
-দেখছো না আমি একটা খোঁড়া মেয়ে ! আমাদের অনেক চাহিদা/পছন্দ অপছন্দ থাকতে নেই !

আমি যেন কথা হারিয়ে ফেললাম ! কথা গুলোর মাঝে কি পরিমান অভিমান ছিল আমি ঠিকই বুঝতে পারছিলাম ।


একদিন রাতের বেলা, নিচের বাসা থেকে উচু গলায় আওয়াজ শোনা যাচ্ছে ! জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি ফয়সাল সাহেবের সাথে মেয়েটি কথা কাটাকাটি হচ্ছে । আরও ভাল করে বললে হয় ফয়সাল সাহেব কথা বলছে আর মেয়েটি শুনছে ! মাঝে মাঝে কয়েকটি কথার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করছে !
হঠাৎ হাত তোলার আওয়াজ পেলাম । একজনের গালে জোরে চড় মারলে যেমন আওয়াজ হয় সে রকম ! তাকিয়ে দেখি মেয়েটি উল্টে মেঝেতে পরে আছে হাতের ছতিটি একটু দুরে পরে আছে । ফয়সাল সাহেব রাগান্বিত চোখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে ! তার একটা কথাই কেবল কানে এল
-এখন থেকে আমার পছন্দ মত থাকতে হলে থাকবি নইলে চলে যাবি ! তোর মত মেয়ের অভাব হবে না !

তার কিছু না বলে ফয়সাল সাহেব চলে গেল ! আমি তাকিয়েই রইলাম মেয়েটির দিকে !


তারপর হঠাৎ করেই সব রকম যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল মেয়েটির সাথে ! কদিন বারান্দায় আসা বন্ধ ! সব গুলো জানালা থাকে বন্ধ ! ফেসবুকেও ইনএকটিভ !

কয়েকবার নক করেও কোন জবাব পেলাম না ! কয়েকদিন পরে দেখলাম তার আইডিটা ডিএকটিভেট করা । তবে আইডি বন্ধ করার আগে মেয়েটি আমাকে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে

------,
জীবন টা এরকমই । কিছুটা আমাদের ইচ্ছে মত হয় আর কিছুটা মেনে নিতে হয় । কষ্ট এখানেই যে আমাকে সব কিছুই মেনে নিতে হয়েছে । আমি বাবার কাছে চলে যাচ্ছি । সব কিছু পেছনে ফেলে রেখে । তুমি সেদিন বলেছিলেন না আমি তাকে ভালবাসি কি না ? না, তাকে আর ভালবাসি না । একটা সময়ে বাসতাম তবে এখন আর না । তুমি ভাল থেকো ! তোমার সাথে বলা কথা গুলো আমার মনে থাকবে !


কোন সম্মোধন নেই । কোন ইতি নেই ! চিঠি এখানেই শেষ !
আসলেই মেয়েটি ঠিকই বলেছে ! জীবন এরকমই ! কিছুটা আমাদের ইচ্ছে মত হয় আর কিছুটা আমাদের মেনে নিতে হয় !
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×