somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বুয়েটে চান্স পাওয়ার পরের ঘটনা সমুহ....

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-বাহ ! বুয়েটে চান্স পেতে না পেতেই আমার কথা ভুলে গেলে ?

নিশির দিকে তাকিয়ে দেখি নিশির মুখ টা গম্ভীর ! গম্ভীর হলে নিশির চোখ দুটো একটু ছোট হয়ে যায় ! তখন ওকে দেখতে খানিকটা জাপানিজদের মত মনে হয় ! নাক টা যদিও বেশ খাড়া । বুচা নাক হলে চাইনিজ কিংবা জাপানিজ বলে চালিয়ে দেওয়া যেত !
আমি বললাম
-কি বললা ?
-কি বলেছি শুনো নাই ?
-না তো !
-দেখো, ফাজলামো করবা না ! থাপ্পড় খাবা !
-সে কি ! কেন ?

নিশি অগ্নি চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো ! মনে হল এখনই আমাকে খেয়ে ফেলবে ! তবে সেই অগ্নি দৃষ্টি পরিবর্তন হয়ে এল কিছুক্ষনের ভিতরেই ! সেখানে একটু অভিমান দেখা দিল ! অভিমানী চোখের দিকের দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় ! মনে হল আহা ! এমন অভিমানী চোখ কতদিন দেখি নি !

আসলেই দিন গুলো কেমন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে । বিশেষ করে বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর থেকেই চার পাশের মানুষ জনের আচরন খানিকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে । বিশেষ করে পরিবার, পাড়া প্রতিবেশি সবার ।
এলাকার ভিতর প্রথম বুয়েটে পড়া ছাত্র হতে যাচ্ছি কি না তাই !

যেদিন রেজাল্ট বের হল সেদিন থেকেই পাড়ার মানুষজন বিশেষ করে মুরুব্বী গোছের মানুষ গুলোর চোখে আমি অনেক ভদ্র ছেলে হয়ে গেলাম ! সবাই আমার দিকে তাকিয়ে একটা নমনীয় হাসি দিতে লাগলো ! কেউ কেউ আবার মাথায় কিংবা কাধে হাত রেখে দোয়া করে বলতে লাগলো বেঁচে থাকো বাবা !
অথচ কদিন আগে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ ঠিক মত ফিরেও তাকাতো না, মাথায় হাত রাখা তো অনেক দুরের কথা !

সব থেকে বড় পরিবর্তন টা আসলো পাড়ার মেয়ে গুলোর ভিতর ! যে মেয়ে গুলো আমাকে পাত্তা দিতো না হঠাৎ করেই তাদের চোখের চাহনী বদলে গেল ! রাস্তা দিয়ে যাওার সময় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি টিপ্পনী চলতে লাগলো ! বিকেল বেলা ছাদে উঠলে এখন প্রায়ই আশে পাশের সুন্দরী মেয়েদের কে দেখতে পাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! সময় টা খুব একটা খারাপ যাচ্ছে না ! উপভোগই করছি !

অবশ্য নিশির পেছনে আমি অনেক আগে থেকেই আছি । তবে হ্যা এই ভাবে ওর সাথে কোথাও দেখা করতে এই প্রথম আসলাম ! তাও আবার নিশির ফোন পেয়েই ! এমন টা বলা যাবে না যে নিশি আমাকে মোটেই পছন্দ করতো না, তবে সরাসরি কিছু বলতো না ! কিন্তু ওর চোখে প্রশ্রয়ের হাসি আমি ঠিকই দেখতে পেতাম ! বিকেল বেলা ছাদে কিংবা রাস্তায় দেখা হলে ঠিকই একটা হাসি দিতো ! প্রান জুড়ানো হাসি ! সেই হাসিতেই কেটে যেত একটা রাত !

আমি নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম
-দেখো, একটা বাসের জন্য অপেক্ষা করে করে যদি সেই বাসটা না আসে তাহলে তো বিকল্প বাসে করে গন্তব্যে যাওয়া উচিৎ ! তাই না ?
-কি বললা ? এই তুমি কি বললা ?
-না ! না ! কিছু বলি নি তো, কিচ্ছু বলি নি ! বলেছি ঐ একটা বাসের জন্যই সারা জীবন অপেক্ষা করে থাকা উচিৎ !
-হুম ! দ্যাস বেটার !
নিশি কিছুটা শান্ত হল ! আমার দিকে তাকিয়ে আবার বলল
-আর যদি ঐ আদিবার সাথে পুটিসপাটিস করতে দেখেছি তাহলে কিন্তু একেবারে খুন করে ফেলবো !
-পুটিসপাটিস কি ?
-বুঝো না ? কচি খোকা !
-তোমার সাথে এখন যা করতেছি তাই ?
নিশি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হেসে ফেলল ! বলল
-হ্যা ! এটাই পুটিস পাটসি ! এটা কেবল আমার সাথে করবা ! আর কারও সাথে না !


হুম ! নতুন নতুন উপদ্রোকের সাথে যুক্ত হয়েছে আদিবা ! আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে ! বলতে গেলে ভয়াভহ রকমের সুন্দরী ! সবে মাত্র ক্লাস টেন এ উঠেছে ! এরই ভিতর বলতে গেলে পাড়ার ছোট বড় সবাই আদিবার পিছনে ঘুরা শুরু করে আবার শেষ করে ফেলেছে ! আদিবা কিছুদিন একে লাইন দেয় তো কিছুদিন তাকে লাইন দেয় ! এবার মনে হয় আমাকে লাইন দেওয়ার সময় এসেছে !

যাই হোক গত সপ্তাহের কথা । ওর বাবা হঠাৎ আমাদের বাসায় এসে হাজির ! মা মনে করলো হয়তো বাড়ি ভাড়া বাড়াবে ! কিংবা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলবে ! বাড়িওয়ালারা তো মাসে মাঝখানে কোন সমস্যা না হলে ভাড়াটিয়াদের বাসায় যায় না ! কিন্তু আমাদের খানিকটা অবাক করে দিয়ে আদিবার বাবা বলল যে সে চায় আমি যেন তার মেয়েকে পড়াই ! তার মেয়ে নাকি অংকে খুব কাঁচা !
কাঁচা তো হবেই ! সারা দিন টাংকি মেরে বেড়ালে তো কাঁচা হবেই ! বাড়িওয়ালার মেয়ে বিধায় না করতে পারলাম না ! এবং এই কথা পাড়ায় গুলির বেগে ছড়িয়ে পড়লো ! আগে যারা আমাকে ঈর্ষা করতো তারা আমার উপর চটে গেল আরও !

এই খবর নিশির কানে পৌছাতেও সময় লাগলো না ! সেই সুবাধে আজকে আমার তলব !
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি ঐ বদ মেয়েকে পড়াতে যাবা না ! খবরদার যাবা না বললাম !
-আরে আমি মানা করবো কিভাবে বল ? ওর বাবা আমাদের বাসায় এসে বলে গেছে ! না গেলে আমাদের বাড়ি ছাড়া করবে !
-করলে করবে ! আমাদের বাসায় এসে থাকবা ! সমস্যা কি ?

আদিবাদের বাসা মানে আমরা এখন যে বাসায় ভাড়ায় থাকি ঠিক তার পাশের বাসাটাই নিশিদের বাসা ! এও বাড়িওয়ালার মেয়ে সেও বাড়িওয়ালর মেয়ে ! বাড়িওয়ালার মেয়ে বনাম বাড়িওয়ালার মেয়ে !
-তুমি এতো টেনশন কেন নিচ্ছ ?
-নিবো না ?
-আমার উপর তোমার ভরশা নাই ?
-তোমার উপর আছে কিন্তু ঐ বদ মেয়ের উপর নেই ! না তুমি ওকে পড়াতে যাবা না ! খবরদার বলছি !
-আরে একটু চিন্তা করে দেখো ! পাড়ার সব ছেলে যখন আদিবার পিছনে ঘুরেছে তখন আমি কি তার পিছনে গেছি ? আমি কিন্তু তোমার পিছনে এসেছি ! আসি নি ?
নিশিকে দেখলাম একটু চিন্তিত গল ! আমার কথাটা ভাবছে যেন !
-তারপর চিন্তা করে দেখো, বিকেল বেলা যখন ছাদে উঠতাম আদিবারও উঠতো । একই ছাদের ছিলাম আমরা কিন্তু আমি তো তোমার সাথে টাংকি মারতাম ! তাই না ? ওর সাথে কথাও কিন্তু বলি নি !
-হুম ! বুঝলাম !
-তাহলে ? আসলে তোমার সাথে আদিবা ফাদিবার বেইল নেই ! আর পিচ্চি একটা মেয়ে ! ওর পিছনে যাওয়া কি মানায় ?
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা যেন মনে থাকে ! না হলে কিন্তু .....।
-খুন করে ফেলবা ?
-হুম !
-আমি তো খুন হয়েই আছি ! আর কত ?
-হয়েছে ! এখন চলেন ! সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে !

আমরা উঠে পড়ি ! আমারও একটু তাড়া আছে । সন্ধ্যার পরে আবার আদিবাকে পড়াতে যেতে হবে ! ;)
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×