somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাইফা আর আমার গল্প

০২ রা জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-ভাইয়াআআআআ

বিকেলের এই সময় টাতে আমি ছাদে থাকি ! সারাদিনের পর এই সময় টা ছাদে কাটাতে ভাল লাগে ! যদিও প্রতিদিন সম্ভব হয় না তবুও বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে থাকতে ভাল লাগে ! কিভাবে লাল সূর্যটা আস্তে আস্তে দুর আকাশে মিশে যায় এটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি ! সময় ভাল কাটে !

-ভাইয়া !
আমি পিছন ফিরে তাকালাম !
তাইফা দাড়িয়ে আছে ! সেই চিরায়িত শর্ট জিন্স আর শার্ট পরে ! মেয়েটা এখনও বড় হল না ! ছোটই রয়ে গেল !

-ভাইয়া !
তাইফা এমন ভাবে আদর দিয়ে ভাইয়া ডাকে বুকের ভেতর যেন করে ওঠে ! হয়ত সবার সাথেই ও এমন ভাবেই কথা বলে ! এমন যত্ন করে ডাকে ! আমি বললাম
-হুম !
-কি করেন ?
-কিছু না !
-কি বলেন কিছু না ! প্রতিদিন আপনাকে দেখি এখানে ! বিকেলে ছাদে কি করেন শুনি ? হুম হুম ! বলেন বলেন !

আমি তাইফার কথা শুনে হেসে ফেলি ! তাইফা এবার ক্লাস টেন এ উঠেছে ! ক্লাস টেন এ পড়া মেয়েদের ভিতর যথেষ্ঠ মেয়েত্ব ভাব চলে আসে বিশেষ করে সেই মেয়েটা যদি সুন্দরী হয় ! টেনে কথা বলা শুরু করে, যাকে তাকে পাত্তা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ! কিন্তু তাইফার ভিতরে এখনও তেমন কিছুই দেখলাম না !

তাইফা আবার বলল
-ফয়সাল ভাইয়া ! কালকে আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবেন ?
-কালকে ?
-কেন ? কোন কাজ আছে ?

কাজ ?
হুম ! কাজ তো একটা আছেই কিন্তু যাবো কি না বুঝতে পারছি না ! কালকে ভেবেছিলাম নুশরাতের সাথে দেখা করতে যাবো !
ঠিক দেখা হবে কি না বুঝতে পারছি না তবে একটা চেষ্টা তো করতেই হবে !
বেশ কয়েকদিন ধরে নুশরাতের সাথে কোন যোগাযোগ নেই !

এই আধুনিক যুগে মানুষের সাথে যোগাযোগ করার হাজার টা উপায় আছে কিন্তু তার পরেও নুশরাতের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতে পারছি না ! মনে হচ্ছে নুশরাত ঠিক ততগুলো উপায়েই আমাকে ইগনোর করে চলেছে ! যে মোবাইল নাম্বার টা ও দিয়েছিল সেটা বন্ধ ! বেশ কয়েকবার কল করে পাই নি । মেসেজ পাঠিয়েও কোন ডেলিভারি রিপোর্ট আসে নি ! তার মানে সে সিম টা চালুই করে নি ! ফেসবুক আইডিও ডিএকটিভ করে রেখেছে !

তাইফা বলল
-কি ভাবেন ভাইয়া ? নিয়ে যাবেন ?
-কোথায় ?
-আপনার যেখানে ভাল লাগে ?
-মানে ?

এই কথার জবাবে তাইফা আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন ! কি জানি কিছু একটা ছিল তাইফার চোখের ভাষা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ! কেমন যেন অপরিচিত মনে হল ! মেয়েগুলোর আচরন এমন অদ্ভুদ কেন মনে হয় ? এই পরিচিত আবার এই অপরিচিত !


#####
অনেক টা দাঁড়িয়ে থাকার পরেও যখন মনে হল আজকেও নুশরাত আসবে না মনের হয় ! একটা হতাশা কাজ করলো ! বারবার মনে হল আমি কেন এখানে দাড়িয়ে আছি ? কার জন্য ?
এমন একটা মেয়ের জন্য যার সাথে আমার কয়েকটা দিন মাত্র কথা হয়েছে, দেখা হয়েছে দুএক বার !
আচ্ছা এখন যদি নুশরাতের সাথে আমার দেখা হয়েও যায় তাহলে আমি ওকে কি বলবো ?
আমার কি ওর উপরে জোর খাটানোর কোন অধিকার আছে ?
এমন কোন কিছু কি ওকে কোন দিন বলেছি ? কিংবা ও আমাকে কিছু বলেছে ? নাহ ! তাহলে ?
কেন দাঁড়িয়ে আছি ?
কার জন্য ?
কিসের আশায় ?
আমি কোন উত্তর পেলাম না নিজের কাছে । একবার মনে হল চলে যাই । আসলেই আমার চলে যাওয়াই উচিৎ ! এখানে দারিয়ে থাকার কোন মানে হয় না ! সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না !

আমি ঘুরতে যাবো ঠিক তখনই তাইফা দেখতে পেলাম ! স্কুল ড্রেস পরা ! কাধে স্কুল ব্যাগ । সাথে আরও কয়েকটা মেয়ে রয়েছে ! সবারই স্কুল ড্রেস পরা ! মনে হচ্ছে ওরা স্কুল পালিয়ে এখানে এসেছে ! অবশ্য স্কুল ছুটিও হয়ে পারে ! ঠিক বোঝা যাচ্ছে না !
একবার মনে হল ঘুরে চলে যাই ! পরক্ষনেই মনে হল, নাহ ! ডেকে কথা বলি ! মেয়েটা নিশ্চই খুশি হবে !
আমি ডাক দিতেই দেখি তাইফা ঘুরে তাকালো ! আমার দিকে দৌড়ে এসে বলল
-ফায়সাল ভাইয়া ! আপনি এখানে ?
-আমি তো এখানে না হয় বুঝলাম ! তুমি এখানে কি কর ?
-আরে আমার স্কুল এখানেই ! ঐ তো !
-ও আচ্ছা !
-আপনি এখানে কি করেন ?
-কিছু না ! একটা কাজে এসেছিলাম !
-তাই না ? আচ্ছা আসুন আমার বন্ধুদের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দেই ! আসুন না !

আমি তাইফার পেছন পেছন হাজির হলাম ওর বান্ধবীর কাছে !
-হেই ! এই হল ফায়সাল ভাইয়া ! আমাদের বাসার উপর তলায় থাকে !
সবাই দেখলাম আমার দিকে একটু অন্য চোখেই তাকালো ! এর অর্থ হল আমি ওদের সবার কাছেই পরচিত ! তাইফা নিশ্চই আমার কথা ওদের কাছে বলেছে ! কি বলেছে কে জানে ?
সবার দিকে তাকিয়ে হাসলাম ! বললাম
-তোমাদের স্কুল ছুটি হয়ে গেছে ?
-হুম !
সবাই এক সাথেই বলল !
-বসায়া যাবে এখন তোমরা ?
-হুম ! একটু আড্ডা দিবো তারপর বাসায় যাবো !
তাইফা বলল
-আমি এখনই যাবো !
-আচ্ছা ! আমারও বাসায় যাবার সময় হয়ে গেছে ! তা তোমরা কিছু খাবে ? আইসক্রিম চলবে ?
মেয়েরা সবাই একসাথে রাজি হয়ে গেল ! চলবে মানে দৌড়াবে ! আইসক্রিম খাওয়ার সময় তাইফার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ তা আসলেই আনন্দের ঝলমল করছে ! আমার নিজের কাছেও ভাল লাগলো অনেক ! যে মন খারাপ নিয়ে নুশরাতের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম এখন আর মন খারাপ লাগছে না !
ফেরার পথে তাইফা আমার সাথেই এল ! একই রিক্সায় মেয়েটা আমার সাথে কত রকম কথা যে বলল ! আমার কেন জানি ভাল লাগছিল ! নুশরাতের কথা একটা বারও মনে হল না !


####
-আপনার কি মন খারাপ ?

আকাশের মন টা আজকে বেশ খারাপ ! সেই সকাল থেকেই এক টানা বৃষ্টি পরে চলেছে ! আমি সকালে একটু বাইরে বেরিয়েছিলাম ফিরে এসে আর বাসায় ঢুকি নি ! কেবল দরজা থেকে জিনিস পত্র গুলো মায়ের হাতে দিয়ে ছাদে চলে এসেছি !
কেন জানি ভিজতে ইচ্ছে করছে ! আমি ছাদের উঠে বৃষ্টির স্বাধ নিতে লাগলাম ! বেশ ঠান্ডা লাগছে তবুও ভিজতে লাগলাম ! যদি মন টা বড় বেশি অস্থির লাগছে ! ঠান্ডা পানিতে যদি একটু শান্ত হয় !
তখনই তাইফা কে দেখলাম পিছনে !

আমার মত ও ভিজে গেছে ! আজকেও গত দিনের মত শার্ট পরে আছে ! চুল গুলো ভিজে একেবারে সামনে চলে এসেছে ! চুল ভেজার জন্যই কি না জানি না তইফা কে দেখতে একটু অন্য রকম লাগছে !
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি বৃষ্টিতে ভিজছো কেন ?
-আপনি ভিজছেন তাই !
-আমি ভিজলেই তোমাকে ভিজতে হবে ?
-হুম !

এই ছোট্ট হুম বলেই তাইফা হাসলো ! বেশ মিষ্টি হাসি ! কেন জানি তাইফার হাসি দেখেই আমার মন টা হঠাৎ করেই ভাল হয়ে গেল ! সকাল বেলা মন টা যেখানে খারাপ হয়েছিল সেটা মুহুর্তেই উধাও হয়ে গেল মুহুর্তেই !

আশ্চর্য আমার সামনে সমাধান ছিল অথচ আমি কিসের পিছনে ছুটছিলাম ! তাইফার বলল
-আপনার মন কেন খারাপ ?
-কই নাতো !
-তাই ?
-হুম ! সত্যি !
-কেন ? একটু আগে দেখলাম আপনার মন খারাপ এখন আপনার মন খারাপ নেই ! কেন বলুন তো ?
-গেস কর !
-গেস ! হুম !

হাত দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা চুল টা মুখের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়ে তাইফা কিছুটা সময় ভাবার ভাব করলো ! যেন খুব মনযোগ দিয়ে সে চিন্তা করছে ! তারপর তাইফার মুখে হাসি দেখা গেল ! আমার দিকে মুচকি হেসে বলল
-আমি জানি !
-জানো ? কারন ?
-কারন টা উমমমমম, আমি !

আমি তাকিয়ে রইলাম তাইফার চোখের দিকে ! চোখ জুড়ে দুষ্টামী ভরা !
আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবতে লাগলাম আসলেই কারন টা ও ?
কি জানি ?
তাইফা ততক্ষনে দুহাত ছড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেছে ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এভাবে কেউ বৃষ্টিতে ভেজে ?
-তাহলে ? কিভাবে ?
-আমার মত করে বৃষ্টিতে ভিজুন ! দুই হাত দুই দিকে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি করে বরন করে নিতে হয় !
-তুমি কোথা থেকে শিখলে ?
-শিখেছি !
-আচ্ছা ! আর কি কি জানো তুমি ?
-অনেক কিছু ! আমার সাথে থাকেন তাহলে আপনাকেও শিখাবো !
এই বলে তাইফা আবার হাসলো ! আবারও সেই দুষ্টামী ভরা হাসি !


১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×