somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্পঃ দ্য গডফাডার (পর্ব ০১)

২০ শে নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ গুগল


বিকেলের রোদ তার শেষ শক্তি টুকু দিয়ে পিচ ঢাকা রাস্তায় আঘাত করে চলেছে । সময় যাওয়ার সাথে সাথে সেই তীব্রটা আস্তে আস্তে কমে এসেছে অনেকটা । ছুটির দিন হওয়ার কারনে রাস্তায় খুব একটা ভিড়ও নেই গাড়ির। রাস্তার পাশে পার্ক করা গাড়িতে নিকিতা এক ভাবে বসে আছে ৷ তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। রাস্তার পাশের ফুটপাথে বেশ কিছু টংয়ের দোকান দেখা যাচ্ছে । নিকিতার চোখ এই টংয়ের দোকান গুলোর দিকে । আরও পরিস্কার করে বলতে গেলে একটা বিশেষ দোকানের দিকে ।

ছেলেটাকে গাড়ির ভেতর থেকেই ভাল করে দেখা যাচ্ছে। রাস্তার পাশে টংয়ের দোকানে বসে আরাম করে চা খাচ্ছে। হাতে কয়েকটা বই ধরা রয়েছে। দুর থেকেও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে বই গুলো সব গল্পের বই। নিকিতা জানে ছেলেটার বই পড়ার অভ্যাস বেশ। কেবল এটাই নয়, ছেলেটার সম্পর্কে বলতে গেলে সব তথ্যই সে জানে। সে কোথায় কখন যায় কার কার সাথে মেশ সব কিছুই তার জানা !

নিকিত আরেক বার ঘড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। রুটিন অনুযায়ী ছেলেটার এখন উঠে পড়ার কথা। ঠিক সাড়ে পাঁচটায় কাজির অফিস লেনে তার টিউশনিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু ছেলেটার ওঠার কোন নাম নেই। ধীরে ধীরে বসে চা খেয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছ দিনের বাকিটা সময় তার এখানেই থাকার ইচ্ছে । অবশ্য এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তার কোন কারন নেই । টিউশনীর সময়ের হেরফের হতেই পারে ।

-ম্যাডাম চা!
নিকিতা খানিকটা চমকে উঠলো। ছেলেটার দিকে এতোই মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল যে অন্য কোন দিকে লক্ষ্য ছিল না৷ চা নিয়ে আসা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল
-চা কে দিতে বলেছে?

চা হাতে ছেলেটা নিকিতাকে অবাক করে সামনে হাতের ইশারা করে দেখিয়ে দিল। নিকিতা সত্যিই অবাক না হয়ে পারলো না। ও গত চার দিন ধরে যাকে ফলো করছে সেই ছেলেটাই ওর জন্য চা পাঠিয়েছে। ও যে ছেলেটাকে ফলো করছে ছেলেটা সেটা বুঝে গেছে ৷ অবশ্য খুব একটা লুকিয়ে থাকার চেষ্টা সে করেও নি৷

নিকিত তাকিয়ে দেখলো ছেলেটা ওর দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো। একটু যেন হাসলও। আর বসে থাকার কোন মানে নেই৷ গাড়ি থেকে নেমে এল ও৷ ওকে নামতে দেখেই সাদেক এগিয়ে এল ওর দিকে ।
-ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন ?

নিকিতা কেবল তাকালো সাদেকের দিকে । কিছু বলল না । তারপর এগিয়ে যেতে লাগলো চায়ের দোকানের দিকে । ছেলেটা ওর দিকে এখনও তাকিয়ে আছে । চোখে মুখে কোন সংকোচ নেই । এমন একটা ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে যেন অনেক দিক আগে থেকেই ছেলেটা ওকে চেনে । নিকিতা নিশ্চিত জানে অপু নামের এই ছেলেটা ওকে কোন ভাবেই চেনে না ।

নিকিতা বেঞ্চে গিয়ে বসলো । একেবারে অপুর মুখোমুখি । হাতে এখনও চায়ের কাপ ধরা তবে এখনও মুখে দেয় নি । দেওয়ার ইচ্ছেও ওর নেই । অপু বলল
-নিজেকে খুব ভিআইপি মনে হচ্ছে । ডিবি আমার চলাচল এভাবে পর্যবেক্ষন করবে আমি কোন দিন ভাবি নি ।
নিকিতা শান্ত কন্ঠে বলল
-তাই কি উচিৎ নয় ?
-মোটেই না । আমার জানা মতে আমি খুব স্বাভাবিক একজন মানুষ । নরমাল ! অন্তত গত সাত দিন আগে পর্যন্ত ছিলাম ।

নিকিতা কি বলবে ঠিক খুজে পাচ্ছে না । সামনে বসা এই মানুষটা মোটেই তাকে ভয় পাচ্ছে না । এমনটা খুব সাধারনত হয় না । ওর আসল পরিচয় জানার পর মানুষ ওকে ভয়ের চোখে দেখা শুরু করে । কিন্তু এই ছেলেটা মোটেই তাকে ভয় পাচ্ছে না ।

অপু বলল
-আমি কি জানতে পারি আমাকে কেন ফলো করা হচ্ছে ? আমাকে কি গুম করার পক্রিয়া আনা হয়েছে ?
নিকিতা বলল
-আপনার কি মনে হয় ? ডিবি কি কেবল মানুষকে গুম করে ? তাদের আর কোন কাজ নেই ?
-থাকলে আমার মত মানুষ পেছনে এতো সময় নষ্ট করতো না । প্রথম দিনের খোজ নেওয়ার পরই আপনাদের মনে হত আমার পেছনে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই ।

নিকিতা বলল
-কিন্তু সেটা করা হয় নি । কারন নিশ্চয়ই আছে ।
-আমি কি জানতে পারি কি সেই কারন ?

নিকিতা একটা বড় নিঃস্বাস নিল তারপর অপুর দিকে তাকিয়ে বলল
-ঐদিন কি হয়েছিলো আপনি খুব ভাল করেই জানেন ? মনে আছে আপনার ?
-হ্যা মনে আছে । আপনার উপর কিছু মানুষ হামলা করেছিলো । আপনি আনআর্মড ছিলেন ।
নিকিতা বলল
-হ্যা ! ওরা হঠাৎ করে হামলা করেছিলো । আমাকে হয়তো মেরেই ফেলতো । যদি না ....

নিকিতা লাইণটা শেষ করলো না । সে তাকিয়ে আছে অপুর দিকে । নিকিতা জানে ওর চোখে দৃষ্টি খুব তীক্ষ । মানুষ ওর দিকে খুব একটা সময় ধরে তাকিয়ে থাকতে পারে না । চোখ সরিয়ে নেয় । কিন্তু এই ছেলেটা ব্যতীক্রম । সে এক ভাবে তাকিয়ে আছে ওর চোখের দিকে । একটা সময় নিকিতা নিজে চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিল ।

সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল আবার । শপিং সেন্টারের কার পার্কিং এসে হঠাৎ করেই মনে হল জায়গাটা যেন বেশ নির্জন । আশে পাশে কেউ নেই । তবুও আপন মনেই হাটছিলো তখনই পেছন থেকে ওর উপর হামলা হল । কয়েকটা আঘাত ও ঠেকানোর চেষ্টা করলো কিন্তু খুব বেশি কাজ হল না । ওরা পিস্তল ব্যবহার না করলেও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করছিলো । ওর যখন মনে হল আর এদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব না তখনই একজনের গলার আওয়াজ পেল সে । ওর হামলাকারী একজন তাকে ধমকিয়ে বলল চলে যেতে । কিন্তু সে গেলও নাই বরং উল্টো ওদের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো । নিকিতা এতো সাহসী মানুষ এর আগে খুব একটা দেখেছে বলে মনে করতে পারলো না । ভয়তো আরেক জনের উপর হামলা দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলো নিকিতা কিন্তু অবাক হয়ে দেখলো ওর উপর হামলাকারীরা উল্টো পালিয়ে গেল । ওরা কম করে হলেই ৫ জন ছিল । ছেলেটাকে সহজেই কাবু করে ফেলতে পারতো । কিন্তু সেটা না করে পালিয়ে গেল ।

ছেলেটাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে গেল । চিকিৎসকের হাতে দিয়ে তারপর গায়েব হয়ে গেল ।

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে ছেলেটার ব্যাপারে খোজ খবর নিতে খুব একটা সময় লাগলো না ওর । সেখান থেকেই জানতে পারলো ছেলেটার নাম আরিফুল কবির । ডাক নাম অপু । পড়াশুনা শেষ করেছে বেশ কিছুদিন । তবে কোন নির্দিষ্ট চাকরি করে না । টিউশনী করে । মাঝে মাঝে পার্ট টাইম চাকরি করে । এই ভাবেই দিন চলে যায় । একটা প্রেমিকা আছে তবে তার সাথে ইদানিং সম্পর্খ খুব একটা ভাল যাচ্ছে না । কারন প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে অন্য কারো সাথে । প্রেমিকাকে বেশ কয়েকবার বিয়ে করতে বললেও প্রেমিকা চাকরি ছাড়া কোন ছেলের সাথে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না ।

এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ছিল । এই টুকুই যদি থাকতো তাহলে হয়তো নিকিতা একদিন অপুর কাছে সরাসরিই গিয়ে ওকে ধন্যবাদ দিত । এতো লুকিচুরি করার প্রয়োজন পড়তো না । কিন্তু পরের খবর সে যা জানতে পেরেছে সেটা জেনে অপুর প্রতি ওর কৌতুহল অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে । তাই অপুর উপর নজর রাখতে লোক লাগিয়েছে ।

অপুর দিকে তাকিয়ে নিকিতা বলল
-আমার উপর সেদিন কারা হামলা করেছিলো আপনার ধরনা আছে ?
-আমার ? আমার কেন ধারনা থাকবে বলুন ? আমি কেবল পার্কিং এ গিয়েছিলাম আমার সাইকেলটা আনতে । গিয়ে দেখি চার পাঁচ জন মিলে একটা মেয়ের সাথে কিছু করছে । প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো তারা আপনাকে রেপ করার চেষ্টা করছে কিন্তু একটু কাছে যেতে বুঝলাম যে ছুরি দিয়ে তারা হামলা করছে । যখন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম আপনি তো অজ্ঞান ছিলেন, ডাক্তারেরা আপনাকে প্রথমে ভর্তি নিতে চায় নি । শেষ পকেট হাতড়ে আপনার আইডি কার্ড বের করতেই ওরা সুরসুর করে ভর্তি নিয়ে নিল । সেখানেই আপনার পরিচয় জেনেছি । তবে আমার কেন জানি মনে হয় যারা হামলা করেছিলো তারা অনেক ক্ষমতাবান আর বেশ শক্ত প্রতিপক্ষ । নয়তো পুলিশের উপর হামলা করার সাহস সবার থাকে না ।
-কবির চৌধুরীর মত ক্ষমতাবান ?


নামটা শুনতেই অপুর মুখটার চেহারা খানিকটা বদলে গেল । ওর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর বলল
-আপনার মনে হয় যে হামলাটা কবির চৌধুরী করিয়েছে ?

নিকিতা খানিকটা হাসলো । তারপর বলল
-আমি তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছি বলতে পারেন । আমাকে এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে । চিঠি পাঠানো হয়েছে সব বন্ধ করার । হামলাটা সে করতেই পারে ! আর বাইদাওয়ে কবির চৌধুরী যে আপনার বাবা এটা আমি জানি !
-তাহলে তো এও জানার কথা হয়ে আমি তার সাথে থাকি না । সে কি করলো না করলো সেটা নিয়েও আমার খুব মাথাব্যাথা নেই । আমি আপনার উপর হামলা হতে দেখেছিলাম, এসে বাঁচিয়েছি । এর ভেতরে আর কিছু নেই । জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমি অন্যায় কিছু কখনও করি নি । দয়া এভাবে পেছনে পুলিশ লাগিয়ে রাখবেন না । যদি কিছু জানার থাকে সরাসরি বলেন । ঝামেলা শেষ করেন ।

নিকিতা কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো । কেন যেন মনে হল সামনে বসা এই ছেলেটা সত্য কথা বলছে । ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-আর কিছু জানার নেই ।
-তাহলে আমি আসি এখন ? আশা করি আর আমাদের দেখা হবে না ।

অপু আর দাড়ালো না । উঠে একটু সামনে যেতেই নিকিতা আবার ডাকলো । অপু পেছন ফিরে তাকাতেই নিকিতা বলল
-ঐদিন আমাকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ ।

অপু কেবল একটু হাসলো । তারপর আবার হাটতে লাগলো । নিকিতা অপুর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছুটা সময় । কেন জানি মনে হচ্ছে এই ছেলেটার সাথে ওর আবারও দেখা হবে । এবং সেটা খুব জলদিই ।


দুই

প্রেম করার জন্য মেয়েদের এমন একজনকে দরকার যার হাতে অফুরন্ত সময় আছে । যে ডাক দিলেই তার সামনে হাজির হয়ে যাবে সাথে সাথেই । তার কথায় উঠবে আর বসবে কিন্তু বিয়ে কিংবা পুরো জীবন কাটানোর ব্যাপারটা সামনে আসলেই তাদের দরকার হয় আরও নিশ্চিত কিছু । চাইলেই চলে আসা নয় বরং এমন কাউকে দরকার যে সব সময় তার সব প্রয়োজন সামাল নিতে পারবে শক্ত হাতে । সেই হিসাবে অপু কোন ভাবেই একজন আদর্শ স্বামী হিসাবে পরিগণিত হতে পারে না । নাদিয়ার অবস্থা তখন এমন হয়েছে যে সে ঠিক অপুকে ছেড়েও দিতে পারছে না আবার বিয়েও করতে পারছে না । তবে কিছু একটা ধাক্কার জন্য সে অপেক্ষা করছিলো । ইচ্ছে ছিল এমন কিছু হবে সেখান থেকেই হয় ও অপুকে বিয়ে করে ফেলবে নয়তো একেবারে সব সম্পর্ক শেষ করে দিবে । এমন একটা ঘটনা ঘটেও গেল কদিনের ভেতরেই ।

সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে অপুর এপোয়েন্টমেন্ট লেটার এসেছে তখন । চাকরির ব্যবস্থাটা নাদিয়াই করেছে । নাদিয়ার বড় মামা এই ব্যাংকের এভিপি পদে আছেন অনেক দিন । নাদিয়ার অনুরোধ ঠিক ফেলতে পারে নি । পোস্ট খুব বেশি বড় না হলেও বেশ ভালই বলা যাবে । এই চাকরিটা ধরে রাখতে পারলেই কয়েক বছরের ভেতরে অপু বেশ ভাল অবস্থায় চলে যাবে । কিন্তু নাদিয়া জানতো অপু এই চাকরি কিছুতেই করবে না, করেও নি । তারপর থেকেই অপুর সাথে নাদিয়ার কথা বন্ধ । সে পরিস্কার বলে দিয়েছে যে ওর সাথে যেন আর দেখা করার চেষ্টা না করে । নাদিয়া ওর বাবার পছন্দমত ছেলের সাথে বিয়ে করে ফেলবে । তার জন্য আর অপেক্ষা করার কোন মানে নেই ।

অপুর মনে হয়েছিলো ঐদিনই নাদিয়ার সাথে ওর শেষ সাক্ষাৎ । আর দেখা হওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না । কিন্তু দেখা হয়ে গেল হঠাৎ ।
অপুর মন খারাপ থাকলেই ও একা একা সিনেপ্লেক্সে আসে মুভি দেখার জন্য । কিংবা মাঝে মাঝে প্রচুর মানুষ আছে এমন স্থানে এসে একা একা বসে থাকে । মানুষজন দেখতে থাকে আপন মনে । তারা কি করছে সেই ব্যাপার গুলো দেখতে দেখতেই সময় কেটে যায় ।

আজকেও এসেছিলো একটা মুভি দেখবে বলে কিন্তু তখনই নাদিয়াকে দেখতে পেল । একা হলে হয়তো নাদিয়ার সামনে গিয়ে কিছু কথা বার্তা বলতো কিন্তু নাদিয়ার সাথে একটা ছেলেকে দেখতে পেয়েই থমকে দাড়ালো । নিশ্চয়ই ছেলেটা ওর বাবার পছন্দ করা সেই কুল ডুড । ভাল চাকরি আর ভাল বেতনের সুনিশ্চিত জীবনের হাত ছানি ।

অপুর একবার মনে হল ওদেরকে এড়িয়ে চলে যাবে । কিন্তু হঠাতই লক্ষ্য করলো ওর মনটা ভয়ংকর খারাপ হয়ে গেছে । সেই সাথে নাদিয়ার উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে । ইচ্ছে করছে এখনই ওদের সামনে গিয়ে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় । জীবনে টাকা পয়সাই সব ? কত গুলো সময় ওরা এক সাথে কাটিয়েছে ! সে সবের কি কোন মূল্য নেই ?

একবার রাত দুইটার সময় হঠাৎ নাদিয়ার ফোন এসে হাজির । তার এখন আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বাসায় কোন আইসক্রিম নেই । এখন সে কি করবে ! আইসক্রিম না হলে তার সারা রাত ঘুম আসবে না ।

সাইকেল নিয়ে তখনই বের হয়ে যায় অপু । পুরো শহর তখন ঘুমিয়ে পড়েছে । সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে । তবুও প্রেমিকা আইসক্রিম খেতে চেয়েছে আর সে যদি না খাওয়াতে পারে তাহলে সে আবার কেমন প্রেমিক হল ! যখন মনে হল যে সে আসলেই কোন দোকান খোলা পাবে তখন একটা খোলা দোকান দেখতে পেল । হাসপাতালের পাশের দোকানটা সারা রাতই খোলা থাকে । সেখান থেকে এক এক লিটার আইসক্রিম নিয়ে হাজির হল নাদিয়াদের বাসার সামনে ।

সেদিন মনে আছে নাদিয়া ওর সাথে ভোর পর্যন্ত রাস্তার ফুটপাতে বসে ছিল । ওর শরীর ঘেঁসে বসেছিলো । অপুর তখন কেবলই মনে হয়েছিলো নাদিয়ার সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হবে না । কিন্তু আজকে নাদিয়া তাকে এভাবে আর এতো সহজে ছেড়ে চলে যাবে সেটা অপু মোটেই ভাবতে পারে নি ।

তখনই উঠে চলে এল । আজকে যে মুভি দেখার পরিকল্পনা করেছিলো সেটা বাদ দিয়ে দিল । এখান থেকে সোজা বাসায় যেতে হবে । ঘুমের ঔষধ খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলেই আশা করা যায় সব ঠিক হয়ে যাবে । বসুন্ধরার সিড়ি দিয়ে নিচে নামতেই সেই ডিবি অফিসারকে দেখতে পেল । আজকে অবশ্য সেদিনের মত প্যান্ট শার্ট পরা নেই । সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরে আছে । পুলিশ হলেও মেয়েটা দেখতে যে সুন্দরী সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।

মেয়েটা অন্য একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে । সম্ভবত বন্ধুর সাথে শপিং করতে কিংবা ঘুরতে এসেছে । মেয়েটাকে দেখতেই একটা বুদ্ধি মাথায় এল । যদিও মেয়েটা রাজি হবে কি না অপু জানে না তবুও এখন মাথা গরমের সময় কেবল মনে হল এই কাজটা করতে পারলেই ওর মনে শান্তি আসবে !
আর কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল মেয়েটার দিকে ।


###
বসুন্ধরার গেট পা দিতেই নিকিতার চোখ গেল অপুর উপর । পাশে সুজানা রয়েছে, তাই এমন একটা ভাব করে সুজানার সাথে কথা বলতে লাগলো যেন অপুকে সে দেখতেই পায় নি । সেদিনের পর অপুর পেছনে আর সে লাগে নি । তার চোখে কেবলই কবির চৌধুরীর দিকে রয়েছে । তার এই ছেলের দিকে নয় । নিকিতা সত্যি সত্যিই বিশ্বাস করেছে কবির চৌধুরী যাই করুক না কেন তার সাথে অপু কোন সম্পর্ক নেই । ছেলের বাপের চেহারা দেখে না অনেক দিন । সেই হিসাবে অপুকে আর কোন দরকার নেই ওর । তবে এটাও ভুলে যেতে পারছে না ছেলেটা ওর জীবন বাঁচিয়েছে । সেটা সে চাইলেও কোন দিন মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে না । তাই মনে মনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো যে ছেলেটাকে আর কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা ঝামেলার ভেতরে ফেলবে না । তাই আজকে যখন দেখতে পেল যে ছেলেটা সামনে দিয়ে হেটে আসছে এমন একটা ভাব করলো যেন তাকে সে দেখতেই পায় নি ।

কিন্তু যখন স্বয়ং অপুকে ওর দিকে এগিয়ে আসতে দেখতে দেখলো তখন আর এড়াতে পারলো না । অপু নিজেই ওর সাথে কথা বলতে চাচ্ছে এটা খানিকটা অন্য রকম লাগলো ওর কাছে । একবার মনে হল অপু হয়তো ওকে দেখতে পেয়েছে তারপর ভেবে নিয়েছে যে ওরা হয়তো এখনও ওকে ফলো করছে । তাই আবারও কথা বলার জন্য এসেছে ।

অপু একেবারে ওর সামনে এসে বলল
-মিস নিকিতা !
নিকিতা ততক্ষনে থেমে গেছে । তাকিয়ে দেখে সুজানাও থেমে গেছে । অপু আবার বলল
-আপনি কি এখানে কাজে এসেছেন নাকি এমনি ঘুরতে ?

যাক ছেলেটা এই মনে করে নি যে ওকে ফলো করা হচ্ছে । এটা ভেবে নিকিতার একটু স্বস্থি লাগলো । তারপর সুজানার দিকে একবার তাকালো । তারপর বলল
-বন্ধুর সাথে মুভি দেখবো ভাবছি !
-গ্রেট ! আমিও মুভি দেখতেই এসেছিলাম । তবে একটা কারনে ফিরে যাচ্ছিলাম ।
-ও
-তবে এখন মনে হচ্ছে আবারও মুভিটা দেখেই যাই । কিন্তু তার আগে আপনার একটা ছোট্ট সাহায্য দরকার !

নিকিতা খানিকটাস সরু চোখে তাকালো অপুর দিকে । ছেলেটার গলার স্বর হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে । কাজের কারনে নিকিতার অনেক মানুষের সাথে কথা বলতে হয় । মানুষের কোন কথা বলার আগে কি ধরনের কন্ঠের পরিবর্তন হয় সেটা নিকিতার বেশ ভাল করে জানা আছে । সেটা ছাড়াও নিকিতার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব প্রবল । অপুকে ওর দিকে আসতে দেখেই ওর মনে হয়েছিলো সামনে কোন ঝামেলা হতে চলেছে । এখন সেই অনুভূতিটা কেন যেন আরও প্রবল হয়ে উঠলো ।


###

-কি হল ?
-কিছু না । বাসায় যাবো ।
-আরে বাবা মাত্রই এলাম ।
-তো কি হয়েছে ? এখন যাওয়া যাবে না ?

রাগে নাদিয়ার পুরো শরীরটা কাঁপছে । পুরো পৃথিবীটা অসহ্য লাগছে । শফিক নামের এই ছাগলটাকে সব থেকে বেশি অসহ্য লাগছে । একটু আগেও শফিকে মনে হচ্ছে জগতের অন্যতম সুদর্শন আর স্মার্ট ছেলে আর এখন এই শফিকেই সব থেকে বড় ছাগল মনে হচ্ছে ! এমন কেন হচ্ছে ? অপুর জন্য ?

নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে নাদিয়া অনেক আগে থেকেই জানতো ! সে জীবনের কাছ থেকে কি চায় আর সেই চাওয়ার জন্য তাকে কি করতে হবে সেটা সম্পর্কেও সে পরিস্কার ধারনা রেখে এসেছে সেই ছোট বেলা থেকে । কিন্তু এখন সব কিছু কেন উল্টো পাল্টা হয়ে যাচ্ছে ।

অপু যখন চাকরিটাতে জয়েন করলো না তখনই নাদিয়া তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে চলে এসেছিলো । তবুও তার মনে একটা ধারনা ছিল যে অপু হয়তো আবারও ওর কাছে ফিরে আসবে । বারবার অনুনয় বিনয় করে ওকে ফেরৎ আসার জন্য বলবে । তখন হয়তো আবারও ওকে চাকরিতে জয়েন করতে বলতে পারবে । একটা আলাদা জোর থাকবে ওর কথায় ।

কিন্তু খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যে ও যখন ওকে আর যোগাযোগ করতে মানা করলো অপু আর একটা বারের জন্যও ওকে ফোন করে নি । এমন কি কোন মেসেজও পাঠায় নি । এটা নিয়ে একটা সুক্ষ অস্বস্থি ওর মনে কাজ করছিলো । বারবার চাচ্ছিলো অপু যেন ওকে ফোন দেয় কিন্তু সেটা সে করে নি । কিন্তু আজকে সে কি দেখলো ?
দেখলো সেই অপু অন্য একটা মেয়ের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে । মেয়েটার হাত ধরে ঘুরছে, হেসে হেসে কথা বলছে । নিজের চোখকে ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারে নি । শফিক তখন ওকে রেখে একটু ওয়াশ রুমে গিয়েছিলো । নাদিয়া একা একাই ফোনের ব্রাউজার দেখছিলো তখনই চোখে পড়লো অপুকে । একটু বাদে অপু নিজেও নাদিয়াকে দেখতে পেল । নিজেকে লুকানোর কোন চেষ্টা তো করলোই না বরং ওর দিকে এগিয়ে এল । তারপর হাসি মুখে ওর সাথে তার নতুন প্রেমিকার পরিচয় করিয়ে দিল ।

নাদিয়ার মুখ দিয়ে একটা কথা ঠিক মত বের হল না । এখনও ঠিক মত বিশ্বাস করতে পারছিলো না । অপুকে ওকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারে এটা ও ভাবতেও পারে নি । ধাক্কাটা সামলাতে বেশ সময় লাগলো । ততক্ষনে অপু আবারও ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে । তারা নাকি এখন একটা মুভি দেখবে এক সাথে ।






পরের পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×