somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড় গল্পঃ দ্য আনএক্সপেক্টেড ব্রাইড (পর্ব তিন)

১৭ ই জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব


পাঁচ

রিসিপশনের মেয়েটা নোরার দিকে তাকিয়ে হাসিহাসি মুখ করে বলল,ম্যাম আপনার কি কোন এপোয়েন্টমেন্ট করা আছে ?
নোরা আছে মাথা ঝাকিয়ে জানালো যে ওর কোন এপয়েন্টমেন্ট করা নেই । সাথে সাথেই নোরার মনে হল মেয়েটা বিরক্ত হল খুব । এতো অফিসের মানুষ আসছে যাচ্ছে, তাদের দম ফেলার সময় নেই । তার ভেতরে একজন উটকো ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে ।
আদনান চৌধুরীর সাথে দেখা করতে চাই । আরে আদনান চৌধুরী কি যেনতেন মানুষ নাকি ! যে এসে বললাম আর দেখা হয়ে গেল !

নোরার এই ব্যাপারটা আগেই ভাবা দরকার ছিল । এমন হুট করে চলে আসাটা মোটেই উচিৎ হয় নি । অবশ্য আজকে ওর এখানে আসার পেছনে একটা কারন রয়েছে । নিজের জন্য ও এখানে আসে নি । এসেছে অন্য একজনের জন্য । তার পরেও এভাবে আসাটা উচিৎ হয় নি । আদনান চৌধুরীকে সে চেনে কিংবা আদনান তাকে চিনে সেটা এই মানুষ গুলোর কোন ভাবেই জানার কথা না । নোরা বললেও তারা বিশ্বাস কেন করবে ?
মেয়েটা বলল, দেখুন ম্যাম এই ভাবে তো এপোয়েন্টমেন্ট ছাড়া আদনান স্যার কারো সাথে দেখা করেন না ! আর এই ভাবে ফোন করা যাবে না । উনি খুব রাগ করবেন !

নোরা কিছু সময় দাড়িয়ে রইলো চুপ করে । সামনে বসা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছে যে মেয়েটা খানিকটা বিরক্ত হচ্ছে ওর এভাবে দাড়িয়ে থাকা নিয়ে । তবে সেই মেকি হাসি হাসি ভাবটা এখনও লেগে আছে । এটা সব সময় থাকবেই ।
নোরা বলল, আচ্ছা আদনানের সেক্রেচারি কামালকে কি একটা ফোন দেওয়া যায় ? ওকে কেবল বলুন যে নোরা এসেছে । আমার নাম বললেই হবে !

রিসিপশন মেয়েটা এবার নোরার দিকে একটু ভাল করে তাকালো । কিছু যেন বোঝার চেষ্টা করছে । তাদের বসকে এভাবে নাম ধরে ডাকাছে এটা খুব একটা স্বাভাবিক মনে হল না মেয়েটার কাছে । নোরা সেটা তার মুখ দেখেই বুঝতে পারলো । তবে মেয়েটা ঠিকই ফোনটা হাতে নিলো ।
নোরা শুনতে পেল মেয়েটা বলছে, জি স্যার ! নাম বলছে নোরা !
কিছু সময় নিরবতা ! তারপর মেয়েটা বলল, জি স্যার জি..... জি ! জি আচ্ছা !

মেয়েটা ফোন রেখে নোরার দিকে তাকালো । ততক্ষণে মেয়েটার মুখের ভাবটা বেশ বদলে গেছে । নোরার দিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলল, আপনি একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ ! আপনাকে নিতে লোক আসছে ! আসলে আমি বুঝতে পারি নি যে আপনি আদনান স্যারের বন্ধু ! দয়া করে কিছু মনে করবেন না !
নোরা হাসলো একটু । তারপর ফিরে গিয়ে বসলো সোফার উপর !

তবে কিছু সময় পরে নোরা সত্যি সত্যিই অবাক হয়ে গেল যখন দেখতে পেল স্বয়ং আদনান চৌধুরী নিচে নেমে এসেছে ওকে রিসিভ করার জন্য । নোরা অবশ্য এটা আশা করে নি । আদনান ওর দিকে তাকিয়ে বলল, আরে আপনি আসবেন আমাকে বলবেন না ?
নোরা একটু হেসে বলল, ফোন নাম্বার নেই তো আমার কাছে ?
-কি বলেন ! দেই নি আপনাকে ?
-জি না !
-খুব ভুল হয়ে গেছে দেখছি । যাক সমস্যা আসুন প্লিজ !

রুমের ভেতরে নোরা আর আদনান ছাড়াও আরও কয়েকজন মানুষ রয়েছে । কামালও ছুটে এসেছিলো আদনানের পেছন পেছন । রিসিপশনের মেয়েটা আর গার্ডদের দুইজন অবাক হয়ে দেখছিলো তাদের আদনান স্যারকে । এতো নমনীয় কন্ঠে সে কোন মেয়ের সাথে কথা বলছে এটা ভাবতেই ওরা অবাক হয়ে যাচ্ছে ।
আদনানের পেছন পেছনে যখন মুল অফিস বিল্ডিংএ প্রবেশ করলো ওরা নোরা দেখতে পেল সবাই কেমন যেন ফ্রিজ হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । এমন দৃশ্য ওরা দেখে ঠিক অভ্যস্ত নয় বুঝা যাচ্ছে পরিস্কার !

আদনান নোরাকে নিয়ে বেশ ব্যস্তই হয়ে গেল । ওকে ভিআইপি গেস্টু রুমে নিয়ে আপ্যায়ন করতে শুরু করলো । নোরার এবার সত্যিই সত্যিই অস্বস্তি লাগা শুরু করলো । এই মানুষ ওকে দেখে এমন কেন করছে সেটা বুঝতে পারছে না । এটা তার সাথে ঠিক যাচ্ছে না !
আদানান এক সময় বলল, এখন বলুন আপনি এখানে হঠাৎ কি মনে করে !

নোরা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, আমি আসলে এসেছি দুইটা কারনে !
-বলুন !
-আমাদের ডিপার্টমেন্ট আগামিমাসে একটা সেমিনার করতে যাচ্ছে এসএমই নিয়ে ! আসলে আমরা আশা করছিলাম যে আপনি যদি সেখানে আসতেন মানে যদি আপনার কোন ফাঁকা সিডিউল থাকতো আর কি ! আসলে ম্যাম আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে শহরের বড় কোন ব্যবসায়ীকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য । আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে চিনি না ! অবশ্য আপনাকেও খুব ভাল করে চিনি না । দুইবার আমাদের দেখা হয়েছে । আপনার কি সময় হবে ?

আদনান হেসে ফেলল । তারপর বলল, আপনি এত সংকোচ নিয়ে কেন বলছেন ? আমাকে টাইম সিডিউলটা দিয়ে দিন আমি ঠিক ঠিক চলে আসবো !
নোরা বলল, অনেক ধন্যবাদ । কি বলে যে আপনাকে ধন্যবাদ দিবো বুঝতে পারছি না !
আদনান বলল, আরেকটা কাজ ?
নোরা এবার একটু দম নিলো । এই কথাটা সে ঠিক কিভাবে বলবে বুঝতে পারছে না । আদৌও বলা ঠিক হবে কি না সেটাও বুঝতে পারছে না ।
আদনান আবার বলল, কই বলুন !
-আমি আসলে আপনাকে ফাতেমা নার্সের ব্যাপারে অনুরোধ করতে এসেছিলাম !

নামটা শুনতেই আদনানের মুখের হাসি মিলিয়ে গেল ! সে খানিকটা গম্ভীর হয়ে গেল । তারপর নোরার দিকে তাকিয়ে বলল, তার আপনার সাথে কিভাবে পরিচয় ?
-গত সোমবার সে আমার হলে এসেছিলো ? কিভাবে এসেছিলো আমি জানি না । আমার খোজ পেয়েছে কিভাবে সেটাও জানি না ।
-তারপর ?
-খুব কান্নাকাটি করতে শুরু করলো । তার দুইটা মেয়ে কলেজে পড়ে । একেবারে বেকার হয়ে গেছে সে । আপনার রিপোর্টের কারনে তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে গেছে ।
আদনান বলল, সে কি করেছে নিশ্চয়ই জানেন ?
-জি জানি !
-তারপরেও রিকোয়েস্ট করতে এসেছেন ?
নোরা একটা লম্বা দম নিল । তারপর বলল, দেখুন আমি জানি ঐদিন ফাতেমা নার্সের অসতর্কতার কারনেই আপনার মা বের হয়ে গিয়েছিলো । সেটা তার ভুল । এখন ভুল মানুষ করবেই । কিন্তু সেই ভুল থেকে বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই সেটা ঠিক করে নেওয়া হয়েছে । তাই না ? এখন আপনি যদি প্রতিশোধ নেন তাহলে বেচারি কোথায় যাবে ? আপনার প্রতিশোধ সইবার মত ক্ষমতা শক্তি কি তার আছে ? বলুন আছে ?

আদনান কিছু চুপ করে রইলো । তারপর বলল, ওকে আমি দেখবো ব্যাপারটা !
-অনেক ধন্যবাদ !

নোরা দেখতে পেল আদনানের মুখে আবার হাসি দেখা দিয়েছে । একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে ।


নোরা চলে যাওয়ার পর আদনান কামালকে ডেকে পাঠালো নিজের কেবিনে ! কামাল খানিকটা ভীত মুখে কেবিনে এসে হাজির হল ।
আদানান প্রথমে কিছু কাজের কথা বলার পরপরই বলল, নোরার খবর ফাতেমা কিভবে পেল ?
কামাল কি বলবে ঠিক বুঝলো না । বলল, তাই নাকি স্যার ? কি জানি কিভাবে পেল ? আমি তো জানি না !
-সত্যিই জানো না ?
-খোদার কসম স্যার আমি জানি না !
-ওকে খোজ লাগাও কিভাবে পৌছালো !
-জি স্যার ! আমি খোজ নিচ্ছি !

আদনান আবারও নিজের কাছে মনযোগী হয়ে গেলেও দেখতে পেল কামাল তখনও দাড়িয়ে আছে । আদনান বলল, কি বলবা ?
-স্যার একটা প্রশ্ন ছিল মনে । যদি অভয় দিতেন তো বলি !
-বল !
-আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আমি যতদিন ধরে আপনাকে চিনি আর মিস নোরার প্রতি আপনার আচরন যেরকম ..... আমি আসলে কিছু মেলাতে পারছি না !
আদনান প্রশ্নটা শুনে কিছু যেন নিজেই অবাক হয়ে বসে রইলো । তারপর বলল, আমি নিজেও জানি না আসলে ! সত্যিই জানি না ।
কামাল আর কিছু জানতে চাইলো না । চলে গেল ।

কামাল চলে যাওয়ার পরেও আদানান বেশ কিছুটা সময় চুপ করে বসে রইলো কেবল । নোরার প্রতি ওর আচরনটা এমন কেন হচ্ছে ! সে তার মাকে খুজে পেয়েছে । তাকে ভাল ভাবে ট্রিট করেছে । নোরাকে দেখে ওর মা এতো দিন পরে কথা বলেছে !এটা কি একটা কারন হতে পারে ? অথবা ঐদিন আদনানের মা যেভাবে নোরার হাতে শান্ত ভাবে ঔষধ খেলো এটা দেখে কি এমন আচরন আসছে !! আদানন বুঝতে পারছে না । নাকি নোরাকে দেখে ওর কারো কথা মনে পড়ছে !

আদনান জোর করে চিন্তাটা দুর করে দেওয়ার চেষ্টা করলো । সেই কথা সে কিছুতেই মনে করতে চায় না । সেই কথা মনে হলেই কেবল কষ্ট পেতে হবে ওকে । কত রাত আবার নির্ঘুম কাটাতে হবে কে জানে !


ছয়

সোবাহান চৌধুরীর এখন খুব বেশি কাজ কর্ম নেই । দিনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি কাটান বই পড়ে আর গান শুনে । যদিও কোম্পানীর চেয়ারম্যান পদে এখনও তিনি অধিষ্ঠিত, তবে কবে শেষ অফিসে গিয়েছেন সেটা সে মনে করতে পারেন না । সব কিছু তার ছেলে আদনান খুব ভাল ভাবেই সামাল দিচ্ছে । তার হাতে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে একেবারে নিশ্চিন্তে জীবন কাটাচ্ছেন তিনি । যদিও একেবারে পরিপূর্ন নিশ্চিত জীবন তার আসে নি । বিশেষ করে ১১ বছরের আগের ঐ দুর্ঘটনার পর জীবন কিছুটা অন্য রাস্তায় চলে গিয়েছিলো ।

সেই ঘটনার পর থেকে তিনি এক প্রকার তার স্ত্রীকে হারিয়েই ফেলেছিলেন । তারা হাসিখুশি আর চঞ্চল ছেলে একেবারে বদলে গেল । সে কিছুটা সময় দুজনের মধ্যে যোগসুত্র ছিলেন । বাসার ভেতরে কেবল সেই একমাত্র স্বাভাবিক ছিল সেই সময়ে । আদনান তারপর থেকেই অন্য সব কিছু বাদ দিয়ে কেবল অফিসের কাজে মনযোগ দিয়েছিলো । মাত্র ওর তখন ২০ বছর বয়স । নিজের পড়াশুনাও সে শেষ করে নি । নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য সব কাজ সে করেছিলো কেবল মাত্র নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য !

আজকে অনেক দিন পরে সোবাহান চৌধুরী আবারও খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে । অন্তত তার মনে হচ্ছে যে এমন একজন কে পাওয়া গেছে যাকে দিয়ে সম্ভবত তার ছেলে আদনান এবং স্ত্রী রেবেকাকে আবার স্বাভাবিক করা যাবে ! নোরা নামের মেয়েটার উপর এই দুইজনেরই একটা আলাদা প্রভাব আছে ।


নোরাকে দেখেই রেবেকা গত ১০ বছরের মাঝে প্রথম কথা বলেছে । গতদিন আদনান নার্স ফাতেমাকে আবার কাজে নিয়োগ দিয়েছে কেবল এই নোরার অনুরোধে । আদনানের উপর নোরার প্রভাবটা কেমন সেটা দেখার জন্যই সোবাহান চৌূধুরী নিজে ফাতেমাকে ডেকে নোরার কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলো । তাকে বলেছিলো সে নোরা যদি তার হয়ে কোন ভাবে আদনানের কাছে অনুরোধ করে তাহলে হয়তো সে আবার তার চাকরি ফিরে পেলেও পেতে পারে । যদিও সোবাহান চৌধুরী নিজে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না । তবে তার ধারনা সঠিক হয়েছে । ব্যাপারটা সোবাহান চৌধুরীকে খুবই আশান্বিত করে তুলেছে । এই ব্যাপারেই সে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা থেকে এতো দুর চলে এসেছে ।

আতিকুল ইসলাম কেবল কিছু সময় সোবাহান চৌধুরীর দিকে কিছু সময় অবাক হয়েই তাকিয়ে রইলো । তার যেন এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না যে সোবাহান চৌধুরীর মত শিল্পপতির তার সরকারী কোয়াটারের ড্রয়িং রুমে বসে আছে । এখানে আসার কারনটাও সে একটু আগে তাকে ব্যাখ্যা করে করেছে । সোবাহান চৌধুরী তার ছেলের আদনানের সাথে নোরার বিয়ে দিতে চান । এবং সেটা যতদ্রুত সম্ভব !

এতো ভাল প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার আসলে কোন কারন নেই । তারপরেও আতিকুল ইসলামের সংশয় ঠিক যাচ্ছে না। তার কেবল মনে হচ্ছে এতো এতো যোগ্য মেয়ে থাকলে কেন তার মেয়ে নোরা ! এমন কি এখনও নিজের পড়াশুনাও শেষ করে নি।
সোবাহান চৌধুরী অবশ্য নোরার সাথে তার পরিবারের পরিচয় হওয়ার ঘটনাটা সবিস্তারেই বর্ণনা করেছে । তার বক্তব্য হচ্ছে টাকা পয়সার অভাব তার নেই । টাকাওয়ালা মেয়ে তার চাই ও না । তার দরকার একজন মায়াময়ী মেয়ে । আর এই হিসাবে নোরার থেকে ভাল আর কেউ হতেই পারে না ।

আতিকুল ইসলাম আরও কিছু সময় শংসয় প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েই গেলেন । তবে একটাই শর্তই দিলেন যে তার মেয়ে পড়াশুনা শেষ করতে চায় । এই সময়ে বিয়ে হয়ে গেলে হয়তো সব কিছু বন্ধ হয়ে যাবে । কোন ভাবে যদি বিয়েটা ওর পরীক্ষার শেষ পর্যন্ত আটকানো যায় । সোবাহান চৌধুরী বললেন, বিয়ের পরে সে হয়ে যাবে আমার মেয়ে । আর আমার মেয়েকে কি আমি পড়াশুনা করাবো না । তার কিছু করতে হবে না । তার জীবন যেমন ছিল তেমনই থাকবে । কেবল তার বিয়ে হবে । আর কিছু না ! আপনি প্লিজ মানা করবেন না ।
-তারপরেও । আসলে বিয়ের পর আসলে এসব এক থাকে না ।
সোবাহান চৌধুরী কিছু সময় চুপ করে থেকে বললেন, আচ্ছা আপনি মেয়ের বাবা । আপনার কথা আমাকে শুনতেই হবে । তবে আমার কথাটাও শুনুন একটু । দুজনের কথাই থাকুক !
-যেমন ?
-আপাতত ওদের বিয়েটা হয়ে যাক ! ঘরোয়া ভাবে ! কোন অনুষ্ঠান ছাড়াই। নোরার পড়াশুনা শেষ হলে আমরা তখন ওকে আনুষ্ঠানিক ভাবেই আমাদের ঘরে তুলে নিবো । কেমন হবে ? আসলে বুঝতেই পারছেন যে এখনকার যুগে কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না । আমি কোন ভাবেই নোরাকে হাতছাড়া করতে চাই না । কোন ভাবেই না ।

আতিকুল ইসলাম এবার আর না করতে পারলেন না । সোবাহান চৌধুরী যে নোরাকে পুত্রবধু করেই তবে এই বাড়ি ছাড়বেন সেটা বুঝতে তার কষ্ট হয় নি ।


ঠিক এক সপ্তাহের মাঝে নোরার সাথে আদনানের বিয়ে হয়ে গেল পারিবারিক ভাবে । নোরার বাবা আর মায়ে ঢাকাতে গিয়ে হাজির হলেন । নোরাকে নিয়ে হাজির হলেন আদনানদের বাসায় । নোরা তখন কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । ও এতোটাই অবাক হয়েছিলো যে কোন কথা বলার ভাষা খুজে পাচ্ছিলো না ।
সারা জীবন নোরা বাবার আদরের মেয়ে ছিল । বাবা কোন দিন তার উপর কোন কথা চাপিয়ে দেন নি । আজকে যখন ওকে জড়িয়ে ধরে অনুরোধ করলেন নোরা কিছুতেই না করতে পারলো না ।

এদিকে আদনানও একটা কথা বলল না । পুরোটা সময় কেবল গম্ভীর হয়ে বসে ছিল । কাজী সাহেব যখন কবুল বলতে বলল সে শান্ত ভাবেই কবুল বলল । রেজিস্ট্রি খাতায় সই করে দিল । ওর মাথার ভেতরে তখন ঝড় চলছে ।
কাজটা সে কেন করছে ?
কেন অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করছে ?
ও নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করেছিলো জীবনে আর অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করবে না । তাহলে কেন আজকে সই করার সময় ওর হাত একবারও কাঁপলো না ! নোরা নামের এই মেয়ের মাঝে এই অদ্ভুত ব্যাপার আছে । কিন্তু সেটা কি আদনান বলতে পারে না ।

রাতের বেলা যখন বাসর ঘরে ঢুকলো আদনানের মনে হচ্ছিলো যেন স্বপ্ন দেখছে । বিছানার ঠিক মাঝখানে নোরা বসে ছিল মাথায় ঘোমটা দিয়ে । দৃশ্যটা দেখার সাথে সাথেই আদনানের মাথাটা একটু ঘুরে উঠলো । খুব পরিচিত এই দৃশ্য । প্রতিরাতে এই দৃশ্যটাই তার চোখের সামনে এসে হাজির হয় । এই দৃশ্যটা তাকে ঘুমাতে দেয় না রাতের পর রাত ! তখন মাথার উপর খুব বেশি জোর পরে !

হঠাৎই পুরো জগতটা কেমন যেন অন্ধকার হয়ে এল । মাটিতে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার আগ দিয়ে ঝাপসা ভাবে আদনান কেবল দেখতে পেল বউ সাজে নোরা ওর দিকে এগিয়ে আসছে । তারপর আর কিছু মনে নেই ওর !



ছবি উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ২:২৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×