এনিমেশন মুভি আমার সব সময় প্রিয় । আমি রক্তে মাংসে মানুষের মুভি দেখার থেকে এনিমেশন মুভি দেখতে বেশি পছন্দ করি । এতো বয়স হয়ে গেল তবুও এই এনিমেশন মুভি দেখার প্রতি আগ্রহ আমার কমলো না ।
যাই হোক রুমী ভাইয়ের রিভিউ পেয়ে মাই নেইবার টোটারো মুভিটা দেখা শুরু করলাম । বলতে গেলে অনেক দিন পরে খুবই চমৎকার আর শান্ত মনোরম একটা এনিমেশন মুভি দেখলাম । যে মুভি দেখার পরেই একটা আনন্দ আনন্দ অনুভূতিতে ভরে ওঠে মন ।
মুভিটির কাহিনী খুবই সহজ কিন্তু চমৎকার । একজন ইউনিভার্সিটি প্রফেসরের দুই মেয়ে । সাস্টকি এবং মেই । প্রফেসরের স্ত্রী অনেক দিন ধরেই অসুস্থ । যে হাসপাতালে সে ভর্তি তার কাছাকাছি থাকার জন্য প্রফেসর তার মেয়েদেরকে নিয়ে গ্রামের এক পুরানো বাড়িতে বসবাস শুরু করে ।
বাড়িতে বসবাসের প্রতিদিন তাদের পরিচয় হয় গ্রানির সাথে । তাদের বাসা থেকে একটু দুরে থাকে গ্রানি । একজন বৃদ্ধা । সেই এতোদিন বাড়িটা দেখা শুনা করেছে । এছাড়া আরও কানটা নামের এক প্রতিবেশী ছেলের সাথেও তাদের পরিচয় হয় । সাস্টকির সমান বয়স । তার মা নতুন প্রতিবেশীদের বাসায় খাবার দিয়ে পাঠায় তার হাতে । যাওয়ার সময় ছেলেটা বলে যায় যে তাদের বাসায় নাকি ভুত আছে ।
শুরু হয় বাবা আর মেয়েদের গ্রামের জীবন । দুই বোন সারা সময় বাড়ির ভেতরে দৌড়াদৌড়ি করে। মুক্ত পাখির মত উড়ে বেড়ায় । বড় মেয়ে সাস্টকি স্কুলে যায় । বাবা ইউনিভার্সিটিতে যায় । ছোট মেয়েকে গ্রানির কাছে রেখে যায় । সপ্তাহে মায়ের হাসপাতালে দেখা করতে যায় । সবার জন্য সময় টুকু খুবই চমৎকার কাটতে থাকে ।
এরই মাঝে একদিন মেই একটা ছোট স্পিরিট খুজে পায় । তার পেছন পেছন পেছন ঘুরতে ঘুরতে সে গিয়ে হাজির হয় এক ছোট বনের পথের ভেতরে । সেখান থেকে হাজির হয় টটোরোর আস্তানায় । টোটোরো এক ধরনের ফরেস্ট স্পিরিট । বনে থাকে । মেই টোটোরোকে দেখে ভয় তো পায়ই না বরং তার কোলে ঘুমিয়ে পড়ে । পড়ে মেইর বাবা আর বোন তাকে সেই বনের ছোট রাস্তার ভেতরে খুজে পায় । একই ভাবে একদিন সাস্টকি আর মেই তার বাবার আসার জন্য অপেক্ষা করে বাসস্ট্যান্ডে । সেদিন তার বাবা আসতে দেরি করে অনেক । তারা অনেক রাত পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করে । তখন এই টোটোরো এসে হাজির হয় সেখানে । বৃষ্টি শুরু হলে দুইবোন তাদের একটা ছাতা টোটোরোর দিকে বাড়িয়ে দেয় । একটু পরে বিশাল এক বিড়াল গাড়ি এসে হাজির হয় । সেই গাড়িতে করে টোটোরো চলে যায় ।
তারপর এক শনিবার সাস্টকির মায়ের আসার কথা থাকে । এই জন্য দুইবোন নানান রকম প্রস্তুতি নেয় । কিন্তু হঠাৎ ই সব উলটপালট হয়ে যায় । হাসপাতাল থেকে জরূরী টেলিগ্রাম আসে । তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে । সাস্টকি টেলিফোনে তার বাবাকে জানায় । এদিকে মেই এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না । কারণ মায়ের শরীর খারাপ মানে তাদের মা এই শনিবারে বাসায় আসবে না । অভিমানে সে মায়ের জন্য তোলা ভূট্টাটা নিয়ে একাই হাসপাতালের দিকে হাটা দিয়ে । ছোট মেয়ে হওয়ার কারণে সে পথ হারিয়ে ফেলে ।
এদিকে বড় বোন সহ পুরো গ্রামের মানুষ মেইকে খুজতে শুরু করে কিন্তু কেউ পায় না কোথাও । তখন সাস্টকি টোটোরোর কাছে গিয়ে সাহায্য চায় । টোটোরো তাকে নিয়ে গাছের উপর উঠে পড়ে এবং তার সেই বিড়াল গাড়িকে ডাক দেয় । সাস্টকিকে নিয়ে বিড়ালগাড়ি ছুট দেয় । ঠিকই খুজে বের করে মেই কে ।
মুভিটা বাচ্চাটাদের একটা মুভি । বাচ্চারা দেখে মজা পাবে । কিন্তু আমি নিজেও দেখে খুব মজা পেয়েছি । কিছু কিছু মুভি আছে না যেগুলো দেখে মনের ভেতরে এমনিতেই একটা শা্ন্তি আসে, মাই নেইবার টোটারো ঠিক তেমনই একটা এনিমেশন মুভি । বিশেষ দুই বোনের গ্রামে কাটানো সময় গুলো । গ্রামের সহজ সরল মানুষের আচরন সব কিছু মিলে মাই নেইবার টোটোরো একটা উপভোগ্য মুভি । মুভি দেখে খুব ইচ্ছে হয় যেন আবারও ফিরে যাই সেই শৈশবে । শহরে বড় হয়ে ওঠা বাচ্চারা হয়তো কোনদিন এই আনন্দ উপলব্ধি করতে পারবে না কিন্তু আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা খুব চমৎকার উপলব্ধি করতে পারবে । শৈশবে আমরা কত কিছু কল্পনা করতাম কত ভাবে নিজেদের জগতটাকে সাজাতাম । এই মুভিটা দেখার সময়ও আমি যেন সেই শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম । ছোট বেলা থেকেই আমি খুব বেশি কল্পনা প্রবণ মানুষ বলেই হয়তো মুভিটা আমার বেশি ভাল লেগেছে ।
আপনারাও দেখতে পারেন নিঃসন্দেহ । বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে তাদের নিয়েই দেখতে পারেন । সময় ভাল কাটবে এই টুকু নিঃসন্দেহ বলতে পারি ! হ্যাপি ওয়াচিং !
Picture source- hepsiburada.com
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২১ রাত ১:১৪