আমাদের দেশে মূলত দুইটা পাব্লিক পরীক্ষা সময়মত না হলে বিরাট এক ঝামেলা শুরু হয়ে যায় । কারণ এই সময়ের সাথে অন্য অনেক কিছু যুক্ত থাকে । ফলে একটার দেরি হয়ে গেলে অন্যটাতেও ঝামেলা শুরু হয় । অনেকটা চেইন রিয়েকশনের মত !
আগে এই এসএসসি আর এইচ এসসি পরীক্ষা নিতে গিয়ে প্রায়ই দেরি হয়ে যেত । আমাদের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিলো প্রায় দের মাস পরে সেই হিসাবে এইচএসসি পরীক্ষাটাও মাস খানেক পরে নেওয়া হয়েছিলো । এবং আমাদের ভার্সিটির ক্লাস শুরু হতেও মাস দুয়েক দেরি হয়েছিলো অন্যদের থেকে ! একটার দেরির ফলে অন্য সব গুলোর উপর প্রভাব পরেছে ।
এখন অবশ্য এসএসির জন্য ফেব্রুয়ারি আর এইচ এসসির জন্য এপ্রিল ঠিক করে নেওয়া হয়েছে । এই জন্য এখন মোটামুটি সব কিছু একটা সময় মত হয় ! সেই হিসাবে এইচএসসির পরে রেজাল্ট, এরপর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সব সময়ের পরপর ভাবে চলে আসে । তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু ! কিন্তু যখনই একটা পরীক্ষা নিতে গিয়ে দেরি হয় তখন সেটা ঠেলতে ঠেলতে সব কিছু পেছনে নিয়ে যায় । দেরি করে রেজাল্ট, দেরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তার দেরি করে ক্লাস শুরু ...
বর্তমানে যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে এখনও এইচ এস সি পরীক্ষা নেওয়াই হয় নি । অন্য বছর গুলোতে এই সময়ে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । আমার যতদুর মনে পড়ে গত বছর এই সময়েই ঢাবির পরীক্ষা শুরু না হলেও হবে হবে করছিলো । সেখানে এখনও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাই নিতে পারে নি । রেজাল্ট তো আরও পরের ব্যাপার !
আর কদিন পরে আবার পরের ব্যাচ পরীক্ষার দেওয়ার সময় হয়ে যাবে !
এই পরীক্ষাটা কিভাবে নিচে সরকার?
কোন উপায় তো দেখা যাচ্ছে না । কারণ এখনও দেশে করোনা পরিস্থিতির কোন উন্নতি হয় নি । বরং দিন দিন বাড়ছে । সামনে কবে উন্নতি হবে সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই । তবে রাশিয়ার ভ্যাকশিন যেহেতু কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে সেই হিসাবে আগামী জানুয়ারী ফেব্রুয়ারির দিকে এই ভ্যাকসিন সবার কাছে আসবে বলে এমন আশা করা যাচ্ছে, অন্তত সহজলভ্য হবে বলে আশা করা যায় !
ধরি এই মাসে ভ্যাকসিন চলে এসেছে । সেই হিসাবে করলেও, সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেন কোন ভাবেই নভেম্বর কিংবা ডিসেম্বরের আগে ইন্টার পরীক্ষা নিতে পারবে না । সম্ভাবনার কথা বলছি । যদি ডিসেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হয় রেজাল্ট দিতে দিতে ফেব্রুয়ারি মার্চ ! কারণ পরীক্ষা শেষ হতে অন্তত মাস খানেক লাগবে । এবং তখন এডমিশন টেস্ট নিতে নিতে মে মাস। মানে পরের এইচএসসির ব্যাচ চলে আসবে । পরের ব্যাচ পরীক্ষার পরে যখন ভর্তি হবে তখন দেখা যাবে এক ব্যাচ থেকে আরেক ব্যাচের গ্যাপ দুই এক মাস মাত্র ! দারুন এক জগাখিচুড়ির মত মত অবস্থা !
এই ঝামেলা থেকে বের হতে কি করা যায় ?
এই প্রাস্তাবনাটা একটু ভেবে দেখা যাক ! এই প্রস্তাবনায় কিভাবে পরীক্ষা নেওয়ার থেকে কখন পরীক্ষা নিতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা !
২০২০ শিক্ষা বর্ষটা বিলুপ্ত করা হোক । এই শিক্ষা বর্ষে যারা যে ক্লাসে পড়েছে তারা সেই ক্লাসেই আগামী ২০২১ সালে আবার নতুন করে শিক্ষা বর্ষ শুরু করুক । অর্থ্যাৎ যাদের এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিত তারা পরের বছর দিবে । যাদের ২০২১ এ দেওয়ার কথা তারা দিবে ২০২২ সালে । যারা এই এসএসি পরীক্ষায় পাশ করেছে এবং কলেজে ভর্তি হবে এখন তাদের ক্লাস শুরু হবে সামনের বছরই । এই একটা বছর সবাই বসেই থাকবে । যারা এইবার ক্লাস ফাইভে পড়ছিলো তারা সামনের বছর এই ক্লাস ফাইভেই পড়বে । যারা ক্লাস টেনে ছিল সামনের বছর টেনেই থাকবে । আবার নতুন করে পড়াশুরু করবে ।
এই ব্যবস্থাটা নিলে কি হবে শিক্ষা বর্ষের ভেতরে যে জগাখিচুড়ির অবস্থাটা সৃষ্টি হচ্ছে সেটা আর হবে না । এতো দিন ধরে যেভাবে সব কিছু চলে আসছে সেই ভাবেই চলতে থাকবে ! সময় মত এইচ এস সি পরীক্ষা হবে, রেজাল্ট হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে !
এর ফলে যা সমস্যাটা হবে সেটা হচ্ছে সবার জীবন থেকে একটা বছর নষ্ট হবে । কিন্তু নষ্ট হওয়ার বছরটা ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব । সরকার চাইলেই এই নষ্ট হওয়া বছরটার পুষিয়ে দিতে পারে ।
শিক্ষা বছর নষ্ট হওয়া বলতে আমরা বুঝি বয়স বেড়ে গেলে আমাদের চাকরিতে প্রবেশের সময় কমে যাওয়া । অর্থ্যাৎ ৩০ এ চাকরির বয়স থেকে এক বছর কমে যাবে । এখন সরকার যদি এই ৩০ এর চাকরিতে প্রবেশের সময় সীমাটা এক বছর বাড়িয়ে ৩১ করে তাহলে এই শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে সেই নষ্ট হওয়া বছরটা তারা ফিরে পেল । এবং একই ভাবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়সটাও যদি এক বছর বাড়িয়ে দেয় সরকার তাহলে চাকরির সময় সীমাটাও নষ্ট হল না তাদের । এবং ব্যবস্থাটা এমন ভাবে করতে হবে যাতে কেবল মাত্র এই ২০২০ সালটার কারণে যে যে বয়সের শিক্ষার্থীদের এক বছর নষ্ট হয়েছে কেবল তারাই এই সুযোগটা পায় ।
অনেকের কাছে মনে হবে একটা বছর নষ্ট হবে । কিন্তু আমাদের এবছর বলতে গেলে নষ্ট হয়েই গেছে । পড়াশুনার কথা যদি আপনারা বলেন তাহলে দেখবেন যে বাসায় থেকে কোন ছাত্র যে কি পরিমান পড়াশুনা করেছে সেটা আপনি আমি সবাই জানি !
এসবই নির্ভর করছে যদি করোনার ভ্যাকসিন আগামী বছর এপ্রিলের আগে বাজারে সহজলভ্য হয় তবেই । এই দেশে আর যাই হোক স্বাস্থবীধি মেনে কিংবা সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না ।
এই প্রস্তাবনাতে শিক্ষার্থী সবার উপরেই একটা সম্মিলিত ভাবে ক্ষতি হচ্ছে সত্য কিন্তু সেটা পুশিয়েও নেওয়া হচ্ছে । সব চেয়ে বড় কথা যে কারো একটা ক্ষুদ্র দলের উপরে কোন অন্যায় করা হবে না । ক্ষদ্র দল বলতে আমি এই বছরের এইচএসসি পরীক্ষর্থীদের কথা বলছি ।
আরও আলোচনা হতে পারে । আপনার কাছে যদি অন্য কোন উপায় থাকে সেটাও জানাতে পারেন যেখানে কোন পক্ষের কোন ক্ষতি হবে না ।
সংযুক্তিঃ
করোনা পরিস্থিতির ভেতরে এখন পরীক্ষা নিলে যা হবে !
ইতিমধ্যে পরীক্ষার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ছয় মাস পেরিয়ে গেছে । তার মানে তাদের জীবন থেকে ছয় মাস নষ্ট হয়ে গেছে ।
এখন পরীক্ষা নিতে গেলে অন্তত অক্টোবর নভেম্রবের আগে কোন ভাবেই সম্ভব না । সেই হিসাবে পরীক্ষা শেষ হতে হতে ডিসেম্বর । অর্থ্যারর তারা এমনিতেই আট মাস পিছিয়ে যাবে ।
সামাজিক দুরত্ব রেখে কোন ভাবেই আমাদের দেশে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না ।
একটা দুইটা সেন্টার করে যেখানে প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো সম্ভব হয় না সেখানে প্রতিটি কলেজে পরীক্ষা নিলে প্রশ্ন ফাঁসের কি অবস্থা হবে একবার চিন্তা করে দেখেছেন কি?
তারপরেও পরীক্ষা যদি নেওয়া হয় তাহলে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হবেই । পরীক্ষা দিতে দেওয়া হবে না, এই ভয়ে অনেকে সেটা প্রকাশ করবে না। সেই হিসাবে আক্রান্ত আরও বাড়বে ।
অনেক শিক্ষার্থীই আক্রান্ত হওয়ার ফলে পরীক্ষা ভাল করে দিতে পারবে না । আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে ।
এই পরিস্থিতিতে পাবলিক পরীক্ষা নিলে সেটা কারো জন্য ভাল হবে না । আমার প্রস্তাবনা ছিলই যদি ভ্যাকসিন সহজলভ্য হয় তবেই । কোন ভাবেই এই মহামারির ভেতরে পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে না আমি । শেষে যেটা লেখা ছিল । এবং প্রস্তাবনা ছিল যাতে এই দেরীর কারণে কোন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্থ না । যে ক্ষতির সম্মুখীন তারা হবে সেটা পুশিয়ে দেওয়ারও একটা কথা আমি বলেছি পোস্টে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৬