মিস্টার বাটপার একজন সফল বিজনেস ম্যান হতে চায় । সে বুদ্ধি আটতে লাগলো কিভাবে বিজনেস করে অল্প সময়ের ভেতরেই টাকা আয় করা যায় । এবং এমন কী কাজ করলে সবাই কেবল তার কাছ থেকেই পন্য কিনবে । তখনই তার মাথায় বুদ্ধি এল । সে জানে মিস্টার বলদের ডিসকাউন্টে পন্য কেনার প্রতি কী দারুন ঝোক । সে মনে মনে ঠিক করেই ফেলল কিভাবে সে ডিসকাউন্ট দিয়ে বলদদের কাছে জিনিস পত্র বিক্রি করবে ।
খুব দ্রুতই সে একটা ই কমার্স সাইট খুলে ফেলল । তারপর সেখানে বিজ্ঞাপন দিল যে ব্রান্ড নিউ ম্যাকবুক এয়ার সে বিক্রি করবে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় । অবিশ্বাষ্য এক অফার । কিন্তু একটা শর্ত জুড়ে দিল যে এই ম্যাকবুক এয়ার ক্রেতাদের কাছে পৌছাতে একটু সময় লাগবে । অর্ডারদের কিছু সময়ে পরে জিনিস পৌছে দেওয়া হবে । এবং অবশ্যই সম্পূর্ণ পেমেন্ট আগে করতে হবে ।
বলদ এক দেখলো এক লাখ টাকার জিনিস মাত্র ৬০ হাজার টাকা । আর দেরি কেন এখনই অর্ডার করে দেই । সে পুরো ৬০ হাজার টাকা মিস্টার বাটপারের অফিস একাউন্টে জমা করে দিল । এবং অপেক্ষা করতে লাগলো নিজের জিনিসের জন্য ।
এদিকে মিস্টার বাটপারের পকেটে চলে এল ৬০ হাজার টাকা । সে আগেই নিজের লাভ বাবদ ১০ হাজার টাকা নিজেস্ব একাউন্টে সরিয়ে নিল । পন্য কেনার জন্য টাকা রইলো ৫০ হাজার রইলো তার কোম্পানীর একাউন্টে । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাজারে ম্যাক বুকের দাম এক লাখ টাকা । ম্যাকবুক তো আর নিজের ঘরের ক্ষেতের পন্য না যে উৎপাদন করে সে মিস্টার 'বলদ এক' কে সাপ্লাই দিবে । তাকে ম্যাকবুক এপলের কাছ থেকে কিনে আনতে হবে এবং সেটা এক লাখ টাকা দিয়েই । কিন্তু তার হাতে আছে ৫০ হাজার টাকা । বাকি ৫০ হাজার টাকা কোথা থেকে আসবে?
পরের দুই দিনে আর দুইজন - মিস্টার ''বলদ দুই'', মিস্টার ''বলদ তিন'' আরও দুইটা ম্যাক অর্ডার দিয়ে দিল । তাহলে মিস্টার বাটপারের একাউন্টে জমা হল ৬০ গুন ২ সমান এক বিশ হাজার । সেখান থেকে নিজের লাভ বাবদ ২০ হাজার টাকা নিজেস্ব একাউন্টে সরিয়ে রাখলো । বাকি রইলো এক লক্ষ টাকা আর আগের আছে ৫০ হাজার টাকা । কোম্পানীর একাউন্টে মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ।
এইবার মিস্টার বাটপারের কাছে একটা ম্যাক কেনার টাকা চলে এল । সেই সেই এক লক্ষ ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ দিয়ে একটা ম্যাকবুক কিনে মিস্টার ''বলদ এক'' কে পৌছে দিল । এখন তার কোম্পানীর একাউন্টে জমা থাকলো ৫০ হাজার । কোম্পানীর মোট অর্থ ৫০ হাজার এবং কোম্পানীকে দিতে হবে দুইটা ম্যাক অর্থ্যাৎ দুই লক্ষ টাকা ।
এদিকে বিশ্বাস তৈরি হল । ৬০ হাজার টাকা দিয়ে আসলেই যে ম্যাক পাওয়া যায় খবর ছড়িয়ে গেল ।
পরের চার দিনে মিস্টার ''বলদ চার'', 'মিস্টার ''বলদ পাঁচ'', মিস্টার ''বলদ ছয়'' এবং মিস্টার ''বলদ সাত'' ম্যাক অর্ডার করে ফেলল । মিস্টার বাটপারের কোম্পানীর একাউন্টে জমা হল চার গুন ৬০ হাজার সমান ২ লাখ ৪০ হাজার । সেখান থেকে লাভ বাবদ ৪০ হাজার টাকা মিস্টার বাটপার নিজের একাউন্টে সরিয়ে রাখলো । কোম্পানীর একাউন্টে জমা দিল ২ লাখ টাকা । আগে আছে ৫০ হাজার । মোট জমা হল দুই লাখ ৫০ হাজার । এই টাকা দিয়ে সে কিনে ফেলল ২ টা ম্যাকবুক । এবং মিস্টার ''বলদ দুই'' ও মিস্টার ''বলদ তিন'' পন্য ডেলিভারি দিয়ে দিল ।
এখন কোম্পানীর একাউন্টে জমা রইলো মোট ৫০ হাজার টাকা । মিস্টার বাটপারের মোট চারজনকে পন্য ডেলিভারি দিতে হবে অর্থ্যাৎ চার লাখ টাকার পন্য দিতে হবে । কিন্তু তার কোম্পানীর কাছে টাকা আছে ৫০ হাজার । মোট ঘাটটি ৩ লাখ ৫০ হাজার ।
এদিকে একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয় যে মিস্টার বাটপারের নিজেস্ব একাউন্টে কিন্তু ঠিকই ৭০ হাজার টাকা চলে এসেছে । এটা নিয়ে অবশ্য মিস্টার বাটপারের চিন্তা নেই । সে জানে মিস্টার বলদদের অভাব হবে না । তারা সামনের দিন আরও অর্ডার করবে । এবং সে যেমন মিস্টার বলদ দুই এবং তিনের টাকা দিয়ে মিস্টার বলদ এককে পন্য দিয়েছে, মিস্টার বলদ চার, পাঁচ, ছয়, সাতের টাকা দিয়ে মিস্টার বলদ দুই এবং তিনকে পন্য দিয়েছে । ঠিক তেমনি ভাবে এই বলদ চার, পাঁচ ছয় আর সাতকে পন্য দিতে এই রকম আরও অনেক মিস্টার বলদ পাওয়া যাবে । যেই মিস্টার বলদ গুলো
যদিও ঘাটতির পরিমানটা দিন দিন বাড়ছেই । আগে যেটা ৫০ হাজার ছিল সেটা এখন ৩ লাখ ৫০ হাজার হয়েছে । যত অর্ডার বাড়বে তত ঘাটতি বাড়বে ! তবে এটা নিয়ে খুব একটা চিন্তা নেই । মিস্টার বলদেরা যত দিন এক লাখ টাকার জিনিস ৬০ হাজারে পাচ্ছে ততদিন তারা অন্য কোন বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না ।
আরও বিশ্বাস তৈরি হল । সবার মাঝে হইচই পড়ে গেল । সবাই দেখতে পেল যে পন্য সবাই কিনতে এক লক্ষ টাকা দিয়ে সেই পন্য মিস্টার বাটপার দিচ্ছে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় । এবং মানুষ সেই ম্যাকবুক ডেলিভারিও পাচ্ছে । কিন্তু কেউ এই প্রশ্নটা করলো না যে কিভাবে একটা এক লাখ টাকার ম্যাক কিভাবে ৬০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে । মিস্টার বলদ কেবল এইটা ভাবছে নিজের লাভ হচ্ছে এটাই সব চেয়ে বড় কথা !
এইভাবে মিস্টার বাটপার তার ব্যবসা বাড়তে লাগলো । মিস্টার বলদরা কম মূল্য পন্য পাওয়ার জন্য অর্ডার করতে লাগলো । এমন কি কেউ কেউ তো আছে যারা মিস্টার বাটপারের কাছ থেকে পন্য কিনে বাইরে বিক্রি করতে লাগলো ।
দারুন বিজনেস প্লাস নয় কি ?
ইহা একদমই কাল্পনিক একটা বিজনেস প্লান । বাস্তবে সাথে এই প্লানের কোন সম্পর্ক নাই । এতো বড় বাটপার দুনিয়ার কোথাও নাই আবার এতো বড় বলদও দুনিয়ার কোথাও নাই।
নাকি আছে?
online read - Ponzi scheme
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ২:১৩