somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আপনি বড় দ্রুত চলে গিয়েছেন....

১৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছবি উৎস

তখন স্কুলে পড়ি । তবে ঠিক কোন ক্লাসে পড়ি সেটা মনে নেই । নিচের ক্লাসেই পড়ি । একটা ছেড়া বই আমার হাতে এল । বইটা ছিল আমার এক চাচাতো বোনের । প্রথম কয়েকটা পৃষ্ঠা ছিল না বইটার । বইটার নাম ছিল বোতল ভুত । সেই বইটা পড়ে যে আমার অনুভুতি কেমন ছিল সেটা এখন আর আমার মনে নেই । এই বোতল ভুত বইটা আমার হুময়ূন আহমেদের পড়া প্রথম বই । তখনও আমার ঠিক বই পড়ার অভ্যাস হয়ে ওঠে নি । তখন বয়স ছিল কম আর হাতের কাছে বই পত্রও ছিল কম ।

এরপর জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে ভর্তি হয়ে গেলাম । তখন আর কিনে বই পড়তে হত না । মাসিক মাত্র ১০ টাকা দিয়ে বই পড়তে পারতাম । প্রথম দিকে অবশ্য সেবার বই বেশি পড়া হত । কিশোর ক্লাসিক আর ভুতের বই । বইয়ের লিস্ট করা খাতা থাকতো । আমরা সেই লিস্ট দেখে বই চাইতাম । আমাদের বই এনে দেওয়া হত ।

আমার পছন্দের বইয়ের কথা লাইব্রেরিয়ান জানতো । একদিন সে আমাকে আরেকটা ভুতের বই নিয়ে এসে দিল । সেটা হচ্ছে কুটু মিয়া । এটা ভুতের বই । বইটা পড়ে ভুতের গল্পের থেকেও লেখকের লেখার ধরনের প্রেমে পড়লাম । তখন যদিও তার নাম জানতাম ঠিকই । জনপ্রিয়তায় সে তুঙ্গে । বিশেষ করে তার নাটক গুলো তো খুবই জনপ্রিয় তখন । আমি এরপর খাতা খুজে তার লেখা বই গুলো নেওয়া শুরু করলাম । প্রতিটা বই পড়ি আর নিজের ভেতরে একটা একটা করে ধাক্কা খাই । ক্লাস টেনে পড়ার আগেই মোটামুটি সেই সময়ে প্রকাশিত সব বই আমার পড়া শেষ ।

প্রতিটা বই পড়তাম । হঠাৎ পড়ার মাঝে হেসে উঠতাম । আমার বাড়ির লোকজন মনে করতো আমি পাগল হয়ে গেছি । এমন একা একা কেন হাসি । আবার পড়তে পড়তে কখন যে চোখ ভিজে উঠতো সেটা টেরও পেতাম না । এমন করেই প্রতিটা বই পড়া শেষ হত । প্রতিটা বই পড়া শেষ করে বুকের মাঝে কী এক অদ্ভুত অনুভূতি হত সেটা কোন ভাবেই ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । তার লেখা মানেই অন্য কিছু । অন্য রকম অনুভূতি । আমার জীবনের সেটা সময় গুলো আমি কাটিয়েছি তার বই পড়ে ।

তার লেখা সব কিছু আমার পড়া । কেবল একটা উপন্যাস আমি পড়ি নি । সেটা আজও পড়ি নি আমি । যদিও বইটা আমার কাছে । এখন কেবল মনে হয় বইটা পড়লেই তো শেষ হয়ে যাবে । আর তো নতুন বই আসবে না তার । একটা বই থাকুক না পড়া ।

আজকে ১৯শে জুলাই । ঠিক এমন একটা দিনে সেই সংবাদটা আসে আমার কাছে। সেবার আমি গ্রামে এসেছিলাম । রাত একটা কী দুইটার দিকে হঠাৎ আমার ফোনে ফোন । ঘুম কাতুর চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার স্টুডেন্ট ফোন দিয়েছে । ফোন ধরতেই সে বলল, স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে ।
আমি প্রথমে ঠিক বুঝতে পারলাম না । ঘুমের রেস তখনও কাটে নি । বললাম কী বললে?
-স্যার হুমায়ূন আহমেদ মারা গেছে ।

আমি আর কোন কথা বলতে পারলাম না । চুপ করে কেবল ফোনটা রেখে দিলাম । সেদিন রাতে আমার আর ঘুম আসে নি । আমি সারা রাত শুয়ে রইলাম বটে কিন্তু ঘুম আসলো না আর । কী যে ভাবছিলাম সেটা আমি নিজেও জানি না । কেবল শূন্য চোখে তাকিয়ে ছিলাম । তখনও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । আমার এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এখনও ।

আমি মানুষের মৃত্যু থেকে সব সময় দুরে থাকি । মরা বাড়ি কবর স্থান জানাযা এই থেকে নিজেকে দুরে রাখি সব সময় । কিন্তু কেন জানি তার থেকে দুরে থাকি নি । থাকতে পারি নি । কয়েকদিন পরে তার লাশ এল দেশে । আমি সেখানে গিয়ে হাজির হলাম । কী এক তীব্র কষ্ট যে অনুভব হচ্ছিলো সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না । এক শূন্য স্থান তৈরি হয়েছিলো । আমার জীবনের একটা ইচ্ছে ছিল কোন একদিন তার সাথে দেখা হবে । তার অটোগ্রাম নিবো । এমনিতে আমার অটোগ্রাফের প্রতি কোন ফ্যাসিনেশন নেই । কিন্তু তার কথা আলাদা ছিল । তার সাথে এভাবে দেখা হবে কোন দিন ভাবি নি । যদিও তার মুখ সেদিন দেখি নি । দেখতে পারি নি ।

সে এখনও সেই একই ভাবে উজ্জ্বল হয়ে আছে স্মৃতিতে । তার লেখা এখনও আগের মতই আমাকে আনন্দ দেয় মনকে সিক্ত করে ।

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, আপনার সাথে দেখা হল না । আপনার অটোগ্রাফ নেওয়া হল না । আপনাকে বলা হল না আপনার লেখা আমার জীবনকে কতখানি প্রভাবিত করেছে, আমাকে কিভাবে পরিবর্তন করেছে ! আপনাকে বলা হল না ! আপনি বড় দ্রুত চলে গেলেন । অনেক দ্রুত চলে গেলেন !
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:০৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×