somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের চারটি হাঁস সারাদিন প্যাঁক প্যাঁক করে...

২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের বাড়িতে সব সময়ে মুরগি পোষা হয় । যখনই বাসায় আসি, তখন দেখি উঠন জুড়ে ছোট বড় নানান সাইজের মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে সব সময় । এইবার বাসায় এসে একটা মুরগিও চোখে পড়লো না । তার বদলে দেখলাম চারটা হাঁস বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমার মাকে যতদুর চিনি, সে মোটেও হাঁস পছন্দ করে না । হাঁস পোষার নানান ঝামেলা আছে । গ্রামে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে , ছাগল পুষে পাগলে, হাঁস পুষে অন্ধে, রাইত হইলে কান্দে ।
আমার নানীর বাসা আমাদের বাসার পাশেই । নানীদের এক সময় অনেক গুলো হাঁস ছিল । আমি দেখতাম সন্ধ্যা নামলেই আমার নানী পুকুর পাড়ে গিয়ে হাঁসদের ডাকা ডাকি করে করছে বাসায় আসার জন্য । আমার মায়ের এই জন্য হাঁস একদমই পছন্দ ছিল না । কিন্তু এইবার সে চারটা হাঁস পুষছে । কিসে তার মত পরিবর্তন করলো, কে জানে ! তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করা হয়েছে যেন হাঁস পুকুরে না যেতে পারে । ফলে সন্ধ্যা নামলে হাঁসকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য ডাকাডাকির দরকার পড়ছে না । বাসার ভেতরের একটা কলপাড়কে অস্থায়ী পুল বানানো হয়েছে পানি আটকে । হাঁসেরা সারাদিন সেই পুলেই থাকে, গোসল করে, পানি নিয়ে খেলা করে । সেই সাথে সারা দিন চিৎকার করে ডাকাডাকি করে । আমি বাসায় এসে পর্যন্ত প্রতিটা দিন কেবল প্যাঁক প্যাঁক শব্দই শুনেছি । একটুও শান্তি নেই । মুরগি গুলো মাঝে মধ্যে ডেকে উঠতো । এই হাঁসের ডাকের কোন শেষ নেই ।

গতদিন বাইরে খুব বৃষ্টি । কিছু সময় হাঁসের ডাকাডাকি শুনলাম । তারপর দেখতে লাগলাম, হাঁস গুলো কত আনন্দেই না গোসল করে বেড়াচ্ছে । একবার যাচ্ছে এদিকে, আরেকবার যাচ্ছে ওদিকে । এভাবে বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে । তখন বিকেল হয়ে গেছে । একটু পরেই আছরের আযান দিবে । আমার কি মনে হল আমিও হাঁসের সাথে নেমে গেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে । মাঝেমাঝে আমি ওদের পেছনে দৌড়াই ওরা মাঝে মাঝে আমার পেছন দৌড়ায় আর জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে ।

একটা সময় ছিল আমি বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করতাম । আমার ঘরে আলাদা ভাবে একটা দরজা ছিল । সুতরাং চাইলেই যখন ইচ্ছে সেখান দিয়ে বের হওয়া যেত বাড়ির অন্য সবার চোখ এড়িয়েই । এই কারণে যখনই বৃষ্টি হত আমি তখনই নেমে পড়তাম ভিজতে । কখনও বা খালি পায়ে আবার কখন আমার পছন্দের সাইকেলটা নিয়ে । সাইকেল নিয়ে একটানে রাস্তায় চলে যেতাম । খালি পায়ে বৃষ্টির ভেতরে সাইকেল চালানোর ভেতরে কি পরিমান যে মজা রয়েছে সেটা বলা কথা না । ঢাকায় এসে শখ করে বৃষ্টিতে ভেজা হয় না একদম । যতবার বৃষ্টিতে ভিজেছি তা বাধ্য হয়ে । ঢাকার বৃষ্টি আর আমার গ্রামের বৃষ্টির ভেতরে কত পার্থক্য রয়েছে । ঢাকার বৃষ্টিতে কেবল শরীর ভেজে আর গ্রামের বৃষ্টিতে শরীরের সাথে মনও ভেজে ।

আজকেও সারাদিন আকাশ মেঘলা। থেকে বৃষ্টি হচ্ছে । কয়েকবার মনে হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজি তবে মায়ের কড়া নিষেধ, কোন ভাবেই বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না । গতকালকেও সে দরজার কাছে দাড়িয়ে আমাকে বারবার উঠতে বলছিলো । তার মতে আমি এই বৃষ্টিতে ভিজছি আজই আমার জ্বর হবে । আর এখন কোভিটের সময় কোন ভাবেই গায়ে জ্বর বাঁধানো যাবে না । তাই আজকে বৃষ্টিতে ভেজা আর হয় নি । সারাদিন বিছানায় শুয়ে টিভি দেখেছি ।

এখানে আসার পরে আসলে সারাদিন কেবল টিভি দেখেই কাটিয়েছি । তাও কেবল একটা কি দুইটা চ্যানেল । ডিসকভারিতে সারাদিন বেয়ার গেইলকে দেখি বন জঙ্গল নদী আর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে । কত কিছু খেতে । সারাদিন কেবল এই জিনিসই দেখি । আরেকটা মজার অনুষ্ঠান আমি বাসায় এলেই দেখি । সেটা হচ্ছে নেকেড এন্ড এফ্রেইড । এটা প্রতিদিন রাত সাড়ে এগারোটায় ডিসকভারিতে হয় । এখানে দুইজন মানুষকে একটা প্রতিকুল পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয় ২১ দিনের জন্য । সভ্যতার সব কিছু কেড়ে নিয়ে, এমন কি শরীরের পোশাক টুকুও । এই মানুষ দুজনকে এখন টিকে থাকতে হয় সেখানে। নিজেদের ঘর বানাতে হয় থাকার জন্য, নিজেদের শিকার করে খেতে হয় । কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ শেষ করে বাড়ি ফেরে আবার কেউ কেউ মাঝ পথেই হাল ছেড়ে দেয় ।

আজকে সারাদিন মন সিক্ত ছিল । মনের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট কেন জানি বারবার ঘুরে ফিরে আসছিলো । গতকাল রাতে সহব্লগার শেরজা তপন ভাইয়ের ববনিক সিরিজের প্রথম খন্ডের এগারো পর্ব শেষ করেছি পড়ে । শেষ করে বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট এসে জমা হয়েছে গল্পে নায়ক সৌম্যের জন্য । মানুষ কত সহজে ভালোবাসার মানুষের সাথে বিট্রে করে ফেলে ! ভালোবাসার মানুষের অগোচরে অন্য কারো সাথে প্রণয় করে, মন আর দেহের লেনাদেনা করে ফেলে । একবারও কি তাদের মনে অপরাধবোধ জাগে না ? তাও আবার পরিচিত মানুষের প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে ! পরে তারা তাদের মুখ দেখায় কিভাবে ?

আমি সৌম্যের কষ্ট যেন নিজে উপলব্ধি করতে পারছিলাম খুব ভাল ভাবে । কারণ এমন কিছু আমার নিজের সাথেও ঘটেছিল । এবং সেটা এই ব্লগেই । থাকুক না হয় সেই গল্প । অন্য কোন দিন হয়তো বলা যাবে ।
আপাতত লেখা এখানেই শেষ করতে হবে । বাসায় থাকলে রাতের খাবার খেতে হয় জলদি । মা জলদি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।

উপরের ছবিটা আমার তোলা । যদিও এখানে দুইটা হাঁস দেখা যাচ্ছে । বাকি দুইটা হাঁস অন্য দিকে রয়েছে ।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৫৯
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×