আমাদের বাড়িতে সব সময়ে মুরগি পোষা হয় । যখনই বাসায় আসি, তখন দেখি উঠন জুড়ে ছোট বড় নানান সাইজের মুরগি ঘুরে বেড়াচ্ছে সব সময় । এইবার বাসায় এসে একটা মুরগিও চোখে পড়লো না । তার বদলে দেখলাম চারটা হাঁস বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে । আমার মাকে যতদুর চিনি, সে মোটেও হাঁস পছন্দ করে না । হাঁস পোষার নানান ঝামেলা আছে । গ্রামে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে , ছাগল পুষে পাগলে, হাঁস পুষে অন্ধে, রাইত হইলে কান্দে ।
আমার নানীর বাসা আমাদের বাসার পাশেই । নানীদের এক সময় অনেক গুলো হাঁস ছিল । আমি দেখতাম সন্ধ্যা নামলেই আমার নানী পুকুর পাড়ে গিয়ে হাঁসদের ডাকা ডাকি করে করছে বাসায় আসার জন্য । আমার মায়ের এই জন্য হাঁস একদমই পছন্দ ছিল না । কিন্তু এইবার সে চারটা হাঁস পুষছে । কিসে তার মত পরিবর্তন করলো, কে জানে ! তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত করা হয়েছে যেন হাঁস পুকুরে না যেতে পারে । ফলে সন্ধ্যা নামলে হাঁসকে বাসায় নিয়ে আসার জন্য ডাকাডাকির দরকার পড়ছে না । বাসার ভেতরের একটা কলপাড়কে অস্থায়ী পুল বানানো হয়েছে পানি আটকে । হাঁসেরা সারাদিন সেই পুলেই থাকে, গোসল করে, পানি নিয়ে খেলা করে । সেই সাথে সারা দিন চিৎকার করে ডাকাডাকি করে । আমি বাসায় এসে পর্যন্ত প্রতিটা দিন কেবল প্যাঁক প্যাঁক শব্দই শুনেছি । একটুও শান্তি নেই । মুরগি গুলো মাঝে মধ্যে ডেকে উঠতো । এই হাঁসের ডাকের কোন শেষ নেই ।
গতদিন বাইরে খুব বৃষ্টি । কিছু সময় হাঁসের ডাকাডাকি শুনলাম । তারপর দেখতে লাগলাম, হাঁস গুলো কত আনন্দেই না গোসল করে বেড়াচ্ছে । একবার যাচ্ছে এদিকে, আরেকবার যাচ্ছে ওদিকে । এভাবে বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে । তখন বিকেল হয়ে গেছে । একটু পরেই আছরের আযান দিবে । আমার কি মনে হল আমিও হাঁসের সাথে নেমে গেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে । মাঝেমাঝে আমি ওদের পেছনে দৌড়াই ওরা মাঝে মাঝে আমার পেছন দৌড়ায় আর জোড়ে জোড়ে ডাকতে থাকে ।
একটা সময় ছিল আমি বৃষ্টিতে ভিজতে খুব পছন্দ করতাম । আমার ঘরে আলাদা ভাবে একটা দরজা ছিল । সুতরাং চাইলেই যখন ইচ্ছে সেখান দিয়ে বের হওয়া যেত বাড়ির অন্য সবার চোখ এড়িয়েই । এই কারণে যখনই বৃষ্টি হত আমি তখনই নেমে পড়তাম ভিজতে । কখনও বা খালি পায়ে আবার কখন আমার পছন্দের সাইকেলটা নিয়ে । সাইকেল নিয়ে একটানে রাস্তায় চলে যেতাম । খালি পায়ে বৃষ্টির ভেতরে সাইকেল চালানোর ভেতরে কি পরিমান যে মজা রয়েছে সেটা বলা কথা না । ঢাকায় এসে শখ করে বৃষ্টিতে ভেজা হয় না একদম । যতবার বৃষ্টিতে ভিজেছি তা বাধ্য হয়ে । ঢাকার বৃষ্টি আর আমার গ্রামের বৃষ্টির ভেতরে কত পার্থক্য রয়েছে । ঢাকার বৃষ্টিতে কেবল শরীর ভেজে আর গ্রামের বৃষ্টিতে শরীরের সাথে মনও ভেজে ।
আজকেও সারাদিন আকাশ মেঘলা। থেকে বৃষ্টি হচ্ছে । কয়েকবার মনে হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজি তবে মায়ের কড়া নিষেধ, কোন ভাবেই বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না । গতকালকেও সে দরজার কাছে দাড়িয়ে আমাকে বারবার উঠতে বলছিলো । তার মতে আমি এই বৃষ্টিতে ভিজছি আজই আমার জ্বর হবে । আর এখন কোভিটের সময় কোন ভাবেই গায়ে জ্বর বাঁধানো যাবে না । তাই আজকে বৃষ্টিতে ভেজা আর হয় নি । সারাদিন বিছানায় শুয়ে টিভি দেখেছি ।
এখানে আসার পরে আসলে সারাদিন কেবল টিভি দেখেই কাটিয়েছি । তাও কেবল একটা কি দুইটা চ্যানেল । ডিসকভারিতে সারাদিন বেয়ার গেইলকে দেখি বন জঙ্গল নদী আর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে । কত কিছু খেতে । সারাদিন কেবল এই জিনিসই দেখি । আরেকটা মজার অনুষ্ঠান আমি বাসায় এলেই দেখি । সেটা হচ্ছে নেকেড এন্ড এফ্রেইড । এটা প্রতিদিন রাত সাড়ে এগারোটায় ডিসকভারিতে হয় । এখানে দুইজন মানুষকে একটা প্রতিকুল পরিবেশে ছেড়ে দেওয়া হয় ২১ দিনের জন্য । সভ্যতার সব কিছু কেড়ে নিয়ে, এমন কি শরীরের পোশাক টুকুও । এই মানুষ দুজনকে এখন টিকে থাকতে হয় সেখানে। নিজেদের ঘর বানাতে হয় থাকার জন্য, নিজেদের শিকার করে খেতে হয় । কেউ কেউ চ্যালেঞ্জ শেষ করে বাড়ি ফেরে আবার কেউ কেউ মাঝ পথেই হাল ছেড়ে দেয় ।
আজকে সারাদিন মন সিক্ত ছিল । মনের ভেতরে একটা চাপা কষ্ট কেন জানি বারবার ঘুরে ফিরে আসছিলো । গতকাল রাতে সহব্লগার শেরজা তপন ভাইয়ের ববনিক সিরিজের প্রথম খন্ডের এগারো পর্ব শেষ করেছি পড়ে । শেষ করে বুকের ভেতরে একটা অদ্ভুত কষ্ট এসে জমা হয়েছে গল্পে নায়ক সৌম্যের জন্য । মানুষ কত সহজে ভালোবাসার মানুষের সাথে বিট্রে করে ফেলে ! ভালোবাসার মানুষের অগোচরে অন্য কারো সাথে প্রণয় করে, মন আর দেহের লেনাদেনা করে ফেলে । একবারও কি তাদের মনে অপরাধবোধ জাগে না ? তাও আবার পরিচিত মানুষের প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে ! পরে তারা তাদের মুখ দেখায় কিভাবে ?
আমি সৌম্যের কষ্ট যেন নিজে উপলব্ধি করতে পারছিলাম খুব ভাল ভাবে । কারণ এমন কিছু আমার নিজের সাথেও ঘটেছিল । এবং সেটা এই ব্লগেই । থাকুক না হয় সেই গল্প । অন্য কোন দিন হয়তো বলা যাবে ।
আপাতত লেখা এখানেই শেষ করতে হবে । বাসায় থাকলে রাতের খাবার খেতে হয় জলদি । মা জলদি খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
উপরের ছবিটা আমার তোলা । যদিও এখানে দুইটা হাঁস দেখা যাচ্ছে । বাকি দুইটা হাঁস অন্য দিকে রয়েছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৫৯