somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ টোপ

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাত্রীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানটা ছোট একটা রেস্টুরেন্টুে হল । ঠিক অনুষ্ঠান না আসলে । ওরা ৫ জন বন্ধু মিলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজির হল । একটা কেক কাটা হল । খাওয়া দাওয়া হল ! এই হচ্ছে অনুষ্ঠান ! কেকটা একটু বড়ই কেনা হয়ে গিয়েছিলো । পাশের কুপার্স থেকে কেনা । এর থেকে ছোট কেক আর ছিল না । অনেক খানি কেকই রয়ে গেল । রেস্টুরেন্ট থেকে সবার আবার আরেক স্থানে যাওয়ার প্লান রয়েছে । হাতে করে এই কেক নিয়ে যাওয়ার কোন মানে নেই । ঠিক হল যে রেস্টুরেস্টে আরও যতজন কাস্টোমার আছে সবাইকে এক পিচ করে কেক দেওয়া হবে ।

রাত্রী আর নিলয় সব টেবিলে গিয়ে একটু একটু করে কেক দিয়ে এল । অনেকেই খুশি হল । হ্যাপি বার্থ ডে বলল । তারপর রেস্টুরেন্ট স্টাফদের মাঝেও কেক দেওয়া হল । কেক বন্টন করে ওরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন গল্প করছিলো তখনই একজন কালো স্যুট পরা সুদর্শন মানুষ ওদের টেবিলের সামনে এসে দাড়ালো ।
মানুষটা রেস্টুরেন্টের গেস্টদের একজন সম্ভবত । একটু আগে তাকেও কেক দেওয়া হয়েছে । টেবিলের সামনে দাড়িয়ে একটু হাসলো সবার দিকে তাকিয়ে । বলল, তোমাদের ভেতরে কার জন্মদিন? সরি, তুমি করেই বললাম । বয়সে আমি তোমাদের থেকে একটু বড়ই হব ।
নিলয় বলল, না না ঠিক আছে সমস্যা নেই । আমরা আপনার ছোটই হব । এই যে আমার বন্ধু রাত্রীর জন্মদিন !
লোকটা বলল, হ্যাপি বার্থ ডে রাত্রী । অনেক দিন পরে আমি আসলে জন্মদিনের কেক খেলাম ! অনেক দিন পর । থ্যাঙ্কিউ ফর দ্য কেক !
নিলয় কিছু বলতে যাচ্ছিলো, রাত্রী একটু হেসে বলল, না না ঠিক আছে ভাইয়া, ঠিক আছে । ইউ আর ওয়েলকাম !
-কেক যখন খাইয়েছো তখন উপহার তো দিতেই হবে !
-না না । কি যে বলেন !

রাত্রী সহ সবাইকে অবাক করে দিয়ে লোকটা নিজের স্যুটের ভেতরের পকেট থেকে একটা কালো কাগজে মোড়া উপহার বক্স বের করলো । তারপর সেটা রাত্রীর দিকে এগিয়ে দিল ।
রাত্রী বলার চেষ্টা করলো যে ভাইয়া প্লিজ ...
লোকটা বলল, মন থেকে দিচ্ছি নাও । কেউ উপহার দিলে নিতে হয় ! কেমন ! হ্যাপি বার্থ ডে এগেইন !

রাত্রী প্যাকেটটা হাতে নিল । লোকটা আরেকটু হেসে ওদের সামনে দিয়ে চলে গেল । ওরা সবাই একটু অবাক হয়েই কিছু সময়ের জন্য বসে রইলো । এভাবে একজন অপরিচিত মানুষের কাছ থেকে এভাবে উপহার পাওয়াটা ওদের কাছে একেবারে নতুন একটা ব্যাপার । কিছু সময় সবাই তাকিয়ে রইলো রাত্রীর হাতে ধরে থাকা গিফট বক্সটার দিকে । একটু লম্বাটে ধরনের ।

সাফি বলল, কী আছে এর ভেতরে ?
-খুলে দেখ ।

রাত্রী আস্তে আস্তে প্যাকেটটা খুলল । সবাই খানিকটা অবাক হয়েই খেয়াল করলো যে ওটা একটা ঘড়ি এবং যেন তেন ঘড়ি না । টাইটান রাগা ! ঘড়িটা দেখতে খুবই চমৎকার আর দেখে মনে হচ্ছে বেশ দামী ।

নিলয় বলল, দাড়া দেখি তো দাম কত হতে পারে ঘড়িটার !

টাইটানের ওয়েব সাইটে ঢুকতেই পাওয়া গেল ঘড়িটা । দামের দিকে তাকিয়ে সবার চোখ কপালে উঠলো । বাংলাদেশি টাকায় ঘড়িটার দাম প্রায় ২১ হাজার টাকা !
রাত্রী বলল, সর্বনাশ । এতো দামী ঘড়ি নেওয়া যাবে না । ওনাকে ফেরৎ দিয়ে আসি ।
-আরে রাখ তো । কোন দরকার নেই ।
-তাই বলে ...।
-শোন এটা একটা উপহার । উনি খুশি হয়ে দিয়েছেন । আর উপহারের বেলাতে দাম দেখতে নেই । কেবল মন দেখতে হয় । এতো চিন্তা করতে হবে না । রেখে দে !

রাত্রীর মনে তারপরেও একটু খুঁত খুঁত করতে লাগলো । এভাবে এতো দামী একটা জিনিস কেউ কাউকে দিয়ে দেয় ! আর সব থেকে বড় যে প্রশ্নটা রাত্রীর মনে ঘুরপাক খেতে লাগলো যেটা হচ্ছে ঘড়িটা প্যাকেট করাই ছিল । এমন একটা ভাব যেন লোকটা জানতো যে আজকে রাত্রীর জন্মদিন হবে এবং সেখানে তাকে কেক খেতে দিবে । ফল স্বরূপ সে উপহার দেওয়ার জন্য সে ঘড়িটা প্যাকেট করে নিয়ে এসেছে ।

দুটো দিন কেটে গেল । তবে রাত্রীর মনের ভেতর থেকে অশান্তিটা চলে গেল না । বারবার মনের ভেতরে জেগে থাকা প্রশ্নটার জবাব জানতে ইচ্ছে করছিলো । ঘড়িটা সে এরই মাঝে পরে ফেলেছে । দারুন মানিয়েছে ওর হাতে । তবে সেটা পরে বাইরে যাওয়ার সাহস হয় নি কেন জানি । বারবার মনে হয়েছে এতো দামী জিনিস হাতে পরে বাইরে গেলে যদি হারিয়ে যায় !

তিন দিনের মাথায় রাত্রী আবারও সেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে হাজির হল । রাত্রীর কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে লোকটা হয়তো রেস্টুরেন্টে নিয়মিত আসে । তার পরনের পোশাক দেখে মনে হয়েছে সে সম্ভবত অফিস থেকে এসেছে । তার অফিস যদি আসে পাশে হয়ে থাকে তাহলে খুব সম্ভবনা আছে যে সে নিয়মিত এই রেস্টুরেন্টে আসে । ঠিক গতদিনের সময়েই হাজির হল রেস্টুরেন্টে ।

এবং সত্যি সত্যিই তাকে দেখতে পেল ।

গতদিনের মতই ব্ল্যাক স্যুট পরে সে কোনার দিকের একটা টেবিলে বসে কফি খাচ্ছে । সামনে একটা ফাইলের দিকে চোখ ।
রাত্রী কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে রইলো । এখানে সে কেন যে এসেছিলো সেটা সে নিজেই জানে না । এখানে সে এসেছিলো লোকটার সাথে দেখা হওয়ার আশাতেই কিন্তু এতো সহজে লোকটাকে দেখতে পাবে সেটা সে ভাবে নি ।
এখন কী করবে সে?
রাত্রীর মনে হল কোন দরকার নেই বাবা ! আবার ঘুরে চলে যাই । কোন অন্যায় সে করে নি, কোন ঝামেলার দরকার নেই । একজনকে কেক খাইয়েছে, সে উপহার দিয়েছে । ব্যাস ঝামেলা শেষ । যাই চলে যাই ।
পেছনে ঘুরে পা বাড়াতে যাবে তখনই লোকটা ওর দিকে ফিরে তাকালো । কয়েক মুহুর্তে লাগলো ওকে চিনতে । রাত্রীর বুঝতে পারলো সে রাত্রীকে চিনতে পেরেছে ।
-মিস রাত্রী !
রাত্রী একটু হাসলো ।
-এসো ।
রাত্রী যন্ত্রের মত এগিয়ে গেল । মুখে একটা অস্বস্তির ভাব ।
লোকটা ওকে কিছু সময় পর্যবেক্ষন করলো । তারপর বলল, বস । আই গেস তুমি এখানে আমাকে দেখার আশায় এসেছো । রাইট?
রাত্রী কোন কথা বলল না । তবে বসে পড়লো ।
লোকটা হাত তুলে ইশারা করতেই একজন ছুটে চলে এল । তার দিকে তাকিয়ে বলল, সুমন রাত্রীর জন্য কফি নিয়ে এতো তো ।
তারপর রাত্রীর দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কফি খাও তো ?
রাত্রী কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো । ওয়েটার ছেলেটা বলল, স্যার কোনটা নিয়ে আসবো?
-আমি যেটা খাই সেটা নিয়ে এসো তবে একটু হালকা করে । এতো কড়া করে খেতে পারবে না ।

ওয়েটার চলে গেল । রাত্রীর কেন জানি মনে হল ছেলেটা যেন একটু বেশি মাত্রায় চিন্তিত সামনে বসা লোকটার ব্যাপারে । আচ্ছা এমন কি হতে পারে এই রেস্টুরেন্টটা এই লোকটারই । রাত্রীর মনের কথাই যেন লোকটা ধরে ফেলল । তারপর বলল, এটা আমারই রেস্টুরেন্ট । প্রতিদিন এই সময়ে এখানে আসি আমি কফির জন্য । নিজের বলে বলছি না, তবে এখানে কফি ভাল পাওয়া যায় । মাঝে মাঝে এসো এখানে । কেমন ?
-জ্বী আচ্ছা ।
-তুমি আমার সাথে কেন দেখা করতে চাইছিলে শুনি?
-আসলে.... আমি এর আগে এতো দামী ঘড়ি পরি নি কোন দিন । আমার জন্য অনেক বেশি দাম ।
লোকটা হেসে বলল, উপহারে দাম দেখতে নেই । মন দেখতে হয় । আমি খুশি হয়েই তোমাকে উপহার দিয়েছি ।
রাত্রীর মনে হল সামনে বসা মানুষটা আসলেই মন থেকেই উপহারটা দিয়েছে ওকে ।
কফি চলে এল একটু পরেই । রাত্রীর সাথে টুকটাক গল্প করতে লাগলো সে । নিজের নাম জানালো সাফওয়ান চৌধুরী । তবে পরিচিত মানুষেরা তাকে মুগ্ধ বলে ডাকে । তার একটা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আছে। এটা বাদে আরও কয়েকটা রেস্টুরেন্ট রয়েছে ।

কফি খেতে খেতে রাত্রীর মনে প্রশ্নটা বারবার আসছিলো । তবে সেটা সে করবে কিনা বুঝতে পারছিলো না । কিন্তু ঠিক আগের মতই সাফওয়ান চৌধুরী রাত্রীর মনের কথা ধরে ফেলল । বলল, তোমার মনে আরও একটা প্রশ্ন জমা হয়ে আছে । তাই না ?
-হুম ।
-ভাবছো যে তোমাকে যে উপহার দিলাম সেটা এভাবে এতো সুন্দর করে র‌্যাপিং করা কিভাবে?
রাত্রী কৌতুহল নিয়ে তাকালো সাফওয়ান চৌধুরীর দিকে । সাফওয়ান বলল, আসলে তোমার জন্মদিন আর আমার স্ত্রীর জন্মদিন একই দিনে । গিফটটা আমি ওর জন্য কিনেছিলাম ।
-সেকি আমাকে দিয়ে দিলেন ! সে ...
-ভয় নেই । তার জন্যও আবার কেনা হয়েছে । এই রেস্টুরেন্টের উপরেও টাইটানের একটা শো রুম আছে । সেখান থেকেই কিনে নিয়ে গিয়েছি । যদিও ও আর কোন দিনই উপহারটা পরতে পারবে না ।
-কেন?
সাফওয়ান কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ হয়ে গেল । কি যেন ভাবতে লাগলো । রাত্রী দেখলো সাফওয়ান চৌধুরীর চেহারাতে একটা বিষাদের ছায়া দেখা যাচ্ছে । রাত্রীর মনে হল যে প্রশ্নটা করা সম্ভব ঠিক হল না । তবে যা একবার মুখ দিয়ে বলা হয়ে গেছে সেটা ও আর ফেরৎ নিতে পারবে না।
সাফওয়ান বলল, আসলে ও মারা গেছে চার বছর আগে !
কথাটা রাত্রীর বুকে এসে লাগলো বেশ ভাল ভাবেই । সাফওয়ান বলল, আসলে তোমাদের একই দিনে জন্মদিন আর সব থেকে বড় কথা কি জানো তোমাদের নামও একই । রাত্রী । তোমার নাম যখন প্রথম শুনলাম, তোমার বন্ধুরা যখন তোমার নাম ধরে জন্মদিনের গান গাচ্ছিলো বুকের ভেতরে কেমন যে করে উঠলো তোমাকে বোঝাতে পারবো না ।

রাত্রী এবার আসলে বুঝতে পারলো যে কেন এতো দামী একটা উপহার সে রাত্রীকে দিয়েছিলো । সেই সাথে এটা জেনেও ভাল লাগলো সাফওয়ান তার স্ত্রীকে এখনও কত ভালবাসে । ওয়েটারকে আরেকবার ডাক দিলো সাফওয়ান চৌধুরী । তারপর রাত্রীকে দেখিয়ে বলল, মিস রাত্রী এর পর যখনই এখানে খেতে আসবে তার কাছ থেকে কোন প্রকার বিল না নেওয়া হয় !
রাত্রী বলতে গেল, সেকি কেন ! দেখুন এমনটা করবেন না ।
কিন্তু কোন কাজ হল না । রাত্রী তখন বলল, তাহলে আমি আর কোন দিন আসবোই না ।
সাফওয়ান হাসলো । তারপর বলল, সেটা তোমার সিদ্ধান্ত । না আসলে আমি তোমাকে কোন ভাবেই জোর করতে পারবো না । তবে এখানে যদি তাহলে তোমার কাছ থেকে কেউ বিল নিবে না ।

রাত্রী যদিও বলেছিলো যে আর যাবে না রেস্টুরেন্টে কিন্তু পরদিনই গিয়ে আবার হাজির হল । কফি খাওয়ার জন্য নয়, সাফওয়ান চৌধুরীর সাথে দেখা করতে । মানুষটার ভেতরে কিছু একটা যে আছে সেটা রাত্রী পরিস্কার নিজের ভেতরে বুঝতে পেরেছে । রাতভর কেবল তার কথাই রাত্রীর মনের ভেতরে এসেছে । মন থেকে সরিয়ে দিতে চাইলেও খুব একটা কাজ হয় নি । বিশেষ করে তার চেহারা, কথা ভঙ্গি সব কিছুর ভেতরে আলাদা একটা ভাব আছে । রাত্রীকে যা আকর্ষণ করছে খুব ! এর আগে এমনটা কোন দিন হয় নি !

এরপর থেকে একটা রুটিনের মত হয়ে গেল যেন । ক্লাস শেষ করে প্রতিদিন বিকেলের এই সময়টা রাত্রী গিয়ে হাজির হত রেস্টুরেন্টটাতে । সাফওয়ানের সাথে ঘন্টাখানেক গল্প করতো । তারপর বাসায় ফিরতো । আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলো যে সে সাফওয়ান চৌধুরী অর্থ্যাৎ মুগ্ধের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ছে । নিজেকে বারবার সে মুগ্ধের কাছ থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না । তীব্র একটা আকর্ষনবোধ করতে শুরু করলো সে মুগ্ধদের উপরে । এই আকর্ষনের উৎস রাত্রীর অজানা ।

দুই
রাত্রী আজকে ঠিক করে রেখেছে মনের কথা সে ঠিক ঠিক মুগ্ধকে বলে দিবে । এই যন্ত্রনা রাত্রীর আর ভাল লাগছে না মোটেও । জন্মদিনের পর থেকে প্রায় মাস দুয়েক পার হয়ে গেছে । এই সময়ে মুগ্ধের সাথে প্রায় প্রতিদিন দেখা করেছে সে । মাঝে যে কয়টা দিন রাত্রীর দেখা হয় নি সেদিন দিশেহারা বোধ করেছে কেবল ।
গতকালকে বিকেলে রাত্রী এসেছিলো রেস্টুরেন্টে দেখা করতে । কিন্তু কাল মুগ্ধ আসে নি । মুগ্ধের ফোন নম্বর রাত্রীর কাছে নেই । ও ইচ্ছে করে নেয় নি । ওর কাছে মনে হয়েছে যে ফোন নম্বর নেওয়ার কোন মানে নেই । এখানে এসে দেখা হচ্ছে সেটাই অনেক কিছু । সে বিকেল থেকে অপেক্ষা করতে লাগলো কিন্তু মুগ্ধ এল না । প্রতিদিন যে আসবে সেটার কোন মানে নেই । সন্ধ্যা পার হয়ে রাত পার হয়ে গেল অথচ মুগ্ধ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হল না । বসেই রইলো ।
শেষে একেবারে বন্ধ হওয়ার সময় নিজের বাসায় ফিরে এল । সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারলো না । জেগে রইলো কিসের জন্য । ভোর বেলা রাত্রীর মনে হল যে মুগ্ধকে সব কিছু বলে দেওয়ার সময় এসেছে । আজও বিকেলেই এসে হাজির হল । সেই নির্দিষ্ট টেবিলে মুগ্ধকে বসে থাকতে দেখলো আগের মত । রাত্রীর খুব বেশি রাগ হল । মনে হল এখনই মুগ্ধের কাছে গিয়ে কৈফিয়ৎ দাবি করে যে গতকাল সে কেন আসে নি । তারপরেই ওর মনে হল যে ওর কি আসলেই অধিকার আছে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার ?

-রাতে ঘুম হয় নি?
রাত্রীর চোখ তুলে তাকালো । মুগ্ধ তার সামনে এসে দাড়িয়েছে ।
-না ।
-কাল অনেক সময় অপেক্ষা করে ছিলে । ফোন কর নি কেন?
-ফোন নম্বর নেই আমার কাছে ।
-স্টাফদের বললেই হত । ওরা ফোন করতো ।
রাত্রী চোখ তুলে তাকালো । বলল, কেন আপনার স্টাফরা আপনাকে ফোন করে নি?

মুগ্ধ হাসলো । তারপর বলল, হ্যা করেছিলো । আমি জানতাম বসে আছো আমার জন্য ।
-তাহলে কেন আসেন নি ?
-দেখার জন্য যে তুমি কত সময় অপেক্ষা কর । ভেবেছিলাম ঘন্টা খানেক বসে থেকে চলে যাবে কিন্তু যখন গেলে না তখন..... কৌতুহলটা আরও বেড়ে গেল ।

মুগ্ধ তারপর হাত তুলে সিসি টিভির দিকে ইশারা করে দেখালো । বলল, ঐ যে সিসিটিভি দেখতে পাচ্ছো, এটার ফুটেজ আমি আমার মোবাইল থেকেই দেখতে পাই । তোমাকে দেখছিলাম ।
রাত্রীর খুব বেশি রাগ হল । এতো রাগ যে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল । মুগ্ধ বলল, আমার জন্য অনেক দিন কেউ এতো ব্যকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করে নি ।
রাত্রী মুগ্ধ চোখের দিকে কিছু সময় তাাকিয়ে থেকে বলল, ওয়েল । আপনার ধারণা ভুল । আমি আজকে বলতে এসেছি যে আজকের পরে আমি আর কোন দিন এখানে আসবো না ।

এই বলে সে ঘুরে হাটা দিল । রাত্রী ভেবেছিলো মুগ্ধ তাকে আটকানোর চেষ্টা করবে । কিন্তু মুগ্ধকে একই জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে খুব বেশি রাগ হল ওল । সে দ্রুত লিফটের দিকে হাটা দিল । আজকের পরে সে আর সত্যিই আর আসবে না । সে মনে মনে ঠিক করেনিল । নিজেকে সে ভাবে কি ! আর কোন দিন আসবে না । আসবে না ! নিজের মনে জোর করে কথাটা শোনালো আবারও !

লিফটের দরজা খুলে গেল একটু পরে । ঠিক যখন সেটা বন্ধ হবে তখনই মুগ্ধ লিফটের ভেতরে ঢুকে পড়লো। তারপর রাত্রী কিছু বলার আগেই ওকে লিফটের দেওয়ালের সাথে চেপে ধরলো। রাত্রী কিছুই বলতে পারলো না । কেবল অনুভব করলো ওর পুরো শরীরে কেমন একটা বিদ্যুৎ খেলে গেছে । সাথে সাথে এও অনুভব করলো যে মুগ্ধ ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরেছে।

তিন
রাত্রীর খুব ভেঙ্গে গেল । সাথে সাথেই বুঝতে পারলো কিছু যেন একটা ঠিক নেই । কোন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । একটু ভাল করে তাকলাতেই বুঝতে পারলো সমস্যাটা । চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে । রাত্রী একটুও নড়তে পারছে না । ওকে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে । দুই হাত দুই দিকে দিকে শক্ত করে বাঁধা রয়েছে । এতোটাই অবাক হয়েছে যে কিছু সময় রাত্রী কোন কথাই বলতে পারলো না । মনে হল এখানে ও কিভাবে এল? ওর কি এখানে কোন ভাবে থাকার কথা?
প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ওঠার পরপরই রাত্রীর মনে আসল ভয়টা চেপে বসলো । ওখানে কিভাবে এল? কেউ ওকে কেন এভাবে বেঁধে রাখবে? কি কারণে?

রাত্রী মনে করার চেষ্টা করলো যে কাল রাতে ও কোথায় ছিল ?
মুগ্ধের সাথে ছিল । মুগ্ধ ওকে লিফটের ভেতরে চুমু খেয়েছিলো । তারপর ?
ওরা গাড়িতে করে কোথাও যাচ্ছিলো?
তারপর রাত্রী মনে করার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই মনে করতে পারলো না । হয়তো ওদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছিলো কিংবা অন্য কোন বিপদ হয়েছিল । মুগ্ধ কোথায়?
ও ঠিক আছে তো ?
রাত্রী আরেকবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু কোন কাজ হল না । খুব বেশি শক্ত করে ওকে বাঁধা হয়েছে !
কে ওকে এভাবে আটকে রেখেছে ?
আর কেনই বা রেখেছে?

আরও কিছু ভাবতে যাবে ঠিক তখনই ডান দিকের দরজাটা খুলে গেল । রাত্রীর চোখ চলে গেল সেদিকে । ঘরটা অন্ধকার হলেও দরজার ওপাশের ঘরটা আলোকিত। সেই আলোতেই দাড়িয়ে থাকা মানুষটাকে সে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে । সাথে সাথেই রাত্রীর কাছে সব কিছু পরিস্কার হয়ে গেল । বুকের ভেতরে একটা তীব্র ভয় এসে জমা হল তখন । সামনের ঐ মানুষটাকে ওকে কি তাহলে প্লান করেই এখানে এভাবে ধরে এনেছে । ওকে নিয়ে তার কি পরিকল্পনা ?


পরিশিষ্টঃ

রিয়া একটু অবাক হয়ে তাকালো সামনে দাড়ানো মানুষটার দিকে । স্যুট টাই পরা নিপাট ভদ্রলোক ! ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হাসি মুখে । তারপর বলল, তোমাদের ভেতরে জন্মদিন কার?
রিয়া একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল, জ্বী আমার !

আজকে রিয়ার জন্মদিন । জন্মদিনটা রিয়ার কোন কালে ভাল যায় না । আজকে সাফিকের জোড়াজুড়িতে এখানে এসেছে । নিরিবিলি একটা রেস্টুরেন্টে বসে কেক কাটছে ওরা দুজন ! তখনই সামনে এই লোকটা এসে হাজির হল ।
লোকটা বলল, জন্মদিনের ব্যাপারটা আমার কাছে দারুন লাগে । আসলে আমি নিজের জন্মদিনের তারিখ টা ঠিক মত জানি না । এতিমখানাতে বড় হয়েছি । এই জন্য এই দিনটা যখন কেউ পালন করে তখন আমার খুব ভাল লাগে । মিস রিয়া শুভ জন্মদিন !
রিয়া হাসলো । সামনে দাড়ানো লোকটাকে ওর বেশ মনে হল । এভাবে অকপটে সবাই কথা বলতে পারে না ।
লোকটা বলল, আমার ব্যাগে আসলে সব সময় একটা উপহার আমি রেখে দিই । প্লিজ না করবেন না । আই ইনসিস্ট !
এই বলে সে নিজের ব্যাগ থেকে র‌্যাপিং করা একটা গিফট বক্স এগিয়ে দিল রিয়ার দিকে ।

রিয়া এমনটা মোটেই আশা করে নি । রিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লোকটা বলল, হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ মিস রিয়া ! জন্মদিন শুভ হোক !

রিয়া বলল, না না প্লিজ।
-না করবেন না । আমার রেস্টুরেন্ট যারা যারা জন্মদিন পালন করতে আসে সবাইকেই গিফট দেওয়া হয় । না করলে চলবে না !

রেস্টুরেন্টটা সামনে দাড়ানো লোকটার শুনে রিয়া আরও একটু অবাক হল । ওদের দিকে তাকিয়ে লোকটা একজন ওয়েটারকে ডাক দিল । ওয়েটার ছুটে এল । লোকটা বলল, ইনারা যা অর্ডার দেয়, কোন বিল হবে না । ঠিক আছে?
-জি স্যার !

রিয়া আসলেই কিছু বুঝতে পারছে না । তবে ওর কেন জানি বেশ মজা লাগছে ! এভবে ফ্রি ট্রিট পেয়ে যাবে তার উপরে আবার উপহার ! ভাবতেই পারছে না !


লোকটা আরেকবার হেসে দরকার দিকে হাটা দিল । আরেকটা নতুন টোপ ফেলা গেছে । কাজ হবে আশা করা যায় !



picture source
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:২৮
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×