somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ রাতুলের অন্য জীবন

২৪ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রতিবার একই কাজ করে রাতুল । প্রতিবার নিজেকে বোঝায় যে এইবারই শেষ । পরের বার থেকে আর এমন কাজ করবে না। কিন্তু যখনই ঢাকাতে আসে তখনই এই একটা কাজ সে করে । এই যে গত সাড়ে তিন ঘন্টা ধরে সে এই দোকানটার সামনে বসে অপেক্ষা করছে, কেন করছে? এমন একজনকে একবার দেখার জন্য অপেক্ষা করছে যে কোন দিন তাকে ভাল বাসে নি । কিন্তু সে তো ঠিকই বেসেছিলো । এখনও কি বাসে!
যদি এটাকে ভালবাসা না বলে তাহলে কোনটাকে বলে রাতুলের জানা নেই । ভালোবাসা বড় অদ্ভুত একটা ব্যাপার । কোন সুত্র আর কোন ব্যাখ্যাতে এটাকে ব্যাখ্যা করা যায় না । কোনদিন করা যাবেও না । রাতুল একবারে বারান্দাটার দিকে তাকিয়ে রইলো । বিকেল হয়ে এসেছ । এই সময়ে রিমি বারান্দায় বেরিয়ে আছে । দুরে কোন কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকে উদাস হয়ে । রিমি কে এক নজর দেখার জন্যই রাতুল এতো সময় ধরে অপেক্ষা করছে । একবার দেখা হলে আবার চলে যাবে । আজকে ঢাকার কাজ তার শেষ । যদিও তার খুব বেশি তাড়া নেই । বাসায় যে আজকেই ফিরতে হবে সেটাও খুব বেশি জরূরি না । কেউ তার জন্য অপেক্ষা করে নেই । অপেক্ষা তো সে করে চলেছে । কিন্তু জানে যে এই অপেক্ষার কোন শেষ নেই । সে যাকে চায় যাকে ভালোবাসে সে কোন দিন তার হবার নয় ।

বিকেলে পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল । রিমি আজকে আর বারান্দায় এল না । রিমির কি শরীর খারাপ?
নাকি সে স্বামীর সাথে অন্য কোথাও গেছে ?
মন খারাপ নিয়ে রাতুল রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলো । ঢাকার এই এলাকাটা একটু নির্জন । অন্য সব এলাকার মত এতো বাড়িঘর নেই এতো কোলাহল নেই । রাতুল আপন মনে হাটতে লাগলো । মনে মনে ঠিক করলো আজকে আর রাজশাহীতে ফিরবে না । কালকে আবারও আসবে । রিমিকে এক নজর তার দেখতেই হবে । না দেখলে মনে শান্তি আসবে না ।

হাটতে হাটতে হঠাৎ রাতুলের খেয়াল হল ও খুবই নির্জন একটা জায়গাতে চলে এসেছে । তার উপরে আবার রাত হয়ে যাচ্ছে । জায়গাটা ভাল কিনা কে জানে ! সাথে বেশ কিছু টাকা রয়েছে । ছিনতান হয়ে গেলে বিপদ হবে । ব্যবসার টাকা ।
দ্রুত পায়ে আবার ফিরতি পথ ধরলো । ফোন বের করে একটা উবার খোজ করতে লাগলো । তখনই খেয়াল করলো একটা মানুষ ওর দিকে এগিকে আসছে । একটু ভয় পেল ও । এখন দ্রুত হাটতে হবে । আর সাথে সাথে একটা মার মুখী ভঙ্গি করলো । আকারে আয়তনে লোকটা ওর মত । যদি লোকটা একা হয় তাহলে বিনা যুদ্ধে কিছু নিতে দিবে না সে । একটা ফাইট তো দিবেই । তবে সাথে যদি আরও মানুষ থেকে থাকে আশে পাশে তাহলে অবশ্য ওর কিছু করার থাকবে না ।
পরক্ষণই মনে হল যদি একাধিক লোকও আসে তবুও একটা ফাইট সে দিবে । যদি তখন তার মৃত্যুও হয় তবুও খুব একটা আফসোস থাকবে না । জীবনে এখন আর আছেই বা কি ! মরে গেলে কিছুই যাবে আসবে না !

লোকটা যখন একদম কাছে চলেছে রাতুল তখন একটা ঘুসি মারার প্রস্তুতি নিল । কিন্তু সেটা আর মারা হল না । লোকটা ওর নাম ধরেই ডেকে উঠলো । অবাক না হয়ে পারলো না । লোকটা ওকে কিভাবে চিনে? আর চিনলেও ও যে এখানে আছে সেটা তো আর কারো জানার কথা না !

-মিস্টার রাতুল!

রাতুলের দ্বিধান্বিত হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে কন্ঠটা ওর বড় পরিচিত । ওর মনে হতে লাগলো যেন ও নিজেরই কন্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে । লোকটা একেবারে সামনে এসে থামলো । রাতুল তবুও একটু সতর্ক হয়ে রইলো বটে তবে সামনের মানুষটার আচরণ তার কাছে আক্রমনাত্বক মনে হল না । নিজের শরীরের পেশী গুলো একটু যেন শিথিল হয়ে এল । কিন্তু যখন মানুষটা ওর সামনে চলে এল তখন একটা তীব্র বিস্ময় ভাব রাতুলকে পেয়ে বসলো । নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করাতে পারছে না । সামনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো কেবল । রাতুলের মুখ দিয়ে কোন কথা বের হল না । বের হওয়ার কথাও না ।

নিজেকে সামলে নিতে বেশ খানিকটা সময় লাগলো । সামনের মানুষটা যেন রাতুলের এই বিস্ময় ভাবটা উপভোগ করলো বেশ ভাল ভাবেই । একভাবে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে হাসি মুখে । রাতুল নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আপনি কে?
-আমার নাম রাতুল আরমান ।
রাতুলের নিজের নামও তাই । সামনে দাড়িয়ে থাকা রাতুল আরমান হুবাহু যেন ওরই কপি । দেখতে একদম একই রকম । কন্ঠস্বরও একই রকম । এমন কি রাতুলের চুলের যেন ধরণ সামনে দাড়ানো মানুষটারও তাই । রাতুল শুনেছে যে দুনিয়াতে মোট সাত জন একই চেহারার মানুষ থাকে কিন্তু তাই বলে তাদের মাঝে এতো মিল থাকবে? এমন কি নামটাও একই রকম হবে ?
নাকি এর ভেতরে অন্য কোন ব্যাপার আছে?
রাতুল কি কোন রকম ঝামেলাতে পড়তে যাচ্ছে?

রাতুলের তখন মনে হল সামনে দাড়ালো লোকটার নিশ্চয়ই কোন মতলব আছে । এখান থেকে চলে যাওয়া দরকার । পা বাড়াতে যাবে তখনই মানুষটা বলল, প্লিজ চলে যেও না রাতুল । আমার কয়েকটা কথা বলার ছিল তোমাকে?
-কী কথা ? আর তুমি কে?
-আমি রাতুল । আমি আর তুমি একই মানুষ !
-মানে? আমি আর তুমি একই মানুষ বলতে তুমি কি বলতে চাচ্ছ? আমি আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না । আমার এখানে ভাল লাগছে না । তুমি আমাকে যেতে দাও !

সামনের রাতুল নামের মানুষটা বলল, আমি তোমাকে আটকে রাখি নি । তুমি যখন ইচ্ছে যেতে পারো । আমি কেবল কয়েকটা কথা শুনতে অনুরোধ করছি আর কিছু না । এতে তোমারই উপকার হবে!
রাতুল বলল, আমার কোন উপকারের দরকার নেই । আমি চলে যাই ।

এই বলে রাতুল যখন সামনের দিকে পা বাড়াতে যাবে তখন সামনের মানুষটা বলল, এমন কি যদি রিমিকে সামনে দেখতে পাও প্রতিদিন তবুও না?

রাতুল থেকে গেল । এই মানুষটা রিমির কথা কিভাবে জানে ?
অন্য রাতুল বলল, আমি আগেই বলেছি আমিই তুমি । তুমি যা জানো আমিও তাই জানি । হয়তো একটু ভিন্ন ভাবে তবে জানি !
রিমির কথা বলতেই রাতুল একটু কেমন যেন হয়ে গেল । আজকে রিমির সাথে দেখা হয় নি । মেয়েটা কোথায় গেছে কে জানে ? বাসায় আছে আবার নাও থাকতে পারে । আজকে বারান্দায় কোন কাপড় দেখতে পায় নি রাতুল । এমন কি হতে পারে যে রিমিরা বাসায় নেই । স্বামীর সাথে কোথাও গিয়েছে । বাবার বাসায় যে যায় নি সেটা রাতুল জানে । সেখানে গেলে রাতুলের কানে খবর আসতো । শ্বশুর বাড়ি যেতে পারে । রাতুল রিমির শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা জানে কিন্তু সেখানে যাওয়া মোটেও উচিৎ কাজ হবে না । এখানেই যে এসেছে সেটাও কোন ভাল কাজ হচ্ছে না । তবুও মনকে সে কোন ভাবেই নিয়ন্ত্রন করতে পারে না মাঝে মাঝে । তখন মনে হয় রিমিকে একবার না দেখতে পেলে ও হয়তো দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে ।

রাতুল থামলো । তারপর একটা বড় করে দম নিয়ে বলল, দেখো আমি কোন ঝামেলা চাই না । আমি কেবল জানতে চাই যে তুমি কে আর আমার ব্যাপারে এতো সব কিভাবে জানো? সব চেয়ে বড় কথা তুমি এমন ভাবে আমার মত দেখতে কিভাবে হলে?

অন্য রাতুল বলল, বলব । এতো তাড়াহুড়ার কিছু নেই । আসো ঐ গাছটার নিচে বসি । ভয় পেয় না । আমি কোন ভাবেই তোমার ক্ষতি করতে চাই না । বরং তোমার একটা উপকার করতে চাই ।
-কেমন উপকার?
-তুমি রিমিকে ভালোবাসো। কিন্তু এই জীবনে তাকে পাও নি । আমার কথা মত চললে তুমি তাকে পেতে পারো।

রিমির কথা শুনে রাতুল ভারী আশ্চর্য হল । এমন কি কাজ করবে যে রিমিকে সে পাবে? এটা কোন ভাবে সম্ভব?
রাতুল চোখে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনের রাতুলের দিকে । অন্য রাতুল বলল, আচ্ছা বলতো এই যে তুমি এখানে আছো, তোমার কি মনে হয় না তোমার মত আরও রাতুল অন্য কোন গ্রহে আছে । একই ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে একই ভাবে খাবার খাচ্ছে হাসছে কাজ করছে ?
-মানে?
-তুমি প্যারালাল ইউনিভার্সের কথা শোনো নি !
-ওটা কেবল সায়েন্স ফিকশনের গল্প ।
-যদি আমি বলি আমি ঠিক এইরকমই একটা বিশ্ব থেকে এসেছি তাহলে কি বিশ্বাস করবে?

রাতুল চট করে জবাব দিতে পারলো না । অন্য সময় হলে একবারেই বলে দিতো যে সে বিশ্বাস করে না কিন্তু সামনের মানুষটা একেবারে হুবাহু ওর মত তারমত দেখছে । এবং ওর নিজের জীবনের অনেক কথাই লোকটা জানে যা অন্য কেউ জানে না ।
অন্য রাতুল বলল, তোমার এই পৃথিবীর মত আরও কত গুলো পৃথিবী যে আছে তার কোন ঠিক নেই । সব পৃথিবীতেই রাতুল আছে রিমি আছে । বিশ্বাস হচ্ছে না?
রাতুল যদিও কিছু বলল না তবে ওর মুখের ভাব দেখেই অন্য রাতুল বুঝে নিল যে রাতুলের বিশ্বাস হয় নি । কিংবা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ।

রাতুল হাসলো । তারপর বলল, ওকে, এই নাও ।

এই বলে নিজের পকেট থেকে একটা স্মার্ট ফোন বের করে দিল । রাতুল সেটা হাতে নিল । স্ক্রিন অন করতেই একটা বড় রকমের ধাক্কা খেল । লক স্ক্রিনে রাতুল আর রিমির এক সাথে তোলা একটা ছবি দেখা যাচ্ছে । তীব্র বিস্ময় নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো রাতুল । ছবিতে রিমি খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে রাতুলের পাশে দাড়িয়ে আছে ।

অন্য রাতুল বলল, ছবিটা ফটোশপড নয় । একেবারে জেনুইন । গ্যালারিতে যাও আরও এমন ছবি পাবে। নিজের ফিংগারপ্রিন্ট দাও । খুলে যাবে ।

রাতুল নিজের আঙ্গুলটা ছোঁয়ালো মোবাইলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্রিনে । এবং অবাক করে দিয়েই সেটা খুলে গেল । এটা কিভাবে সম্ভব?
একবার ফোনের দিকে আরেকবার আরেকবার সামনের মানুষটার দিকে তাকালো । বিস্ময় ভাবটা কিছুতেই কাটছে না ওর । কিভাবে এতো কিছু হচ্ছে ? ওর নিজের ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অন্যের ফোন কিভাবে খুলে যাচ্ছে ? এটা কিভাবে সম্ভব ?
অন্য রাতুল বলল, সম্ভব কারণ এই ফোনটা আমারই । আমি আর তুমি আসলে একই জন । আমাদের সব কিছু এক । চোখের রঙ থেকে শুরু করে আঙ্গুলের ছাপ । সব কিছু এক ।

রাতুল দ্রুত ফোনের ভেতরে ঢুকলো । গ্যালারিতে ঢুকে একের পর এক ছবি উল্টাতে শুরু করলো । সেখানে রিমির অসংখ্য ছবি । এমন সব প্রাইভেট ছবি যা কোন ভাবেই বাইরের মানুষের পাওয়া সম্ভব না ।একই খাটে ঘরে বারান্দা কিচেন রিমির ছবি তোলা হয়েছে । রাতুলের সাথে সেলফি তোলা হয়েছে । ছবি গুলো দেখে যে কেউ বলবে যে ওরা স্বামী স্ত্রী !

রাতুল কিছুটা সময় ঝিম মেরে বসে রইলো । বুকের ভেতরে কষ্টটা যেন আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো । রিমিকে না পাওয়ার কষ্টটা আবারও তীব্র ভাবে পেয়ে বসলো ওকে ! অন্য রকম রাতুল সেটা বুঝতে দেরি করলো না । বলল, এই জীবনটা চাও কি?
-হ্যা চাই । সত্যিই চাই । যে কোন কিছুর বিনিময়ে চাই । বল কি করতে হবে ?
-কিছুই না । কেবল তোমার ফোনটা আমাকে দাও আর আমার টা রেখে দাও । তারপর চলে যাও আমার পৃথিবীতে?
-মানে?
-মানে তুমি আমার স্থানে যাবে আর আমি এখানে থাকবো!

রাতুলের মাথায় ঢুকলো না কিছুই । সামনের বসা লোকটা ওকে নিজের সুখের জীবনে প্রবেশ করতে দিচ্ছে । কেন?
অন্য রাতুল বলল, ভাবছো কেন আমি এমন টা করছি তাই তো?
-হ্যা ! কেন ? আর আমিই কেন ?

অন্য রাতুল একটু সময় নিল । তারপর বলল, আমাদের আর্থটা হচ্ছে এই বিশ্বের সেন্ট্রাল পয়েন্ট । তাই সেটা অন্য সব বিশ্ব থেকে এগিয়ে । কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা এখনও অক্ষম। আমার শরীরে কঠিন একটা রোগ বাসা বেধেছে । আমার হাতে খুব বেশি সময় নেই । আমি এই রোগের কথা কাউকে বলি নি। এমন কি রিমিও জানে না । ও যদি জানে তাহলে কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না । আমি চাই ও যেন কোন দিন না জানুক । আমি চলে যাওয়ার পরেও যেন ও সুখে থাকে এই জন্য ।
-আর আমিই কেন?
অন্য রাতুল হাসলো । তারপর বলল, তুমিই প্রথম না কিন্তু । আমি আরও কয়েকটা বিশ্বে গিয়েছি । সব বিশ্বেই রাতুল আর রিমির বিয়ে হয়েছে । কেবল এই একটা বিশ্ব বাদ দিয়ে । সব বিশ্বেই রিমি বিয়ের দিন পালিয়ে যায় নি । কেবল তোমারটাতে পালিয়ে গিয়েছিলো । এবং .....
-এবং .....
-দেখো একটা কিন্তু এখানে আছে ।
-কী কিন্তু?
-আমি যতগুলো বিশ্বে গিয়েছি সব স্থানেই রাতুলের শরীরে কোন কঠিন বাসা বেঁধেছে । কেবল তুমি নিরোগ !
-তার মানে রিমির যদি এখানে আমার বিয়ে হত তাহলে আমার শরীরেও কি কোন কঠিন রোগ বাসা বাঁধতো ?
-সম্ভাবনা প্রবল । বাসা বাঁধতে পারতো ! কিন্তু এখানে বাঁধে নি । আসলে পাশা পাশি সব বিশ্ব গুলোতে মোটামুটি একই ভাবে ঘটনা এগিয়ে চলে । একই রকম ঘটনা ঘটলে সব স্থানেই একই ঘটনা ঘটবে।
-আমি যদি যাই তোমার পৃথিবীতে তাহলে আমার শরীরে রোগ হতে পারে?
-এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না । হতে পারে আবার নাও পারে । দেখো আমি তোমাকে জোর করবো না । যদি যেতে চাও তবে যেতে পারো, না চাইলেও পারো আমি ফিরে যাবো ।

রাতুল কিছু সময় ঝিম মেরে বসে রইলো । এখন ওর কী করা উচিৎ ? একটা রিস্ক তো থেকেই যায়?
রাতুল বলল, আচ্ছা তোমার শরীরে যে রোগ আছে তোমার হাতে কতদিন সময় আছে?
-এই ধর ছয় মাস !
-তার মানে আমার শরীরে যদি রোগটা বাসা বাঁধে তাহলে আমমি ছয়মাস সময় পাবো?
-আরও বেশি পাবে আশা করি । যদি রোগটা আসে তবে....

রাতুল ভাবলো ছয় মাস! অনেক লম্বা সময় । ছয় মাস সে রিমির কাছাকাছি থাকতে পারবে । ওকে ভালোবাসতে পারবে ! এই ছয়মাসে সে পুরো জীবন পার করে দিতে পারবে ! রাতুল আর কিছু ভাবলো না । বলল, আমি রাজি !
-সত্যিই রাজি ?
-হ্যা । আর কিছু ভাবতে চাই না । আমি রাজি !
-আমি জানতাম তুমি রাজি হবে । আসলে তোমাকে তো চিনি । আমিই তো তুমি । রিমিকে পাওয়ার জন্য তুমি সব কিছু করতে পারো ঠিক তেমনি আমিও রিমিকে কষ্ট না দেওয়ার সব কিছু করতে পারি ! ওকে আসো আমরা কিছু দরকারি জিনিস আলোচনা করে নি । যদিও খুব বেশি সমস্যা হবে না আশা করি !



দুই
দরজাতে দাড়িয়ে রাতুল আবারও দ্বিধাবোধ করলো । কলিংবেল চাপ দিবে কিনা ভাবছে । বাসাটা ওর নিজের বাসা । ওর নিজের পৃথিবীর বাসার মতই তবে সম্প্রতি রং করা হয়েছে । ভেতরে রিমি আছে । অন্য রাতুল বলেছিলো অফিসের কাজে সপ্তাহ খানেক সে দেশের বাইরে গিয়েছিলো এমনই কথা বলা আছে । আজকে ফিরে এসেছে ।
কলিংবেল টা চাপ দিয়েই দিল । দরজা খুলে গেল একটু পরেই । সামনে আর কেউ না স্বয়ং রিমি দাড়িয়ে । ওকে হাসলো । তারপর পেছনে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা । কেউ নেই দেখে দরজার কাছেই ওকে জড়িয়ে ধরলো । কিছু সময় জড়িয়ে ধরেই রইলো । তাপরর বুকে মাথা রেখে বলল, ইস কত দিন তোমাকে জড়িয়ে ধরি না । শুনো এরপর থেকে বাইরে গেলে আমি তোমার সাথে যাবো । কোন কথা শুনবো না । একা একা এই এক সপ্তাহ কিভাবে থেকেছি জানো!

রাতুল অনুভব করলো ওর চোখ সিক্ত হয়ে উঠেছে । রাতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে রিমি অবাক হয়ে বলল, এই বোকা ছেলে কি হয়েছে ?
রাতুলের গলা ধরে এল । কোন মতে বলল, তোমাকে এই এতো গুলো এতো মিস করেছি, একটা বার দেখার জন্য একটা বার তোমাকে জড়িয়ে ধরার জন্য কি যে তীব্র আকাঙ্খা ছিল মনে !!
রিমি অবাক হল বেশ । তারপর বলল, ইস মাত্র এক সপ্তাহেই এই অবস্থা ! শুনো তোমার বোন এমনিতেই তোমাকে বউ পাগল বলে । এমন কথা যদি শোনে তাহলে আরও বলবে !
-বলুক !
-পাগল ছেলে !

রিমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো তখন পেছন থেকে রাতুল ওর মায়ের ডাক শুনতে পেল । মাকে আসতে দেখেই রিমি রাতুলকে ছেড়ে দিল। রাতুলের মা বলল, দরজা খোলা রেখে এতো ভালোবাসা দেখাতে হবে না । মানুষজন দেখলে কি বলবে ! বউ মা...।

মা কি বললো সেটা রাতুল শুনলো না আর ..... প্রথমে একটু ভয় ভয় করছিলো ওর যে আসলেই সব কিছু ওর নিজের পৃথিবীর মত হবে কিনা কিন্তু এখন মনের সেই ভয় কেটে গেছে । রাতুল জানে না যে এই এখানে আসার কারণে ওর ভেতরেও অন্য সব রাতুলের মত কঠিন কোন অসুখ বাসা বাঁধবে কিনা । সেটা নিয়ে সে কোন চিন্তাও করে না । যদি বাসা বাঁধেও তবুও ওর মনে কোন দুঃখ থাকবে না । এই স্বপ্নের প্বথিবীতে যতদিন থাকবে নিজের মনের মত করে জীবনটাকে উপভোগ করে নিবে !



গল্পটাকে কোন ট্যাকনিক্যাল ব্যাপার চিন্তা করা হয় নি । তাই বিজ্ঞানকে একপাশে সরিয়ে রেখে গল্পটা পড়ার অনুরোধ করা হল।


গল্পটি আগে নিজেস্ব সাইটে প্রকাশিত



pic source
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০২২ বিকাল ৩:২৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, পাকিস্তানের ধর্মীয় জংগীবাদ ভারতের মুসলমানদের সাহায্য করছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



এনসিপির জল্লাদরা, ফেইসবুক জেনারেলরা ও ৫/১০ জন ব্লগার মিলে ৭ সিষ্টার্সকে আলাদা করে দিবে বলে চীৎকার দিয়ে ভারতের মানুষজনকে অবজ্ঞা ও বিরক্ত করার ফলে ভারতের ২২ কোটী... ...বাকিটুকু পড়ুন

গৃহবধূ থেকে প্রধানমন্ত্রী; অভিভাবক শূন্য হলো বাংলাদেশ |

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১২


খালেদা জিয়া। ইস্পাতসম বজ্রকঠিন দেশপ্রেমের নাম খালেদা জিয়া। যিনি ভালো বেসেছেন দেশকে, নিজের জীবনের চেয়েও দেশকে ভালো বেসেছেন। দেশের বাহিরে যার নেই কোন লুকানো সম্পদ। নেই বাড়ি, গাড়ি অথবা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×