somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম প্রমাণঃ ফেরেস্তাদের গতিবেগ আবিস্কার !

৩১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক তৈরি হয়েছে কোরআন গবেষণা করে ! ওয়াজে দেওয়া মোল্লা সাহেবের এমন একটা বক্তব্য এক সময় খুব ভাইরাল হয়েছিল । এবং অনেকে সেটা বিশ্বাসও করেছিলো । আমিও বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু মোল্লাসাহেব যে কেবল বলেই খালাস । তিনি যেই সুরার আয়াতের কথা বললেন সেই আয়াত পড়ে আমার মনে হল না যে এমন কোন কথা সেখানে লেখা আছে । সুরা আম্বিয়ার ৮২ নম্বর আয়াতের কথা মোল্লা সাহেব বললেন অথচ সেখানে অন্য কিছু লেখা আছে । অথচ মোল্লা সাহেব জনসম্মুখে কতই না আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলে গেলেন ! কারণ তিনি জানতেন যে কোরআনের নাম নিয়ে তিনি যাই বলে যাবেন তাই পাব্লিক কোন রকম চিন্তা ভাবনা না করেই বিশ্বাস করবে ! এই যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার ! ধর্ম নিয়ে এতো তরতাজা মিথ্যা এটা করলে কি ধর্মের অবমাননা হয় না ?

ভিডিও লিংক
সূরাঃ আল-আম্বিয়া ৮২ নম্বর আয়াত - আয়াতটি

মোল্লা সমাজ মানুষজনকে আরও অনেক কথা বলে । তাদের অনেক বলা কথার ভেতরে একটা অতি পছন্দের বিষয় হচ্ছে "তামাম দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা কোরআন গবেষণা করে সব কিছু আবিস্কার করেছে এবং করছে! আমাদের মাঝে অনেকেই এই জিনিস টা খুব ভাল করে বিশ্বাসও করে । কিন্তু তাদের কাছে যদি আমি জিজ্ঞেস করি যে কোন ব্যাপারটা আসলে বিজ্ঞানীরা কোরআন থেকে আবিস্কার করেছে সেই গুলোর কী কী কিংবা কিভাবে সে গুলো কোরআন থেকে এসেছে ব্যাখ্যা করে বল, তারা তখন সেই জবাব দিতে পারে না । তারা বিশ্বাস করে যে আবিস্কার হয়েছে কিন্তু কী আবিস্কার হয়েছে সে জানতে চাইলে তারা বলতে পারে না । তাদের কী জানতে ইচ্ছে করে না এই ব্যাপার গুলো?

ব্যাপারটা এই রকম যে একজন এসে বলল যে আমার বউ আছে । আমি সেটা চোখ বুজে বিশ্বাস করে নিলাম । কিন্তু সেই বউ কে, কী তার নাম, কোথায় থাকে, সে দেখতে কেমন এসব বিষয়ে কোন কৌতুহল দেখালাম না ! এটার নাম কী বিশ্বাস?

যাই হোক যা লিখতে বসেছি তাই লিখি । বিজ্ঞান দিয়ে ধর্মকে প্রমানের জন্য বই আমি খুজে খুজে বই পড়ার চেষ্টা করি । প্যারামজিদের বই পড়ে সত্য বলতে কী আমার বিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার থেকে খানিকটা টলে গিয়েছে । নতুন নতুন প্রশ্ন জড় হয়েছে মনে । আজকে আরও একজন একটা হাতে এসেছে । বইটার নাম পদার্থ বিজ্ঞানে মুহাম্মাদ (স) । বইয়ের লেখক একজন অধ্যাপক । বইটা আপনারা রকমারি থেকে কিনতে পারবেন ।

আমি ধর্ম আর বিজ্ঞান সব সময় আলাদা ভাবতে পছন্দ করি । একটা আমার বিশ্বাস অন্যটা হচ্ছে বিজ্ঞান গবেষণা লব্ধ সত্য । আপনি যখন বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম প্রমাণ করতে যাবেন তখন আপনার একটা প্রধান ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে যে আপনাকে বিজ্ঞানের নিয়ম মানতে হবে । বিজ্ঞানে কোন অলৌকিক ব্যাপার নেই । অর্থ্যাৎ বিজ্ঞান দিয়ে ধর্ম সহ যে কোন ব্যাপার প্রমান কিংবা ব্যাখ্যা করতে গেলে আপনাকে ধর্মের নিয়ম মানলে চলবে না, মানতে হবে বিজ্ঞানের ।

পদার্থ বিজ্ঞানে মুহাম্মাদ (স) বইটা পড়ার একেবারে শুরুতেই হোচট খেতে হল ।

অধ্যাপক সাহেব লিখেছেন '' প্রথম আকাশকে গোলাকার কেন্দ্রবিন্দু কলরে তার চারদিকে ৫শ ফেরেশতা বর্ষ মাইল দুরত্ব পথের ব্যবধানে দ্বিতীয় আকাশের বিশাল ছাদকে ঘেরাও বা বেস্টন করে সৃষ্টি করেছেন'' এটা বইয়ের ২ নম্বর পেইজে লেখা আছে ! এখানে সাত আস্মানের প্রথম আসমান থেকে দূরত্ব থেকে ২য় আসমানের দুরত্বের কথা বলা হয়েছে । এবং সেই দুরত্ব বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে ফেরেশতা বর্ষ একক !

প্রথম খটকার ব্যাপার হচ্ছে ফেরেশতা বর্ষ মাইল ব্যাপার টা কী ?

আমরা সর্বোচ্চ দূরত্ব বোঝাতে আলোকবর্ষ ব্যবহার করি ! । আলো এক বছর সমান সময়ে যতখানি দুরত্ব অতিক্রম করে সেটা হচ্ছে আলোকবর্ষ। আলোর চেয়ে দ্রুত আর কিছু নেই । বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত । এখন আলোর গতি থেকে দ্রুত অন্য কোন কিছু বের করতে হলে আপনাকে আগে সেটাকে প্রমাণ করতে হবে । বিজ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে !

এখন আপনি বিশ্বাস করেন যে ফেরেশতারা আলোর থেকে দ্রুত চলে । ওকে ফাইন । বিশ্বাস করতেই পারেন ! কিন্তু যদি আলোর গতিবেগের মত আপনি ফেরেশতাদের গতিবেশ বের করেন এবং সেটা বইয়ের পাতায় লিখেন তাহলে নিশ্চিত ভাবেই আপনি কিংবা অন্য কেউ সেই গতিবেশ মেপেছে ! তাই নয় কি?
কে মাপলো?
অধ্যাপক সাহেব বইয়ের ঠিক ৪ নম্বর পেইজের পদাটিকায় লিখেছেন
বিঃদ্রঃ ফেরেশতাদের প্রতি সেকেন্ডে স্বাভাবিক গতিবেগ ১৬৭৪ x ১০^২৩ মাইল । এবং তাদের অস্বাভাবিক গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ১৫০৬৬ x ১০^৪৩ মাইল ।

বিশ্বাস করেন আমি এই হিসাব নিজে করি নি । বইয়ের পাতায় এই ব্যাপারটা লেখা আছে !

আমি অনেক কনফিউজড হয়ে গেলাম । প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে এই যে এতো নিখুঁত ভাবে ফেরেশতাদের গতিবেগ নির্ণয় করা হল, এটা কিভাবে করা হল? এটা আসলে আমি জানতে আগ্রহী ! আমি আসলেই ফেরেশতা বর্ষ বলে কোন কিছু এর আগে পড়ি নি । আমি নিশ্চিত আপনাদের অনেকেই এই ব্যাপারটা এই প্রথম শুনলেন !

গুগলে সার্চ দিলাম । এতো বড় একটা ব্যাপার তখন নিশ্চিত ভাবেই গুগলে থাকার কথা । কোথায় কোন কিছু খুজে পেলাম না । কেবল একটা ফেসবুক গ্রুপে একটা লেখা এলো । এবং আমি নিশ্চিত যে অধ্যাপক সাহেব এই হিসাবটিই নিয়েছে ! এই হচ্ছে সেই লেখার লিংক/

এখানে লেখা একটা অংশ আমি হুবাহু তুলে দিচ্ছি বিখ্যাত জার্মান বিজ্ঞানীদ্বয় অটোহান ও ট্রস্টয় এরা উভয়ে নিউট্রন কণিকা দিয়ে ইউনিয়মে আঘাত করে আইনস্টাইনের ওই সূত্রের সত্যতার প্রমাণ পায়। তাই তারা উভয়ে মিলে এই E=MC2 সূত্রের সাহায্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করেন। আলোর স্বাভাবিক গতিবেগ হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে এক লাখ ৮৬ হাজার মাইল। আলোর গতির একক। তাহলে এই আলোকে ধ্বংস বা রূপান্তর করে এর দ্বারা মহান আল্লাহ পাক যে ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন তার গতিবেগ আলোর চেয়ে প্রতি সেকেন্ডে হবে কমপক্ষে 1,86,000× 9×1020= 1.674×1023 মাইল, অর্থাৎ ফেরেশতাদের গতি বেগ প্রতি সেকেন্ডে 1674×1026 মাইল। এটাই ফেরেশতাদের গতির একক।

এখানে একটা ব্যাপার খেয়াল করে দেখেন যে এখানে ধরে নিয়েছে । পরীক্ষা লব্ধ প্রমান নয় ! আমি আগেই বলেছি যে যখন আপনি বিজ্ঞান দিয়ে কোন প্রমান করতে যাবেন তখন সেটার বিজ্ঞান ভিত্তিক একটা ব্যাখ্যা থাকতে হবে !
যাক গেল ঐ হিসাব ! তবুও আমার মাথার ভেতরে এই হিসাবটা ঠিক ঢুকলো না । ধরে নেওয়ার বেলাতেও তো একটা যুক্তিযুক্ত ব্যাপার থাকে ! ভদ্রলোক লিখেছেন যেহেতু আলো থেকে সৃষ্টি করেছেন তাই তার গতিবেগ কমপক্ষে 1,86,000 × 9 ×1020 হবে !
কেন?
9 ×1020 এই হিসাবটা কোথা থেকে আসলো? (সম্ভবত 9 ×10^20 হবে তবুও এটা কিভাবে আসলো, কেন আসলো?)
ব্যাপারটা কি এরকম যে চাইলাম আর যোগ করে দিলাম ?
E=MC^2 এর যে সুত্রের কথা উল্লেখ আছে, এখানে আইনস্টাইনের এই সূত্র দ্বারা, শক্তি ও ভর যে সমতুল্ল সেটা বোঝানো হয়েছে। এখানে m ভরের কোন বস্তুতে সঞ্চিত শক্তির পরিমাণ ঐ ভরের সাথে আলোর বেগ(c) এর বর্গের গুনফল এর সমান। এখান থেকে ফেরেশতাদের গতিবেগ কিভাবে আসলো আর কিভাবেই বা বের হল ? এই সুত্র ব্যবহার করলে তো ফেরশতাদের ভর আর শক্তিও জানতে হবে !

আমার ব্যাপারটা জানা নেই । আমি জানতে আগ্রহী ! কেউ যদি একটু বুঝিয়ে দিতেন !

বইটা পড়ে ভেবেছিলাম যে খুব ভাল একটা রিভিউ লিখবো কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে পুরো বইয়ের না, প্রতিটা চ্যাপ্টার নিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে লিখতে হবে !

এই প্রথম অধ্যায়েই আরও একটা ব্যাপার আমার মাথায় ঢোকে নি । সেটা নিয়ে সামনের দিন লেখা যাবে । আসতে পড়তে শুরু করি আর জানতে শুরু করি যে কিভাবে পদার্থবিজ্ঞান ধর্মকে প্রমাণ করে দিয়েছে ! আপনারাও বইটি সংগ্রহ করুন এবং আলোর পথে আসুন !


এই বইয়ের প্রথম চ্যাপ্টারটা এই সাইট থেকে পড়তে পারবেন । লিংকে ঢুকে বইয়ের ছবির উপরে ক্লিক করলেই পড়তে পারবেন !





সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২৬
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×