
কয়েক মাস আগে মাথায় কি ভুত চাপলো, ঠিক করলাম গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখবো । এসব অবশ্য নতুন কিছু না । নানান সময়ে আমার নানান কিছু করতে ইচ্ছে করে । যাই হোক যেমন ভাবা তেমন কাজ । ইউডিমাইতে একটা অনলাইন কোর্স নিয়ে শেখা শুরু করলাম । দুই তিন মাসে মোটামুটি সব কিছু শেখা শেষ হয়ে গেল । শেষে এসে ইন্সট্রাক্টর কিছু উপদেশ দিলেন । নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন । তার ভেতরে একটা কথা আমার বেশ পছন্দ হল । তিনি বলেছিলেন যে, আপনি যত ভাল গ্রাফিক্স ডিজাইনই করেন না কেন, যত পরিশ্রমই করেন না কেন, আপনার ক্লাইন্টের সেইটা পছন্দ নাই হতে পারে । এই ব্যাপারটা সব সময় মাথায় রাখবেন । এবং যখনই কেউ আপনার কাজ নিয়ে কোন নেগেটিভ মন্তব্য করবে, কাজ পছন্দ করবে না, সাথে সাথেই সেই মন্তব্য, সেই ইমেলের রিপ্লাই দিবেন না । এবং সব থেকে বড় কথা যদি আপনি ক্ষুধার্থ থাকেন তাহলে কোন ভাবেই রিপ্লাই দিবেন না । কিচেনে যান কিছু খেয়ে আসুন । পেট ভরা থাকলে এক কাপ চা অথবা কফি খান । তারপর ক্লাইন্টকে উত্তর দিন ।
এই ব্যাপারটা আমার সাথে খুব ভাল করে মিলে যায় । আমার যখনই পেটে ক্ষুধা এসে জমা হয় তখনই আমার চিন্তা ভাবনা অন্য দিকে চলা শুরু করে । অতি অল্পতেই আমার মেজাজ খিটখিতে হয়ে যায় । ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বিরক্তবোধ করি । কিন্তু ঠিক সেই একই ঘটনা একই কাজ একই পরিবেশ কেবল আমার পেট ভরা, এমন হলে সেই ব্যাপার গুলো আমার স্বাভাবিক লাগে খুব !
আমার বাড়ির পাশেই এক শিল্পী থাকে । তার কাজই হচ্ছে সকাল থেকে মোটামুটি গান শুরু করা । প্রায় ঘুম ভাঙ্গে তার গান শুনেই । তবে অবশ্যই বলছি না যে সে খারাপ গান গায় । গানের গলা ভাল । আমার শুনতে মোটেই মন্দ লাগে না । দুষ্ট মানুষজনের মনে এই চিন্তা এসে জড় হচ্ছে যে শিল্পী সম্ভবত কোন মেয়ে । জ্বী না, সে একজন ছেলে । গিটার বাজিয়ে গান গায় ! দুপুরে আমি একটু দ্রুত খাওয়া দাওয়া করি । একদম সময় মত আমার ক্ষুধা লাগে। অনেক দিনের অভ্যাস । গতদিনও ক্ষুধা লেগেছে কিন্তু হাতের কাজ শেষ না হওয়ার জন্য নিচে যেতে পারছি না । সময়টা পার হয়ে গেল । ক্ষুধা অনুভব করলাম । ঘরে অন্যান্য খাবার থাকলেও খেতে ইচ্ছে করলো না কারণ এখন ভাত খাওয়ার সময় । অন্য খাবারে ঠিক পোষাবে না । এরই ভেতরে শিল্পী মহাশয় গান শুরু করলেন। কয়েক মিনিট পার হল । এমন বিরক্ত লাগলো । ইচ্ছে হল বেটাকে ধরে থাপড়ে আসি ! অথচ তার গান আমি মনযোগ দিয়েই শুনি সব সময় !
ক্ষুধা পেটে মানুষের স্বাভাবিক কাজের প্রতিক্রিয়া গুলো হয় অন্য রকম যা পেট ভরা থাকলে হয় না । এটা নিয়ে ইন্ডিয়ান একটা এড আছে বেশ চমৎকার । একটা চকলেটের এড ।
আমাদের ব্লগে এমন অনেকের পোস্ট কিংবা মন্তব্য আপনারা দেখলে আপনাদের মেজাজ গরম হয় । পোস্ট পড়ে তখনই সেই ব্লগারের পোস্টে একটা জ্বালাময়ী মন্তব্য কিংবা সেটা নিয়ে আলাদা ভাবে পোস্ট দিয়ে ফেলেন সাথে সাথেই । এইকাজটা মোটেই করবেন না । যদি কারো পোস্ট পড়ে কিংবা মন্তব্য পড়ে আপনার ভাল না লাগে এবং সাথে সাথেই আপনি আরেকটা পোস্ট দিয়ে ফেলেন তাহলে অবশ্যই বুঝতে হবে যে আপার প্রতিক্রিয়া কোন সঠিক প্রতিক্রিয়া নয় । আপনার মন অশান্ত । আপনি সঠিক ভাবে চিন্তা ভাবনা করতে পারছেন না । এই অবস্থায় আপনি যাই লেখেন না কেন সেটা পরে যখন পড়বেন তখন মনে হবে যে এমন করে হয়তো নাও লিখলে চলতো ! পরে পস্তাতে হবে।
এই অবস্থার থেকে মুক্তির জন্য আগে কিছু খেয়ে আসুন । যদি ক্ষুধা অনুভব করে থাকেন তাহলে ভর পেট খেয়ে আসুন আর সেটা অনুভূত না হলে এককাপ কফি কিংবা কোন ডেজার্ট খান । তারপর আবারও সেই পোস্ট লেখার কথা চিন্তু করুন । খাওয়ার পরে একটা পার্থক্য আপনি ঠিক ঠিক বুঝতে পারবেন । আমার নিজের সাথে এমন অনেক কয়বার হয়েছে । কারো পোস্ট কিংবা মন্তব্য পড়ে খুব মেজাজ খারাপ হয়েছে, সাথে সাথেই একটা পোস্ট লিখেছি । সেটা ব্লগে দেওয়ার আগে দুপুরের ভাত খেতে গেছি । ফিরে এসে যখন আবার পোস্টটা পড়লাম তখন তখন সেই আগের মত আর কিছু মনে হল না । পোস্ট ড্রাফট আকারেই রয়ে গেল । এই রকম কত ড্রাফট পোস্ট জমা হয়ে আছে ।
অনেককেই দেখা যায় মন্তব্যের সাথে সাথে জ্বালাময়ী প্রতিউত্তর করে ফেলেন । তারপর কিছু সময় পরে দেখা যায় সেই মন্তব্য মুছে আবার নতুন মন্তব্য করেন । এমন মন্তব্য করে কী লাভ যদি পরে সেটা মুছে ফেলতে হয় ! এই কারণে বলি আগেই বরং সাবধান হোন । মাথা ঠান্ডা রেখে পোস্ট করুন, প্রতি উত্তরের আগে কিছু খেয়ে আসুন । দেখবেন অনুভূতি একেবারে বদলে গেছে । অবশ্য কিছু কিছু ব্যাপারে কোন ভাবেই মনভাব বদলায় না । সেটা অবশ্য অন্য ব্যাপার ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ১:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




