
সম্প্রতি বন্ধু মাসুম ব্লগে ছেড়ে চলে গেছে । ব্লগে মাসুমের নিক সাসুম । অনলাইনের যে অল্প কজন মানুষের সাথে আমার বাস্তবে জীবনে ভাল সম্পর্কে তাদের ভেতরে একেবারে উপরে দিকে মাসুমে অবস্থান । যেহেতু মাসুক চলে গেল তাই মনে হল ব্লগে ছেড়ে ব্লগাররা চলে যায় কেন সে টা নিয়ে একটা চিন্তা ভাবনা করা দরকার । তাই ব্যাপক গবেষণা করলাম এই দুইদিন । ইদানীং যে বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে খুব বেশি । কিছু একবার পেলেই হয় সেটা আগে সার্চ দিই গুগলে তারপর ইউটিউবে । কিছু না কিছু চলে আসেই প্রথমে । এখানেও চলে এল । Quara.com এ মনিরুজ্জান স্টুডেন্ট কয়েকটি কারণ লিখেছেন তার ভেতরে কয়েকটি তুলে দিচ্ছি - ভিজিটর না আসা, সাইট র্যাংক না হওয়া, গুগলের অন্যতম সমস্য ইনডেক্সিং, অনেকের বাজে কমেন্ট, আশানরুপ ফলাফল না আসা, এডসেন্স এর রিজেকশন, সাইটের বিভিন্ন Errors, নিজের করা কিছু ভুলের জন্য আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি । যদিও এই কারণ গুলো সব সামুর বেলাতে খাটে না । এরা হচ্ছে নিজেস্ব সাইট খুলে আয় করার জন্য ব্লগিং করে । আমরা অবশ্য সেই জন্য এখানে ব্লগিং করি না । তবে কয়েকটি অবশ্য মিল আছে যেমন ভিজিটর না আসা, বাজে কমেন্ট । শেষের টা তো খুব ভাল করে খাটে ব্লগ ছাড়ার জন্য ।
ইমাম উদ্দিন নামে আরেকজন লিখেছে, ব্লগিং ছেড়ে দিতে চেয়েছি অনেকবার, রাগে! দুঃখে। যখন আমি কষ্ট করে কনটেন্ট লিখি, কিন্তু অন্যরা সেটা কপি করে নিজের নামে নিজের সাইটে পোস্ট করে টাকা ইনকাম করে গুগল এডসেন্স থেকে।
চুরি করে চোর হওয়া যায়, কিন্তু ব্লগার হওয়া যায়না!
ইমাম সাহেব সম্ভবত সামুতে কোন দিন আসেন নি নয়তো নিচের শেষ লাইণটা সে বলতেন না ।
যাই হোক এবার বিবিসি বাংলার একটা রিপোর্ট পেলাম । সানজানা চৌধুরী রিপোর্ট টা লিখেছে । সেখানে কয়েকটা লাইন দৃষ্টি আকর্ষণ করলো । যেমন নজরুল নামের একজন বলেছেন, ব্লগকে আমাদের দেশে খুব নেগেটিভ ভাবে দেখা হয় । ব্লগারদের একটা গোষ্ঠী এখনও নাস্তিক হিসাবে দেখে । প্রাণনাশের হুমকি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে ব্লগাররা আর লিখতে চাননা ।
অন্য একজন মনে করেন যে কেবল বাংলাদেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই এমনটা হয়েছে । তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষ মানুষ ব্লগ থেকে অন্য সব প্লাটফর্মে গিয়ে হাজির হয়েছে ।
অন্য একজন মনে করেন যে এখন মানুষ ফেসবুক আর টুইটারে লিখতে বেশি পছন্দ করেন । প্রযুক্তির উন্নয়নে এই মাধ্যম গুলো আগের থেকেও আরও বেশি উন্নত আর আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে যা ব্লগকে ছাপিয়ে গেছে ।
প্রতিটি ব্লগারের ব্লগিংয়ের পেছনে একটা প্রধান কারণ হচ্ছে তার লেখা যেন বেশি সংক্ষক মানুষের কাছে পৌছায় । আর বর্তমান ব্লগ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে সেই পৌছানোটা আরও বেশি সহজ ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন মনে করেন যে ''একের পর এক ব্লগার হত্যার পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মামলার বিচার নিষ্পত্তি হয়নি। এজন্য হুমকির মুখে ব্লগাররা দেশ ছেড়ে চলে যায়। তারপর সরকার ব্লগিংকে নজরদারিতে আনায় মানুষ যে স্বাধীনভাবে লিখবে সেই জায়গাটা আর থাকেনি।'' (পুরো রিপোর্ট টা লিংক থেকে পড়ে নিতে পারেন)
একই রকম আরেকটা রিপোর্ট ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল একই সাইটে । সেখানেও বলতে গেলে একই ধরনের কথা বলা হয়েছে । রিপোর্টটা এখান থেকে পড়তে পারেন।
মোটামুটি নেটে আর কিছু খুজে পেলাম না । এবার বলি ব্লগাররা আসলে কেন ব্লগ ছেড়ে চলে যায়, আরও ভাল করে বললেন সামু ব্লগ ছেড়ে ব্লগাররা কেন চলে যায় । উপরের কারণ গুলো নিয়ে আলাদা ভাবে আসলে কিছু বলার নেই । নাস্তিক ট্যাগ, হত্যা হুমকি, সরকারি নিয়ন্ত্রন ইত্যাদির কারণে ব্লগ ছেড়ে চলে গেলে অনেকেই । এছাড়া আরও যে কারণে ব্লগ ছেড়ে ব্লগাররা চলে যাচ্ছে তা হচ্ছে -
১. বেশির ভাগ ব্লগারই আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কারণে ব্লগে আর লিখেন না । এক সময়ে সামুতে ব্লগিং করেছেন বলেই তাকে সারা জীবন সামুতে লিখতেই হবে এমন কোন কারণ নেই । এমন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক যে সকালে ঘুম থেকে উঠলেন তারপর মনে হল আর লিখবেন না সামুতে । মানুষের জীবনে আরও কত সময় কাজ থাকে । এই লেখালেখি ব্লগিং থেকে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ মানুষের জীবনে থাকতেই পারে । তাই ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার ।
২. সামু থেকে চলে যাওয়ার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে সামুর ব্লক হওয়াটা । মানুষ চাইলেই সামুতে ঢুকতে পারতো না তখন । বলা চলে সেই সময়েই সামু থেকে ব্যাপক হারে ব্লগার চলে গেছেন । এমন অনেকবার আমি নিজ চোখে দেখেছি যে অনেকেই ব্লগে ঢুকতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না । ভিপিএন দিয়ে এতো প্যারা নিয়ে মানুষ ব্লগে ঢুকতে চায় না । মানুষ সব সময় সহজ কিছু চায় । যে কাজে কঠিন্যের মুখোমুখি হতে হয় সেই কাজ কেন করবে সখন তার থেকেও সহজ উপায় রয়েছে । ইভেন এখনও অনেকে মোবাইল নেট ব্যবহার করে সামুটে ঢুকতে পারে না ।
৩. সামু ছেড়ে চলে যাওয়ার আরেকটা কার হচ্ছে ফেসবুকে যে রকম সুবিধা পাওয়া যায় সামুতে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না । অন্য সকল সুবিধা বাদ দিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে, ফেসবুকে বুকে একজন যে রকম স্বাধীনতা ভোগ করে ব্লগে সেই স্বাধীনতাটা নেই । ফেসবুকে আপনি চাইলে যা ইচ্ছে তাই বলতে পারবেন, গালী দিতে পারবেন । যদিও এখন ফেসবুক কিছু অটো সেন্সরশীপ তৈরি হয়েছে । এআই দিয়ে সেই শব্দ গুলো সেন্সর করা হয় তবে একটু বুদ্ধি খাটালেই সেটা এড়ানো সম্ভব । মোটকথা আমি চাইলেই ফেসবুকে কাউকে %^$ গালি দিতে পারি । কিন্তু এখানে সেটা সম্ভব না মোটেও । মানে আপনি হয়তো গালি দিতে পারবেন । এই যেমন একজন ব্লগার আমাকে গালি দিয়েছিলো কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই গালি মডারেটর প্যানেল দেখলে আপনাকে দির্ঘ্যদিন ধরে নীতিমালার আওয়াতায় নিয়ে আসবে । বাঙালী নিয়ম নীতি পছন্দ করে না । বাঙালীর নিয়ম নীতির ব্যাপারে মনভাব হচ্ছে সবার বেলাতে কঠোর ভাবে নিয়ম নীতি ফলো করা হবে কেবল আমার বেলা ছাড় দেওয়া হোক । এই ছাড় যখন না হয় তখন তাদের মনে বড় অভিমান জন্মে ।
৪. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কারণেও ব্লগ ছেড়ে অনেকে চলে গেছেন । আপনারা হয়তো বলবেন যে ফেসবুক তো অনেকেই লিখছেন তখন কী আইনের ভয় নেই । ফেসবুকে নিজের লেখার অর্ডিয়েন্স খুব সহজেই নিয়ন্ত্রন করা যায় । আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি আমার লেখা কে দেখবে বা না দেখবে। যেমন ফেসবুকে আমার প্রাইভেসী এমন ভাবে নিয়ন্ত্রিত আমি চিনি না এমন একটা মানুষও আমার লেখা দেখতে পারবে না । তাই মোটামুটি সেখানে আমি যেমন ইচ্ছে সেমন কিছুই লিখতে পারি কোন প্রকার ভয় ছাড়াই । কিন্তু এখানে এই সামুতে মাঝে মাঝে কিছু ব্লগে মন্তব্য করতে আমি ভয় পাই । কখনই এমন কিছু লিখি না যাতে করে একটা নির্দিষ্ট পক্ষের বিরাজভাজন না হই । আমি অতি সাধারণ মানুষ । এবং আমি জানি আমার মত এরকম অনেক অনেক মানুষ আছে যারা এখানে ঠিক এই কারণে লিখতে চায় না ।
৫. অনেকেই আছে ব্লগের মডারেশনের দোষ দেয় । মডারেশনের দোষ আসলে তারা কারণ ব্লগটা তাদের মন মত চলে না । তারা ঠিক যেমনটা মডারেশন প্যানেলের কাছে তেমন ভাবে মডারেশন চলছে না । যেমন একদল মনে করে ব্লগটা ঠিক ইসলাম বান্ধব নয়, এখানে শান্তিমত ধর্ম নিয়ে লেখা যায় না আবার আরেকদল মনে করে এখানে ব্লগটা মোল্লা মাদ্রাসায় পরিনত হয়েছে । তবে মডারেশন নিয়ে আমার নিজেরও অনেক অভিযোগ রয়েছে । সব সময়ই ছিল । সেই শুরু থেকে । নানান মানুষ নানান ভাবে সব সময়ই মডারেশন নিয়ে অভিযোগ করেই গেছে । অন্য মানুষকে কেন বলছি আমি নিজেই তো কত অভিযোগ করে গেছি । এখনো করি ।
আপাতত এই হচ্ছে ব্লগ ছাড়ার কারণ । ব্লগ থেকে ব্লগার চলে যাওয়ার কারণের মুলে আমার মনে হয় ফেসবুক সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াই দায়ী । আমার নিজের কথাই যদি ধরি, আমি দিনে কম করে হলেও ৪০ থেকে ৫০ বার ফেসবুক এপটা ওপেন করি । সেখানে সামু অনেক করি ১০ থেকে ১২ বার । সামুতে আসতে হলে আমাকে প্রথমে বাউজার ওপেন করতে হয়, তারপর বুকমার্কে গিয়ে সামুতে আসতে হয় । মন্তব্য করতে গেলে আবার আলাদা ভাবে লগিন করতে হয় । যদি ফেসবুকের মত এতোটা সহজ হত তাহলে হয়তো আরও বেশি বার সামুতে আসতাম আমি । এছাড়া ব্লগ সম্পর্কে নেগেটিভ মনভাব, ডিজিটাল আইন সাইট ব্লক তো আছেই । আর ব্যক্তিগত মান অভিমানও একটা কারণ হিসাবে ধরা যায় ব্লগ ছেড়ে যাওয়ার ।
শুরু করেছিলাম মাসুমের চলে যাওয়া দিয়ে । শেষ করি মাসুমকে দিয়েই । মাসুমের পোস্ট দেখে অনেকের মনে হতে পারে ও হয়তো এখন ব্লগ ছেড়ে দিয়েছে । তবে সামু স্বাভাবিক ব্লগিং ছেড়েছে প্রায় দেড় বছর আগে । কারণ অবশ্য আছে । ওর শেষ পোস্টের আগের পোস্ট পড়লে খানিকটা জানা যাবে হয়তো । তবে বর্তমান সময়ে মাসুম নিজে স্টার্টাপ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে । এই সময়ে ওর আসলে অন্য কোন দিকে তাকানোর সময় নেই । এখন কদিন ব্লগ তার জন্য বন্ধই থাকুক । পরে একটা স্টেবল অবস্থায় আসলে হয়তো মাসুম আবার ফিরে আসবে ।
এতো সময় পর্যন্ত পোস্টটা যারা পড়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ । তবে এসব নিয়ে এতো কিছু ভেবে লাভ নেই । কে থাকলো কে গেল সেটা দিয়ে ব্লগ চলবে না । ব্লগ চলবে আপন গতি্তে । কারো জন্য ব্লগ থেমে থাকে নি, থেমে থাকবেও না ।
শুভ ব্লগিং
pic source
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



