সকালে নাস্তার পরে আমার এক কাপ কফি খাওয়ার অভ্যাস অনেক দিনের । এই পানি গরম করার জন্য আমার ছোট একটা হাড়ি রয়েছে । হাড়ির উপরের দিকে আবার একটা চোট ছিদ্রও আছে । কিভাবে এই ছিদ্র হয়েছে সেটা অবশ্য আমার জানা নেই । একদিন গরম পানি কাপে ঢালতে গিয়ে গিয়ে দেখি মাঝ দিয়েও আরেকটা পানির ধারা পরছে । ভাল করে তাকিয়ে দেখি সেখান দিয়ে একটা ছিদ্র । একবার ভাবলাম নতুন আরেকটা হাড়ি নিয়ে আনি । তারপর ভেবে দেখলাম সামান্য এককাপ পানি গরম হয় । একটা ছোট্ট ছিদ্রের জন্য কোন সমস্যায় পড়তে হবে না । তারপর থেকে সেই ছিদ্রওয়ালা পাতিলই রয়েছে। যাই হোক আসল কথায় ফিরে আসি ।
অভ্যাসটা হচ্ছে এই পানি গরম দিয়ে আমি আবার নিজের ঘরে ফিরে আসি । মোটামুটি ১৫/২০ মিনিট পরে আবার রান্না ঘরে গিয়ে একবার দেখে আসি পানি গরম হয়েছে কিনা । বেশির ভাগ দিনেই পানি গরম হয় না । আবার কিছু সময় পরে গিয়ে সেই পানি নিয়ে আসতে হয় !
কিন্তু আজকে ঘটে গেল এক আচানক আর বিস্ময়কর ঘটনা । আমি রান্নাঘরে গিয়ে গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বালাতেই সেটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো । আমি কিছু সময় তীব্র বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম সেই জ্বলে ওঠা আগুনের দিকে । একবার মনে হল যে আমি হয়তো এখনও ঘুম থেকে উঠি নি । স্বপ্ন দেখছি । স্বপ্নে দেখছি সকালে কফি বানাতে গিয়ে এই রকম আগুন পেয়েছে । কারণ গত কয়েক বছর ধরে আমি এটা কল্পনাও করতে পারি না যে সকালে আমি পানি গরম কিংবা ডিম বাজতে এসে আগুন পেয়েছি । এমন সেই আগুনের তাপ থাকে সেখানে আদৌও আগুণ আছে কিনা সেটা বুঝতে কষ্ট হয় । কিন্তু আজকে ঘটলো সেই অবিশ্বাস্য আর বিস্ময়কর ঘটনা । আজকে আমি পানি গরম দিলাম । দুই মিনিটের মাথায় আমার পানি গরম হয়ে গেল । আমি ঘরে ঢুকে পিসিও অন করতে কিংবা অন্য কোন কাজ করতে পারলাম না । আগেই আমাকে কফির পানি নিয়ে আসতে হল । এমন ঘটনা কালে ভাদ্রে না, কখনই ঘটে না ।
কেবল আমার এলাকাতেই না, এই চিত্র ঢাকার অনেক এলাকাতেই । সকালে উঠে এখানে কোন ভাবেই গ্যাস থাকে না । রান্নার কোন উপায় নেই । একবার ভাবুন এক মগ পরিমান পানি গরম হতে যেখানে ১৫ মিনিট লাগে সেখানে অন্য কিছু আপনারা কিভাবে রান্না করতে পারবেন ! এই যে সকাল থেকে গ্যাস থাকে না । এটা চলে দুপুর দুইটা তিনটা পর্যন্ত । তারপর গ্যাস আসে ! প্রতিদিনের চিত্র এই একই । যদি দুপুর দুইটা তিনটার দিকে গ্যাসের চাপ আসে তাহলে মানুষজন রান্না করবে কখন আর দুপুরের খাবার খাবে কখন? এই গ্যাসের চাপ না থাকাটা এখন একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে গেছে । ঢাকার মানুষজন মেনে নিয়েছে। অথচ গ্যাস বিল কিন্তু বছর বছর বেড়েই চলেছে । এখন সেটা মাসে হাজার টাকার উপরে দেওয়া লাগে গ্যাস বিল অথচ গ্যাস থাকে না । এদেশের মানুষ এখন অবশ্য সব কিছুই মেনে নিয়েছে । অবশ্য যেভাবে উন্নয়ন হচ্ছে মেনে না নিয়ে উপায় আছে !
একটা মজার কথা বলি । আমাদের এখানে কদিন আগে গ্যাসের মিটার স্থাপনের একটা প্রোজেক্ট চলছিলো । এখন যে যে পরিমান গ্যাসই ব্যবহার করি না কেন মাসে একটা ফিক্সড টাকা বিল দিয়ে হয় । কিন্তু মিটার স্থাপনের ফলে তখন আর ফিক্সড বলে কিছু থাকবে না । যে যে পরিমান ব্যবহার করবে সেই পরিমান বিল দিবে । ভাল একটা সিস্টেম । কিন্তু এখন সেই প্রজেক্ট থেমে গেছে । অল্প কিছু বাড়িতে গ্যাসের মিটার লাগিয়ে তারা চলে গেছে । আর নাকি নেই মিটার । কবে আবার আসবে কে জানে । তবে আমার কেন জানি মনে হয় আর আসবে না । কারণটা বলি । যে অল্প কয়েকটা বাড়িতে তারা মিটার লাগিয়েছে তার ভেতরে আমার এক বন্ধুর বাড়িও আছে । ওর বাসায় এখন মাসিক গ্যাস বিল কত আসে জানেন? সাড়ে চারশ পাঁচশ ! যে পরিমান ব্যবহার সেই পরিমান বিল । ও তো খুবই খুশি । কারণ এমনিতেও এখানে অর্ধেক দিন কোন গ্যাস থাকে না । কিন্তু আমাদের দেখেন গ্যাস না থেকেও সেই হাজার টাকার উপরে ঠিকই বিল দেওয়া লাগছে । আমারও প্রথমে মনে হচ্ছিলো যে মিটার সেট করলে হয়তো অনেক টাকা বিল আসবে । সম্ভবত সরকারও প্রথমে ভেবেছিলো মিটার সেট করলে আগের থেকে বেশি বিল আসবে কিন্তু দেখা গেল হিতে বিপরীত হয়েছে । গ্রাহকদের প্রকৃত বিল আসা শুরু করেছে যেটা কিনা অর্ধেক । এখন সব বাসায় যদি এই মিটার সেট করে দেয় তাহলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল তারা পাবে অর্ধেক । মানে হচ্ছে একই পরিমান গ্যাসের সেবা দিয়ে আয় নেমে আসবে অর্ধেকে । এটা সরকার বুঝতে পেরেছে । এইজন্য এই প্রোজক্ট থেমে গেছে । তবে আমি আশাবাদি যে ফির আসবে । তখন যে পরিমান গ্যাস ব্যবহার করবো সেই পরিমান বিল দিল !
যাইহোক আবারও ফিরে আসি রান্নাঘরে । সকাল বেলা এই দাউদাউ করে আগুন পাওয়ার ঘটনাটা আসলেই আমার জীবনে এক বিস্ময়কর ঘটনা । এমন ঘটনা অনেক দিন পরে ঘটলো । আজকের দিনটাই বিস্ময় দিয়ে শুরু । না জানি সামনে আরও কত কী আছে ! আজকে দেখলাম নেডার্সল্যান্ডের কাছে সাউথ আফ্রিকা হেরে গেছে । অবশ্য এটা স্বাভাবিক ঘটনা । বিশ্বকাপে সাউথ আফ্রিকা সব সময় এমনই করে । বাংলাদেশের খেলা চলছে । দেখা যাক তারা কী করে !
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



