somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরুতন্ত্র :D

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটি বিশাল গরুর ফার্ম । এখানে বাস করে দেশের সব থেকে ভাল মানের গরু । গরু গুলো মূলত পালন করা হয় দুধের কারণে । তবে আলাদা কিছু গরু পালন করা হয় কুরবানির কারণে । এই ফার্মের প্রধান ব্যবসা হচ্ছে দুধ বিক্রি । দেশের সব বিখ্যাত কোম্পানি গুলো এই খামার থেকেই গরুর দুধ নিয়ে যেত । এই চাহিদা ছিল খুব বেশি । তাই ফার্মের গরুর গুলোর প্রতি ফার্মের কর্তার ছিল বিশেষ নজর । সব রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হত তাদের । তাদের জন্য আলাদা মান সম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থা করা হল । তাদের আনন্দ বিনোদনের ব্যবস্থা করা হল । ফার্মের ভেতরে তাদের থাকার জায়গার উন্নত করা হল । সেই সাথে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ফার্মকে আরও বড় করে তোলা হল । সেই সাথে তাদের দেখা শোনা করার জন্য অভিজ্ঞ রাখাল রাখা হল । এখন আমরা তো জানি মানুষ বসতে দিলে শুতে চায় ঠিক তেমন ভাবে গরু গুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়তে লাগলো । তাদের ভেতরে গরু তান্ত্রিক মনভাব বৃদ্ধি পেল । তারা এই চাহিদা নিয়ে আন্দোলন করা শুরু করলো যে তাদের দেখা শোনার দায়িত্ব কার উপর ন্যস্ত হবে সেটা তারা নিজেরা নির্বাচন করবে । অন্য কেউ সেটা ঠিক করতে পারবে না । ফার্মের মালিক দেখলে দুধ যেহেতু আসতে তাই তাদের এই দাবিও পুরণ করা হোক । ঠিক হল যে গরুরাই ঠিক করবে সে তাদের রাখাল কে হবে ।

এখন এই আধিকার সফল ভাবে আদায় করার পরেই তারা নিজেদের ভেতর পরামর্শ করতে শুরু করে দিলো। ফার্মে ছিল তিনজন প্রধান রাখাল । এদের ভেতরে দুই জনের বয়স একটু একটু বেশি । একজনের বয়স ছিল ৫৪ আরেকজনের বয়স ছিল ৫৯ । দুইজন বেশ অভিজ্ঞ রাখাল কোন সন্দেহ নেই তবে দুইজনই ছিল বয়সে একটু বেশি । গরুদের সাথে দৌড়িদৌড়ি করে তারা ঠিক পেরে উঠতো না । তারা দিনের ভেতরে বেশির ভাগ সময়ই বিশ্রাম নিয়ে থাকতো । তবে তার মানে এই না যে তারা নিজেদের কাজে অবহেলা করতো । অনেক গরুই চাইতো তাদের রাখাল যেন এই দুইজনের ভেতরে হয় । আবার অনেক গরুই তাদের পছন্দ করতো না । তাদের মতে রাখাল হওয়ার জন্য একটু চটপটে লোক দরকার । আরও একজন রাখাল ছিল যার বয়স ছিল কম । তার অভিজ্ঞতা কম ছিল তবে শরীরে এনার্জির কোন অভাব ছিল না । অনেকে চাইতো সেই কম বয়সী রাখালই যেন তাদের দেখা শোনা করে । এই নিয়ে গরুদের ভেতরে ছিল মতভেদ । একেক জন একেকজনে কে তাদের রাখাল হিসাবে নির্বাচন করতে রাজি । আস্তে আস্তে ভোট এগিয়ে এল ।

এদের ভেতরে এক বুড়ো গরু খুব করে চাইতো যে কোন ভাবেই কম বয়সী রাখালটা নির্বাচিট না হয় । এর পেছনে অবশ্য কারণ ছিল বেশ । এই কম বয়সী রাখাল প্রায় লাঠি দিয়ে এই বুড়ো গরুর পাছায় পেটাতো । কারণ দিনের বেশির ভাগ সময়ই এই বুড়ো গরু বসে বসে ঝিমাতো । কোন কাজ করতো না এবং এখানে দেখা গোবর ফেলতো । এটা দেখলেই রাখাল রেগে যেত আর পেটাতো । এই বুড়ো গরু জানতো যে যদি কম বয়সী রাখালটি নির্বাচিত হয়ে যায় তাহলে তার কপালে খারাবি আছে । তাই সে গরু থেকে গরুর কাছে গিয়ে এই কম বয়সি রাখাকে ভোট না দেওয়ার জন্য বলতে লাগলো । অনেকে যেমন তার সাথে একমত হল আবার অনেকে একমত হল না । তাদের কাছে কম বয়সী রাখাই বেস্ট অপশন মনে হতে লাগলো ।

বুড়ো গরু পড়লো ঝামেলায় । কারণ অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে কোন ভাবেই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে কে নির্বাচিত হয়ে যাবে । যে কেউ নির্বাচিত হতে পারে । কিন্তু সেটা তো কোন ভাবেই হতে দেওয়া যায় না । যদি কম বয়সী রাখান নির্বাচিত হয়ে যায় তাহলে তার পেছনে আবারও বাড়ি পড়বে । তখন বুড়ো গরু নতুন তত্ত্ব আবিস্কার করলো । তার মতে গরুতন্ত্রে সবাইকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না । সঠিক ভাবে নির্বাচনের ফলাফল পেতে এবং তাদের গরু কল্যানের জন্য সব গরুকে ভোট দেওয়া অধিকার দেওয়া ঠিক হবে না । সে এই নিয়ে জনমত গঠন করতে লাগলো যে সকল গরুর ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকা উচিৎ নয় । কয়েকজন তো আপত্তি তুলল এই যে গনতন্ত্রে তো সকল সুস্থ স্বাভাবিক এবং ১৮ বছর বয়সের উপরের জনগন ভোট দেওয়া ক্ষমতা রাখে । তখন বুড়ো গরু বলে উঠলো ওটা গনতন্ত্রে হতে পারে কিন্তু মনে রাখতে হবে যে এটা হচ্ছে গরুতন্ত্র । এখানে আমরা যারা যারা আমাদের গরু কল্যানের জন্য স্বাস্থ্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে কেবল তাদেরকেই ভোট দেওয়া অধিকার দিবো যাতে আমরা একটা উন্নয়ন মূলক গরুতান্ত্রিক ফার্ম গড়ে তুলতে পারি ।
কেউ কেউ তখনও খানিকটা ইতস্তত ভাব নিয়েই আছে । কারণ কেউ ভোট দিবে আবার কেউ দিবে না তা তো হতে পারে না । তখন বুড়ো গরু আবার বলল, মনে রাখতে হবে আমাদের ফার্ম আমাদেরকেই দেখা শোনা করতে হবে । আর সবার জ্ঞাণ বুদ্ধি তো সমান না । অনেকে আছে যারা নিজেদের ভাল বুঝতে পারে না । তখন সেই ভালটা অন্যকে দেখিয়ে দিতে হয় । আমরা অভিজ্ঞ আমরা জ্ঞানী আমরা জানি যে আমাদের জন্য কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ । কোন রাখাল আমাদের জন্য ভাল হবে সেটা কেবল আমরা জানি । আর আমরা কি ফার্মের খারাপ চাইতে পারি বল !
এবার কাজ হল ! সবাই সম্মতি দিয়ে রাজি হয়ে গেল । ঠিক হল যে ফার্মের কল্যানের জন্য সবাইকে ভোট দিতে দেওয়া হবে না । কিছু কিছু গরু যারা ফার্মের কল্যান বুঝে না তাদের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে । দেখা গেল যে যে গরু সেই কম বয়সী রাখালকে ভোট দেওয়ার পক্ষ ছিল তারা গরুতন্ত্রে ভোট দেওয়ার অযোগ্য হিসাবে বিবেচিত হল । এরা গরু কল্যানের জন্য ক্ষতিকর হিসাবর বিবেচিত হওয়ার কারণেই তাদের ভোটদান ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটাই গরুতন্ত্রের আসল মুলমন্ত্র !

গরুতন্ত্র জিন্দাবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১৩
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×