আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কথা আপনারা সবাই জানেন। এখন এই প্রযুক্তির যুগে এই এআই দিয়ে করা যায় না এমন কোন কাজ নেই । কদিন আগেই আমি মিডজার্নি নিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম সেখানে মিডজার্নি দিয়ে কিভাবে মিনিটের ভেতরেই চমৎকার সব ছবি আঁকা যাচ্ছিলো সেটা আপনারা দেখেছেন । আমি এখনও নিয়মিত এই মিডজার্নি ব্যবহার করি আমার ব্লগের নানান ছবির জন্য । এরপর এল চ্যাটজিপিটি । চ্যাটজিপিটি নিয়ে ব্লগার কলাবাগান পোস্ট দিয়েছিলেন । যারা পোস্ট টি পড়েন নি তাদের জন্য বলি এটা মিডজার্নির মতই একটা এ আই প্রোগ্রাম । মিডজার্নিতে যেমন আমি যা বলছিলাম রোবট ঠিক সেই মোতাবেগ ছবি একে দিচ্ছিলো এখানে আপনি রোবটকে যা বলবেন সে ঠিক সেই মোতাবেগ কাজ করে দিবে । উদাহরন স্বরূপ আমি নিচে বললাম আমাকে একটা হরর গল্প লিখে দাও। সে আমাকে তাৎক্ষনিক ভাবে নিচের গল্পটি লিখে দিল !
হরর গল্প
অনেক দিন আগের কথা । এক জঙ্গলের পাশে একটি ছোট শহর ছিল। নগরবাসীরা প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করত। শহরের সব বসবাসকারী বনটিকে পবিত্র বলে মনে করত। তারা বিশ্বাস করত যে বন একটি শক্তিশালী আত্মা দ্বারা সুরক্ষিত আছে । এবং এই আত্মাটি তাদের বিপদ থেকে নিরাপদ রাখে।
কিন্তু একদিন বাইরে থেকে একদল লোক শহরে এসে হাজির হল । তারা বনের কাঠ কেটে সেগুলো বিদেশে রপ্তানি করার এসেছিলো । শহরের লোকেরা তাদের চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো, বাঁধা দিতে চাইলো কিন্তু তাদের কাছে ভারী অস্ত্র ছিল । শহরের লোকজন কিছুই করতে পালরো না । বাইরের লোকেগুলো বনের গাছ ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে গেল । শহরের লোকজন ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে রইলো কেবল ।
বাইরের লোকেরা যখন গাছ কাটতে শুরু করে, তখন ঘন কুয়াশা নেমে এল পুরো শহর জুড়ে। শহরবাসীরা ডালপালা ও পাতা ঝরার শব্দ শুনতে পেল, কিন্তু ঘন কুয়াশার মধ্যে তারা কিছুই দেখতে পেল না।
হঠাৎ কুয়াশা সরে গেল এবং শহরবাসী দেখতে পেল যে বনের আত্মাটি একটি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। দেখতে বিশাক একটি ভয়ংকর প্রাণীর যার বাহুগুলির জন্য ঝাঁঝালো শাখা এবং বাঁকানো শিকড় দিয়ে তৈরি একটি মুখ ছিল। এটা শহরের উপর আছড়ে পড়ল। আত্মাটি চোখ রাগে জ্বলছে।
তখন বহিরাগতরা পালানোর চেষ্টা করলো বটে কিন্তু তারা পারলো না। ভয়ংকর প্রাণীটি তার ডালপালা নিয়ে এগিয়ে গেল এবং একে একে সব বাইরের লোকগুলোকে টেনে বনের ভেতরে নিয়ে গেল। নগরবাসী সেই বাহিরাগতদের চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলো ।
শহরবাসী বুঝতে পারলো যে আত্মা তার প্রতিশোধ নিয়েছে। তখন তারা বনের আত্মার কাছে এই প্রতিজ্ঞা করলো যে তারা আর কখনও বনের কোন ক্ষতি করবে না এবং সব সময় বনকে রক্ষা করবে ।
আজও শহরবাসীরা বলে যে যদি তুমি সেই বনের ভেতরে প্রবেশ কর তাহলে সেই লোকগুলোর চিৎকার শুনতে পাবে । এখনও শহরের লোকজন বনটাকে রক্ষা করে চলেছে ।
তারপর বললাম একটা রোমান্টিক গল্প লিখে দিতে। সে সেটাও লিখে দিল সাথে সাথেই।
রোমান্টিক গল্প
সারাহ নামে এক যুবতী ছিল, সে সমুদ্রের ধারে একটি ছোট গ্রামে বাস করত। সে সারা দিন বাগানে কাজ করতো আর রাতের বেলা আগুনের পাশে বই পড়ে সময় কাটাতো । সারাহ সর সময় চাইতো সত্যিকারের ভালবাসা । সে স্বপ্ন দেখতো একজন মানুষ তাকে সত্যি সত্যিই মন থেকে ভালবাসোবে। কিন্তু সে তখনও এমন কারো দেখা পায় নি ।
সারাহ মাঝে মাঝে বিকেলে সমুদ্রের তীরে হাটতে যেত । একদিন সমুদ্র সৈকতে হাঁটার সময়, সে জ্যাক নামে এক সুদর্শন যুবককে দেখতে পেল। জ্যাক জাহাজ ডুবির কারণে এই তীরে এসে পড়েছে। জ্যাককে দেখে সারাহর মনে একটু দয়া হল এবং সে জ্যাককে নিজের বাসায় থাকার প্রস্তাব দিল ।
যতই দিন যেতে লাগলো সারাহ আর জ্যাক একে অন্যের আরও কাছাকাছি চলে এল । এক সময় সারাহ অনুভব করলো যে সে জ্যাকের প্রেমের পরেছে । এবং জ্যাকলে এই কথা বলতে জ্যাকও বলল যে সেও সারাহর ব্যাপারে ঠিক একই অনুভূতি পেষণ করে ।
কিন্তু তাদের সুখ স্বল্পস্থায়ী ছিল, কারণ জ্যাক খবর পেল যে, তার জাহাজ মেরামত করা হয়ে গেছে এবং তাকে বাড়ি ফিরতে হবে। সারাহ যদিও কষ্ট পেল এই ভেবে যে জ্যাককে চলে যেতে দিতে হবে কারণ জ্যাককে তার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা যাবে না ।
চলে যাওয়ার সময় জ্যাক প্রতিশ্রুতি দিল যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে ফিরে আসবে। সারাহও অপেক্ষা করতে লাগলো জ্যাকের ফিরে আসার। সারা আগের মত করে সারা দিন নিজের বাগানে কাজ করে এবং রাত হলে আগুনের পাশে বই পড়ে সময় কাটাতে লাগলো ।
মাস কেটে গেল, বছর গেল । এক সময়ে সাহার আশা হারাতে শুরু করল। কিন্তু একদিন যখন সে তার বাগানে দেখছিল, সে দিগন্তে একটি জাহাজ দেখতে পেল। তিনি সৈকতে দৌড়ে গিয়ে দেখলেন যে এটি জ্যাক, অবশেষে তার কাছে ফিরে এসেছে!
তারা আবার একত্রিত হয়েছিল এবং একে অপরের প্রতি তাদের ভালবাসা আরও শক্তিশালী হয়েছিল। জ্যাক সারাহকে তাকে বিয়ে করতে বলেছিল এবং সে হ্যাঁ বলেছিল। তারা সুখে সংসার করতে শুরু করলো এবং তাদের প্রেমের গল্প গ্রামে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।
তাদের ভালবাসা খাঁটি এবং সত্য ছিল এবং এটি সময়ের পরীক্ষায় দাঁড়িয়েছিল। তারা একে অপরের অস্তিত্বে ছিল, এবং কোন দূরত্ব বা সময় এটি পরিবর্তন করতে পারে নি।
এছাড়াও আমি নানান ব্লগ পোস্ট লিখে দেওয়ার জন্য, মুভি রিভিউ লিখে দেওয়ার জন্য বললাম সে সব কিছু তখনই লিখে দিল । আগে আমরা যে কোন কিছু জানার জন্য গুগলে খোজ করতাম । এখন থেকে আমি এআই কে বলছি যা জানার সেটা বের করে দিতে এবং সে আমাকে সেটা বের করে দিচ্ছে । কেবল যে এই ধরনের লেখা সেটাও না । গতকাল আমি তাকে একটা এইচটিএমএল পেইজ ক্রিয়েট করতে বললাম সেটা মুহুর্তের ভেতরে তৈরি হয়ে গেল । এছাড়া আমি আমার ব্লগের কন্ট্যাক্ট পেইজ, এবাউট পেইজ লিখে নিলাম মুহুর্তের ভেতরে । এরকম আরও কত কাজই না করিয়ে নেওয়া যাবে ।
এখন আপনাদের কাছে কী মনে হচ্ছে ? রোবট কি মানুষের স্থান নিয়ে নিবে সামনে? এমনিতেই মেশিন অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের স্থান দখল করে নিয়েছে । সামনে আরও নিবে । তবে আমার মনে হয় না কিছু ক্ষেত্রে মেশিন মানুষের স্থান দখল করতে পারবে । প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক ক্রিয়েটিভ কাজ গুলোর ক্ষেত্রে এআই কখনই মানুষের স্থান দখল করতে পারবে না । যেমন মিডজার্নি আসার সময়ে আমাদের মনে হয়েছিলো যে গ্রাফিক্স ডিজাইনার কিংবা শিল্পিদের সময় বুঝি এবার শেষ । কদিন খুব হাইপ চলল । কিন্তু সেটা এখন থেমে গেছে । ডিজাইনার দের ডিমান্ড কিন্তু যেমন ছিল তেমনই আছে । আসলে যে ছবি আঁকতে মিনিটের সময় লাগে সেই ছবির মূল্য খুব বেশি না । একটা প্রডাক্ট ডিজাইণ করতে ডিজাইনারটা ঘন্টা প্রতি ২০ ডলার থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত চার্জ করে থাকে । এখনও করে চলছে । এটার স্থান কখন মিড জার্নি কিংবা অন্য কোন এআই নিতে পারবে না। এই যে চ্যাট জিপিট মুহুর্তের ভেতরে গল্প লিখে দিচ্ছে কপি ইমেইল লিখে দিচ্ছে এই কারণে কী কপিরাইটারদের দিন শেষ হয়ে যাবে কিংবা লেখকদের দিন শেষ হবে ?
আসলে কোন দিন লেখকদের দিন শেষ হবে । এআইয়ের পক্ষে কোন দিনই মানুষের মত করে একটা গল্প লেখা সম্ভব হবে না । এই কেবল সেই জিনিসই লিখতে পারবে কিংবা সেই আইডিয়াই জেনারেট করতে পারবে যা আগে একজন রক্তমাংসের মানুষ বলে গেছে । মানুষ যেমন একেবারে নিজ থেকে আলাদা ভাবে কোন গল্পের আইডিয়া নিয়ে লিখতে পারে এআই সেটা পারবে না । এআইকে নির্ভর করতে হবে মানুষের উপরেই । হ্যা একটা নতুন আইডিয়া জেনারেট হলে রোবট সেটা কে নানান ভাবে উপস্থাপন করতে পারবে ।
আর বাংলা সাহিত্যের কথা যদি বলি, রোবট কেন রোবটের বাপ এলেও কোন দিন এই কাজটা করতে পারবে না । এই মধুর ভাবে লেখকরা যেমন করে মনের ভাব প্রকাশ করে কোন বোরটের পক্ষে সেটা কোন দিন সম্ভব হবে না । কবিতার কথা বাদই দিলাম ।
তবে যে যে সব ফর্মেটের লেখা একেবারে ফিক্স সে সবের বেলাতে এআই দখল করে নিতে পারে । এই যেমন বললাম সিভি লেখা, এবাউট পেইজ লেখা, ফরমাল ইমেল লেখা এই ধরনের অনেক অনেক লেখার বেলাতে মানুষ হয়তো এরপর থেকে এআইয়ের উপরেই নির্ভর করবে যেখানে কাজটা প্রায় নিখুঁত আর সহজেই হয়ে যাচ্ছে ।
pic source
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০১