somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্দেশ মোতাবেক কিংবা স্ব-ইচ্ছেতে বৈশাখ উৎযাপন

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন প্রথম ক্লাস শুরু হয়, সেটা ছিল এপ্রিল মাস । অবশ্য সেইবার ঢাকার পহেলা বৈশাখ উৎযাপন, মানে রমনার বটমূলে যাওয়া হয় নি । তখন আসলে কারো সাথেই পরিচয় হয় নি। ভয়ে ভয়ে ক্লাসে গিয়ে এককোনায় চুপচাপ বসে থাকি । ক্লাস শেষ করে সোজা বাসায় চলে আসি । মূলত এই ছিল প্রথম কয়েক মাসের ঢাকার জীবন । তবে পরের বছর অনেকের সাথেই পরিচয় হয়ে গেল । তাদেরই একজন সাথে মিলে ঠিক করলাম যে সেবার রমনাতে গিয়ে হাজির হব সকাল বেলা ।

আমার অবশ্য বরাবরই সকালের সকল প্রোগ্রামই অপছন্দের । সকাল হচ্ছে ঘুমের সময় । ষেই সময়ে থাকতে হবে বিছানাতে ! এই সময়ে বাইরে আসলে কি ! তবে সেইবার রমনার বটমূলে যাওয়ার আগ্রহের কমতি ছিল না । প্রথমবারের মত যাবো রমনার বটমূলে । গিয়ে গান শুনবো । এতোদিন এই গান এই অনুষ্ঠান আমি টিভিতে দেখে এসেছি । টিভির পর্দায় সব কিছুই খুব আকর্ষনীয় মনে হয় । আমারও মনে হয়েছিলো যে সরাসরি দেখলে সম্ভবত আরও বেশি ভাল লাগবে ।

যথারীতি হাজির হলাম পহেলা বৈশাখের দিন শাহবাগে । মোহাম্মাদপুর থেকে যে সব বাস শাহবাগ হয়ে মতিঝিল যায় সে সব বাস থেমে গেল কাটাবনে । আজকে এই রুটের বাস গুলো আর সামনে যাবে না । এখান থেকে আবার ফিরে যাবে । নেমে পড়লাম বাস থেকে । তারপর হাটা দিলাম শাহবাগের উদ্দেশ্যে । দেখতে পেলাম আরও অনেক মানুষ আমার সাথে হেটে যাচ্ছে শাহবাগের দিকে । যখন শাহবাগ এসে পৌছালাম তখন আমার মনে হল যেন আমি এক মানুষের মহাসমুদ্রে এসে পৌছিয়েছে । যেদিকেই তাকাই সেদিকেই কেবল মানুষ আর মানুষ । বুড়ো জোয়ান শিশু সব ধরণের মানুষ । আমি আসলে তখনও ঢাকার এই ভীড়ের সাথে অভ্যস্ত হতে পারি নি । আমি রাস্তার একটা ডিভাইডারের উপর দাড়িয়ে কিছু সময় এদিক ওদিক তাকিয়ে কোন দিকে ভীড় কম সেটা বোঝার চেষ্টা করলাম । এদিকে সেই বন্ধুকে কয়েকবার ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম কিন্তু কল যাচ্ছে না । কিংবা কল ঢুকলেও কথা শোনা যাচ্ছে না । অনেক কয়বার চেষ্টার পরে বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে পারলাম । তাকে বলতে পারলাম যে কোথায় আছি । সে এসে যোগ দিল আমার সাথে । দুজনে এবার এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম । কোথায় যাবো কী করবো এটা ভাবছি ।

আসলে যা ভেবে এসেছিলাম তার কিছুই মনে হচ্ছে না । ভেবেছিলাম যে খুব ভাল লাগবে বুঝি । মানে টিভিতে দেখে যেমন মনে হয় তেমন কিছুই মনে হল না । প্রচন্দ গরম সেই সাথে মানুষের ভীড় । এই অভিজ্ঞতার কারণে তারপর থেকে আর কখনই এই স্থানে আমি যাই নি । এর থেকে নিজের বিছানাতে ঘুমিয়ে থাকাটাই আমার কাছে বেশি উপাদেয় মনে হয়েছে ।

তবে তার মানে এটা না যে যারা এই উৎসবে যোগ দিয়ে সেখানে গিয়ে হাজির হচ্ছে তাদের ব্যাপারে আমার নেগেটিভ মনভাব । কেউ যদি নিজ ইচ্ছে এই ভিড় সহ্য করে আনন্দ খুজে নিতে পারে তাহলে সেটাও খারাপ নয় মোটেই । নিজের ইচ্ছে মানুষ যা ইচ্ছে করতে পারে যত সময় না তা অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায় ।

এইবারও বৈশাখ উৎযাপন হবে । যদিও এটা রোজার মাস । তবে আমি ঠিক ঠিক জানি যে অনেকই রমনার বটমূলে গিয়া হাজির হবে। সেটা তারা করবে নিজ ইচ্ছেতেই । কিন্তু ধরেন এমন যদি হয় আপনাকে বলা হল আপনি সেই রমনার বটমূলে যেতে বাধ্য ! সকালবেলা সেখানে যাওয়াটা মেন্ডাটরি তাহলে কেমন হবে?

কয়েকদিন ধরে কী পরিমান গরম পড়েছে সেটা আপনারা যারা ঢাকাতে থাকেন তারা ভাল ভাবেই বুঝতে পারছেন । গরমের এই রোজাতে যাতে কষ্ট না হয় তাই একেবারে শুরু থেকে ছুটি দিয়ে হয়েছে । এমনটাই কয়েক বছর ধরে চলে আসছে । কিন্তু এবার DSHE থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে প্রতিটি মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেন পহেলা বৈশাখ পালন করা হয় । এবং এই বৈশাখ পালনের জন্য ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে র‌্যালি যেন করানো হয় । আমি আসলে ব্যাপারটা কল্পনা করার চেষ্টা করছি । আগামী শুক্রবার বাচ্চাদের দিয়ে এই র‌্যালি করানোর দৃশ্যটা কেমন হতে পারে !

মানুষ যা নিজের ইচ্ছেতে উৎযাপন করতে চায় তাকে সেটা করতে দেওয়া হোক । কিন্তু কাউকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে নির্দেশ দিয়ে এই উৎসবে যোগ দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয় । আনন্দ উৎসব কখনই জোর করে, নির্দেশ দিয়ে কিংবা আইন করে টিকিয়ে রাখা যায় না । পহেলা বৈশাখ বাংলার মানুষ পালন করে এসেছে নিজ ইচ্ছেতেই । এই ঐতিহ্য অনেক পুরানো । মানুষ এটা সব সময় পালন করে । সেটা করতে দেওয়া হোক তাদের নিজের ইচ্ছেতে । যে এটা পালন করতে চায় তাকে যেন কেউ বাঁধা দিতে না পারে সেটা নিশ্চিত করা হোক ঠিক একই ভাবে যে এটা পালন করতে না চায় তাকে যেন জোর জবরদস্তি না করা হয় সেই দিকেও নজর দেওয়া উচিৎ । মানুষ চাপিয়ে দেওয়া জিনিস পছন্দ করে না, তা যেটা যত মহান ব্যাপারই হোক না কেন ! এই ব্যাপারটা কর্তৃপক্ষের মনে রাখা উচিৎ ।


News link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৪:০৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×