somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগার শেরজা তপনের সাথে নেপাল ভ্রমণ

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ডেভিস ফলসের পানির মূল উৎস ফেওয়া হ্রদ যা পাথর বেষ্টিত পথে প্রচন্ড গতিতে এসে জলপ্রপাতের দিকে ধাবিত হয় । ৫ কিলোমিটার পথে অতিক্রমন করে অবশেষে জল অদৃশ্যহয় । এই জলপ্রপাত নিয়ে নানান গল্প প্রলচিত আছে । আবার অনেক গল্প হারিয়েও গেছে । সব থেকে প্রচলিত গল্প গুলোর একটা হচ্ছে ডেভিস নামের একজন পর্বত আরোহী বা হাইকার পর্বতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ করে জলে ভেসে যায় এবং ভূগর্ভস্থ প্যাসেজে চিরোতরে হারিয়ে যায় । আরেকটি গল্প হচ্ছে নেপালে ঘুরতে আসা মিসেস ভেডিস একদিন ফেওয়া হ্রদে গোসল করছিলেন । হঠাৎ বড় পানির ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় । তিন দিন পরে তার লাশ পাওয়া যায় । যদিও এই সব গল্পের কোন সঠিক ভিত্তি নেই ।

ডেভি'স ফলস (ভ্রমণ কাহিনী)
-শেরজা তপন

বর্তমান সময়ে ভ্রমণে মানুষ অন্যকে দেখানোর ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী । ক্ষণে ক্ষনে আপডেট দাও, ছবি দাও, কোথায় যাচ্ছো, কী খাচ্ছ, সব সোস্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দুনিয়ার মানুষকে জানাও । আগে এই সব ছিল না কিছুই । তখন ভ্রমণ মানে কেবল ভ্রমণই ছিল । নিজের মনকে শান্তি দেওয়ার জন্য ছিল । এখন অবশ্য সে সব কিছু নেই । এই ভ্রমণ গল্পে সেই ইন্টারনেট যুগের আগের ভ্রমণ । সালটা ২০০৩ । আমাদের ব্লগার শেরজা তপন সেই সময়ে গিয়েছিলেন পাশের দেশ ভারত ও নেপাল ভ্রমণে । ঈদের দুদিন আগে প্রথমে গিয়া হাজির হলেন দার্জিলিং । তারপর সেখান থেকে কাঠমান্ডু হয়ে পোখরা । মোট পনের দিনের বড় একটা ভ্রমণ । সেই এখনকার মত ইন্টারনেট ছিল না । ভ্রমনের জন্য এতো লিংক কিংবা রিভিয়ের সিস্টেম ছিল না । কোন জায়গাটা কেমন হবে আর সেখানকার সার্ভিসই বা কেমন এসব হবে এসব আগে থেকে জানার কোন উপায়ও ছিল না । অনেকটা ভাগ্যের উপর এবং যদি কেউ আগে গিয়ে থাকে তবে তাদের কাছ শুনে টুনে যত দুর যাওয়া যায় ।

২০০৩ সালের ঈদের সময় । চারিদিকে ঈদের আমেজ । এই সময়ে ভ্রমণ শুরু হল । শুরুতে অনেকেই যাওয়ার পরিকল্পনা করলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গেল নেপাল ভ্রমণে যাওয়ার জন্য হাজির হয়েছে মাত্র দুইজন । অবশ্য যাত্রাতে সব সময় যে সঙ্গীর দরকার হয় সেটাও না । একা একাও যাওয়া যায় । সেখানে দুইজন তো অনেক
ঢাকা থেকে বাস যোগে বুড়িমারি হয়ে ভারতে প্রবেশ । তারপর সেখান থেকে ট্যাক্সিতে করে শিরিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং। দার্জিলিংয়ে থাকা কালীন সময়ে সেই সময়ে বলিউড সুপারস্টার শাহরুন খানে এসে হাজির । ঈদের জামাত তার জন্যই খানিকটা দেরিতে শুরু হয়ে যদিও সেখানে তার দেখা আমাদের ব্লগার সাহেব পান নি । এমন কি পরদিন সকালের মনমুগ্ধকর সূর্যোদয় দেখানোর সময়ও মানুষের আগ্রহ সূর্যোদয় দেখার চেয়ে শাহরুকখানকে দেখার প্রতিই বেশি ছিল ।
নেপাল যাওয়ার পথে কিশোরী সুন্দরী কন্যার সাথে চোখাচোখী তারপর আলাপ । শেষে ইমেল আদান প্রদান । তখন আর এখনকার মত মোবাইলফোনের এতো ছড়াছড়ি ছিল না । ইমেইল ছিল ভরশা । আমার অবশ্য খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো যে দুই মাস পরে সেই কন্যা হোস্টেলে গিয়ে কি ইমেইল দিয়েছিল?

হোটেল ম্যানেজারকে সাথে বাত চিৎ অথবা রাজু সিংয়ের আন্তির ব্যবহার ব্যবহার আর বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট গুলো খোদ্দেরের অভাবে খাঁ খাঁ করাটারও ব্যাপারটাও আছে ।
কাঠমান্ডুর সাইট সিইং সাথে রাত ক্যাসিনোতে নিজের ভাগ্য পরীক্ষা । অথবা মন্দির দেখতে গিয়ে বিভৎস মরা পোড়ানোর দৃশ্য দেখে ভ্রমনের মজাটাই উবে যাওয়া থেকে শুরু করে, পোখরাতে বানরের সাথে মারামারি হতে হতে রক্ষা পাওয়া, সব কিছুর বর্ণনা রয়েছে বইতে । তারপর আবারও দেশে ফেরৎ আসা । সব মিলিয়ে দুজনে মোট খরচ হয়েছে চারশ ডলারের মত । জনপ্রতি ২০০ ডলার । এতো কম টাকায় এতো লম্বা একটা ভ্রমন দেওয়াটা এই সময়ে সম্ভব হত না কোন ভাবেই ।

ভ্রমন কাহিনী অনেক টা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর অবস্থা । প্রকৃত ভাবে আসল ভ্রমনের স্বাদ নিতে সেখানে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই তবে আমাদের সবার পক্ষে তো সব সময় সব জায়গাতে যাওয়ার উপায় থাকে না । সেই জন্য এই ভ্রমন কাহিনী । এই ডেভি'স ফলস ভ্রমণ কাহিনী ব্লগার শেরজা তপন মোটামুটি তার ভ্রমণ শুরু থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত সব টুকু লিখেছেন । পথে কোন দালালের খপ্পড়ে পড়েছেন কিভাবে পার হয়েছে এমন কোন হোটেলে শাওয়ারের পানি গরম ছিল কিনা সেটাও পর্যন্ত লিখেছেন বইতে । প্রশ্ন আসতে পারে যে এতো লম্বা সময় পরেও এতো কিছু কিভাবে মনে আছে । বইয়ের শুরুতেই অবশ্য এটা বলে দেওয়া আছে । ডায়রী আকারে সব কিছু লিখে রেখেছিলেন সেই সময়ে । তবুও এতো লম্বা সময় ধরে যে সেই লেখা টিকে আছে এটাই কিন্তু অনেক ব্যাপার । বর্ণনাতে কোন জড়তা নেই । আপনারা যারা তার ব্লগ পড়েন তার লেখা সম্পর্কে ধারণা আছে তাদের । যেহেতু ভ্রমন কাহিনী এবং অনেকটা বিস্তারিত ভাবে লেখা তাই আপনি যদি একটানা বইটা পড়তে যান তাহলে হয়তো আপনার মনে খানিকটা বিরক্তি আসতে পারে । আমি নিয়ম করে প্রতিদিন বইটা থেকে কয়েকটা চ্যাপ্টার পড়তাম । বিশেষ করে প্রতিদিন রাতে শোয়ার আগে এই পড়া হত ।

তবে বইয়ের ব্যাপারে যেটা বলতেই হবে সেটা হচ্ছে বইতে প্রচুর বানান ভুল । এটা নিশ্চিত যে বইটার প্রুফ দেখে নি কেউ । দেখলেও খুবই যাচ্ছেতাই ভাবে প্রুফটা দেখেছে । একটা বইয়ের প্রুফ ভাবে না দেখা হলে বই যত ভাল হোক না কেন তার আবেদন কমে যায় একেবারে । এছাড়া বেশ কয়েকটা লাইনে একটু অসংলগ্নতা দেখতে পেয়েছি। কয়েক স্থানে ''না'' বসে নি । এছাড়া বিরাম চিহ্নের ব্যাপারে বেশ গোলমাল দেখা দিয়েছে । পরের সংস্করণে অবশ্যই এই বইটার প্রুফ রিডিং আরো ভাল ভাবে দেখার অনুরোধ রইলো ।


বইটা কিনতে পারবেন রকমারি থেকেই । এখানে লিংক রইলো । কিছুটা অংশ পড়েও আসতে পারবেন ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৪৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×