somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ভাঙ্গা ল্যাপটপ

০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শুক্রবার রাতে আমার মনে হলো, আমি আমার ল্যাপটপে লিনাক্স ওএস সেটআপ দেব। যদিও আমি সারা জীবন উইন্ডোজ ব্যবহার করে এসেছি এবং লিনাক্স সম্পর্কে তেমন কিছুই জানি না। রাতে শুয়ে শুয়ে কয়েকটি ইউটিউব ভিডিও দেখলাম। পরদিন সকালে উঠে কাজ শুরু করলাম।

আমার ল্যাপটপটি অনেক পুরোনো। এটি কোর আই-সেভেন ফিফথ জেনারেশনের ল্যাপটপ। ফিফথ জেনারেশন বলতে নিশ্চয়ই বোঝেন, এটি কতটা পুরোনো! এত দিন ধরে এটি টিকে আছে, এটাই সবচেয়ে বড় বিস্ময়। শুধু টিকে থাকাই নয়, বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। এখন পর্যন্ত মাত্র একবার র‍্যাম বদলানো হয়েছে, একবার ব্যাটারি এবং একবার টাচপ্যাডের সুইচ ঠিক করা হয়েছে। পুরো কীবোর্ডের সুইচ এখনও ঠিক আছে। তবে স্পিকারটি নষ্ট। ইচ্ছে করেই সেটি আর ঠিক করাইনি। ব্লুটুথ দিয়েই কাজ চলে যায়। যাই হোক, ফিরে আসি লিনাক্স সেটআপের কথায়।

প্রথমে উবুন্টু ডাউনলোড করলাম। অনেক দিন ধরে আমার পেনড্রাইভ কোনো কাজে লাগেনি। সেটি কোথায় আছে, কে জানে! পুরো ঘরবাড়ি উল্টেপাল্টে করে অবশেষে পেনড্রাইভটি খুঁজে বের করতে হলো। বুটেবল করে কাজ শুরু করলাম।

একসময় এসব কাজ আমি একা করতে সাহসই পেতাম না। উইন্ডোজের বুট মেনুতে একা যাওয়ার কথা ভাবতেই ভয় লাগতো। কোনো বোতাম চাপতে গিয়ে ভুল বোতাম চেপে যাবে, এমন আশঙ্কা থাকতো। সেই সময় এসব কাজের জন্য আমাদের একজন কমন বন্ধু ছিল। আমাদের বন্ধুদের মধ্যে কম্পিউটার সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় তার ডাক পড়তো। এখনও অবশ্য পড়ে, তবে আগের মতো তাকে আর বাসায় আসতে হয় না।

এখনও আমি কম্পিউটার এক্সপার্ট হয়ে উঠিনি। এখনও বলতে গেলে তেমন কিছুই জানি না। তবে এটুকু জানি, খুব বড় সমস্যা না হলে সবকিছু নিজেই ঠিক করা যায়। ইউটিউব আর বর্তমানের এআই-এর কাছে এমন কোনো প্রশ্ন নেই, যার উত্তর নেই।

শুরু হলো ওএস সেটআপ। প্রথমবার কী যে হলো, ঠিক বুঝলাম না। সেটআপ ঠিকমতো কাজ করলো না। আবার একই কাজ করতে হলো। দ্বিতীয়বারে সম্পূর্ণ সেটআপ ঠিকঠাক হলো। কিছু ফন্ট এবং দরকারি সফটওয়্যার ইনস্টল করলাম। লিনাক্সের সফটওয়্যার ইনস্টল অপশন আমার কাছে একেবারেই ভিন্ন মনে হলো। জানি, অন্যভাবেও এই কাজ করা যায়, কিন্তু টার্মিনালে শুধু কমান্ড লিখেই সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হচ্ছে।

তবে ঝামেলা বাঁধলো অভ্র ইনস্টল নিয়ে। সেটি কিছুতেই ঠিকমতো কাজ করাতে পারছিলাম না। বেশ কয়েকবার ইউটিউবে গেলাম। সেখানে যেভাবে বলা ছিল, সেভাবেই কাজ করলাম, কিন্তু কাজ হলো না। উইন্ডোজে অভ্র যেভাবে কাজ করে, এখানে তেমন কাজ করছে না। যখন মনে হলো এটি আমার পক্ষে ঠিক করা সম্ভব হবে না, তখনই মন থেকে লিনাক্সের প্রতি আগ্রহ উঠে গেল।

এবার ঠিক করলাম, অ্যান্ড্রয়েড ওএস সেটআপ দেব। একটু খোঁজখবর নিয়ে জানলাম, পিসিতে অ্যান্ড্রয়েড সেটআপ দেওয়ার একটি সিস্টেম আছে। অ্যান্ড্রয়েড x86 নামে একটি ভার্সন পাওয়া যায়। একইভাবে পেনড্রাইভ বুটেবল করে সেটআপ দেওয়া হলো। ইন্টারফেসটি বেশ চমৎকার মনে হলো। একেবারে আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মতো। ল্যাপটপের স্ক্রিনটি টাচ হলে আরও ভালো হতো। তবে মাউস দিয়েও কাজ চলছিল। অ্যান্ড্রয়েডে যেভাবে কাজ চলে, এখানেও সেভাবেই কাজ হচ্ছিল। কিন্তু আবারও একই সমস্যায় পড়লাম। বাংলা কীবোর্ড ইনস্টল করলাম, কিন্তু সেটি কিছুতেই কাজ করছে না। ফোনে ঋদ্ধিম কীবোর্ড চালু করতে ফোনের ডিফল্ট কীবোর্ড বন্ধ করে ঋদ্ধিম চালু করতে হয়। কিন্তু এখানে ডিফল্ট কীবোর্ড কিছুতেই বন্ধ করতে পারলাম না, আর ঋদ্ধিমও চালু হলো না। কী আর করা, এটাতেও মন উঠে গেল।

এবার ঠিক করলাম, ক্রোম ওএস সেটআপ দেব। কিন্তু শুরুতেই ঝামেলা হলো, কারণ বুটেবল ঠিকমতো হলো না। ফলে এটিও বাদ দিলাম। শেষ পর্যন্ত ফিরে এলাম আমার পুরোনো উইন্ডোজ ওএস-এ। আগেই বলেছি, আমার ল্যাপটপটি অনেক পুরোনো। এটিতে উইন্ডোজ ইলেভেন চলে না, কারণ প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্ট নেই। তবে একটু চেষ্টা করলে হয়তো সেটআপ দেওয়া যেত।

এই ল্যাপটপে আমি একবার ব্যাটারি বদলেছি। তবে এই ব্যাটারিটির অবস্থাও এখন খারাপ। সেটআপ দেওয়ার এক পর্যায়ে ব্যাটারি খুলে ল্যাপটপ বন্ধ করার প্রয়োজন পড়েছিল। কিন্তু ব্যাটারি খোলার পর দেখি, ফুলে যাওয়ার কারণে সেটি আর ঠিকমতো জায়গায় বসছে না। মনে হলো, এবার নতুন ব্যাটারি না কিনলে আর উপায় নেই। আপাতত প্লাগ ইন করে ল্যাপটপ চালাতে শুরু করলাম। ঠিক তখনই মনে একটি কৌতূহল জাগল। ফোলা ব্যাটারির উপরের প্লাস্টিক টেপটি টেনে তুলে ফেললাম। হাত দিয়ে দেখলাম, ব্যাটারি বেশ নরম। মনে হলো, ভেতরে তরল জাতীয় কিছু আছে। একটি ধারালো জিনিস দিয়ে ব্যাটারিতে ছিদ্র করতেই দেখি, সেখান থেকে বাতাস বের হচ্ছে এবং একটি গন্ধ বের হলো। আর কিছু বের হলো না। হাত দিয়ে টিপে সব বাতাস বের করে দিলাম। তারপর একটি ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলাম। ছিদ্র করা জায়গাটি ভালোভাবে টেপ দিয়ে বন্ধ করলাম, যাতে আর কিছু বের না হয়। এরপর ব্যাটারিটি আবার ল্যাপটপে সেট করলাম। এবার ঠিকঠাক বসে গেল। মনে হচ্ছিল, ব্যাটারি হয়তো কাজ করবে না বা ল্যাপটপ চালু হবে না। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ল্যাপটপটি চালু হলো এবং ভালোভাবেই কাজ করতে লাগল। আমি জানি, এই ব্যাটারিটি বেশ বিপজ্জনক। নতুন ব্যাটারি লাগানো জরুরি। কিন্তু একটি নতুন ব্যাটারির দাম ছয় হাজার টাকা। চাইনিজ ব্যাটারির দামও তিন হাজারের বেশি।

তবে ব্যাটারি কিনতেই হবে। কারণ এই ল্যাপটপটি আমার খুব পছন্দের। ছোট সাইজের এই ল্যাপটপটি আমার দীর্ঘদিনের সঙ্গী। আমি ঢাকার বাইরে যেখানেই যাই, এটি সঙ্গে নিয়ে যাই। এটি না থাকলে কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। যদিও এখন আর আগের মতো এটি ব্যবহার করি না। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে এটি আর আগের মতো লোড নিতে পারে না। এখন সব কাজ পিসিতেই করি। তবু দিনের মধ্যে দু-এক মিনিটের জন্য হলেও ল্যাপটপটি চালু করি। এটি এখন আমার একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আর কতদিন এটা টিকে থাকে এটাই হচ্ছে দেখার ব্যাপার। তবে যেদিন একেবারে অকেজো হয়ে যাবে সেদিন সত্যিই মন খারাপ হবে।

পুরো শনিবার এভাবেই কেটে গেল।


pic source (লেখার বানান এআই দিয়ে ঠিক করা হয়েছে)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:৫৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস সরকার- অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫০

ইউনূস সরকার –অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?
আজকের বাংলাদেশ এক অস্থির, আতঙ্কিত ও শোষণমুখর সময় পার করছে। রাজনৈতিকভাবে যে সরকার বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায়, তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ‘অন্তবর্তীকালীন’ সরকার হিসেবে। আবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৮০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৬



প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন খুব সাহসের একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি এবং তোমার মা সাতার জানি না। তুমিও সাতার জানো না। বিকেলে আমরা তূরাগ নদীর পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। তোমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ১৬ বছরে রাজনৈতিক স্পেস না পাওয়া জামায়াতের এমন সমাবেশ ‘অবিশ্বাস্য’:

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯





বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আজকের জাতীয় সমাবেশকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি মনে করেন, এ সমাবেশ বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউ আর সুনামির ঢেউ আলাদা

লিখেছেন অপলক , ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১



সব কিছু একটা রিদমে চলে। সেই রিদম ভেঙ্গে গেলে ধ্বংস বা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র একটা সমন্বয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

“নুহাশ পল্লীর যাদুকর“

লিখেছেন আহেমদ ইউসুফ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

এইখানে শুয়ে আছে স্বপ্নের কারিগর
আবেগের ফেরি করে, হৃদয়ে ঝড় তুলে
থেমে গেছে এক যাদুকর।
নুহাশ পল্লীতে মিশে আছে একাকার।

হিমুর চোখে জল, মিসিরের শোকানল
শুভ্রর শুদ্ধতা, রুপার কোমল মন,
আজও ঠিক অম্লান।

হাজারো ভক্তের মনে
মিশে আছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×