somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধু শুধু একটা কীবোর্ড কেন কিনলাম!

২০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে একটা লেখা এডিট করতে হচ্ছিল বেশ লম্বা সময় ধরে। একটু বিরক্ত ছিলাম কারণ এই কাজ আমাকে কয়েকবার করে করতে হচ্ছিল। কয়েকবার ফেরত এসেছিল। আর তখনই আমার কীবোর্ডের দুই-তিনটা সুইচ ঠিকমতো কাজ করছিল না। এই কারণে মেজাজটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছিল। একটা শব্দ ঠিকমতো লেখার পরেও কীবোর্ডের কারণে সেটা ঠিকমতো লেখা হলো না। মেজাজ তখন চরম খারাপ হলো। মনে মনে ভাবলাম, এই কীবোর্ড আর চালাবোই না। আমি মোবাইলের দারাজ অ্যাপ বের করে একটা আলাদা কীবোর্ড অর্ডার দিয়ে ফেললাম সঙ্গে সঙ্গেই। ভাবখানা এমন যে এই কীবোর্ড এখনই আমার বাসায় এসে হাজির হবে। যদিও সেটা এলো না। আমাকে আগের কীবোর্ড দিয়েই কাজ শেষ করতে হলো। তবে অর্ডার দেওয়ার পরে আমার মেজাজ একটু ঠান্ডা হলো। মনে হলো যেন একটা কাজের কাজ করেছি। যদিও এই অনুভূতি খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি।

গতকাল বিকেলে সেই অর্ডার দেওয়া কীবোর্ড এসে হাজির হয়েছে। সেই কীবোর্ড সেট করে একটু টাইপ করতেই আমার মনে হলো, এই বেহুদা টাকাটা নষ্ট করার কোনো দরকার ছিল না। আর একবার মেকানিক্যাল কীবোর্ড ব্যবহার করে নরমাল কীবোর্ড ব্যবহার করতে আমার মোটেই ইচ্ছে করছিল না। বলা যায়, টাকাটা সত্যিই বুঝি একেবারে নষ্ট হলো।

আমি শুরু থেকে এফোরটেকের কীবোর্ড ব্যবহার করে এসেছি। এফোরটেকের নরমাল কীবোর্ড আর মাউস ব্যবহার করতাম সব সময়। বছর তিনেক আগে যখন আবার কীবোর্ড কেনার সময় হলো, তখন এফোরটেক কিনতে গিয়ে দেখি সেটার দাম আকাশচুম্বী হয়ে গেছে। নরমাল কীবোর্ডের দামটা সম্ভবত তখন ছয়শো টাকার মতো ছিল। এত দাম দিয়ে কেন জানি কিনতে ইচ্ছে হলো না। তার বদলে ওয়ালটনের একটা আরজিবি কীবোর্ড পছন্দ হলো। যদিও খুব একটা ভরসা ছিল না সেটার ব্যাপারে। তবে দাম ছিল কম, তার উপরে আরজিবি, আলো জ্বলে নিচ থেকে, এটা দেখে কীবোর্ডটা নিয়ে নিলাম। কিন্তু সত্যি বলতে কী, ওয়ালটনের ঐ আরজিবি কীবোর্ডটা আমি টানা দুই বছরের বেশি ব্যবহার করেছি এবং শান্তিমতো ব্যবহার করেছি। দুই বছরের বেশি ব্যবহারের পরে সেটার কয়েকটা সুইচে ঝামেলা দেখা দিল।

এরপর একটা মেকানিক্যাল কীবোর্ড কিনলাম। যদিও আমি আগের ওয়ালটনটাই কিনতে চেয়েছিলাম, তবে আমার বন্ধুর পরামর্শে মেকানিক্যাল কীবোর্ডই কিনলাম। প্রথম কিছুদিন এই কীবোর্ডটা থেকে আমি ভালো সার্ভিস পেয়েছি। কিন্তু কয়েক মাস ধরেই এটার উপর খানিকটা বিরক্তি চলে আসছে। বছর পার হওয়ার পর থেকে এই কীবোর্ডের সুইচ নষ্ট হতে শুরু করেছে। আগের পুরানো যত সুইচ ছিল, সেই সুইচগুলো একে একে নষ্ট হচ্ছে আর আমার মেজাজ গরম হচ্ছে। এখানে অবশ্য মেকানিক্যাল কীবোর্ডের একটা সবচেয়ে বড় সুবিধা। নরমাল কীবোর্ডের দরকারি কীসুইচ নষ্ট হলে সেটা সাধারণ কারও পক্ষে আর ঠিক করার কোনো উপায় থাকে না। নতুন আরেকটা কিনতে হয়, কিন্তু মেকানিক্যালে আলাদাভাবে প্রতিটা কীসুইচ বদলানো যায়। এখনো পর্যন্ত প্রায় ২৬/২৭টা কীসুইচ নষ্ট হয়েছে। সেগুলো বদলানো হয়েছে। কিন্তু পুরানো যতগুলো কীসুইচ আছে, সেগুলো সম্ভবত সব আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাবে। সেগুলো বদলালে কাজ চলবে।

ফিরে নতুন কীবোর্ডে। কীবোর্ডটা আমি কিছু সময় ধরে ব্যবহার করার চেষ্টা করলাম এবং সত্যি বলতে কী, নরমাল কীবোর্ড মোটেই ব্যবহার করে আরাম পেলাম না। এখন সেটা কীবোর্ড হোল্ডারের ভেতরে ঢুকিয়ে রেখেছি। আগেরটা দিয়েই এখন কাজ চলছে।

কিন্তু আমার এখন বারবার মনে হচ্ছে, কী দরকার ছিল বাড়তি আরেকটা কীবোর্ড কেনার। কোনো দরকার ছিল না। হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্ত কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনে না। এমনটা আমি জীবনে যতবার করেছি, ততবারই পরে পস্তাতে হয়েছে। যদিও টাকার অঙ্কে কীবোর্ডটার দাম খুব বেশি না, তারপরেও বারবার মনে হচ্ছে, কেন টাকাটা নষ্ট করলাম! আমার কাছে তো সুইচ ছিলই। সেটা বদলালেই আবার আগের মতো কাজ করত। নতুন করে টাকা নষ্ট করার কোনো দরকার ছিল না। তাহলে আমি এই কীবোর্ডটা অর্ডার কেন দিলাম? এই চিন্তা নিয়ে আমি গতকাল রাতে কিছু সময় ভাবলাম। এই রকম আচরণের পেছনে আসলে কারণ কী থাকতে পারে?

একটা কারণ অবশ্য বলা যেতে পারে যে, আমার দরকারি সব কিছুর একটা করে ব্যাকআপ আমি নিজের কাছে রাখি। বিশেষ করে এমন সব জিনিস, যা আমার সব সময়ের জন্য দরকার, এমন প্রায় সব কিছুই আমার কাছে দুটো করে আছে। আমার ব্যবহারের সাইকেল দুটো। আমি নিয়মিতভাবে সাইকেল ব্যবহার করি। সাইকেল ছাড়া আমার একটা দিন চলে না। কিন্তু এমন অনেকবার হয়েছে, রাতে বাসায় ফিরে সাইকেল রেখেছি। সকালে উঠে দেখি, সাইকেলে একটা চাকায় হাওয়া নেই। রাতে হয়তো আসার সময় কিছু ঢুকে গেছে চাকায়। আর এমন সময় সেটা চোখে পড়েছে যে তখন আর সেটা ঠিক করার সময়ও নেই। এই রকম কয়েকবার হওয়ার কারণে আমি আরেকটা সেকেন্ডহ্যান্ড কম দামি সাইকেল কিনেছিলাম। যদিও সেটার পেছনে আরও কারণ ছিল, তবে এই ব্যাকআপের কারণ ছিল অন্যতম। আলাদা একটা মাউস সব সময় জমা থাকে। এমনকি একটা কীবোর্ডও আমার ব্যাকআপে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি আমার সেই ব্যাকআপে থাকা কীবোর্ডটা দিদির ছেলেকে দিয়ে দিয়েছি মাস দুয়েক আগে। সেই হিসাবে আমার একটা ব্যাকআপের দরকার ছিল। এটা কি সে কারণে কিনলাম? কেন জানি নিজের ব্যাখ্যা নিজেরই পছন্দ হলো না। এমন হলে তো আমি সেদিনই এটার অর্ডার দিতাম। আসলে এই কাজটা যে আমি করেছি, আমার ইররেশনাল আচরণের কারণে, এই কথাটা আমার নিজেরই মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমার তখন মেজাজ ছিল গরম, কারও উপরে সেটা ঝাড়ার দরকার ছিল, তাই এমনটা করেছি। এই কারণে নানা রকম ব্যাখ্যা দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে মনের ভেতরেই। জগতে আসলে নিজের মনকেই বোঝানো সবচেয়ে কঠিন। আমি যুক্তি কিংবা কু-যুক্তি দিয়ে যে কাউকেই ভূগোল বোঝাতে পারব, তবে নিজের মনের সাথে এসব জারিজুরি চলে না।

আমরা যখন রেগে থাকি কিংবা কোনো কারণে বিরক্ত থাকি, তখন আমরা সঠিকভাবে র‍্যাশনাল চিন্তাভাবনা করতে পারি না। এমন সব সিদ্ধান্ত আমরা নিয়ে ফেলি বা এমন সব কথাবার্তা আমরা বলি, যা মাথা ঠান্ডা রেখে চিন্তা করলে একেবারেই অন্য রকম মনে হবে। তখন বসে বসে আমাদের মনে হবে, আমি কেন এই কাজটা করলাম! তাই গুণী মানুষ বলেন যে, আপনি যখন খুব খুশি বা খুব রেগে থাকবেন, তখন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না বা কাউকে কোনো কথা দেবেন না। তাহলে প্রায় শতভাগ সম্ভাবনা আছে যে এই সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে পরে পস্তাতে হবে।

এই আসলে লেখা কোনো দরকারি লেখা না। এটাকে বলতে পারেন অদরকারি লেখা। যারা কীবোর্ড চেপে দেশ-সমাজ উদ্ধার করতে চান, তাদের দলে আমি পড়ি না।

ব্যবহৃত কীবোর্ড



সদ্য কেনা কীবোর্ড





pic source
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস সরকার- অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫০

ইউনূস সরকার –অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?
আজকের বাংলাদেশ এক অস্থির, আতঙ্কিত ও শোষণমুখর সময় পার করছে। রাজনৈতিকভাবে যে সরকার বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায়, তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ‘অন্তবর্তীকালীন’ সরকার হিসেবে। আবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৮০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৬



প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন খুব সাহসের একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি এবং তোমার মা সাতার জানি না। তুমিও সাতার জানো না। বিকেলে আমরা তূরাগ নদীর পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। তোমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ১৬ বছরে রাজনৈতিক স্পেস না পাওয়া জামায়াতের এমন সমাবেশ ‘অবিশ্বাস্য’:

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯





বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আজকের জাতীয় সমাবেশকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি মনে করেন, এ সমাবেশ বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউ আর সুনামির ঢেউ আলাদা

লিখেছেন অপলক , ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১



সব কিছু একটা রিদমে চলে। সেই রিদম ভেঙ্গে গেলে ধ্বংস বা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র একটা সমন্বয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

“নুহাশ পল্লীর যাদুকর“

লিখেছেন আহেমদ ইউসুফ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

এইখানে শুয়ে আছে স্বপ্নের কারিগর
আবেগের ফেরি করে, হৃদয়ে ঝড় তুলে
থেমে গেছে এক যাদুকর।
নুহাশ পল্লীতে মিশে আছে একাকার।

হিমুর চোখে জল, মিসিরের শোকানল
শুভ্রর শুদ্ধতা, রুপার কোমল মন,
আজও ঠিক অম্লান।

হাজারো ভক্তের মনে
মিশে আছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×