somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিনের উৎসব বা মৃত্যু চিন্তা

২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এখনকার দিনে জন্মদিন উৎসব খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। বলতে গেলে একটু সচ্ছল পরিবার হলেই এখন ঘটা করেই জন্মদিন পালন করে। আমার ভাইয়ের ছেলের প্রথম জন্মদিনটা রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করা হয়েছিল। সকল আত্মীয়স্বজনসহ ভাইয়ের সব বন্ধুবান্ধবদের পরিবারসহ দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। সত্যি কথা বলতে, আমার ভাইয়ের বিয়ের সময়েও এত আয়োজন করা হয়নি। এরপর দিন গেছে, ভাইয়ের ছেলে বড় হয়েছে, সেই একই রকম আয়োজন করা হয়নি, তবে আয়োজন ঠিকই হয়েছে। কেক এসেছে, ভালো রান্নাবান্না হয়েছে। অথচ এই জন্মদিনের আগে আমাদের বাসায় মাত্র একবার জন্মদিন পালন হয়েছিল। সেটা ছিল আমার ভাইয়ের জন্মদিন। তখন আমরা যশোরে থাকতাম। সেই সময়েও বেশ আয়োজন করে বড় ভাইয়ের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। বড় ভাইয়ের জন্মদিনের দিন আমার জন্যও ছোট একটা কেক কিনে আনা হয়েছিল। দুই ভাইয়ের কেক কাটা হয়েছিল একই দিনে। যদিও আমার জন্মদিন সেই দিন ছিল না। আমার জন্মদিন আরও অনেক পরে। সেই সময়ে এই জন্মদিন পালনের ট্রেন্ড ছিল না। অন্তত আমি আমার পরিচিত কারও জন্মদিন এভাবে পালন করতে দেখিনি কখনও। আমার আব্বা বেশ সৌখিন ছিলেন বলেই নিজের বড় ছেলের জন্য এই আয়োজন করেছিলেন। আমার, মানে তাঁর ছোট ছেলের কপালে এসব জোটেনি।

তারপর আস্তে আস্তে এই জন্মদিন পালন একটা ট্রেন্ডে পরিণত হল। যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলাম, তখন আমাদের একটা গ্রুপ হয়েছিল। আমাদের মধ্যে যে কাচ্চি ট্রিট হতো, তার একটা এসাইনমেন্টের হলেও আরেকটা ট্রিট হতো এই জন্মদিনের ট্রিট। নিয়মটা ছিল, যে দিন যার জন্মদিন থাকবে, সে সবাইকে স্টার কিংবা নান্নাতে নিয়ে গিয়ে ট্রিট দেবে। অবশ্যই নিজের টাকায়। তবে তার মানে এই নয় যে আমরা ফ্রি ফ্রি তার কাচ্চি খেয়ে ফেলতাম। সে যেমন আমাদের ট্রিট দিত, আমরাও তখন টাকা তুলে তার জন্য কোনো না কোনো উপহার কিনে দিতাম। দামি কোনো ব্র্যান্ডের শার্ট কিংবা প্যান্ট কিংবা টপটেন থেকে কাপড়, এসব। তবে সবচেয়ে ভালো ট্রিট হতো আমাদের সিআর রাজুর জন্মদিনের দিন।

রাজুর বাবা ঢাবিতে চাকরি করতেন। ওরা থাকত টিএসসির পেছনে একটা কোয়ার্টারে। রাজু আমাদের কাচ্চি ট্রিট দিত না। ও একেবারে আমাদের সবাইকে নিয়ে যেত ওর বাড়িতে। মার্চের এক তারিখ হচ্ছে ওর জন্মদিন। ক্লাস শেষ করে আমরা সবাই গিয়ে হাজির হতাম ওদের বাসায়। আন্টির হাতের রান্না চমৎকার ছিল। খাওয়ার পরে ওদের বাসায় বসে যে আড্ডাটা হতো, সেটার আসলে তুলনা ছিল না। রেস্টুরেন্টে ট্রিট দিলে তো এই আরাম করে আড্ডাটা দেওয়া হতো না।

পড়াশোনা শেষ করেও আমাদের মধ্যে এই ট্রিট কালচারটা টিকে ছিল অনেক দিন। তবে একসময় আমরা যে যার মতো ব্যস্ত হয়ে গেলাম। সেই গ্রুপের বেশিরভাগই এখন ঢাকার বাইরে। সত্যি, ঢাকায় এখন কেবল দুই-তিনজন আছে। সেই দিন আর নেই। গত বছর পর্যন্ত আমার দুজন বন্ধু মিলে শেষ জন্মদিনের ট্রিট হয়েছিল। এই বছর আর হয়নি। কারণ সেই দুজনের একজন এখন ফিনল্যান্ডে। কালেভাদ্রে যখন কেউ ঢাকায় আসে, তখন সময়-সুযোগ পেলে হয়তো বিকেলে বা রাতে আড্ডা হয়। এছাড়া সবাই এখন নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত।

ফিরে আসি জন্মদিনের ট্রিট নিয়ে। আগেই বলেছি, আমার বাসা থেকে কখনোই আমার জন্মদিন পালন হয়নি। বড় ভাইয়ের জন্মদিনে যে কেক কাটা হয়েছিল, সেটাই প্রথম, সেটাই শেষ। তবে প্রথমবারের মতো আমার জন্মদিন নিয়ে কেউ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল আমার প্রথম প্রেমিকা। সেদিন তার আনন্দ দেখে আমি নিজেই খানিকটা অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর অবশ্য অন্যান্য প্রেমিকারাও কম যায় না। যে যে জন্মদিনে যে যে প্রেমিকা ছিল, তারা ঠিকই কোনো না কোনো উপহার পাঠিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রামের এক প্রেমিকা একবার দামি একটা মানিব্যাগ পাঠিয়েছিল। দীর্ঘদিন আমি সেটা ব্যবহার করেছি। প্রেমিকা ছাড়াও বন্ধুদের সাথে কেটেছে।

সেই ছোটবেলায় জন্মদিন আসার আগেই একটা উত্তেজনা কাজ করত। দীর্ঘদিন এই উত্তেজনা কাজ করেছে। প্রেমিকা যখন জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছে, আবার বন্ধুদের সাথে যখন একসাথে জন্মদিনের উৎসব পালন করেছি, তখন একটা ভালোলাগা বা আনন্দ কাজ করেছে মনে। কিন্তু যখন আস্তে আস্তে বয়স বেড়েছে, তখন এই জন্মদিনের আনন্দের সাথে আরেকটা চিন্তা এসে যুক্ত হয়েছে। তখন মনে হয়েছে যে জন্মদিন মানেই নিজের জীবন থেকে আরেকটা বছর চলে যাওয়া। আরও একটু বুড়ো হয়ে যাওয়া আর এক একটা ধাপ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া। এখন এই চিন্তাটাই বেশি কাজ করে। আরেকটা জন্মদিন মানেই মৃত্যুর আরেকটু কাছে গিয়ে হাজির হওয়া। কী অদ্ভুত এই চিন্তা।

দিন শেষে আমার আসল ঠিকানা কিন্তু এই মৃত্যুই। আমরা যাই করি না কেন, জীবনে যতই কিছু অর্জন করি বা কিছুই অর্জন করি না কেন, আমাদের শেষ পর্যন্ত মরতেই হবে। মরণ যে কোনো সময়ই হতে পারে। কিন্তু যদি এই জন্মদিনটা আসে, তখনই আরও ভালো করে মনে পড়ে যে এই দিনে যেমন তুমি জন্মেছিলে, এই দিনে তোমার বয়সের সাথে আরও একটা বছর যোগ হচ্ছে। এমনও হয়েছে যে দিনভর বন্ধুদের সাথে জন্মদিন উপলক্ষে ঘুরে বেড়িয়েছি, আড্ডা দিয়েছি, সময় খুব ভালো কাটিয়েছি, কিন্তু যখন দিন শেষে বাসায় ফিরেছি, তখন এই চিন্তা চেপে বসেছে। বড়বেলার এই জন্মদিন এভাবেই কেটেছে। এখন মনে হয় যে এই দিনের কথাটা যদি মনেই না থাকত, তাহলে ভালো হতো। বছরের অন্য দিনগুলোর মতো এই দিনটা পার হলে ভালো হতো! অন্য দিনগুলোর মতো এই দিনটা পার হয়ে যেত!

বি.দ্র.: আজকে আমার জন্মদিন নয়। জন্মদিন পার হয়ে গেছে।



pic source
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১০:১৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনূস সরকার- অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?

লিখেছেন রাবব১৯৭১, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৮:৫০

ইউনূস সরকার –অন্তবর্তীকালীন, আপদকালীন না কি গণশত্রু রাষ্ট্রযন্ত্র?
আজকের বাংলাদেশ এক অস্থির, আতঙ্কিত ও শোষণমুখর সময় পার করছে। রাজনৈতিকভাবে যে সরকার বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায়, তারা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছে ‘অন্তবর্তীকালীন’ সরকার হিসেবে। আবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৮০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:২৬



প্রিয় কন্যা আমার-
সেদিন খুব সাহসের একটা কাজ করে ফেলেছি। আমি এবং তোমার মা সাতার জানি না। তুমিও সাতার জানো না। বিকেলে আমরা তূরাগ নদীর পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। তোমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ১৬ বছরে রাজনৈতিক স্পেস না পাওয়া জামায়াতের এমন সমাবেশ ‘অবিশ্বাস্য’:

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯





বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আজকের জাতীয় সমাবেশকে ‘অবিশ্বাস্য’ আখ্যায়িত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি মনে করেন, এ সমাবেশ বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউ আর সুনামির ঢেউ আলাদা

লিখেছেন অপলক , ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১



সব কিছু একটা রিদমে চলে। সেই রিদম ভেঙ্গে গেলে ধ্বংস বা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র একটা সমন্বয়ের... ...বাকিটুকু পড়ুন

“নুহাশ পল্লীর যাদুকর“

লিখেছেন আহেমদ ইউসুফ, ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

এইখানে শুয়ে আছে স্বপ্নের কারিগর
আবেগের ফেরি করে, হৃদয়ে ঝড় তুলে
থেমে গেছে এক যাদুকর।
নুহাশ পল্লীতে মিশে আছে একাকার।

হিমুর চোখে জল, মিসিরের শোকানল
শুভ্রর শুদ্ধতা, রুপার কোমল মন,
আজও ঠিক অম্লান।

হাজারো ভক্তের মনে
মিশে আছ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×