আজ কাল আমি অনেক হাপিয়ে উঠি । আমার শরীর ছোট খাটো । তবে ইদাংনী কালে ভুড়ি বেড়ে যাচ্ছে । যা বড়ই বেমানান । তাই ঘরে বসে ব্যায়াম করার চেষ্টায় আছি । এখনো বিয়ে করিনি তো । তাই নিজেকে একটু ফিট রাখার দরকার । তা দৌড় ঝাপ লাফ সব ই করি । পেটের ফ্যাট যদি কমে । কিন্তু কমছে ই না । বহুত টেনশনে আছি ।
না আজকের লেখার বিষয় আমাকে নিয়ে নয় । বিষয়টা দুঃখজনক একটা বিষয় নিয়ে । আমাএ কাছে দুঃখজনক । গতকাল রাস্তায় এই ছবির পতাকাটি পরে থাকতে দেখছি । আসলে হাটাহাটি করতে গিয়েছিলাম । তো বাসার পাশেই তো টোকিও স্কয়ার । আরে জাপানে না, মোহাম্মদপুরের শপিংমল যেটা সেটা । গেট দিয়ে বেরোতেই এটা চোখের সামনে পরল । ফুটপাতের উপর অনাদরে ফেলা রাখা ।
উঠিয়ে বুক পকেটে নিয়ে রাখলাম । এটা তো আমার দেশ । একে তো বুকে বা মাথায় রাখা দরকার । কিন্তু সে আজ ধুলায় লুটোপুটি খাচ্ছে । এটাই কি চেয়ে ছিল মুক্তিযোদ্ধারা । এমন একটা বাংলাদেশের স্বপ্ন কি তারা দেখেছিলেন । নাকি তারা পরবর্তি প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর বাংলাদেশ এর স্বপ্ন নিয়ে যুদ্ধ করেছেন । স্বপ্ন দেখেছেন সোনার বাংলার । তাদের পরবর্তি প্রজন্ম যাকে নিয়ে যাবে বহুদুর । যারা দেশ কে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসবে । কিন্তু সেটা কি আসলেই হয়ে উঠছে । আসলেই কি আমাদের মধ্যে সেই দেশপ্রম আজ জাগ্রত?
এখানে আমি ব্লগার চাঁদগাজী স্যার কে প্রশ্ন রেখে গেলাম, স্যার আপনি বাংলাদেশ কে কি এভাবেই দেখতে চেয়েছিলেন?
যারা মুক্তিযুদ্ধো করেছেন তারা নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন । দেশের কথা ভেবেছেন । নিজের জন্মভুমির কথা ভেবেছেন । শুধু একটাই চিন্তা ছিল দেশ স্বাধীন করতে হবে । আমরা তাদের কতটা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি । আমি আজও ভাবি । প্রতিটি মুহূর্ত ভাবি । তারা দেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন । আমরা কি দিয়েছি ?
আমার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের ভিত্তি আমার বাবা । তিনি আমাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আগ্রহী করে তুলেছেন । তারপর আমি বই পত্র পড়েছি যারা জীবিত মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের সাথে কথা বলেছি । আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ কারন একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি । নিজদের মত করে বাচতে পারছি । নিঃশ্বাস নিতে পারছি । অথচ তাদের সেই বলি দান আজ ধুলায় লুন্ঠিত । কষ্ট হয় দেখে । ভীষন কষ্ট হয় । আমি সকল মুক্তিযোদ্ধার কাছে ক্ষমা প্রার্থী ।
আমি ছোট বেলা থেকে শহীদ মিনার আর স্মৃতি সৌধে জুতা পায়ে উঠি না । এটা আমার নীতি আমি মেনে চলি । আমি সবাই কে এটাই বলি । এটা আমার দেশের জন্য যারা প্রান দিয়েছেন এবং জীবিত আছেন তাদের সকলের প্রতি সম্মান জানানো । কিন্তু এখানে আমাকে প্রতি বার হাসির পাত্র হতে হয় । আমার কর্মকান্ড কেন সবাই কে হাসি এনে দেয় আমি জানি না । তবে আমি সম্মান করা ছাড়তে পারি না । আমার এটা রক্ত মিশে আছে । আমি ছাড়তে পারব না । মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত পারব না ।
আমি জাহাঙ্গীনগর এ একটা মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়াশুনা করছি । খেয়ে পরে তো বাচতে হবে । তার জন্য কিছুটা হলেও পড়াশুনা দরকার । কি বলেন । তো সেখানের যে শহীদ মিনার আছে সেটা তেও জুতা পায়ে উঠা নিষেধ । কিন্তু আজ আমি যা দেখলাম সেটা তো আমার চোখে অশ্রু এনে দিয়েছে । রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছিল । জুতা পায়ে উঠে সেলফি কুলফি । বাদাম খাওয়া । লাফানো ঝাপানো সব চলছে । তারচেয়ে চলছে পুরো দমে প্রেম । একে অন্যের গায়ের উপর পরে যাচ্ছে । পারলে কোলে উঠে যেতো । সরি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারিনি ।
চলে গেলাম মূল বেদির কাছে । জুতা মুজা খুলে উঠলাম । এক ভাইয়া আর আপু বসে । জিজ্ঞেস করলাম আপনার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিনা । তারা হ্যা বলল । বললাম মুক্তিযুদ্ধ আর ভাষা আন্দোলন বিশ্বাস করেন কিনা । তাও হ্যা বলল । তারপর বললাম ভাইয়া এখানে জুতা নিয়ে উঠা যে নিষেধ সেটা জানে না । ওনারা হাসা শুরু করল । আমি বললাম ভাইয়া আমি হাসির কিছু বলি নাই । এটা একটা সম্মানের জায়গা । উঠবেন সমস্যা নেই কিন্তু প্রাপ্য সম্মানটুকু দেখান । তারা রেগে যাচ্ছে বুঝলাম । বললাম ভাইয়া আপনি রেগে না গিয়ে ভেবে দেখুন এই শহীদ মিনার এ লেগে আছে ভাষা শহীদের রক্ত । সেখানে এভাবে উঠা ঠিক না ।
এরপর এক ইয়ো ইয়ো আপুর কাছে গেলাম । আল্ট্রা মর্ডান উনি । তাকে কি বলব বুঝার আগেই উনি আমাকে বললেন একটা ছবি তুলে দিন । আমি শহীদ মিনার ছবি তুলে বললাম এই জায়গাটা সম্মানের আগে সম্মান দিতে শিখুন । লেখা আছে জুতা পায়ে উঠবেন না । লেখা না থাকলেও এটা তো কমন সেন্স যে এখানে জুতা পায়ে উঠা ঠিক না । শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিতে খালি পায়ে সম্মান দেখাবেন আর বাকি দিন গুলো কি এখানে ছবি তোলার জন্য । উনিও আমার উপর রেগে গেলেন । তাই হতাশ মনে ফিরে আসলাম । ক্লাসে চলে গেলাম । কি করব তারা তো আমার কথা শুনবে না ।
সত্যি আমি মাঝে মাঝে অনেক হতাশ হয়ে পরি । নিজেকে একা মনে হয় । মনে হয় একাই লড়াই করে যাচ্ছি । আসেপাশে কেউ নেই । আমার কাজ গুলো লোকের হাসির খোরাক হয় । অথচ এগুলো আমাদের করার কথা । আমাদের ভিতর থেকে আসার কথা । মনের মধ্যে থাকার কথা । হৃদয়ে থাকার কথা । বাংলাদেশ থাকবে হৃদয়ে । প্রানের মাঝে মিশে থাকবে এ দেশ ।
ভাল থাকবেন । সুস্থ থাকবেন । আপনার চারপাশ পরিস্কার রাখবেন ।
আজকের ব্লগটি মুক্তিযোদ্ধা চাঁদগাজী স্যার এবং সকল জীবিত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, বীরঙ্গনা, বুদ্ধিজীবিদের উৎসর্গ করলাম
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৬