ঘটনা – ১
পল্টন গিয়েছিলাম একটা কাজে । কিছু কাগজ পত্র দিয়ে আসতে । একটা ল কলেজে । যদিও আমার কাজ না । মামার কাজ । তো গেলাম । ল কলেজের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন এই ফুটপাতে বসে থাকা হকার এর দিকে চোখ গেল । লোকটা বসে বসে নিজের জিনিস পত্র সাজিয়ে রাখছে । কেউ দাড়াচ্ছে দেখছে আবার না কিনে চলে যাচ্ছে । এতে তার তেমন কোন কিছু আসছে যাচ্ছে বলে মনে হলো না । বরং সে গান শোনায় ব্যস্ত হয়ে গেল ।
তাকে দেখে আমার পৃথিবীর অন্যতম সুখী মানুষদের একজন মনে হচ্ছিল তখন । যদিও অল্প সময়ে মানুষকে বিচার করে ফেলা ঠিক নয় । তবুও তার সব কিচু দেখে মনে হচ্ছিল । পৃথিবীর অন্য কিছুর ব্যাপারে তার মাথা ব্যথ্যা কম । তার কথা হচ্ছে বেচে আছি এটা বেশি । এত চিন্তা করে কি হবে । তার চেয়ে যে কয়েকদিন বেচে থাকব অল্প খেয়ে পরে বেচে থাকি । অল্পতেই সে সন্তুষ্ট ।
আসলেই আমরা সুখের পিছনে বড্ড বেশি ঘুরে বেড়াই । অথচ ছোট ছোট বিষয়ের মধ্যেই সুখ লুকিয়ে আছে । আপনি আমি অনেক বেশি ভাবি । অথচ আমি বা আপনি চাইলে অনেক বিষয় সহজ ভাবে নিয়ে সেগুলো কে খুব সুন্দর ভাবে সেখানে থেকে বের হয়ে আসতে পারি ।
সুখ আপেক্ষিক । তবুও মানুষ সুখের খোজে ছুটে চলেছে । এই চলা থামবে না । অথচ সুখ কিন্তু আমাদের চারপাশেই আছে । শধু একটু চোখ মেলে তাকাতে হয় । জম্বিল্যান্ড মুভিতে একটা ডায়লগ আছে, Enjoy the little things ।
ছোট ছোট বিষয় গুলোকে আনন্দের সাথে নিন । দেখব সব কিছু অনেক সুন্দর হয়ে যাবে ।
ঘটনা – ২
কয়েকদিন আগে কোথাও যাচ্ছিলাম । ট্রাফিকে আটকে গেলাম । বৃষ্টির দিন ছিল । জ্যাম তো হবেই । বাংলাদেশে বৃষ্টি মানেই হচ্ছে জ্যাম আর পানি । যারা সমুদ্রে যেতে পারেন না, তাদের জন্য সুবর্ন সুযোগ হচ্ছে এই বর্ষা । বিনা খরচে ফুল মজা ।
তো জ্যাম আটকে যাওয়ার পর দেখলাম এক ভাই সাইকেল নিয়ে জ্যামে বসে আছেন । বিষয়টা এমন নয় যে তিনি ফুটপাত দিয়ে যেতে পারতেন না । ওনার ঠিক পাশ দিয়ে এক চাচা সাইকেল ফুটপাত দিয়ে নিয়ে গেলেন । কিন্তু উনি গেলেন না । যেহেতু বাইকে ছিলাম তাই ওনার পাশে গিয়ে শুধু একটা ধন্যবাদ দিলাম । উনি একটু হেসে বললেন ওয়েলকাম ।
এরপর আর কোন কথা হয়নি । জ্যাম ছাড়ল উনি সাইকেল চালানো শুরু করলেন । আমিও বাইকে ওনাকে পাস করে চলে গেলাম ।
তারপর কাজ শেষ করে যখন বাসায় ফিরছি । তখন বিষয়টা নিয়ে ভাবলাম । উনি জ্যামে নাও দাড়াতে পারতেন । সবার মত উনিও ফুটপাতে উঠে যেতে পারতেন । যদিও সাইকেল ফুটপাতে উঠালে কেউ কিছুই বলবে না । তবুও তিনি সেখান দিয়ে যাননি ।
এবার আসি, হয়ত ওই সময়ের জন্য তিনি ফুটপাতে যাননি । আচ্ছা ধরুন তো একটু একটু করে ফুটপাতে হকার বসা বন্ধ । বাইকাররাও ফুটপাতে উঠছে না । কত ভাল হতো । উনি সাইকেল নিয়ে ফুটপাতে ওঠেননি । আর আমাদের কিছু কিছু বাইকার আছেন যাদের এত ব্যস্ততা যে তারা ফুটপাতে বাইক উঠিয়ে নিজের কি প্রমান করতে চায় সেটা জানি না ।
একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে একজন বাইক চালক ফুটপাতে বাইক উঠিয়েও অনেক দম্ভ নিয়ে কথা বলেছেন । তার ইংলিশ শুনে হয়ত ইংরেজরাও লজ্জা পাবে । তবে তিনি নিজেকে সঠিক বলে দাবী করতেই পারেন । কারন অনেকেই তো । তাই বলে সবাই যদি ভুল করে আমি আপনিও কি একই ভুল করব ?
ঘটনা – ৩
একটা কোম্পানিতে গিয়েছিলাম কিছু কাজে । লিফট দিয়ে উঠতে হয় । আমিও গিয়ে লিফট দিয়ে উঠলাম । যদিও হেটে ওঠাই ভাল । তারপর ও লিফট যেহেতু আছে তাই লিফট দিয়েই উঠলাম । কাজ শেষ করে নামতে যাবো তখন ই দেখলাম লিফট এর পাশে লেখা “হেটে নামুন, সুস্থ থাকুন” ।
কথাটা কিন্তু দারুন সত্যি । যদিও আমি আগের চেয়ে কেন জানি হাটা কমিয়ে দিয়েছি । তবে আজ যখন লিখছি তখন আবার মনে হচ্ছে হাটাহাটি জরুরী । আচ্ছা ফিরে যাই লেখাটায় । আমিও হেটেই নামলাম । নামতে নামতে ভাবছি । এই তিন তলায় উঠতে তো লিফট এর দরকার পরে না । হ্যা যারা হাটা চলা করতে পারে না তারা উঠবে এটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই । তাহলে আমি কেন উঠেছি ।
আমার অফিস ৬ তলায় মাঝে মাঝে আমি হেটে উঠি । তার কারন যখন মনে হয় যে হাটা চলা কম হচ্ছে তখন ই হেটে উঠি বা নামি । আমরা প্রযুক্তির আকর্ষনে অনেক বেশি নির্ভশীল হয়ে যাচ্ছি । অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো । কিন্তু প্রযুক্তি আমাদের অলস করে দিচ্ছে । হ্যা এটা প্রযুক্তির খারাপ দিক ।
আগে মানুষ অনেক বেশি কর্মঠ ছিল কিন্তু এখন একটা ক্লিক করেই সব করা যাচ্ছে তাই মানুষ কায়িক শ্রম থেকে দূরে আছে । অথচ আমদের সুস্থতার জন্য আমরা এখন কত কিছুই করি । জিম সকালে হাটা খাওয়া দাওয়া ডায়েট কন্ট্রোল সব কিছু । তারপরও আমরা অনেকটাই অলস । আমি নিজেই অলস ।
আমাদের খাবার এখন ভেজালে পরিপূর্ন । আমরা এমন একটা সময়ের মধ্যে আছি যেখানে কোনটা ভাল এবং কোনটা খারাপ সেটা নির্ণয় করা একটা বড় দুরহের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
তবে হাটার ব্যাপারটি আবার চালু করতে হবে । “নিয়মিত হাটুন, সুস্থ থাকুন”।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১০:৩৮