somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আম আটির ভেপু: এক হারানো শৈশব (বুক রিভিউ) - বাংলা সাহিত্যের মাস্টার পিস

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :






রবীন্দ্রোত্তর কালে যে কজন বাংলাসাহিত্যকে বিপুলভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে “বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম । তিনি তার লেখার ভেতর প্রকৃতি, মানুষ ও তার সমাজ ব্যবস্থাকে সুনিপুন ভাবে তুলে ধরেছেন । তার লেখা গল্প উপন্যাসে সেই সময়ের প্রকৃতি ও মানুষের যে নিবিড় একটা সম্পর্ক রয়েছে সেটা খুব দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে ।

“আম আটির ভেপু” হচ্ছে বিভূতিভূষনের অন্যতম সৃষ্টি “পথের পাচালী” উপন্যাসের অংশ । পথের পাচালীর সংক্ষেপিত রূপ বা সরলীকরনও বলা যায় । এই “আম আটির ভেপু” তে তিনি শিশু মনের বিস্ময় ও তার কৌতুলের বর্ননা করেছেন । একটি শিশু যখন ধীরে ধীরে বড় হয় তখন তার মনের যে পরিবর্তন ও চিন্তা ধারা তার কথা তিনি তুলে ধরেছেন ।

কোথায়ও পড়েছিলাম, লেখক ও সমালোচক হুমায়ুন আজাদ একবার বলেছিলেন, সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালী সিনেমা তৈরি না করলেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু বিভূতিভূষণ যদি বইটি না লিখতেন, তাহলে ক্ষতি হতো সভ্যতার। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাম যারা শুনেছ, তারা নিশ্চয়ই পথের পাঁচালীর নামও শুনেছ। তাঁর এই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমা বানিয়ে দেশ-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন ভারতরত্ন উপাধি। এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদের মন্তব্য, সত্যজিৎ যদি ভারতরত্ন হন, তবে বিভূতিভূষণ বিশ্বরত্ন, সভ্যতারত্ন ।

উপরের লেখাটা কোথায় পড়েছিলাম মনে নেই । আপাতত বইয়ের প্রসঙ্গে আসি । আম আটির ভেপু উপন্যাস আসলে পথের পাচালীর অংশ আগেই বলেছি । আসলে কথা হচ্ছে পথের পাচালী প্রথমে ধারাবাহিক ভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর ১৯২৯ সালে এটি বই আকারে প্রকাশ করা হয় । বইটি লেখা হয়েছিল বড়দের জন্য । কিন্তু বিভূতিভূষণ ছোটদের জন্য বইটি ছোট করলেন বা বলা যায় তিনি ছোটদের জন্য আলাদ করে অংশটি বই আকারে প্রকাশ করলেন ।

“আম আটির ভেপু” উপন্যাসের মুল চরিত্র হচ্ছে অপু । বলা যায় তাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে পুরো বইটি । যারা পথের পাচালী বা অপরাজিত পড়েনি তাদের বলে দিচ্ছি বই দুটো পড়ার জন্য । তাহলেই অপুকে জানতে পারবেন ।

তো, এই উপন্যাসে অপু ও তার দিদি হচ্ছে সব কিছুর মুল । যদিও অপুকেই কেন্দ্রিয় চরিত্র ধরা হয় । অপুর বেড়ে ওঠা নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে । এখানে তার ও তার দিদির শৈশব কেটেছে । তাদের ছুটে বেড়ানো, গ্রামের বনভোজন, ঝড়ের মধ্যে আম কুড়ানো । এছাড়া যাত্রা পালা, ও অবাধ আনন্দের ছুটে বেড়ানো গ্রামময় । যা হয়ত শহরের বেড়া ওঠা ছেলে মেয়েরা চিন্তাও করতে পারবে না । আমের আটি দিয়ে যে বাশি বানানো যায় সেটাও হয়ত তারা কখনও ভাবেনি । এই সরলতা ও গ্রামের জীবন ফুটে উঠেছে উপন্যাসে ।

এরপর অপুর চরিত্র আসলে গড়ে উঠেছে এক বিস্ময়কর ভাবে । বলা যায় তার চোখে সব সময় কৌতুহল খেলা করে থাকে । অপর দিকে তার দিদি হচ্ছে প্রকৃতির একটা অংশ। তারা দু ভাই বোন মিলে ঘুরে বেড়ায় গ্রাম । অপু সব জায়গাতেই বিস্ময় খোজে । তার কাছে সব কিছু নতুন, এক শিশুর কাছে পৃথিবী যেমন ঠিক তেমন । তার চোখেও কষ্টে কেদে ওঠে আবার আনন্দে হেসে ওঠে । বলা যায় অপুর চরিত্রে আমরা এক শৈশব দেখতে পাই ।

অপর দিকে সেই সময়ের সমাজ বা গ্রাম ব্যবস্থার বর্ননা রয়েছে দারুন ভাবে । বলা যায় সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থাকে বিভূতিভূষন যেন নিজে থেকে দেখেছেন । যদিও “পথের পাচালী” এর সংক্ষিপ্ত রূপ তবুও বইটি দারুন ভাবে এক শৈশব ফুটে এসেছে । অপুর শৈশব, এক শিশুর হারনো সোনালি শৈশব ।

বাংলাসাহিত্যের অন্যতম বই এটি । বইটি সবার পড়া উচিত । আমি “আম আটি ভেপু” এর একটা অংশ সম্ভবত পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় পড়েছি । তারপর পথের পাচালী পড়েছি ক্লাস সেভেনে । তখন যদিও এত প্রভাব ফেলেনি । যেটা এখন বুঝতে পারিনি ।

বাংলা সাহিত্যের মাস্টার পিস বই ।

বইঃ আম আটির ভেপু
লেখকঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়


আমার এই রিভিউটি আমার সবচেয়ে প্রিয় ব্লগারদের মধ্যে অন্যতম"রাজীব নুর" ভাই উৎসর্গ করলাম । যাকে দেখে আমি প্রতিনিয়ত অবাক হই । যাকে দেখে প্রতিনিয়ত বেচে থাকার একটা অনুপ্রেরনা পাই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×